কিছু অনুভূতির কোন নাম হয় না, রঙ হয় না। কিছু অনুভূতির ঘ্রাণ বুকের মাঝে ধারণ করে রাখার চেষ্টা করতে করতেই কেমন করে যেন সময় কেটে যায়। সেইরকম এক অনুভূতি হয়েছিল আমার, এই বছরেরই ফেব্রুয়ারির দুই তারিখ। পরীক্ষা দিয়ে এসে অপেক্ষা করছিলাম সরবের বইটা হাতে নিয়ে একবার ছুঁয়ে দেখব বলে। সেই বইয়ের অপেক্ষায় দিন গড়িয়ে একসময় রাত চলে এলো। বইটা হাতে নিয়ে ছুঁয়ে দেখতে দেখতে বেজে গেলো রাত প্রায় ন’টা। হ্যাঁ ছুঁয়েছিলাম আমি, আর তারপর সেই অনুভূতিটা হয়েছিল- নামহীন, রঙহীন, ঘ্রাণবন্দির চেষ্টায় আকুল নেশার মত এক অনুভূতি।
বইটা নিয়ে হলে যখন ফিরলাম, তখন বইটাকে ঠিক কোথায় রাখা যায় বুঝে উঠতে পারছিলাম না। প্রথম ছাপার অক্ষর কোলজুড়ে প্রথম সন্তানের মত এসেছে- এমন মানুষের পক্ষেই কেবল এই বাড়াবাড়ি রকমের ভালো লাগাকে বাস্তব বলে মনে হতে পারে। বাদবাকি সবার কাছেই যে এটা অনেকটা হাস্যকর সেটা আর বলে দেবার নয়। আমি নিজেই হয়তো অন্য কারো জায়গায় থাকলে এটাকে সেভাবেই দেখতাম। কিন্তু সেদিনের ঘটনা ভিন্ন, সেদিনের আমি ভিন্ন, আমার অনুভূতি ভিন্ন- কারণ সেই যে সেটা নামহীন, রঙহীন পাগলপারা এক অনুভূতি! তার ব্যাখ্যা সাধারণের মত কেমন করে দাঁড় করাব আমি? সে সাধ্যই তো আমার তখন ছিল না!
প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছিল। বই বের করা নিয়ে তখন কত উৎসাহ। সরব থেকে একটা বই সত্যি হবে, আমাদের আইডিয়ার ঝুলি সরব থেকে! ব্লগার নয়, লেখক তৈরি করতে চায় সরব। ভালো লেখা, ইতিবাচক লেখা, তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক লেখাকে উৎসাহিত করতে চায়। কী দারুণ এক চিন্তা আর স্বপ্নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবার চেষ্টা! সরবের সেই স্বপ্ন আমার ভেতরেও তখন প্রবাহিত হতে শুরু করে। ভাবনা শুরু করে দিই। কী নিয়ে লেখা যায়? কীভাবে লেখা যায়? ইতিবাচক, তথ্যবহুল হবে তো? এতসব ভাবতে ভাবতে কয়েকটা বিষয় নিয়ে লিখলাম, কিন্তু লেখা পছন্দ না হওয়ায় পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার মত করে, ওয়ার্ড ফাইলে ১৫ পেইজ লিখেও রিমুভ করে দিলাম! মাত্র একটা লেখার জন্য এতগুলো সময় আগে কখনো নষ্ট করি নি! তারপরেও যখন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না আর পরীক্ষাও সামনে চলে এলো, তখন যে কী ভীষণ মন খারাপ লাগল। মনে হচ্ছিল, হয়তো এবারে আর আমার লেখাই দেয়া হবে না, হয়তো বইয়ে লেখা পাঠানোর মত অত শক্ত করে কলম ধরতে এখনো শিখি নি আমি। কিন্তু কিছু মানুষের উৎসাহে, সত্যি বলছি, তারা উৎসাহ না দিলে কখনোই আমার আর লেখা হয়ে উঠত না। সরব বোহেমিয়ান, সামিরা, নিস্তব্ধ শৈশবের মত মানুষগুলো সেদিন অনবরত আমাকে না খোঁচালে আজকের এই পোস্টটাও আমার কোনদিন দেয়া হয়ে উঠত না, আমি জানি। কাছের বন্ধু সরব স্বপ্ন বিলাস, কৃষ্ণচূড়া, ঈয়াশা, পলাশ; ছোট্ট ভাই সরব নিলয়, নিশম, হৃদয়, ইতস্তত বিপ্লবী, অক্ষর, রাইয়্যান, অনুজ; ছোট্ট আপু সরব শারমিন, বৈরাগী, গাঙচিল, নূহা, অবন্তিকা, কিনাদি; মাথার ওপরের ছায়া সরব একুয়া রেজিয়া আপু, এখনো শিশু আপু, লুনা রুশদী আপু, শিবলি ভাইয়া, জনৈক ভাইয়া, বাবুনি সুপ্তি আপু, অনাবিল আপু, নোঙ্গর ছেঁড়া ভাইয়া, মুবিন ভাইয়া- এক কথায়, উদ্ভাবনী সরব পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আগামীকাল বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আর সেটা করবেন প্রিয় কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব! এটা জানার পর থেকেই সেই অনুভূতিটা আবারো ফিরে ফিরে আসছে আমার মাঝে! জীবনে প্রথমবার বইমেলা নিয়ে এইরকম অনুভূতি হলো আমার- ঘ্রাণবন্দির চেষ্টায় আকুল নেশার মত মাতাল করা এক অনুভূতি। এইরকম অনুভূতি হয় মেঘের ঠিক নিচে তারাদের চুড়িগুলো রিনিঝিনি শব্দে ঝরে পড়ার সময়, এইরকম অনুভূতির কোন নাম হয় না কিংবা এইরকম অনুভূতির নাম দিতেও হয় না।
কী যে আনন্দ লাগছে! 😀
প্রথম যখন বইটার ছবি দেখেছি! সেই আবেগ এর তুলনা হয় না!
সামিরা ফিনিক্স শৈশব হৃদয় অক্ষর জাহিদ একুয়া রেজিয়া এবং বাকি সবাইকে
– স্যালুট
এখনও সবাই নানান ভাবে হেল্প করছেন।
সেলিব্রিটিরা আমারে স্যালুট দিলে লুইজ্জা লুইজ্জা লাগে! 😛
আমি এখনও বইটা দেখি নি 🙁 আজকে ইনশাআল্লাহ!
‘মাথার ওপরের ছায়া’ কথাটি পড়ে নিজেকে গাছ গাছ মনে হচ্ছে । 😀
তুমি কেবলই ‘গাছ’ নও কন্যা, তুমি হলে গিয়ে ‘মহীরুহ’। :beshikhushi:
এত্তো এত্তো আনন্দিত! 😀
সরবের বইটাকে নতুন শিশু মনে হচ্ছে, যার অপেক্ষায় আছি আমরা ক-ত-জ-ন।
শিশুকাননে স্বাগতম প্রিয় বন্ধুকে! :beshikhushi: :beshikhushi:
দেখা হবে! 😀
দেখে পুলকিত বোধ করেছি! :happy: