মনে করুন, একজন সুপাত্র তার নিজের জন্য বউ খুঁজছেন, কিংবা, একটি পরিবার তাদের সুযোগ্য পাত্রের জন্য যোগ্য পাত্রী খুঁজছেন। একজন যোগ্য পাত্রীর সংজ্ঞা তাদের কাছে কি হবে?
তথাকথিত সমাজের চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শর্তই হবে- পাত্রী অবশ্যই ‘সুন্দরী’ হতে হবে, তাই তো?
(অনেকে আমার সাথে এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করবেন যদিও, তবে নিজেকে আরেকবার প্রশ্ন করে দেখুন তো আমাদের এ সমাজে কথাটার ভিত্তি আসলেও আছে কি না!?!)
একজন মেয়ে তাই যখন নিজের সৌন্দর্য্য বর্ধনে কোন সৌন্দর্য্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয় তখন সেটাকে কি বলবেন? বিলাসিতা? নাকি প্রয়োজনীয়তা?
বিলাসময় প্রয়োজনীয়তা, বা, প্রয়োজনীয় বিলাসিতাও বলতে পারেন!
কিন্তু সেই প্রয়োজনীয় বিলাসিতা, বা, বিলাসময় প্রয়োজনীয়তা পূরণে যখন সেই নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়, তখন আমরা আঙ্গুল তুলি কার দিকে? এই সমাজ নাকি সেই নারীর দিকে?
এসময়ের সবচেয়ে তপ্ত উত্তপ্ত আলোচনার টপিক- “পারসোনার ঘটনা, সত্য নাকি গুজব?”!
এই প্রশ্নের উত্তর আমার নিজেরও জানা নেই। এর সত্যতা ঘাটতে যতই বিভিন্ন আর্টিকেল/ কলাম কিংবা ব্লগ পড়ছি(কারণ, জাতীয় গণমাধ্যমগুলো এ ব্যাপারে নীরব!), পানি ততোটাই ঘোলা হচ্ছে!
‘বাকস্বাধীনতা কি তবে শুধুই স্বপ্ন!’
তবে, পারসোনার স্বত্ত্বাধিকারী যেখানে নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন যে সেই গোপন কক্ষে গোপন ক্যামেরা ছিল, সেখানে পানি ঘোলা হলেও ব্যাপারটা স্বচ্ছ।
‘ডিজিটালতার’ যুগে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার গ্রহণযোগ্য, কিন্তু তাই বলে একটা ‘প্রাইভেট’ রুমে?
এই অপ্রিয় সত্যটাকে কি করে গ্রহণ করা যায়? আর তার উপর এর যৌক্তিকতা দেয়া হয়েছে কীভাবে? ‘নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তার’ দোহাই দিয়ে!?!
জীবনে ‘নিরাপত্তা’ আমাদের মানবাধিকারগুলোর অন্যতম একটি- এটা আমাদের সবারই জানা। কিন্তু তাই বলে নিরাপত্তার অধিকার রক্ষার্থে ‘রাইট টু প্রাইভেসি’র মতো আরেকটি মানবাধিকার হরণ করা হবে- এ কেমন যৌক্তিকতা?
আর সেই অধিকার হনন করে চলবে পারসোনার কর্ণধারের অবৈধ ব্যবসা? তবে এই অভিযোগ নিয়ে কোন প্রকার সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়া তর্ক করতে যাওয়াটা আমার অযৌক্তিকতার প্রমাণ দেয়া হবে।
কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যায়, অবৈধ ব্যবসা না করলে সেই গোপন রুমে গোপন ক্যামেরা লাগানোর উদ্দেশ্য কি?
এই যুক্তি-অযুক্তির লড়াই চলছে, চলবে। এ তর্কের যাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পাঠিকারা জেনে নিন শপিং মলের ট্রায়াল রুম, অথবা, পার্লারের চেঞ্জিং বা স্পা রুমের মতো গোপন রুমে গোপন ক্যামেরা শনাক্ত করার উপায়-
১। গোপন ক্যামেরা আছে সন্দেহ হলে, চারপাশ ভাল করে দেখুন। মূলত ছাদের কোণা, দেয়ালের ছবি, ফুলের টব অথবা আয়নার পিছনে বসানো হয় এটি। সুতরাং এই জায়গাগুলি ভাল করে খেয়াল করুন।
২। সিডি প্লেয়ার বা এজাতীয় বস্তুতেও বাসনো হয়। মুলত রুমের অন্ধকার এলাকা গুলিতে গোপন ক্যামেরা বসানো হয়, যাতে আলোকিত এলাকার ছবি ভাল মত আসে।
৩। রুম পুরোটা অন্ধকার করে কিছু সময় নিন, যাতে করে চোখ অন্ধকারকে সয়ে যায়। এবার খুব ভাল করে দেখুন …লাল, সবুজ বা হালকা নীল কোন আলো কোথা থেকে বের হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। যদি খুঁজে পান তবে ধরে নিতে পারেন সেটা ক্যামেরা।
৪। এটি একটি পুরানা পদ্ধতি তবে অনেক সময় কাজে লাগে, রুমের সকল তার গুলি খেয়াল করুন, কোন তার কোথায় গেছে সেটি বুঝার চেস্টা করুন। তার গুলির মাঝে যদি একটি তার বিশেষ কোন কোণায় চলে যায় বা এরকম সন্দেহ করেন তবে তার গন্তব্য এর শেষ টা দেখুন, পাইলেও পাইতে পারেন…..
৫। অনেক ক্যামেরাতে “মোশনডিটেক্টর” থাকে। মানে হলো আপনি রুমের যেদিকে যাবেন ক্যামেরার লেন্স অটোমেটিক সেই দিকে ঘুরে যাবে। আপনি রুম অন্ধকার করে একটি সময় নিন। এরপর খুব সাবধানে শব্ধ না করে রুমের এদিক থেক ওদিক যান। কান খাড়া করে কোন শব্দ পান কি না খেয়াল করুন। আপনার নড়াচড়ার সাথে সাথে যদি হালকা লেন্স ঘুড়ার শব্দ পান তবেই বুঝবেন কাজ হয়ে গেছে….
৬। অতি আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় , যা গোপন ক্যামেরা সনাক্ত করতে পারে। সেগুলি মুলত চীনে তৈরি, কম দামে নেট হতে কিনতে পারেন, যদি আপনি খুব বেশি ঘুড়াঘুরি করেন বা গোপন ক্যামেরার ভয় পান, না হলে কিনার দরকার নেই, নিজেই বানাতে পারেন সেটা-
একটি সাদা কাগজ বা এ জাতীয় যে কোন কিছু নিন, না পেলে টয়লেট পেপারের ভিতর যে রোলটা থাকে সেটাও নিতে পারেন। সোজা কথায় কাগজ বা নিউজপেপার যাই হোক গোল করে বাইনোকুলার বা দুরবীনের মত করুন। একটি টর্চলাইট লাগবে, মোড়ের দোকানেই পাবেন ছোট টর্চলাইট, দামও বেশি না।
এবার ঘরের সব লাইট বন্ধ করে টর্চ লাইট টি জ্বালান। যে জায়গায় টর্চের আলো ফেলবেন ঠিক সেই জায়গাটি রোল বা গোল করা কাগজের মধ্য দিয়ে এক চোখ দিয়ে তাকান। এভাবে সারা রুমটি খোঁজ করুন। যদি গোপন ক্যামেরা থাকে তবে টর্চের আলো ক্যামেরার ছোট লেন্সের উপর পরলে সেটা চিক চিক করবে ফলে আপনি যখন রোল করা কাগজের মধ্য দিয়ে দেখবেন তখন অনেকটা সহজেই চিনতে পারবেন। আর সময় লাগবে এতে ৩০ মিনিট!
নিজে সচেতন হয়ে স্ব-রবে জেগে উঠুন, অন্যদেরও সচেতন করে তুলুন।
কারণ-যেদেশে রুমানা মঞ্জুররা নিজের ঘরে নিরাপদ না,
যে যুগে শিক্ষকতার আড়ালে জ্ঞানপিপাসা মেটানোর নামে মেটানো হয় প্রাণ-পিপাসা,
যে কালে নোংরা ভিডিও গেমিং এর অপর নাম ভালবাসা,
সে দেশ, যুগ, কালটাই যে অভিশপ্ত!
আর এ অভিশাপের ভার সময়-সমাজ কেউ নেবে না, কেউ না!
——
বিভিন্ন উৎসঃ
১। http://bdnews24.com/bangla/details.php?cid=2&id=172683&hb=top
২। http://www.wikihow.com/Detect-Hidden-Cameras-and-Microphones
৩। http://www.muktoblog.net/details.php?un=banglarbibek&pid=5214#.TobFnChGKs0.facebook
৪। http://www.somewhereinblog.net/blog/ognila/29457891
৫। ছবি কৃতজ্ঞতা- http://www.facebook.com/odhom.aro.odhom
অনেক ভাল লাগলো লেখাটা। আমাদের প্রাইভেসি বলে আর কিছু থাকছে না আর!
লেখার শুরুর অংশটা নিয়ে আমার একটা পোস্ট দেয়ার প্ল্যান ছিল অনেকদিন ধরেই। ভাগ্যিস তোমার পোস্টের মূল থিম ঐটা না! 😛
যথার্থ, আমাদের প্রাইভেসি বলে আর কিছু থাকছে না!!
আপনার সেই পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম তবে! 😀
“প্রয়োজনীয় বিলাসিতা”র কাছে অনেকেরই হার মানতে হয়। সেটুকু বাদ দিলেও এখন কোন বুটিক শপে গিয়েও অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হয় চেঞ্জিং রুমে গেলে। আমাদের নারীদের সব অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য কেন কিছু মহল একটা তৎপর, আমি বুঝি না। যেসব নারী পণ্য হতে চায় না, তাদেরকেও এসব গোপন ক্যামেরা পণ্য হতে বাধ্য করে। এর চেয়ে ভয়ানক দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
লেখার জন্য ধন্যবাদ। লিংকগুলো ফুটনোটে হাইপারলিংক হিসেবে থাকলে ভাল হত।
আর সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন কোন নারীকে দেখি আরেক নারীর সর্বনাশের কারণ হতে! বাকরুদ্ধ হয়ে যাই যেন! এরা কি করে পারে আপু?
ধন্যবাদ আপু। লিঙ্কগুলো হাইপারলিঙ্ক হিসেবে দিয়ে দিলাম!
জানি না কী করে পারে। কেউ জেনে ক্ষতি করে আর কেউ না জেনে। এইটুকু পার্থক্য বাদ দিলে সেই প্রবাদ বাক্যটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সত্যিতে রূপান্তরিত হয়। বুকের মাঝে খুব কষ্ট চেপে বলি, “নারীরাই নারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু!” আফসোস!
🙁 🙁 যথার্থ!
🙁
মাঝে মাঝে একটা দীর্ঘশ্বাসকে আটকাতে পারিনা কিছুতেই…… 🙁
🙁 🙁
চমৎকার একটা লেখা। একেবারে সঠিক সময়ে দরকারী কথাগুলো উঠে এসেছে।:clappinghands:
আজগুবী সব ক্যামেরা ডিটেকটিং সিস্টেম দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।
:wallbash:
ভালো হয়েছে আসলেই কাজের কিছু কথা জেনে। 🙂
:virgo: 🙂
এর আগে এমন পোস্ট
মানে
কীভাবে বুঝবেন গোপন ক্যামেরা আছে কী নেই?
কীভাবে বুঝবেন লুকানো ক্যামেরা আছে!
এই জাতীয় পোস্ট শুরু করতাম কিন্তু শেষ করতে পারতাম না!
তোমারটা অনেক গুলো বিষয়কে ছুঁয়ে গেলেও মূল জায়গাটাতেই আঘাত করেছে!
সাব্বাস! :fire:
অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আসার কারণ ছিল যেন মূল বিষয়টাকে নজরে আনতে পারি।
ধন্যবাদ ভাইয়া! :angel_not:
ভালো লাগলো লেখাটা 🙂
ধন্যবাদ কিনাদিপু! 🙂
বোহেমিয়ান ভাইয়ের মতো আমিও এই জাতীয় পোস্ট শুরু করতাম কিন্তু শেষ করতে পারতাম না।
কিন্তু আপনার লেখা আমাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সচেতনতামূলক এই পোস্টটির জন্য।
😀
ধন্যবাদ! 🙂
সচেতন হবার ঠিক ঠিক উপায়গুলো চোখে আঙুল দিয়ে এইভাবে দেখিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ…
😀 😀
এ ব্যাপারটা নিয়ে অনেক জল ঘোলা করাও যায়। বিশ্বাসযোগ্য অনেক তথ্য ছাড়া আমার কাছেও এ নিয়ে তর্ক করা অর্থহীন মনে হচ্ছে। তবে একটা ব্যাপারে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ করা যায়,
“কিন্তু তাই বলে নিরাপত্তার অধিকার রক্ষার্থে ‘রাইট টু প্রাইভেসি’র মতো আরেকটি মানবাধিকার হরণ করা হবে?”
সহমত।
ধন্যবাদ তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটির জন্য।
🙂