ঘরের দেয়ালে এরকম মোহনীয় ভাবে চলাফেরা করতে দেখে ইনি বুঝে গেল নতুন অতিথির আগমন। একটু ভাব নিয়ে এগিয়ে স্বাগতম জানানোর জন্য এগিয়ে গেল ইনি। কথোপকথন শুরু হলো দুজনের:
“তোমাকে তো আজ প্রথম দেখলাম, এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে? তোমার মোহনীয় হাটাচলা তো আমাকে ছ্যাত্রিনা এর কথা মনে করিয়ে দিল,নাম কি তোমার?”
“তোমাদের এখানে কি নতুন কাউকে দেখলে এভাবে নির্লজ্জের মত কথা বলতে আসে। যাই বল,ছ্যাত্রিনাকে তোমার ভালো লাগে? আমার আছে তো মনে হয় আমি ওর থেকেও আকর্ষনীয়, কি বল!!”
“না না,কি যে বল,তোমাকে দেখে তো আমি ছ্যাত্রিনার কথা ভুলে গেলাম। বললেনা যে কোথা থেকে এসেছ?”
“আর বলো না, ছিলাম ছাত্রী হলে। ওখানকার মানুষরা একটু বেশি পরিষ্কার,আমাদের কে দেখলেই ধরে ধরে মেরে ফেলে। আর কোনভাবে একটু ভুরিভোজ দেয়া শুরু করলেই টের পেয়ে যায় আর তখন একে একে সবাইকে না মারা পর্যন্ত শান্ত হয় না। একদিন কাকমামা এর সাথে কথা, কাকমামা বললেন যে ছাত্র হলে নাকি আমাদের সবাই অনেক আরামে খেয়েদেয়ে আনন্দে আছে। আর আমি ঐখানে না খেয়ে খেয়ে এইরকম স্লিম দেহের অধিকারী হচ্ছি। তখন কাকমামা কে অনুরোধ করলাম আর উনি আমাকে নিয়ে আসলেন এই নতুন জায়গাতে। সবচেয়ে মজার কথা কি জানো, আসার সময় কাকমামা এক টাকমাথার মানুষের মাথা কি সুন্দর করে সাদা রঙ্গে রাঙিয়ে দিল , এত ভালো তার নিশানা। আমি তো অনেক মজা পেলাম। তখন ভাবতে লাগলাম, ইস! ছারবুকে যদি একটা স্টাটাস দিতে পারতাম….”
ইনি তন্ময় হয়ে ওর কথাগুলো শুনছিল, ভুলেই গিয়েছিল নাম জানতে ওর। নিজেকে ছালমান ছান এর মত সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,”তোমার নাম এখনো জানা হলো না, কি নাম তোমার?”
“আমার নাম মিনি, তোমার নাম কি?”
“কি বলছ, তোমার নাম মিনি!!!! আমার নাম ইনি,আহা আহা ইনি-মিনি কি সুন্দর এক জোড়া ছারপোকা
-তুমি যদি থাক পাশে,
করব মোরা রাজত্ব এই ছারপোকাদের দেশে….”
“তুমি তো বেশ সুন্দর করে কথা বলো , এত ঢং করে কথা কোথা থেকে শিখলে?”
“ইয়ে মানে এইসব কি বলছ, আমি কেন ঢং করতে যাব। যাই হউক আমার কথা বলি, আমি থাকি ওই টেবিলের মোবাইল ফোনগুলোর কাছে, রাত হলেই চলে যাই মোবাইলগুলোর চিপাচুপায়। মানুষ সারারাত কথা বলে , খেয়াল ও করে না আমি কি করছি। এই সুযোগে আমি ওদের কানের চামড়া থেকে ভুরিভোজ টা সেরে নেই। ওরে কত কথা বলে রে!!!!”
“আর তুমি এইসব ঢং এর কথা শিখেছ আড়িপেতে, বলো সত্য কথা স্বীকার করো….”
“কি সব যা টা বলছ, আরে শোনোই না, ওদের মোবাইল এর কথা শুনতে গেলে মাঝে মাঝে আমি রক্ত খাওয়ার কথা ভুলে যাই। মোবাইল এর দুইপ্রান্তের দুই গাধা যে এত মজার মজার কথা বলে আর এত বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে। সবচাইতে সমস্যা হয় যখন মাঝে মাঝে মোবাইলটা কেপে উঠে কথা বলার সময়। আর বলো না একজনের সাথে কথা বলার সময় আরো কতজনের ডাক আসে। একবার হলো কি জানো , আমি ভুলে একটু জোড়ে কামড় দিয়ে দিয়েছিলাম। ভাবলাম আমি তো ধরা পরে গেছি, কিন্তু কি হলো জানো, ঠিক ওই সময় ওই প্রান্তের মধুর কন্ঠের একজন কর্কশ ভাষায় গালি দিয়েছিল। ইস মানুষ এত বিশ্রী গালি দিতে পারে, আর তখন এই মাথামোটা মানুষটা রেগেমেগে আগুন। তখন ইচ্ছামত কামড় দিয়ে রক্ত খাওয়া শুরু করলাম, আহা ঐদিন কত শান্তিতেই না বুফেট খেলাম….”
“বাহ তুমি তো অনেক সুন্দর সুন্দর করে কথা বল,আচ্ছা আমি শুনেছিলাম যে ওদের নাকি ভালো খাওয়া-দাওয়া দেয় না,তবুও ওদের রক্ত এত মজা কেন?”
“আরে বুদ্ধিমান রক্তের স্বাদ, বুঝো না। আর ওরা কি শুধু এইখানেই খায় নাকি, খাবার পছন্দ না হলে বাইরে চলে যায়। একবার কি হলো যেন, আমি ওই মোটা মানুষটার জামার ভিতরে লুকিয়ে ছিলাম। খেতে গেল কিন্তু খেতে পারল না, আমার তখন মনে হলো আজ রাতে আর ওর থেকে আর রক্ত খাব না, বেচারা কিছু খেল না। কিন্তু দেখলাম কি, কয়েকজন মিলে কোথায় যেন গেল। এই বড় বড় মাংস খাওয়া শুরু করলো, মনে হলো কারো পা রাক্ষস এর মত চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। পরে দেখলাম ওরা বলতেসে ঐ টা কি যেন “লেগ রোস্ট”। রাতে এসে তো দিল ঘুম, আর আমরা তখন সবাই মিলে দিলাম জম্পেশ খানাদানা।”
“আমি তো আর অপেক্ষা করতে পারছি না,আমিও তোমার সাথে ভুরিভোজ করব। আচ্ছা মাঝে মাঝে বিপদ ঘটে না,ওরা মাঝে মাঝে আমাদের কে মেরে ফেলার জন্য কি কিছুই করে না?”
“আরে বলো না, সবাই কি সমান নাকি। কিছু চিকন হ্যাংলা-পাতলা মানুষ তো মাঝে মাঝে ওষুধ দেয়, বিছানায় আগুন ধরায়। তখন যারা মারা যায় ওদের জন্য আমরা আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। আর আমরা হলাম ছারপোকা সমাজের সবচাইতে বুদ্ধিমান ছারপোকা দল। এইখানকার ছেলে-পেলেদের রক্ত খেয়ে খেয়ে আমাদের বুদ্ধির ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন অনেক কিছু বুঝি আবার আমরা অনেক রোমান্টিক ও। ছারবুক তো আমাদের ই একজন মহান ছার্ক ছ্য়াখার্বার্গ এর করা। কি জিনিস বানাইসে একখান। আমি কার সাথে এখন টাঙ্কি মারতেসি ঐটাও জানিয়ে দেয়া যায়, তুমি আমারটা খোজ নিতে পারো। আমি কিন্তু এখনো “Single”। ”
“তোমার সাথে যতই কথা বলছি ততই ভালো লাগছে,আচ্ছা আমাকে একটু দেখাও না,কোথায় লুকিয়ে থাকব। সুর্য মামা তো ডুবতে শুরু করলো। কখন ওরা কথা শুরু করবে?”
“আরে অপেক্ষা করো,এত তাড়াহুড়া কেন,আমি তো আছি ই তোমার পাশে তাই না। ”
“না না আমাকে এখনি নিয়ে চল,আমার আর অপেক্ষা সইছে না!”
“ঠিক আছে চল।”
ইনি তখন মিনি কে নিয়ে গেল টেবিল এর উপর,যেতে যেতে ওদের মাঝে ভালবাসার আদানপ্রদান ও হয়ে গেল। ইনি এতদিনে নিজের জন্য খুঁজে পেল এক সার্থক সঙ্গী। ইনি প্রতিজ্ঞা করলো,”আমার মিনি যে থাকে রক্ত-সুখে।” কিন্তু ইনি কি জানত কি অপেক্ষা করছে ওদের জন্য….
টেবিল এর উপর তিনটা মোবাইল ছিল , একটা অনেক ঝকঝকে। মিনি বলল “আমি ঐ ঝকঝকে টার চিপাচুপায় বাসা বাধব”।
“না না, ঐ নতুন টা তে যাওয়া যাবে না।”
“কেন?কেন?”
