ইন্টারনেট এর নাগরিকবৃন্দ! সত্য = মিথ্যার জগতে স্বাগতম!

প্রথম কথা যে যাই লিখুক আঘাত/ হত্যা কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়াই হতে পারে না। সুস্থ মানুষ, সভ্য মানুষ করতে পারেন না।
থাবা বাবা নামের ব্লগার এর লেখা কুৎসিত/বিকৃত মনে হলে আপনি আমি ইগনোর করতে পারি। প্রতিবাদ করতে পারি।
আঘাত নয়।

তাই সেই নূরানি চাপা সাইট থাবাবাবার কিনা এই সব আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক।

আমি মূলত ১ টা পয়েন্ট পরিষ্কার করতে চাই।

অনলাইনে সত্য আর মিথ্যা যাচাই করা কঠিন হয়ে গেছে।
আপনি/আমি বিপদে পড়ে গেছি। কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা জানি না!
এর আগে লিখেছিলাম কীভাবে আমি এভারেস্ট এ গেলাম আর এর সাথে বিল গেইটস এর মেয়ের সম্পর্কও ব্যাখ্যা করেছিলাম।
এবারে আসি থাবা বাবার সাইট নিয়ে!   (এখন বন্ধ করা হয়েছে। সম্ভবত সরকারি হুকুমে)

থাবা বাবার সাইটটা আসলে কার ছিল?
জামাতিরা এই সাইট ছড়িয়ে অবশ্যই সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু তার মানে এই না যে এই সাইট ওরা তৈরি করেছে।
অথচ প্রচুর প্রগতিশীল/মুক্তমনা/আলোকিত মানুষ কিন্তু শেয়ার করেছেন এই বিষয়।
কীভাবে বুঝলাম এই সাইট আসলে থাবা বাবার করা?

নতুন আরেকটি সাইট দিয়ে উদাহরণ দেই।

থাবা বাবার নূরানী চাপার মতো আরেকটি ধর্ম বিরোধী ব্লগ হচ্ছে এইটা ( ধার্মিকদের কাছে বিনীতভাবে দুঃখিত )

http://muktomona-songho.blogspot.com

ভালো করে দেখুন তারিখ গুলো
অনেকগুলাই একই দিনে দেয়া?
মানুষ এই সাইট অপছন্দ করে অথচ কোন কমেন্ট নাই?
কাহিনী কী?
– মানুষ আসলে এইটার কথা জানেই না! যেমন জানত না থাবা বাবার নূরানী চাপা ব্লগের কথা। যদিও তার অন্য ব্লগ + ফেইসবুক থেকে জানে।
– কমেন্ট নেই এর কারণও সেটাই। মানুষ জানত না।

একই দিনে, অল্প সময়ের ব্যবধানে পোস্ট ক্যান?
– কারণ অনেকেই এইভাবে ব্যাক আপ সাইট করে। কমিউনিটি ব্লগে না রেখে নিজের একটা জায়গায় রাখে। যেখানে ডিলিট করার অধিকার অলমোস্ট কারও নাই!

কীভাবে বুঝব এই সাইট আপনি বানান নাই? কাল পরশু? অথবা ছাগুরা বানায় নাই?
সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উপায়। গুগল ক্যাশ।  (গুগল এ গিয়ে সাইট এর আগে শুধু cache: লিখুন তারপর এন্টার চাপুন)

গুগল ক্যাশের তারিখ যদি ৫ ফেব্রুয়ারি হয়। তার মানে এই না যে ৫ তারিখেই সাইট এ লেখা গেছে। তার মানে এই AT LEAST ৫ তারিখের পুরনো। ৫ তারিখের এর আগেও গুগল ক্রল করেছে।
সর্বশেষ গুগল গিয়েছে ৫ তারিখ।

এখন দেখুন এই ব্লগটি কবে সর্বশেষ দেখা গেছে?
আমি নিজে নূরানী চাপা ব্লগ চেক করে দেখেছিলাম গুগল ক্যাশে সেটা ফেব্রুয়ারি ৫ তারিখ দেখিয়েছিল পরশু দিন।

সবাই যুক্তি দিচ্ছে আলেক্সাতে কোন রেকর্ড নাই, আবার আর্কাইভেও নাই! কাহিনী কী?
http://www.alexa.com/siteinfo/nuranichapa.wordpress.com
http://web.archive.org/web/*/http://nuranichapa.wordpress.com/

