তাঁর একটি স্বপ্ন ছিলো…

মাইকেল কিং জন্মগ্রহণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় , জানুয়ারি ১৫ , ১৯২৯ সালে। বাবা ছিলেন একজন ব্যাপ্টিস্ট মিনিস্টার, তাঁর নামও ছিল মাইকেল কিং। পরে বাবা নিজের ও ছেলের নাম পরিবর্তন করে ‘মার্টিন লুথার কিং’ রাখেন! ( জার্মান বংশোদ্ভূত প্রোটোস্ট্যান্ট রিফর্মমেশনের নেতা মার্টিন লুথারের প্রতি সম্মানার্থে।)

রেভরেন্ড মার্টিন লুথার কিং (১৯২৯-১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ১৯৬৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজেতা এবং এককভাবে সবচেয়ে স্মরণীয় আফ্রো-আমেরিকান সিভিল রাইটস মুভমেন্টের একজন পাইওনিয়র । পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের আমেরিকায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নাগরিকদের জাগরণের নেতা। তিনি ছিলেন একাধারে একজন রাজনৈতিক সংগঠক, অবিসংবাদী সুবক্তা, আমেরিকায় নন ভায়োলেন্ট আন্দোলনের প্রবক্তা, ধর্মযাজক, কিং কালো আমেরিকানদের সংগঠিত করেন আমেরিকায় তৎকালীন বর্ণবৈষম্যমূলক আইন ও সামাজিক আচরণের বিরোধী সংগ্রামের জন্য এবং আমেরিকায় racial equalityর (বর্ণসাম্য) আইনগত প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। মার্টিন লুথার কিংকে কেউ কেউ লেফট উইংয়ের লোক বলে প্রচার করতো, কেউ গান্ধীবাদী বলে সমালোচনা করত।

পারিবারিকভাবে অত্যন্ত ধর্মীয় আবহে বড় হয়েছেন কিং। তাঁর বাবা-দাদা উভয়েই প্যাস্টর ছিলেন। বর্ণবৈষম্যপূর্ণ আমেরিকায় বসবাস করেও ছোটবেলা থেকে পারিবারিক শিক্ষা পেয়েছিলেন কিং সবাইকে ভালোবাসার, যুদ্ধ নয় শান্তি প্রতিষ্ঠার। অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। পনের বছর বয়েসে কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করে ফেলেন! ১৯৪৮ সালে উনিশ বছর বয়েসে মোরহাউস কলেজ থেকে সোসিওলজিতে কৃতিত্বের সাথে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫১ সালে থিওলজিতে ব্যাচেলর অব ডিভানিটি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৩ সালে করেটা স্কটের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির চার সন্তানের নাম যথাক্রমে, ইয়োলান্ডা কিং, মার্টিন লুথার কিং (3rd), ডেকস্টার স্কট কিং এবং বারনাইস কিং।

১৯৫৪ সালে পঁচিশ বছর বয়সে মন্টেগোমারির Dexter Avenue Baptist Church এর প্যাস্টর হন কিং। একই সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘সিসটেমেটিক থিওলজি’তে গবেষণা করে নামের আগে ডক্টর বসানোর অধিকার লাভ করেন। ডক্টর মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নামের অনন্য সাধারণ এই মানুষটি আমেরিকার সিভিল রাইটস নেতা হাওয়ার্ড থারম্যানের (উনি কিং এর বাবার বন্ধু ছিলেন) আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। কিং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর- (১৮৬৯-১৯৪৮) ভাবশিষ্য ছিলেন ।

গত শতাব্দীর মাঝামাঝির দিকে একটা সময়, অসম্ভব বর্ণবাদী একটা সমাজ আমেরিকায় কালো নাগরিকরা যখন অনবরত লাঞ্চিত হচ্ছিলেন… অপমানিত হচ্ছিলেন শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা। যেখানে কোন কোন অঞ্চলে (বিশেষতঃ দক্ষিণে, আলাবামা, মিসিসিপি)সাদা-কালোদের এক কলে পানি খাওয়া পর্যন্ত মানা ছিলো। তাদের জন্য আইন সমান ছিলনা, একই অপরাধে সাদাকে রেহাই দেয়া হলেও কালোকে জেলে ঢুকানো হতো। এক স্কুলে পড়তে পারতো না, এক টেবিলে খেতে পারতো না, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গের বিয়ে আইনত নিষিদ্ধ ছিলো। বাসে শ্বেতাঙ্গ কেউ উঠলে সিট ছেড়ে দিতে হত কৃষ্ণ যাত্রীটিকে। নিষ্ঠুর অপমান!! রোজা পার্কস নামে এক কৃষ্ণাঙ্গিনী মেনে নিতে পারলেন না বিষয়টি। ছাড়লেন না সিট! কত স্পর্ধা মেয়ের! ফলাফল হলো, পুলিস ভায়ারা অ্যারেস্ট করলেন তাঁকে! খবরটি ছড়িয়ে পড়লো শহরে।

মার্টিন লুথার কিং সর্বপ্রথম নজরে আসেন ১৯৫৫ সালে এই ‘মন্টেগোমারি বাস বয়কট’ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে, রোজা পার্কসের মুক্তির জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে। হাঁটতে লাগলেন দূরদূরান্তে কর্মক্ষেত্রে যেতে, তবুও প্রতিবাদস্বরূপ তাঁরা বয়কট করলেন বাসে চড়া। ৩৮১ দিন একটানা তাঁরা চালিয়ে যান প্রতিবাদ!! পরবর্তীতে ওই অপমানজনক নিয়মটি উঠিয়ে নেয়া হয় ও রোসা পার্কসকে মুক্তি দেয়া হয়। আত্মজীবনীতে কিং জুনিয়র লিখেছেন, “১৯৫৫-৫৬ সালে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের শিক্ষা আমি গান্ধীর কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।” ১৯৫৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে স্ত্রীসহ ইন্ডিয়ায় এসেছিলেন তিনি।

অহিংস পন্থায় বিশ্বাসী কিংসহ কৃষ্ণাঙ্গদেরকে সহিংস শ্বেতাঙ্গদের বহু অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিলো। গরম পানির কামানের শাস্তি থেকে শুরু করে বারে বারে কারাবাস, নির্যাতন, এমন কি কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়েছিলো তাঁদের পেছনে!! সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছিল নন ভায়োলেন্ট প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের উইথ ভায়োলেন্স আক্রমন! অবশ্য তাঁদের আন্দোলন সফল হয়েছিলো, সরকার মেনে নেয় পরবর্তীতে, আলাবামাতে কালোদের সর্বত্র যাতায়াতে সমান সুযোগ-সুবিধা, চাকুরীতে সমান সুযোগ সুবিধা আইন করে চালু করা হয়েছে।

মিস্টার এবারনেথি এবং অন্যান্য সিভিল রাইটস নেতাদের সহযোগিতায় ১৯৫৭ সালে গঠন করেন Southern Christian Leadership Conference (SCLC) । শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকারই নয় তাদের শিক্ষাগত ও নৈতিক মান উন্নয়ন করাও ছিলো এই সংগঠনটির লক্ষ্য। তিনি আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।

১৯৬৩ সালের ২৮ অগাস্ট। কয়েকটি সমমনা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কালো আমেরিকানদের সর্বক্ষেত্রে সমানাধিকারের দাবীতে দীর্ঘ পদযাত্রা শেষে ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়াল হলে জমায়েত হলেন লাখো মানুষ। মার্টিন লুথার কিং এইদিনই তাঁর সেই বিখ্যাত ভাষণটি প্রদান করেন। যা বিংশ শতকের সেরা ভাষণ বলেও বিবেচিত। (২৮ অগাস্ট দিনটি ছিলো আব্রাহাম লিঙ্কনের Emancipation Proclamationএ সই করার একশত বছর পূর্তি। দাস প্রথা উচ্ছেদের জন্য আমেরিকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন লিঙ্কন।)