“ঐটা তে অনেক উজ্জল আলো। ধরা পরে যাব আমরা সবাই। গতকাল ছোপা ছামছু সাহস করে গিয়েছিল,কিন্তু ধরা পরে মারা গেল। পুরান গুলোই ভালো। ওরা পুরান গুলোই বেশি ব্যবহার করে। আর খেয়াল ও করে না ,কি আছে পুরান গুলোর চিপাচুপায়। তুমি তোমার লোভ সামলাও আমার মিনিসোনা।”
“না না আমাকে ঐখানেই যেতে হবে , আমি পুরানো টায় যেতে পারব না। তুমি থাক বাসা করে ঐ পুরানো ঘরবাড়িতে, আমি গেলুম। দেখো আমি রক্ত খেয়ে আবার তোমার কাছে চলে আসব। ভয় পেয়োনা লক্ষী ইনিসোনা আমার।”
মিনি কোনো বাধাই শুনলো না ইনির। একরকম জোর করেই চলে গেল নতুন মোবাইল এর কভার এর ভিতরে। ইনি আজ যেতে পারল না রক্ত খেতে। টেবিল এর কাঠের একটা গর্তে বসে রইলো আর প্রার্থনা শুরু করলো।
হয়ত চিন্তায় চিন্তায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো ইনি। যখন সজাগ হলো তখন বিয়ে ওর রক্ত হিম হয়ে গেল। এগিয়ে গেল ঐ ঝকঝকে মোবাইল টার কাছে। বার বার চিত্কার করেও পেল না মিনি কে। শুধু পেল মিনি এর গন্ধ। ইনি এর ভালবাসা পরিনতি পাবার আগেই শেষ হয়ে গেল। মানুষের এই নিষ্ঠুর আচরণে ইনি পাগল প্রায় হয়ে গেল। রক্ত চোষার দাতে দাত কামড় দিয়ে বলল :
“ছাড়ব না বুয়েট কোনোকাল,
আমাদের কামড়ে হবে ওদের ঘুম খান খান….”
[গল্পের সবকিছু কাল্পনিক….কারো সাথে ঘটনা মিলে গেলে ধরে নিবেন সেটা অনভিপ্রেত কোকিলতালমাত্র ]
-
আর্কাইভ
- জুন 2023
- মে 2023
- এপ্রিল 2018
- নভেম্বর 2017
- অক্টোবর 2017
- সেপ্টেম্বর 2017
- মার্চ 2017
- ফেব্রুয়ারী 2017
- জানুয়ারী 2017
- নভেম্বর 2016
- অক্টোবর 2016
- সেপ্টেম্বর 2016
- আগস্ট 2016
- জুলাই 2016
- জুন 2016
- মে 2016
- এপ্রিল 2016
- মার্চ 2016
- ফেব্রুয়ারী 2016
- জানুয়ারী 2016
- ডিসেম্বর 2015
- নভেম্বর 2015
- অক্টোবর 2015
- সেপ্টেম্বর 2015
- আগস্ট 2015
- জুলাই 2015
- জুন 2015
- মে 2015
- এপ্রিল 2015
- মার্চ 2015
- ফেব্রুয়ারী 2015
- জানুয়ারী 2015
- ডিসেম্বর 2014
- নভেম্বর 2014
- অক্টোবর 2014
- সেপ্টেম্বর 2014
- আগস্ট 2014
- জুলাই 2014
- জুন 2014
- মে 2014
- এপ্রিল 2014
- মার্চ 2014
- ফেব্রুয়ারী 2014
- জানুয়ারী 2014
- ডিসেম্বর 2013
- নভেম্বর 2013
- অক্টোবর 2013
- সেপ্টেম্বর 2013
- আগস্ট 2013
- জুলাই 2013
- জুন 2013
- মে 2013
- এপ্রিল 2013
- মার্চ 2013
- ফেব্রুয়ারী 2013
- জানুয়ারী 2013
- ডিসেম্বর 2012
- নভেম্বর 2012
- অক্টোবর 2012
- সেপ্টেম্বর 2012
- আগস্ট 2012
- জুলাই 2012
- জুন 2012
- মে 2012
- এপ্রিল 2012
- মার্চ 2012
- ফেব্রুয়ারী 2012
- জানুয়ারী 2012
- ডিসেম্বর 2011
- নভেম্বর 2011
- অক্টোবর 2011
- সেপ্টেম্বর 2011
- আগস্ট 2011
- জুলাই 2011
-
সদর দরজা
হা হা…… হাসতে হাসতে তো পইরে গেলাম বাহে…… :rollinglaugh: =))
:yahooo: :guiter:
😀 😀 😀
😀 😀
:rollinglaugh:
:multitalk:
😛 😛
😛 😀
গল্পটা ভ্যীষণ মজার তো! কিন্তু বানানগুলো যদি আরেকটু ঠিক করে নিতেন, তবে আরো মজা নিয়ে পড়তে পারতাম। যেমন, অসুধ, এখিন তাঁকি, খোজ, সুর্য, মাজে>>এগুলো।
কি আর কী এর ব্যবহার জানতে এই লিংকটা দেখতে পারেন একটু সময় করে।
http://shorob.com/2011/08/14/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9F/
ধন্যবাদ, পরবর্তী সময়ে বানান নিয়ে সতর্ক থাকব….
অভ্র স্পেল চেকারের মাধ্যমে সহজেই ভুল বানান শনাক্ত করা যায়।
কাহিনী তো বেশ মজাদার। হাসির ওষুধটা ভালোই দিছেন… :clappinghands: :rollinglaugh:
😀 :beerdrink:
বড়ই মজাদার কাহিনী। :rollinglaugh:
লুল ছারপোকা 😛
ইহা আপনে কী শুনাইলেন??
আমার হাসি থামে না ক্যান???
হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গেলাম….
:rollinglaugh: :rollinglaugh:
ভীষণ মজা পেলাম 🙄 :yahooo:
চালিয়ে যান :clappinghands: