শহীদের রক্তের ডাকে ………..

ঠিক এই মুহুর্তে লেখাটি যে পড়ছে, আমি চোখ বুজে ধরে নিতে পারি, সে একজন তরুণ। সময়টা তরুণদের, বাতাসটা স্বাধীনতা। সে বাতাসে গা ভাসিয়ে আমরা যারা তরুণ, তারা হয়তো অনেকে বুঝতে পারছি না, বাতাসের আয়ু কেড়ে নিচ্ছে কোন এক অপশক্তি।

এ আয়ূ কেড়ে নেয়া কিন্তু আজকে না, বহু আগে থেকে শুরু। চোখ বন্ধ করে মগজে একটু চাপ দিলেই ভেসে উঠবার কথা ৭০ এর নির্বাচনের কথা। ভেসে উঠবার কথা ৭১ এর গণহত্যা, গণধর্ষন, অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠনের কথা। ৩০ লাখ শহীদের মুখ ভেসে উঠবার কথা, ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের বোবাকান্না শুনে কেঁপে উঠবার কথা। জাতে বাঙালি আমরা কি মেনে নিয়েছিলাম নরপশু পাকিস্তানি পরাশক্তির কাছে পরাজয়? না, এই দেশপাগল জাতি মেনে নেয় নাই।

৭৫ এ কালো রঙ এর সামরিক শক্তির অভ্যুত্থান হলো জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে। শোক বিহবল জাতির খানিকটা সময় লাগলো সব কিছু বুঝে উঠতে। সামরিক শক্তি তার স্বরুপে আবির্ভুত হতে দেরী করলো না। তারপর?

তারপর, এই দেশপাগল জাতি, মুক্তিপাগল জাতি টেনে হিচরে চেয়ার থেকে ছুড়ে ফেললো সামরিক শক্তিকে, ফিরিয়ে আনলো গনতন্ত্রকে।

দেশে ফিরে আসলো গনতন্ত্র, সবার মুখে হাসি। হাসি নেভানোর জন্য কিছু ধর্মান্ধ জঙ্গী দেশের ৬৪ জেলায় একসাথে বোমা হামলা চালালো। তারা ভেবেছিলো, বোমার ভয়ে বাঙ্গালী তাদের পা চাটবে ? বাঙ্গালী তাদের পা ধরে ইচ্ছা মতো আছাড় মেরে তাদেরকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছিলো।

এখন জিজ্ঞেস করতেই পারো, কেনো এইসব বলছি ? কি দরকার এসব জানানোর ?

দরকার আছে। বাঙ্গালী বীরের জাতি, বাঙ্গালীর রক্ত গরম। দেশ মাতার জন্য উদ্ভ্রান্ত এক জাতি এই বাঙ্গালী। আর তাই তো উর্দি পরা যে হায়েনারা, রাজাকারেরা এই দেশ মাতাকে উপর্যুপরি গণধর্ষন চালিয়েছিলো ৭১ এ, তার বিচারে এই দেশের মানুষ গলার রগ ফুলিয়ে একাত্মতা ঘোষনা করেছে। এতোক্ষনে হয়তো জেনে যাবার কথা, রাজাকার কাদের মোল্লার ৬টি অভিযোগের ৫টি প্রমাণিত হবার পরেও তাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে, এ যেনো গুরু পাপে লঘু দন্ড ! আর তাই গতকাল থেকে শাহবাগে জমায়েত হয়েছে ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরীজীবি, রিক্সাওয়ালা, ব্যবসায়ী, ব্লগার সর্বোপরী অগ্রজ ও তরুন প্রজন্মের সবাই। তারা কোন দলের নয়, তারা কারও পেইড এজেন্ট নয়। তারা এক, তারা বাঙ্গালী, তারা মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসে, তারা রাজাকারদের ঘৃণা করে।

আজকের এই আন্দোলন কিন্তু নতুন নয়? এটি আসলে অনেক আগের আন্দোলন, বলা যায় একটা কন্টিনিয়েশন সেই গনআদালত আন্দোলনের। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সেই আন্দোলন।

সেই শহীদ জননী, যিনি কি না তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ছেলে রুমীকে বলেছিলেন, “যা, তোকে দেশের নামে উৎসর্গ করলাম”।

সে গনআন্দোলনে যোগ দিয়েছিলো দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ, তাদের সবার মনের প্রাণের দাবী ছিলো একটাই “রাজাকারের ফাঁসি চাই”। সেই গণআদালতে, দেশের জনগনের রায়ে ফাঁসি হয়েছিলো গোলাম আজমের, ফাঁসি হয়েছিলো রাজাকারদের, যুদ্ধাপরাধীদের।

এরপর অনেক পালা বদল ঘটলো, রাজাকারদের গাড়িতে পতাকা উঠলো। আন্দোলন দমানোর চেষ্টা চললো বহুবার। যে আন্দোলন এর সুত্রপাত বুকের মাঝে, ট্রিগারটা মগজে তাকে কি আর দমিয়ে রাখা যায় ? বার্গার-পিজ্জা খাওয়া প্রবীনদের কাছে হতাশাজনক এক তরুণ প্রজন্ম হঠাত করেই যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো, গায়ের সব কটি লোম দাড় করিয়ে চিৎকার করে উঠলো – যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই।

অতঃপর বিচার শুরু হলো, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলো। ২০১৩ এর জানুয়ারীর শেষের দিকে পলাতক বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হয়। সারাদেশ তখন আনন্দে ভাসছে, শহীদ পরিবারের চোখে-মুখে তখন তৃপ্তি। কিন্তু এরপর ?

বহু আকাঙ্ক্ষার পরে যখন কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লার রায় দেয়া হবে, যে কিনা চার শতাধিক হত্যাকান্ডের আসামী, কবি মেহেরুন্নাসাকে গলা কেটে ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখেছিলো, যার ৬টা মামলার মাঝে ৫টিই প্রমানিত, তাকে কি না দেয়া হলো যাবজ্জীবন কারাদন্ড?

দেশপাগল তরুন প্রজন্ম এবারও মেনে নেয় নি, ক্রোধে ফেটে পরলো তারা। জমায়েত হলো শাহবাগে। জোরালো কন্ঠস্বরে জানিয়ে দিলো দুনিয়াকে,

“করতে ফাঁসির দাবী

জটায়ুর মত রক্ত ঝরাতে

আমরা প্রহর জাগি”

কেউ কেউ বললো, এটা এমনিই, হুজুগে একত্রিত হয়েছে। কিন্তু না, তাদের ধারণা ভুল ! ৫ই ফেব্রুয়ারীর সারাটা দিন, সারাটা রাত ওখানে ছিলো তারা। কাদের মোল্লার প্রতীকি ফাঁসিও দিয়েছে তারা।

হে তরুন প্রজন্ম, বার বার এই দেশ মায়ের তোমাদের দরকার পরেছে। প্রতিবারই আমরা ঝাপিয়ে পরেছি। হয়তো কখনও দেরী হয়েছে, কিন্তু মায়ের কান্না আমাদের কান এড়ায়নি। এবারও এড়িয়ে যাবে না, তবে এবার দেরী করবার সুযোগ নেই। তাহলে চলুক সবাই, সারা বিশ্ব দেখুক, বীর বাঙ্গালী কখনও অন্যায় মেনে নেয়নি, নিবেও না।

সবাইকে আহবান জানাচ্ছি শাহবাগে। প্রাণের ডাকে, দেশের ডাকে একত্র হই। সমস্বরে বলে উঠি –

“স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকারের জন্য এক ইঞ্চি জমিও ছাড় দেয়া হবে না। ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই”
কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের জন্য আন্দোলনের ফেসবুক ইভেন্ট

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে অনুপ্রেরণা, ইতিহাস, উদ্যোগ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to শহীদের রক্তের ডাকে ………..

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    দাঁড়াতে পেরে, শ্লোগান দিতে পেরে দারুণ লেগেছে।
    এ তো সবে শুরু… তরুণরা আজ সরব।

    বুঝতে হবে সব দলীয় কুকুরদের আর পাপিষ্ঠ রাজাকারদের… দিন এবার ফুরিয়েছে…

    তবে আমাদের সব ক্রিটিকালি চিন্তা করতে হবে। আওয়ামীলীগ আর এর অঙ্গ সংগঠন তো মরিয়া… আন্দোলন এর ঝোল নিজেদের পাতে নিতে!

  2. আজকে বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। বাংলার আকাশে বাতাসে এক নতুন ‘৬৯ এর গন্ধ, ‘৭১ এর নির্যাস। বাংলার মানুষ আজ এক হয়েছে- কোন স্বার্থ বা রাজনৈতিক কারণে না। একটা প্রানের দাবি নিয়ে তারা এক হয়েছে। আর সে দাবি হল – “কাঁদতে আসিনি , ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি… যুদ্ধাপরাধী, দেশদ্রোহীদের ফাঁসি চাই”।

    আবেগ বা যুক্তির কথা না, সত্য প্রকাশের আওয়াজ কখনই রুদ্ধ হয় না।
    এই স্বাধীন বাংলার প্রতিটা ইঞ্চি মাটি শহীদের বুকের তাজা রক্তের দামে কেনা। এই স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকারের জন্য এক ইঞ্চি জমিও ছাড় দেয়া হবে না। একাত্তরের বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই!

    জয় বাংলা!!

  3. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    আমি সাথে আছি আপনাদের। আমার নিজের ও যেতে ইচ্ছে করছে খুব।

  4. একুয়া রেজিয়া বলেছেনঃ

    শাহবাগে গিয়ে সবাইকে দেখে একটা কথা মনে হয়েছে বার বার- তা হল, “একতাই বল”

    ‘হারিয়ে যাবো তবুও হারবোনা,
    বিচার না পেয়ে রাজপথ ছাড়বো না’

  5. এখনও শিশু বলেছেনঃ

    :clappinghands:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।