কী দৃঢ় তাঁর উচ্চারণ! নিজের স্বপ্নটিকে আলোয় নিয়ে এলেন লাখ লাখ মানুষের সামনে, বললেন, “বন্ধুরা, আমি আজ আপনাদের বলছি, বর্তমানের সমস্যা ও বাধা সত্ত্বেও আমি আজও স্বপ্ন দেখি। আমার এই স্বপ্নের শেকড় রোপণ করা আছে আমেরিকানদের অন্তরের গভীরে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই জাতি জাগবে এবং বাঁচিয়ে রাখবে এই বিশ্বাস, “সব মানুষ সমান” আমরা এই সত্যকে স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করছি। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে সাবেক দাস আর সাবেক দাস মালিকের সন্তানেরা ভ্রাতৃত্বের এক টেবিলে বসবে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন মরূময় মিসিসিপি রাজ্য, অবিচার আর নিপীড়নের উত্তাপে দম বন্ধ করা মিসিসিপি হয়ে উঠবে মুক্তি আর সুবিচারের মরূদ্যান। আমি স্বপ্ন দেখি, আমার চার সন্তান একদিন এমন এক জাতির মধ্যে বাস করবে, যেখানে তাদের চামড়ার রং দিয়ে নয়, তাদের চরিত্রের গুণ দিয়ে তারা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন আলাবামা রাজ্যে, যেখানকার গভর্নরের ঠোঁট থেকে কেবলই বাধা-নিষেধের বাণী ঝরে, একদিন সেখানকার পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যাবে যে কালো ছেলে-মেয়েরা সাদা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ভাইবোনের মতো হাত ধরে থাকবে। আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।”

এই স্বপ্ন ত আবহমান কালের নিপীড়িত জনতার মুক্তির স্বপ্ন! অসত্যের আঁধারে সত্যের বাহকদের স্বপ্ন! ধ্বংসের বদলে ধ্বংস নয়, বরং শান্তির বাণী “The choice is not between violence and nonviolence but between nonviolence and nonexistence.”

লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সেই সভায় অংশগ্রহণকারী ২ লক্ষ জনতার মাঝে এক চতুর্থাংশ ছিলেন শ্বেতাঙ্গ।

 

“We must accept finite disappointment, but never lose infinite hope.”

তিনি বললেন, “এই-ই আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন নিয়েই আমি দক্ষিণে ফিরে যাব।এই বিশ্বাস নিয়ে হতাশার পর্বত থেকে আমরা সৃষ্টি করব আশার প্রস্তর।এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা আজকের এই কোলাহল থেকে জন্ম দেব ভ্রাতৃবন্ধনের সুন্দরতম সংগীতের।এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব, প্রার্থনা করবো একসঙ্গে, একদিন আমরা মুক্ত হব এই  জেনে, একসঙ্গে শামিল হব সংগ্রামে।”

মহান এই মানুষটি ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান সিভিল রাইটস মুভমেন্টে তাঁর অবদানের জন্যে। পুরস্কারের অর্থের পুরোটাই দান করে দেন বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোকে।

মহান এই মানুষটি ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান সিভিল রাইটস মুভমেন্টে তাঁর অবদানের জন্যে। পুরস্কারের অর্থের পুরোটাই দান করে দেন বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলোকে। কালোদের নাগরিক সমানাধিকার চেয়েছিলেন, তাতে আমেরিকা খুব একটা সমস্যা মনে করে নি তাকে সমস্যাটা দাঁড়ালো তখনই যখন তিনি কালোদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমানাধিকারের কথা বলা শুরু করলেন! যুক্তরাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা গোড়াতেই ছিলো বর্ণবিদ্বেষ, তা বদলে ফেলার উদারতা তখন অর্জন করতে পারে নি কেউ কেউ, প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসনের ব্যক্তিটিও নাখোশ হলেন তীব্রভাবে। ফলে ইতিহাসে ঘৃণ্য সেই ‘ব্লাডি ব্ল্যাক সান ডে’র জন্ম হলো।

আমেরিকার কর্তাব্যক্তিরা নাখোশ হলেন আরো যখন কিং মানবতাবিরোধী ভিয়েতনাম-আমেরিকা যুদ্ধে আমেরিকার প্রচন্ড সমালোচনা করা শুরু করলেন। ততদিনে মার্টিনের বিপুল জনপ্রিয়তাকে ক্ষমতাশীলরা ভয় পেতে শুরু করলেন। তাঁর শেষ ভাষণটি I’ve Been to the Mountaintop যথার্থ অর্থেই তাঁর মৃত্যু পরোয়ানা লিখে দিয়েছিলো। আততায়ীর হাতে কিংয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে এগুলোকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মেমফিসের The Lorraine Motel এর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। আচমকা আততায়ীর গুলি তাঁর ডান বুক ভেদ করে যায়। মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত সম্মানের সাথে স্মরণীয় এই মহান মানুষটি।

তাঁর সংগ্রাম বিফলে যায় নি। এখন জানুয়ারির তৃতীয় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর স্মরণে ছুটির দিন পালন করা হয়। আজ আমেরিকায় একজন কালো দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে সাদা-কালোর বৈষম্য দূর হয়েছে প্রায় সমূলে।

এই সাফল্যের পেছনে তাঁর অবদান অমূল্য! সেই আদর্শ ঘৃণার নয়, ভালোবাসার। ভালোবাসা!! আঙ্কেল টমের সাথে তুলনা করা হয় মার্টিন লুথার কিং-কে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে টম বলেছিলেন, “পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকেই আমি ভালোবাসি!” যেই মুমুর্ষূ ক্রীতদাস আঙ্কেল টমের আন্তরিক ভালোবাসা এনে দিয়েছিলো বঞ্চিত এক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাধীনতার বারতা। যেন তাঁরই প্রতিধ্বনি আরেক কৃষ্ণ মহতীর কথা, “Darkness cannot drive out darkness, only light can do that. Hate cannot drive out hate, only love can do that.” (Martin Luther King Jr.)

“Darkness cannot drive out darkness, only light can do that. Hate cannot drive out hate, only love can do that.” (Martin Luther King Jr.)

সবার জন্য ভালোবাসা!! স্বপ্ন একটি আলোকিত ভবিষ্যতের জন্য! শান্তির সূর্য উদিত হোক আমাদের বাংলায়! সারা বিশ্বে!

 

সবার জন্য ভালোবাসা!! স্বপ্ন একটি আলোকিত ভবিষ্যতের জন্য! শান্তির সূর্য উদিত হোক বাংলায়! সারা বিশ্বে!

পাদটীকা ১:

অহিংস আন্দোলন মানে নিস্ক্রিয়ভাবে মার খাওয়া নয়। প্রতিবাদ হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক, আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত মজবুত হতে হবে, পরমত সহিষ্ণুতা বজায় রেখে নিজের মত প্রকাশ করতে হবে। কিং বলেছেন, Quietly endure, silently suffer and patiently wait. তিনিই আবার বলেছেন, There comes a time when silence is betrayal. অহিংসা মানে যেন কেউ নিস্ক্রিয়তাকে না বুঝেন!

পাদটীকা ২:
আমাদের মেয়েরা মাসে মাসে গুচ্ছের টাকা খরচ করে পার্লারের পেছনে। কী জানি একটা ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে দেখতাম, একটা ফেয়ারনেস স্কেলমত আছে, যেইটা দিয়ে বিজ্ঞাপনের মেয়েটা প্রতি সপ্তাহে মিলায় মিলায় দেখে কতটা ফরসা হলো!! দুনিয়া বড়ই বিচিত্র! একজন যুক্তিবাদী মানুষ কেমনে গায়ের রঙ ফরসাকরণের প্রতি এতখানি আকুলতা প্রদর্শণ করতে পারে! আমরা নিজেদের বাদামী/কালো বর্ণ ঢাকতে যতখানি উদগ্রীব, ততখানি যদি হৃদয়ের সৌন্দর্য বিকাশে উদগ্রীব হতাম! 🙂
রেফারেন্স:

১) উইকিপিডিয়া আর্টিকেল (মার্টিন লুথার কিং)– http://en.wikipedia.org/wiki/Martin_Luther_King,_Jr.

২) স্কুল ফর ইয়ং লিডারস ব্লগ আর্টিকেল–http://armenianleaders.wordpress.com/2010/01/12/martin-luther-king/

৩) আই হ্যাভ আ ড্রিম পুরো টেক্সট– http://www.americanrhetoric.com/speeches/mlkihaveadream.htm

৪) এখানে খুব সুন্দর একটা ইনফোগ্রাফি আছে কিং এর জীবনের ওপর– http://friendsofebonie.com/2013/01/16/dr-martin-luther-king-jr-day-2013-a-day-to-serve-a-day-to-honor-a-king/

৫) প্রথম আলো আর্টিকেল– http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-01-15/news/34917

(সরবের জন্য প্রথম লিখলাম আজ। আশা করি, আমার সরব ব্লগিং এ সবাইকে পাশে পাবো!) :happy:

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে অনুপ্রেরণা, ইতিবাচক, ইতিহাস, চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

13 Responses to তাঁর একটি স্বপ্ন ছিলো…

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    খুবই ভালো লাগল লেখাটি
    এই শিক্ষা আমাদের দরকার

    আমরা যদি খারাপ লোকদের মতো শ্লোগান দেই তাহলে আউটপুটও খারাপ হবে।

    আপনাকে বাদ্য বাজনা সহ স্বাগতম। :welcome: :welcome:

    নিয়মিত লিখুন। মনটাকে জাগাতে হবে। সরব তারুণ্যকে ঠিক পথে রাখার কাজে নিজেদের সাধ্য সামর্থ্য দিয়ে সাহায্য করতে হবে

    • আরণ্যক বলেছেনঃ

      ধন্যবাদ বোহেমিয়ান ভাইয়া!! :love:
      আপনাদের সবার লেখাই আমার ভীষণ ভালো লাগে। তারুণ্যের আদর্শ হোক মানবকল্যান, এই কামনা করি। 🙂

      সরবে লিখতে পেরে আমার নিজেরই খুব ভালো লাগছে!! :happy:

  2. শাহরিয়ার বলেছেনঃ

    বরাবরের মতই অ—সা—ধা—র—ণ !!! :beshikhushi: :beshikhushi:

    খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক লেখা… বিশেষ করে বর্তমান সময়ে। আর… “অনুপ্রেরণার উৎসটি যে-ই হোক না কেন, অনুপ্রেরণাটিকে আমি আমার আদর্শে সাজিয়ে নিই সবসময়, আমার বিশ্বাসে।” :clappinghands:

    “ইশশ…কেউ যদি আমাদের অহিংস প্রতিবাদের ভাষা শিখিয়ে দিতে পারতো!” 🙁

    কিং সাহেব ও তাঁর জীবনী সম্পর্কে যৎসামান্য কিছু জ্ঞান ছিল। আজ এই চমৎকার তথ্যবহুল লেখা থেকে একসাথে অনে—ক কিছু শিখলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। :happy:
    আশা করি এখন থেকে আপনাকে সরব-ই পাওয়া যাবে।

    ইয়ে… মানে… আবার :welcome: -ও জানাতে হবে নাকি? 😛

    আর… “মুমুর্ষূ” > “মুমূর্ষু” (ব্যাপার না… কিঞ্চিৎ ভাব নিলাম আরকি… বিখ্যাত ভুল কিনা… 8) )

    • আরণ্যক বলেছেনঃ

      উৎসাহিত হলুম ভাইয়া!! 😛 যদিও অসাধারণত্বের কিছু খুঁজে পেলাম না পোস্টে। 🙁

      ‘মুমূর্ষু’ বানান আমি জানতাম ত! তবুও কেন ভুল হলো… :crying:
      ঠিক করে দিয়েছি। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই শাহরিয়ার! 🙂

  3. সুবর্ণরেখা বলেছেনঃ

    অন্নেক ভাল্লাগছে পিচ্চি ! :happy:
    একদম সময়োপোযোগী আর সুন্দর একটা লিখা ! :clappinghands:

  4. শারমিন বলেছেনঃ

    :welcome:
    ভালো লেগেছে 😀
    আশা করি নিয়মিত লিখবেন 😀

  5. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    খুবই ভাল লাগলো। লুথার কিং এর ব্যাপারে বাংলায় এত বিস্তারিত জানি নি আগে। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
    প্রথম পর্যায়ের উ্তস্বর্গটা বেশ বাজে খরচ বলেই মনে হলো। তারপরও, যখন দেখি, গত শতকের শুরুর দিকে খোদ আমেরিকাতেই এই ধরনের বাজখাঁই স্লোগান চলতো, তখন আস্বস্ত হই, যে একদিন পরিবর্তন আসবে।

    দ্বিতীয়টা বড়ই গোলমেলে। মার্টিন লুথার কিং কি চুপ ছিলেন? আমার মতে কখনোই না। আবার, তিনি কি ধ্বংসাত্বক ছিলেন? আমার মনে হয় সেটাও না। আসলে, চুপ থাকা নয়, দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করাই দরকারী। একা সম্ভব নয়, তাই প্রয়োজন আয়োজনের।

    তৃতীয়টার লজ্জা কোথায় রাখি। চুপ থাকি, না প্রতিবাদ করি। সাথে কি কেউ থাকবে?

    • আরণ্যক বলেছেনঃ

      অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

      প্রথম পর্যায়ের উৎসর্গ বাজে খরচ হইলে হবে! এই ব্যাপারে আমাদের মিতব্যয়ী হওয়া যাবে না! আমিও আশায় আছি পরিবর্তন অবশ্যই আসবে!

      দ্বিতীয়টা গোলমেলে ক্যান? 🙁 মার্টিন ত কখনো-ই চুপ ছিলেন না! সেই কথাই ত বলতে চাচ্ছি এখানে। আসলে দ্বিতীয়টা এইকারণে লিখেছি যে কেউ যেন মনে না করেন অহিংসা মানে চুপচাপ বসে থাকা আর দিবাস্বপ্ন দেখা।

      কলোনিয়াল আমলের কুপ্রভাব তৃতীয়টা তার সাথে যুক্ত হয়েছে গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব। এই ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে আমি আপনার সাথে থাকবো! :huzur:

  6. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    দারুণ একটা সূচনা আরণ্যক! :beshikhushi:
    নিজের কাছেই খারাপ লাগছে এত ভালো একটা পোস্ট এত পরে কেন পড়লাম! 🙁

    অহিংস আন্দোলনের ব্যাপারে আমিও সহমত।
    কিন্তু কতটা অহিংস? কতক্ষণ অহিংস?
    বাজে স্লোগানগুলো আমি নিজেও এড়িয়ে চলি। ওগুলো কেবলই ঘৃণার প্রকাশ নয়, একটা রূঢ়তার, নিষ্ঠুতারও প্রতীক।
    আচ্ছা, অহিংসতার একটা সীমারেখা দাঁড় করাতে পারবি কী?
    গান্ধীর অটোবায়োগ্রাফি পড়ার পর, সেখান থেকে জিস্ট নিয়ে আর মার্টিন লুথার নিয়ে তো পড়েইছিস, এই দুটো মিলিয়ে অহিংস আন্দোলনের স্বরূপে আরেকটা পোস্ট দিতে পারবি না? আমি আশা করছি যে পোস্টটা শীঘ্রই পাবো। 😐

    অফটপিক-
    আমি খুব মনোযোগ দিয়ে তোর লেখাটা পড়েছি কিন্তু। একটা ব্যাপার একটুখানি গড়বড় দেখলাম, খুব বড় কিছু না অবশ্য। সেটা হলো, এই পোস্টে তুই ‘ছিল’ বানান দুইভাবে লিখেছিস- একবার ও-কার ছাড়া, আরেকবার ও-কার দিয়ে।
    একই লেখায় একটা প্যাটার্ন অনুসরণ করলে বোধহয় ভালো হয়। 🙂

    মিষ্টি মেয়েটাকে সরব পরিবারে স্বাগতম। :welcome:
    আমরা সব্বাই এই দারুণ লেখিকাকে আমাদের সাথে পেয়ে খুশি। :happy:

    • আরণ্যক বলেছেনঃ

      অন্নেক ধন্যবাদ আপুজি সুন্দর মন্তব্যের জন্য!! :love:
      মুভমেন্ট আর রেভল্যুশানের মধ্যে পার্থক্য আছে। গান্ধীজির সত্যাগ্রহ বা লুথার কিং এর সংগ্রাম যতক্ষণ পযন্ত মুভমেন্ট ছিলো ততক্ষণ অহিংস ছিলো পুরোপুরি! কিন্তু এইটা যখনই রেভল্যুশানের দিকে টার্ন করা শুরু করলো তখনই রক্তপাতের প্রয়োজন হলো! 😳

      রক্তপাত ছাড়া বাংলাদেশ নামক ভূমিটাও ত পেতাম না আমরা, এখন ৭১ এ অহিংস আন্দোলন আমরা কেমনে করতাম? ওরা এসে গুলি করে চলে যাবে, আমি গুলি খেয়ে মরবো? তখন আমরা যেভাবে প্রতিবাদ করেছি সেটা তখনকার মত ঠিক। ওরা আমাদের ৭১ এ মেরেছিলো বলে বর্তমানে আমি যেয়ে পাকিস্তান হামলা করবো না বা পাকিস্তানিদের অবমাননা করে কথা বলবো না, এইটা অহিংসা। 🙂

      গান্ধীর আত্মজীবনী পুরোটাই পড়েছি। অহিংস আন্দোলনের গুরু কিন্তু এঁরাই নন। রাসুলুল্লাহর (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ অহিংস আন্দোলনকারী ছিলেন, চরমপন্থীদের কে বুঝাবে সেটা?

      যাহোক, ‘ছিল’ ‘ছিলো’ তে গড়বড় করেছি? 😛 হিহি… ‘ছিলো’টাই ব্যবহার করা বেশি সঠিক মনে হয়, না? যেহেতু আমরা চলিত ভাষায় লিখছি।

      ভালোবাসা নাও! 🙂

      • ফিনিক্স বলেছেনঃ

        দুটো বানানই ঠিক। কোনটাই ভুল নয়। 🙂

        এই বিষয়টাতে তোর ডিটেইল লেখা চাই!
        অহিংসতার রূপরেখা পাওয়া যাবে পৃথিবীর বিখ্যাত সব নেতাদের কাজ থেকে। দারুণ লাগছে ভাবতেই। :happy:

        প্লিজ প্লিজ একটা লেখা দাঁড় করাস।
        পাঠক হিসেবে ছোট্ট একটা আর্তি জানালাম! :love:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।