কাহিনী হচ্ছে এই ২ টা সাইট গ্রহণযোগ্য কিছু না। এরা গুগল এর মতো বড় কিছুও না। সাইট এ ভিজিটর না থাকলে, অন্য সাইট থেকে লিঙ্ক না করা থাকলে এখানে আসার সম্ভাবনাও কম। ওয়েব আর্কাইভ এর FAQ ((Most sites will be crawled during our regular archiving efforts as long as they are fairly well-linked from other sources)) ও দেখতে পারেন! এই সাইটটা দেখুন না! একই অবস্থা

http://web.archive.org/web/*/http://muktomona-songho.blogspot.com/
http://www.alexa.com/siteinfo/muktomona-songho.blogspot.com/

বাঁশের কেল্লা আর প্যান্টের উপর আন্ডারঅয়্যার নামের ২ টা শিবির পেইজ থেকে উদাহরণ টেনেই বলা যেত কীভাবে অনলাইনে সত্য আর মিথ্যা আলাদা করা কঠিন হয়ে গেছে।
আমি তুলনামূলক ভাবে শিক্ষিত চিন্তা করা লোকদের উদাহরণ দিয়ে বলতে চাইছি অনলাইনে সাবধান হওয়া কতটা জরুরি। ব্রেইনওয়াশড যারা তারা তো ভুল পথে পা দেয়ই – কিন্তু সচেতন বলে দাবি করা লোকেরা কীভাবে ভুল এর শিকার হন?

জামাত শিবির হিজবুত তো ষড়যন্ত্র করছেই এ ছাড়াও বিভিন্ন দলের দলীয় পশুরাও আছে ওঁত পেতে। ইন্টারনেট এ আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে আমাদের মনোযোগ। বিভিন্ন দল মতের লোকেরা নানান কারণে অকারণে আপনার আমার সেই মনোযোগ চায়। সেই মনোযোগ সঠিক জায়গায় দেয়াটা ইন্টারনেট তথা দেশের সুনাগরিক হিসেবে আপনার আপনার কর্তব্য।

আসুন সাবধান হই, সাবধান করি।

বোহেমিয়ান সম্পর্কে

পেশায় প্রকৌশলী, নেশায় মুভিখোর আর বইপড়ুয়া। নিজেকে খুঁজে পাবার জন্য হাঁটতে থাকি। স্বপ্নের সাথে হাঁটা, স্বপ্নের জন্য হাঁটা। https://www.facebook.com/ibappy
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

17 Responses to ইন্টারনেট এর নাগরিকবৃন্দ! সত্য = মিথ্যার জগতে স্বাগতম!

  1. নূহা চৌধুরী বলেছেনঃ

    আসুন সাবধান হই, সাবধান করি।

    যথার্থ ।

  2. জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

    জটিল হয়েছে প্রমাণ। :dhisya:
    আস্তিক ন-আস্তিক বিতর্ক আমার অপছন্দের। কিন্তু, সত্যের ক্ষমতা মিথ্যাকে নিমিষে পরাজিত করা। :haturi: কিন্তু, সত্য=মিথ্যা যেগুলো, সেগুলো ধরা অত সহজ নয়। এই যেমন আস্তিক ন-আস্তিক বিতর্ক, জন্মগতভাবে এ বিতর্ক শেষ হবার নয়। তাই, নৈতিক আন্দোলনে সত্য প্রকাশের সাহস থাকতে হয়। যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেন, তারা যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, তার প্রমাণ বহুদিন ধরেই দেখেছি। বাকিদের মিথ্যা বলাটা অতটা অভ্যাস হয় নি বলতে হয়। :nono:

    আজ এক বন্ধুর সাথে আলোচনা করছিলাম। “ফ্রিডম অফ স্পিচ”,বা “বলার স্বাধীনতা” এটা কি জিনিস? “স্বাধীনতা” শব্দটা যখন আসে, তখন কিন্তু সাথে আরেকজনের ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়। (হোক তা আইনী কি বেআইনী)। তাই, “বলার স্বাধীনতা” আসে অপর একজনের ক্রোধের উপর, অপছন্দের উপর। আমার বলার স্বাধীনতা আছে মানে এই না যে, আমি যা বলছি তা শুনে আপনি হাত তালি দিবেন। বরং, আপনার মতের সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে আমি কথা বললে আপনি তা সহ্য করবেন। তাই, এ বিষয়ক নৃসংসতা কেবল বর্বরতার নামান্তর। 🙁 :thinking:

    সাথে সাথে সত্য্=মিথ্যার আলাপ তো রয়েই যায়। বেশ বিচলিত হই। বিচলিত হই, কতটা ফেসবুকমুখী হয়ে যাচ্ছি আমরা তা ভেবে। সঠিক সংবাদ পৌঁছে দেবার মশাল যাদের হাতে, তাদের দৌড় কত? আজ আফযাল গুরুর মৃত্যুদন্ড নিয়ে “অরুন্ধতী রায়” এর একখানি লেখা পড়ছিলাম। ইংরেজীতে লেখা হলেও লেখাটি সুপাঠ্য (কিছুতেই সুখপাঠ্য নয়)। কষ্ট না লাগলে পড়ে নিতে পারেন।

    ইন্টারনেট নিয়ে বেশ কিছু আলাপচারিতা চালাতে হবে। না হয়, কোথায় কখন এসব দলাদলিতে ফেঁসে যাবো, তার হদিস মিলবে না। :bigyawn:

  3. দারাশিকো বলেছেনঃ

    ফেসবুকে শেয়ার করার এই প্রবণতা বেশ ভয়ংকর, শুধু সাইট শেয়ার করা নিয়ে নয় – বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ছবি, নিউজ শেয়ার করা নিয়েও এরকম ঘটনা দেখা যাচ্ছে। যাচাই করার যোগ্যতা সবার থাকবে না এটা স্বাভাবিক, কিন্তু শেয়ার করার আগে ভাবার যোগ্যতা না থাকাটা স্বস্তিদায়ক নয়। যাই শেয়ার করুক, পরে ভুল প্রমাণিত হবার পর যদি শিক্ষা না হয় তাহলে সেটা ভয়ংকর।

    শেয়ার করার প্রবণতার পাশাপাশি আরেকটা প্রবণতা হল কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরই দুম অভিযুক্ত করার প্রবণতা – এ দোষী না ও দোষী?। এই দিক থেকেও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে।

  4. ম্যানীফোল্ড বলেছেনঃ

    ধর্ম নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হোক!
    ধর্মহীনতা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হোক!!
    মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হোক!!!

  5. শামসীর বলেছেনঃ

    valo laglo lekhata………..

  6. খুব যৌক্তিক!!

    কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, এই যুক্তিগুলোর জন্ম কেন হয়?? যে ধর্মদর্শন স্থান-কাল-উত্তীর্ণ, তাকে তার পূর্ণ মান-মর্যাদা দিতে এত কুন্ঠা কেন? আমার মনোযোগ চাইছে, ষড়যন্ত্র করছে, তার মাঝে ধর্ম কেন? আমি হিন্দু না মুসলিম না নাস্তিক, তা নিয়ে কেন এত টানা-হ্যাচড়া? ধর্ম আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার, তা নিয়ে লোকের এত মাথা ব্যাথা কেন??

    গত আড়াই দিন ধরে এসব নিয়ে ভুলেও মুখ খুলি না, লোকে কি বলতে কি বোঝে তার ঠিক নাই। এর চেয়ে ভাল, যদি হাত দিয়ে কিছু করতে পারি, করব। খালি মাঠে গোল দেবার বড়াই করতে করতে ক্লান্ত।
    লেখাটা পড়তে এসে একটু মুখ একটু খুলেই গেল। সরি।

    • জ্ঞানচোর বলেছেনঃ

      মুখ খোলার অধিকার দিতেই তো এই ব্লগের আস্তানা। মুখ খোলার সুযোগ যেমন থাকতে হবে, তেমনি সমালোচনা সহ্য করার অঙ্গিকারও চাই।

    • ফিনিক্স বলেছেনঃ

      যার যার বিশ্বাসের জায়গায় সে সে ঠিক থাকলে মনে হয় সমস্যা এড়ানো সহজ হয়। অন্য কে-কী করল, কেন করল, কী তার উদ্দেশ্য ছিল- এইসব সমালোচনা করা আসলে অহেতুক সময় নষ্ট।

      যদি কাজ করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে যুক্তিসহ ধর্মের প্রচার ঠিকভাবে করা উচিত, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম *জন্মসূত্রে ধার্মিক* না হয়ে জেনে-বুঝে ধার্মিক হয়। সেইটাই মনে হয় আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

      • প্রতিটা মানুষেরই একটা স্বকীয়তা আছে, আছে ব্যক্তিস্বাধীনতা। তাতে আঘাত করবার অধিকার কারো নেই। পাশের বাড়ীর ভদ্রলোক কি করছেন, তা আমার ঘাড়ে এসে পড়বার আগ পর্যন্ত আমার কিছু বলাটা অনেকক্ষেত্রেই ‘হুদাই’ নাক গলানো। বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিত এই কাজটা মোটেও সমর্থিত হতে পারেনা। আমার মতে নাস্তিক, আস্তিক, ধার্মিক – ৩ টাই একজন মানুষের একান্ত একান্ত একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবং এই ব্যক্তিগত ব্যাপারটা নিয়ে আমরা এই ‘হুদাই’ কাজটা ইদানিং মারাত্বক সাফল্যের সাথে করছি।

        আমাদের দেশের মুসলমানরা ধর্ম পড়ে কেবল পরীক্ষা পাসের জন্যে। পাব্লিক পরীক্ষায় ধর্ম কম্পলসারি তো, তাই!! কোরানের কথা বলতে গেলে বলা যায়, শতকরা ৬০ জন কোরান পড়েছে। অন্তত তার অর্ধেক কোরান খুব সুন্দর করে পড়তে পারে। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, অর্থ বুঝে কোরান ক’জন পড়েছে, সেইটা ০.০১% ও হয় না!! আর কারো কথা/ব্যাখ্যা ভেরিফাই করে দেখবার কালচার তো কোন কালেই আমাদের মাঝে নাই। এর ফলাফল হল, না বুঝেই আমরা ধর্ম ব্যবসায়ীর মনগড়া ব্যাখ্যা মাথা পেতে নেই আর উল্টা-পাল্টা কাজ করি। ফাঁকে পড়ে প্রকৃত ধর্মচর্চাকারীরাও হয় বিভ্রান্ত। আজ যা হল, তা তো … বলার ভাষা নাই আমার। আমি নিজে দেখেছি। এই ঘটনা কিন্তু এক অর্থে বহুকাল ধরে এই ট্র্যাডিশান চলার কারণেই ঘটেছে! আমাদের দেশের ধর্ম বিশ্বাসটা খুব শক্ত, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ম শিক্ষা ঠিক ততটাই দুর্বল। যখন ধর্ম শিক্ষা সবার জন্যে বাধ্যতামূলক, আমরা তখন সামান্য কিছু হলেই দৌড় দেই ‘মোল্লা সাহেব’র কাছে! আর সেই ‘মোল্লা সাহেব’দের মাঝেই অনেকক্ষেত্রে ভেজাল ঢুকে গেছে। একদল অযাচিত ঘৃণ্য পশুর জন্যে আমরা সবাই ধকল পোহাচ্ছি।

        একেবারে কিছু করি না, তাও ঠিক না। না বুঝে যেন ধর্মকে কেউ বিশ্বাস না করে, তার জন্যে একটা প্রজেক্ট করার ইচ্ছা আছে। সেসব নিয়ে সময় হলে বলব।

        মনে হয় বেশি কথা বলে ফেললাম। :thinking:

  7. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
    এক এক করে মন্তব্য করব আশা করি

  8. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    কোন জায়গাতেই দ্বিমতের অবকাশ নেই।
    অসাধারণ বিশ্লেষণ!

    অথচ প্রচুর প্রগতিশীল/মুক্তমনা/আলোকিত মানুষ কিন্তু শেয়ার করেছেন এই বিষয়।>>নিজের অজান্তেই মাঝে মাঝে লজিক্যাল ফ্যালাসির ভেতরে ঢুকে যাই আমরা। সেকারণেই বোধহয় এইরকম ব্যাপারগুলো ঘটে।

  9. অনাবিল বলেছেনঃ

    অনলাইনে সত্য আর মিথ্যা যাচাই করা আসলেই কঠিন হয়ে গেছে। সাবধান না হয়ে উপায় নেই… আর সাবধান করাটা দায়িত্ব……

  10. শুকপাখি বলেছেনঃ

    ভাইয়া,পড়ে অনেক কিছুই জানলাম।আসলেই সাবধান হওয়া দরকার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।