সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা :)

নাক ডাকার বিরামহীন শব্দে অতিষ্ট বাড়ির গৃহকর্ত্রী। আর সে কি যে সে নাক ডাকা?? নাক ডাকার শব্দে প্রকম্পিত চারিদিক। বাড়িতে বর্তমানে আছেও শুধু গৃহকর্তা আর গৃহকর্ত্রী। গৃহকর্তা রাতে যে সেই ভাঙ খেয়ে ঘুমাইছে তো আর উঠা উঠির নাম নাই। ঘুমিয়েই যাচ্ছে।

গৃহকর্ত্রীর তো মেজাজ সপ্তমে উঠে গেলো। তার নিজের বাড়িতে ঐ অসুর ব্যাটাকে থাকতে দিছে মর্ত্যে যাওয়ার আগে কয়েকদিনের জন্য। কিন্তু, এসেই বাড়ি মাথায় তুলেছে নাক ডেকে। আবার নাক যে ডাকছে একটা সুরে সুরে ডাক তা হলেও তো শুনতে ভালো লাগত। তা না, অসুর তার নামের মতো অ-সুরে নাক ডাকছে।

অবশেষে গৃহকর্ত্রী মা দূর্গা অসুরের ঘরের দরজায় কড়াঘাত করল। সেই কড়াঘাতের বিকট শব্দে অসুরের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
“কে??”
“আমি”
মা দূর্গার গম্ভীর আওয়াজ মূহুর্তের ভিতর অসুরের ঘুমকে তাড়িয়ে দিল। দরজা খুলল।
“মা, ডাকছ আমায়”
“হুম… বলছি এত জোরে জোরে নাক ডাকাডাকি হচ্ছে কেন?”
“ওটা তো আমার স্বভাব। আর তুমি তো জানই অসুর স্বর্গে গেলেও নাক ডাকে। আর এটা তো আমি ইচ্ছা করে ডাকি না। ঘুমের মধ্যে কোন এক বদমাইশ এভাবে আমার নাকের ভিতর ঢুকে হয়ত ডাকাডাকি করে। যদিও আজ অবধি আমি নিজে আমার নাক ডাকাডাকি শুনলাম না।”
মা এই কথা শুনে কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল অসুরের দিকে।
তারপর বলল, “তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমাদের আবার মর্ত্যে যেতে হবে। আর সকাল থেকেই কার্তিক, গণেশকে খুজে পাচ্ছি না। ওদের খুজে বের করে ওদের রেডী হতে বল।”

অতঃপর যথাসময়ে মা দুর্গা তার চার ছেলে-মেয়ে আর অসুরকে নিয়ে রওয়ানা দিল তার বাবার বাড়ির দিকে। ওহ !!! মহাদেবাদিদেব শিবও আছেন তাদের সাথে। তিনি এখনও ঘুমিয়ে আছেন। তাই তিনি অসুরের পিটে রয়েছেন।

মর্ত্যে পৌছায় তারা দেখতে পারলেন চারিদিকে বইছে আনন্দের জোয়ার। সবার মনে আনন্দ মা কে পাওয়ার। সবাই নতুন জামাকাপড় পড়ে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে করছে নানা আনন্দ।

অসুর তো মর্ত্যে পৌছিয়েই বিশাল খুশি। তার তরোয়াল নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ খপ করে এক নিরস পুলিশ অফিসার তাকে ধরল।
“ঐ তুই কে?? তরোয়াল নিয়ে ঘুরছিস কেন??”
“জি আমি অসুর। এটাই কোন ধার নাই।”
পুলিশ তো আর ফুলিশ না। ভাবল, আবুল মনে হয় মাল টা। ধরে নিয়ে যাই। তারপর ক্রসফায়ারে ক্রস করে দিব নে। বলে দিব নে, কুখ্যাত সন্ত্রাসী অসুর নিহত। আর যদি ব্যাটা আবুল না হয় তাহলে তো আমারে কিছু মালপানি ছাড়বেই।
বলল, “ঐ তোকে গ্রেপ্তার করা হল।”
অসুর হুংকার ছেড়ে বলল, “কে মোরে গ্রেফতার করতে পারে??”
বলেই দিল অট্টহাসি।
অট্টহাসি শেষ হতে না হতেই মুখে পড়ল পুলিশ বাবাজির এক থাপ্পড়।
থাপ্পড় খেয়েই অসুর কাঁদকাঁদ গলায় বলল, “হুজুর, ভুল হয়ে গেছে। ছেড়ে দেন।”
“এমনি এমনি ছেড়ে দিব না কি??”
“না না দিচ্ছি দিচ্ছি।”
পুলিশ তো ভাবল যাক ব্যাটা বুঝছে কি দিতে হবে। মনে মনে খুশি হল।
অসুর তার তরোয়ালটা আগিয়ে দিল।
“এটা কি??”
“এটাই তো চাচ্ছিলেন বলে আমায় ধরলেন। তাই এটা আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি।”
“তোর মাথা। পকেটে কিছু মাল-টাল আছে?? থাকলে দে।”
অসুর বলল, “আমার তো কোন পকেট নাই। কেমনে দিব??? আমার কাছে কিছু নাই।”
বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাদতে লাগল অসুর।
পুলিশ অসুরের কান্না শুনে তার মন গলে গেল। অসুরকে ছেড়ে দিল। আর বলল, “সামনে এসব নিয়ে যেন ঘুরতে না দেখি আর।”
অসুর ছাড়া পেয়ে দিল ভো দৌড়।

এদিকে মা লক্ষী পড়েছে বিপদে। তার ধানের পাত্রটা নিয়ে ঠিকমতো মার্কেটিং করতে পারছে না। আর জিনিষ পত্রের নাম দেখে তো টাশকি খাওয়ার জোগাড়। কি সব নাম—- পাগলু, ধুম…. সবাই দেখি শাড়ি পড়া ছেড়েই দিছে। যেদিকেই তিনি তাকান সেদিকেই দেখেন সবাই পড়ে আছে কামিজ। আবার কোন কোন মেয়ে শার্ট প্যান্টও পড়ে আছে। মা তাদের দিকে তো লজ্জায় তাকাতেই পাড়েন না। ভাবলেন, ছেলেদের পোষাক আবার মেয়েরা পড়া শুরু করল কবে থেকে।
আনেক খোজাখুজির পর তিনি শাড়ি পছন্দ করতে পারলেন। কিন্তু দামাদামি করতে গিয়ে মাথায় পড়ল হাত। তখন ভাবলেন, মেয়েদের শাড়ির এত দাম বলেই হয়ত মেয়েগুলো ছেলেদের পোষাক পড়া শুরু করছে।
অবশেষে খালি হাতেই ফিরে আসলেন।

সরস্বতী এসেই প্রথমে যেতে চাইলেন বিউটি পার্লারে। কিন্তু মর্ত্যে নেমেই ঢাকার সুপ্রতিষ্টিত এক বিউটি পার্লারের লুক্কায়িত ক্যামেরার কথা শুনেই তিনি সেই প্ল্যান বাদ দিল। তারপর বীণা হাতে দেবী ভাবলেন যাই রেকর্ডিং কোম্পানিতে একটা গান রেকর্ড করে আসি।
আসলেন এক সুরকারের কাছে।
“আচ্ছা আমি বীণার সুন্দর শব্দের সাথে গান রেকর্ডিং করতে চাই।”
“বীণা কি জিনিষ??”
“এই যে আমার হাতে যেটা দেখছেন সেটা।”
“এই যন্ত্র তো আমি প্রথম দেখছি। আপনি দাড়ান আমার কম্পিউটারের শব্দের সাথে রেকর্ডিং করুন।”
“ওটা কিভাবে হবে।”
“দেখুন বীণা বিনা এখানে রেকর্ডিং হয়। আর আমার সব গান তো শুনছেনই কম্পুর সাথে মিলিয়ে এমন করে দিব যে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন না এটা আপনি গাইছেন।”
তারপর সেই সুরকার দেখাল কেমনে কিছু না জানলেও কাকের মতো কর্কশ কন্ঠে গান গেলেও কম্পুর সাহায্যে গানের সব পরিবর্তন করা যায়।
দেবী এসব দেখে বীণা হাতে হতভম্ব হয়ে চলে গেল। গান আর গাওয়া হলো না।
তারপর ভাবলেন এখনকার যুগে কেমন নাচ হয় সেটা দেখবেন। নাচের এক মিউজিক ভিডিও দেখেই তার চোখ চড়কগাছে উঠল। সেই আশাও মিটে গেল।
আর বিদ্যার ক্ষেত্রে তিনি দেখলেন সবাই আজ নতুন বুকে আসক্ত। তার নাম ফেসবুক।

কার্তিক নেমেই দেখা পেলেন মোবাইল নামক এক যন্ত্রের। আর দেখা পেলেন ফেসবুকের। দেখলেন বুড়ো থেকে আজ কিছুক্ষণ আগে যার জন্ম হল তারও ফেসবুক আছে। এমনকি ছাত্ররা বর্তমানে নিজের পড়ার বুক-এর থেকে এই ফেসবুকেই বেশি সময় কাটাই।
তার এক বন্ধু তো বলেই ফেলল, “তোর কোন স্ট্যাটাসই নাই।”
“কেন??”
“কারণ তোর ফেসবুক আ্যাকাউন্ট নাই তাই।”
“ও”
“শোন, শুধু ফেস থাকলেই হবে না। সাথে ফেসবুক থাকা চাই। নইলে কিন্তু দাম নাই। আর যাই হোক না কেন ফেসবুকে আগে আগে সব পাবি। এখন তো সবাই ভূমিকম্প হলেও আগে ভাবে ফেসবুক খুলে স্ট্যাটাস দেয় তারপর পালাই।”
কার্তিক ভাবল হয়ত আসলেই ফেসবুক এমন এক বুক যেখানে ফেসটা রাখতে পারলেই স্ট্যাটাস মুহুর্তের মধ্যে বেড়ে যাবে।
এরপরই মহা আগ্রহে ফেসবুকে আ্যাকাউন্ট খুলল কার্তিক।
আর স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস দিতে লাগল।
ঘুম থেকে স্ট্যাটাস, ঘুম থেকে উঠছি।
পূজার সময় স্ট্যাটাস, এখন পূজা হচ্ছে।
খাওয়ার সময় স্ট্যাটাস, এখন খাচ্ছি।
ঘুমানোর সময়, ঘুমাইতে গেলাম।
আরও কত কি……………………………

আর ওদিকে গণেশ একদিন কেএফসি, অন্যদিন পিজা হাট, আরেক দিন স্টার এসব করে বেড়াতে লাগল। আর ভুড়িভোজ করে তার পেটের প্রস্থ বেড়েই চলল।
কিনতু বেচারা ধরা খেল তার বিশাল পুজি শেয়ারে খাটিয়ে। তারপর থেকেই গণেশের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে টায়ার জালিয়ে সবার সাথে শেয়ার করে রাস্তা সে। আর সাথে পুলিশের লাটিচার্জ। বেচারা এমনিতেই নড়তে চড়তে কষ্ট তার সাথে এসব আর কাহাতক সহ্য হয়।
অবশেষে সব হারিয়ে বুঝল গণেশ ব্যাবসা কি জিনিষ বর্তমানে।

আর মা দূর্গা বাবার বাড়িতে নানা আদর যত্নের মধ্য দিয়ে দিন কাটাল। সবার আরজি শুনল। আর সবার মঙ্গল করে দূর্গতি নাশ করবেন এমন আশা দিল।
সবার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।

সবার কথায় বলা হল। শুধু একজন ছাড়া। কারণ তিনি মর্ত্যে আসিয়া দেখলেন এখানকার কেউ ভাঙ খায় না। সবাই ফেনসিডিল, ইয়াবা, সীসা সহ আরও নানা নাম না জানা মাদকে আসক্ত।
কিন্তু, দাম আর নাম শুনেই তার খাওয়ার ইচ্ছা উবে গেল।
তিনি চুপচাপ তাই বসে থাকলেন শশুড়বাড়িতে।

অতঃপর দশমী আসল। মা সবাইকে নিয়ে বিদায় নিলেন। আর দেব দেবী হাফ ছেড়ে বাচলেন।

সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।
জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে আসুন কাটাই পূজার দিনগুলি।

ভাবের পাগল সম্পর্কে

আমি একজন কসাই ভদ্র ভাষায় ডাক্তার। কসাই থেকে মানুষ হবার চেষ্টা করছি। অবশ্য কোন কিছু ভালভাবে প্রকাশ করতে পারি না।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা :)

  1. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    আপনাকেও শারদীয় শুভেচ্ছা। 🙂 অনেক ভালো লাগল।

  2. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    শারদীয়ার শুভেচ্ছা আপনাকেও। 🙂
    লেখাটা এমনিতেই ভাল হয়েছে। বানানের দিকে একটু খেয়াল রাখলে আরো ভাল হত। এই পোস্টটা পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি, আপনার উপকারে আসবে।

    http://shorob.com/2011/08/14/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9F/

  3. অনাবিল বলেছেনঃ

    শুভেচ্ছা!
    ভালো থাকুন!

  4. শিশিরকণা বলেছেনঃ

    অনেক অনেক শারদীয় শুভেচ্ছা…. 😀

  5. কিনাদি বলেছেনঃ

    শুভেচ্ছা 🙂

  6. মুবিন বলেছেনঃ

    শারদীয় শুভেচ্ছা আপনাকেও 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।