কে যেন বলেছিলেন, একদিন আমজনতার তথ্যের উৎস হিসেবে পত্রিকা টিভির সমান্তরালে চলে আসবে ফেসবুক টাইপের সাইটগুলো। আমার ক্ষেত্রে কথাটি এখনই সত্যি– ভূমিকম্প হয়েছে কিনা সেই খবরটাও ফেসবুক থেকেই পাই! খুবই স্বাভাবিক, বাংলা প্রমিত ফন্ট ‘আমার বর্ণমালা’ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি প্রকল্পটির ফেবু পেজ থেকেই। আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম এর উদ্বোধনের জন্য– আজ একুশে ফেব্রুয়ারি অবশেষে মুক্তি পেল ফন্টটি। টেকনিক্যাল বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞান যৎসামান্য, তাই একজন আম-ব্যবহারকারীর দৃষ্টিকোণ থেকেই লিখছি।
যথারীতি ফন্ট মুক্তি পাবার খবরখানি ফেবু বরাতেই পেলাম, সাথে সাথেই নামিয়ে নিলাম অফিসিয়াল সাইট থেকে।
প্রথম ইম্প্রেসন– আহা সুতন্বী ফন্টটি তো এর চেয়ে কত বেশি কিউট ছিল 🙁 ওয়ার্ডে কিছুক্ষণ টাইপ করতে গিয়ে সেকেন্ড ইম্প্রেসন– আরিব্বাহ যুক্তাক্ষরগুলো তো দারুণ!
ফেসবুকেও দেখলাম মিশ্র প্রতিক্রিয়া– অনেকে বলছেন ফন্টটি দেখতে মোটেই সুন্দরী নয়, অনেকে যুক্তাক্ষরগুলোকে ঠিক আপন মনে করতে পারছেন না! আসলে ঘটনা অন্যখানে, এই ফন্টটি তৈরির উদ্দেশ্য কিন্তু সুন্দরী প্রতিযোগিতায় মুকুট অর্জন নয়, বরং বাংলা বর্ণমালার একটি আদর্শ/প্রমিত ফন্ট-রূপ নির্ধারণ করে দেয়া!
অভ্রের কল্যাণে কম্পিউটারে বাংলা লেখা এখন দারুণ সহজ, দারুণ জনপ্রিয়– ফেসবুক স্ট্যাটাসের গড় দৈর্ঘ্য প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বেড়ে যাচ্ছে! এই অভ্র সহ অন্যান্য সফটওয়্যার এবং ফন্টগুলো কিন্তু বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি, উদ্যমী তরুণদের পরিশ্রমের ফল। ‘আমার বর্ণমালা’ একটি সরকারি উদ্যোগ– বাংলা ফন্টকে প্রমিত [স্ট্যান্ডার্ড] করতে বাংলা একাডেমি, ঢাবির গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগ একত্রে কাজ করেছে।
তা কী এমন দরকার ছিল নতুন ফন্টের?
বাংলা একাডেমির ভাষাবিদগণ কিন্তু গবেষণা করে যাচ্ছেন কীভাবে বাংলা ভাষাকে আরও সহজ, উন্নত ও আধুনিক করা যায় তা নিয়ে! তারই অংশ হিসেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছেন তাঁরা, যেমন যুক্তাক্ষরে, আর সেই পরিবর্তিত স্ট্যান্ডার্ড অনুসারেই তৈরি আমার বর্ণমালা ফন্ট। একটি উদাহরণ দেখুন,
খেয়াল করুন, আপনার কাছে এটি অতি সহজ একটি যুক্তাক্ষর, কিন্তু একটি শিশুকে যুক্তবর্ণ হিসেবে তৃতীয় একটি চিহ্ন শিখতে হচ্ছে, বিদেশী কারও জন্য বাংলা পাঠ মাথার কয়েক ডিগ্রী বেশি উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নতুন ফন্টে,
ক এর পাশে ত লিখে দিলেই হয়ে গেল! আমাদের মত পুরান আমলের লোকদের জন্য হয়ত কিঞ্চিত পেইন, কিন্তু ভাষা এতে সহজ হয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে!
ফন্টটির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এটি ইউনিকোডে তৈরি, ফলে যেকোন কম্পিউটারে লিখতে, ইন্টারনেটে সার্চ করতে ও অন্যান্য কাজে বিশ্বজনীনভাবে এটি ব্যবহার করা যাবে।
এই প্রকল্পের অধীনে তিনটি ফন্ট বের হবার কথা, আপাতত শাপলা ফন্টের বিটা ভার্সন বের হয়েছে। পথচলা কেবলই শুরু, সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত! শুরুর দিকে ত্রুটি কিছু থাকতেই পারে, তাতে উদ্যোগটির তাৎপর্য ক্ষুণ্ন হয় না। যেমন, “র্যাব” এর র য ফলা আকার যুক্তাক্ষরটি লিখতে গেলে ফন্টে সমস্যা হচ্ছে। ওয়েবসাইটটিতেও বানান ভুল চোখে পড়েছে, করবি তো কর একেবারে প্রধানমন্ত্রী বানানটাই ভুল করে বসেছে :haturi: যাকগে, ব্যাপার না! 😀
দিনশেষে কথা, এখন যেহেতু আদর্শিকরণের কাজটা হয়ে গেল, সুন্দরী প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা যেতে পারে! আরও অনেক রোমান্টিক ফন্টের অপেক্ষায় থাকলাম! :love:
শেষ করছি ট্রেইলার ভিডিওটি দিয়ে, https://www.facebook.com/photo.php?v=10151419710308444
বাংলা লেখার ফন্ট পরিবর্তন করলে সেটা অনেক বড় effect ফেলার কথা, কার বাংলা তো শুধু বাংলাদেশের না, বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কয়েকটি দেশের অনেক মানুষ বাংলায় কথা বলে। পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান (সেটা ভালো কি মন্দ তা দেখবার বিষয়, বাংলাদেশে পশ্চিমবাংলার লেখকদের যে বিশাল চাহিদা আছে সেটার কথা বলাই বাহুল্য) তা যে এই ফন্ট কার্যকর হলে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে না তা বলা যায় না। আমি কিছুটা সন্দিহান, ভাষা চলমান বলে যে আমরা তার ঘাড় ধরে পথ ঘুরিয়ে দেব তাতো না। তাছাড়া আমরা যা পেরেছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তা পারবে না তা কেন? বিশেষ করে বাংলা যুক্তবর্ণের অকৃত্তিম রূপটাই তো অন্তঃতপক্ষে আমার কাছে বেশী সুন্দর লাগে। প্রমিত রূপ তো আর গাছে ধরে না… বহুকাল চর্চার মাধ্যমেই আসে। আর এই ফন্টকে একটা সাধারণ ফন্ট হিসেবে না ধরে একেবারে “প্রমিত” ফন্ট হিসেবে চালিয়ে দিলে পাবলিক কতটুকু “খাবে” তাও বলা যায় না। এ বিষয়ে ভাষাপন্ডিতগণ কি বলেন তা দেখার অপেক্ষায় আছি।
যাই হোক, এতদিন পরে বাংলা একাডেমীর যে ঘুম ভাঙলো তা সুখকরই বটে।
আমার জানামতে স্কুলের বইগুলোতে এই যুক্তাক্ষরগুলো অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কেবল প্রচলিত কম্পিউটার ফন্টে লিখবার উপায় ছিল না! ভাষার কোন পরিবর্তন কেন আনা হচ্ছে তা নিয়ে আমার মত আমজনতার বাংলা একাডেমির উপরই ভরসা করতে হয়, এ বিষয়ে তো পড়াশোনা নেই! আমরা পেরেছি দেখেই ভাষার উন্নয়ন দরকার নেই এর সাথে একমত নই, আর উন্নয়ন হতে হলে বিশেষজ্ঞদের গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করতেও আমার আপত্তি নেই। বাংলা একাডেমির ঘুম ভাঙ্গা সুখকর বটে! 😀
যুক্তাক্ষরের যুক্তিটার সাথে মোটেও যুক্ত হতে পারলাম না। 🙁
নিজের জ্ঞানের অভাব মনে হয়। ফর্সাকরণ লাগবে।
এটি যতটা না যুক্তি, তার চেয়ে বেশি ব্যবহারকারীর মতামত! আমার কাছে সহজ মনে হয়েছে, বন্ধুদের অনেকের কাছেই লাগেনি। সত্যিকার ভাষাগত বিশ্লেষণ করার মত জ্ঞান আমার নেই!
হুম… আমাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বলে হয়ত ‘কেমন কেমন’ মনে হচ্ছে!! তবে ব্যাপারটাকে যে যেভাবেই দেখুক, আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। At least “একটি শিশুকে যুক্তবর্ণ হিসেবে তৃতীয় একটি চিহ্ন” শিখতে হবে না, এটা আসলেই একটা বিরাট লাভ। সহজ করার উপায় যেখানে আছে, সেখানে কেন শুধু শুধু জটিলতার মধ্যে যাওয়া??
চমৎকার উদ্যোগ!! :happy:
আর… রাইয়্যান ভাইয়াকে ধন্যবাদ ফন্টটার ব্যাপারে সুন্দর একটা রিভিউ দেয়ার জন্য। :love:
এই তৃতীয় চিহ্নের যুক্তিটি কিন্তু একেবারেই আমার ধারণা মাত্র, কোন ভাষাগত বিশ্লেষণ থেকে বলিনি! একজন বিদেশীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বুঝা যায়, বাংলা ভাষা শেখা অন্যদের জন্য কিঞ্চিত কঠিন বৈকি। সহজ হলে এর জনপ্রিয়তা বাড়বে বৈ কমবে না! আর আমরা যারা বাঙালী আছি তারা তো একে মন থেকে চিরকালই ভালবাসবো! :love:
ধন্যবাদ! :love:
চমৎকার উদ্যোগ
যদিও কেমন যেন লেগেছে মনে হয় অভ্যাসের কারণে
আর এইসব বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই 🙁
হিহি আরও রোমান্টিক ফন্ট হবে সামনে! তখন মন ভালো হয়ে যাবে! 😀
প্রধানমন্ত্রী বানান এর স্ক্রিন শট দিতা!
বলেন কী! সরব না ইতিবাচকতা প্রমোট করে? 😀
সরকারী ভাবে এমন কাজ হচ্ছে জেনে খুশি… 🙂
ফন্টটা ডাউনলোড করতে হবে…… 🙂
পাকিস্তানী আমলের ক্যাড়া আবারো মাথায় উঠছে নাকি বাংলা একাডেমী’র?
সহজ বাংলা…
সহজ যুক্তাক্ষর
ব্লা ব্লা … ব্লা ব্লা …
এই প্রস্তাব/উদ্যোগ “বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম” এর ৩.০১ ধারা’র স্পষ্ট লংঘন ।
আর এসবে পড়তে বিশাল প্যারা, ক্ত রে ক্ত লেখলে পরে কোন মজা নাই ।
অভ্যাস থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য বলেই হয়তোবা চোখে একটু লাগছে! 🙁