ভুং-ভাং ক্যালকুলাসঃ কচকচানি-১

জ্ঞানের সবচেয়ে বিশুদ্ধ শাখা – গণিত; সে যেন পবিত্রতা আর শুভ্রতার মায়াবী এক প্রতিচ্ছবি। বিজ্ঞানের প্রাণদায়িনী এই গণিত নিয়ে ভাবতে বসলেই আমার মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক এসে ভর করে, পাছে ওঁর অসম্মান করে বসি! বলে রাখছি, গণিতে আমার ভিত মারাত্মক রকমের দুর্বল; আমি ক্যালকুলাস বুঝিনা, নম্বর থিওরি মাথায়ই ঢোকে না। যে আপ্ত বাক্যকে ভীত ধরে নিয়ে আমি টিকে আছি, তা হল – পরীক্ষার নম্বর কিংবা তত্ত্বকথা কে কতটুকু নিজের মাঝে ধারণ করতে পারল, সেটা বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর ভাল মন্দের মাপকাঠি হতে পারেনা। বরং মাপকাঠিটা হওয়া উচিত এর প্রতি কার ভালবাসা কতটুকু তার ভিত্তিতে। আর সেই মাপকাঠির বিবেচনায় আমি বুক চাতিয়ে বলতে পারি, নিতান্ত ফেলে দেবার মত শিক্ষার্থী নই!! বলতে পারেন, এ আমার আবেগতাড়িত অযৌক্তিক কথা। কিন্তু, আবেগ আর বিষাদের যৌথ খামারে মুটের কাজ করেই আমার দিন কাটে। এখানে আমায় যুক্তির কথা শুনিয়ে লাভ নেই। দুঃখিত।

ছেলেবেলায় গণিতকে আমি দু’ চোখে দেখতে পারতাম না। আমার ইচ্ছে ছিল আমি বাণিজ্য শাখায় পড়াশোনা করব; সিএ করব, তারপর রোবোটের ব্যবসা করব। অনেক ছোট থাকতে টিভিতে ‘রোবোকাপ’ দেখাতো, সেইটা দেখেই আমার এই ইচ্ছেটার উৎপত্তি ছিল। কিন্তু ক্লাস এইটে উঠার পর যখন প্রথম মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের ‘নিউরনে অনুরণন’ বইটা হাতে পাই, হঠাৎ করেই যেন গণিতের প্রেমে পরে যাই। মনে আছে, তখন ২য় সাময়িক পরীক্ষা চলছিল স্কুলে। মুখস্তবিদ্যাসর্বস্ব আমি সেইসময় আমার পাঠ্যপুস্তক রেখে সারাদিন ধরে ‘নিউরনে অনুরণন’এ দেয়া সমস্যাগুলা নিয়ে মাথা খাটাতে চেষ্টা করতাম। ফল হয়েছিল সেবার গণিতে মোটে ৪৭ পেয়েছিলাম। বাসায় বা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু কেন জানি, সে কথাগুলো আমার ‘গণ্ডারসম’ চামড়াওয়ালা কানের ভেতর ঢুকতে গিয়ে বেশি একটা সুবিধা করতে পারে নি। হয়ত সে বইটা আমার সামনে গণিতের অপার সৌন্দর্যের দুয়ারের পথখানি আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছিল, নিজেকে বিজ্ঞানের অপার মহিমার ছায়াতলে নিয়ে আসবার চেষ্টা করতে প্রেরণা যুগিয়েছিল। জাফর ইকবাল স্যার, এ অধমের মাঝে আপনি বিজ্ঞানের চেতনা জাগ্রত করেছিলেন, আপনার জন্যে আমার হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালবাসা। দুর্ভাগ্য, এর চেয়ে বেশিকিছু আপনাকে দেবার ক্ষমতা আমার নেই!

যাদের গণিতের উপর দখল ভাল, তাদের চেষ্টা আর প্রতিভা আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে, জটিল থেকে জটিলতর সব সমস্যা তারা চট করে সমাধান করে ফেলে- দেখলেই আশ্চর্য হয়ে যাই! ছোটবেলা থেকেই দেখেছি ক্লাসে যে অংক ভালো পারে সবার কাছে তার অন্যরকম কদর, সবাই তাকে কিছুটা হলেও সমীহ করে চলে। এটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না, কারণ গণিতে নম্বর ভাল নম্বর পাওয়াটা খুব একটা চাট্টিখানি কথা না- মুখস্থ করে হলেও গণিতে ভালো নম্বর পাওয়া কঠিন। পাঠ্যবইয়ের সব সূত্র মুখস্থ করার পরেও পরীক্ষার হলে সব অংক সঠিকভাবে মিলাতে বারবার চর্চার দরকার হয়! সুতরাং, গণিতে ৯৯ পেলে তাকে সমীহ করা হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সূত্র মুখস্থ করে ১০১ টা অংক চর্চা করলেই কি গণিত জানা যায়? “গণিত পারা” আর “গণিত জানা” কি এক?

এ প্রশ্নের উত্তর সব থেকে ভালো দেয়া যায় ক্যালকুলাসের প্রসঙ্গ তুলে। বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে ক্যালকুলাসের সাথে পরিচয় হয় বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের। আমি নিজের অভিজ্ঞতাই বলি। সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম ক্লাস। চতুর্থ পিরিয়ডে ম্যাথ স্যার এলেন ক্লাসে (নাম বললাম না স্যারের)। এসেই বললেন সেকেন্ড ইয়ারে ম্যাথে মার্ক্স পাওয়া খুব সহজ। ক্যালকুলাসের ২-১ টা সূত্র পারলেই লেটার মার্কস চলে আসে। এরপর তিনি বোর্ডে লিখলেন \frac{dy}{dx} , বললেন, “ক্যালকুলাসে আমরা এই জিনিসটা বারবার দেখতে পাব। এইটার মানে হল, x এর সাপেক্ষে y এর পরিবর্তন।“ তারপর স্যার একটা ছেলের হাতে মার্কার তুলে দিয়ে বললেন, “২ নাম্বার চ্যাপ্টারের সবগুলো সূত্র বোর্ডে লিখে দাও”, আর আমাদের বললেন, “ও যা লেখে সবাই খাতায় তুলে নাও। এই চ্যাপ্টারে মূল নিয়মের কয়েকটা অঙ্ক আছে। সেগুলা আমরা পরে করব।” এখানে বলাই বাহুল্য, সেই ছেলেটা  স্যারের প্রাইভেট ছাত্র ছিল।

যাহোক, আমি খাতা বের করে লেখা শুরু করতে না করতে দেখি ২১ টা সূত্র লেখা শেষ! কি কি , \frac{d}{dx}sinx=cosx, \frac{d}{dx}sinmx=mcosmx ... হাবিজাবির মত লিখে দিল বোর্ডে। স্যার বললেন, “কাল সবাই এই সূত্রগুলো শিখে আসবে,এরপর আমরা অঙ্কে যাব”।

পরদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল ‘অঙ্ক করা’। স্যার বোর্ডে ২ টা অঙ্ক করে দিলেন, সবাই তুলে নিল। এরপর স্যার একটা অঙ্ক করতে দিলেন। সবাই দেখি গুলির বেগে অঙ্ক করছে। কিন্তু আমি দেখি, আমি যেটা করতে দিয়েছে সেটা তো দূরে থাক, যে ২ টা অঙ্ক করে দিয়েছেন উনি তারও আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। স্যারকে প্রশ্ন করলাম। তিনি রাগত স্বরে আমাকে বললেন, “ডিফারেন্সিয়েশান বোঝ না, সাইন্স পড়তে আসছ কেন? লজ্জা করে না?” ক্লাসের সবগুলো ছেলেকে দেখি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, দু’একজন আবার মিটিমিটি হাসছে। আমি মুখ কাঁচুমাচু করে আর কিছু না বলে বসে পড়ি।

সবাই সূত্র বসিয়ে অঙ্ক করতে থাকে, যত বেশি অংক করে তত সূত্র মাথায় বেশি থাকে, কখন কোন সূত্র ব্যবহার করতে হবে ধীরে ধীরে আয়ত্ব হয়ে যায়। সাকিব নামের একটা ছেলেকে সবাই “ক্যালকুলাসের বস” উপাধি দেয়, সে ক্যালকুলাসের সব অঙ্ক পারে। কিন্তু তখন পর্যন্ত আমি হাতে গুণে ৩ টা অঙ্কের সমাধান করতে পেরেছি, এবং ৩টা অঙ্কের একটাও আমি বুঝি নি।
মূল সমস্যাটা হলো কোন সূত্র কিভাবে এলো, কেন \frac{d}{dx}sinmx=mcosmx -ই হল/হচ্ছে তা আমি বুঝতে পারি নি। সত্যি বলতে, এগুলো আমি এখনোও বুঝি না। ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্স করার সময় কিছু কিছু জায়গায় ক্যালকুলাস দরকার হত, কিন্তু কেন সেটা দরকার তা কেউ পরিষ্কার করে বলে দেন না। আর আমাদের পাঠ্যপুস্তকেও কোন ব্যাখ্যা নেই যে কেন এখানে ডিফারেন্সিয়েট করা হল আর কেনইবা ইন্টিগ্রেট করা হল- কথা নাই, বার্তা নাই ঠাস ঠাস করে ইকুয়েশানে ক্যালকুলাস অ্যাডাপ্ট করা হয়েছে। আর আমরাও যে যেভাবে পারি এগুলো গিলছি।

ডিফারেন্সিয়েশান মানে হল ‘পিচ্চিকরন’ (আমি এভাবে বলি আরকি! 😛 ),  \frac{d}{dx} হল একটা অপারেটর, সে যেখানেই যায় সবকিছু থেকে একেবারে ক্ষুদ্র পরিবর্তনটুকু সে বের করে দেয়। কিন্তু কিভাবে এই ক্ষুদ্র পরিবর্তনটা সে বের করে আনে তা আর আমাদের জানা হয়ে উঠে না। নিউটনের গতিসূত্র প্রমাণ করতে গিয়ে ক্ষুদ্র অংশে বেগ পরিবর্তন বের করতে পিচ্চিকরণ করি। কিন্তু ক্যালকুলাস আসলে কিভাবে এই পরিবর্তনগুলো বের করে আনে সেই ব্যাপারটা অন্ধকারেই থেকে যাই,আইনস্টাইনের আইনস্টাইনের E = ΔmC² প্রমাণ করার সময়ও একই ঘটনা ঘটে। আমরা কেবলই  \frac{d}{dx} বসিয়ে ‘অঙ্ক’ করে যাই, কেন করছি, কিভাবে করছি, কোথায় এর প্রয়োগ, তা জানার ধার আমাদের ধারা লাগে না! ওসব দিয়ে তো আর পরিক্ষায় নম্বর পাওয়া যায় না!! ক্যাল্কুলাসের ‘আসল’ জিনিসটা ধরতে পারলে, ‘ফিল’ করতে পারলে  (চমক ভাইয়ার কাছ থেকে শেখা অনন্য একটা টার্ম) যেমন সূত্র ব্যবহার করে ‘অঙ্ক’ সমাধান করতে পারবে, তেমনি এর স্বকীয়তাটা কোথায়, তাও জানা হবে আর হয়ত এর মাঝেই জন্ম নিতে পারে এর জন্যে ভালবাসা।

গণিত বিজ্ঞানের ভাষা, সূত্র মুখস্থ করে গণিত শিখে আর যাই হোক বিজ্ঞান শেখা সম্ভব না। আমরা অংক করার সময় একটি অধ্যায় শেখানো শুরু হয় সূত্র শেখানো দিয়ে, সুত্রের প্রমাণ হয়তো শেখানো হয়, কিন্তু খুব কম শিক্ষকই ভিতরের জিনিসগুলো পরিস্কার শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেন।ফল হয় এই যে,  শিক্ষার্থী ক্লাস সেভেনে সূত্র শেখে- (a + b)(a – b) = (a² – b²)। কিন্তু নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ ধাপে এসেও (আমি নিজে এই ধাপে আছি এখন। নিজের চারপাশে যা দেখছি তাকেই বাস্তবতা ধরে নিয়ে বলছি, এর পরের ধাপগুলোতে গিয়ে কি হয় তা আমার জানা নেই।) এই সূত্র প্রয়োগ করে (17² – 16²) সমান কত তা মুখে মুখে বলতে গেলে থমকে যায়, ক্যাল্কুলেটর লাগে তার হিসেব করতে! অথচ এটা (a + b)(a – b) = (a² – b²) সূত্র থেকে খুব সহজেই বলে দেয়া যায় যে (17² – 16²) সমান হবে 33 [(17² – 16²)= (17 + 16)(17 – 16) =(17+16).1 = 33 ]। ছয় বছর ধরে এই সূত্রটা দিয়ে একেরপর এক অঙ্ক সমাধান করে গেলেও এটা তার জানা থাকে না দু’টি ক্রমিক সঙ্খ্যার বর্গের বিয়োগফল আসলে ওই সঙ্খ্যা দু’টোর যোগফলের সমান

এই যাহ!! আমি আবার খটর-মটর শুরু করে দিয়েছি!! এজন্যেই আমি লিখতে চাইনি!! কই এসেছিলাম ক্যালকুলাস নিয়ে ক’টা কথা বলব ভেবে, আর এখন কি সব আলতু-ফালতু কথা বলছি তো বলেই যাচ্ছি!! বাদ দেই এসব, বরং ক্যালকুলাসের ভেতর ঢুকে পরতে চেষ্টা করি। এখানে আমি একেবারে গোড়া থেকে শুরু করতে চেষ্টা করব। তবে পেছনের দিককার সাধারণ বিষয়গুলো কিছুটা সংক্ষেপে বলে যাব।

সেটঃ
আধুনিক গণিতের অন্যতম একটি হাতিয়ার হল সেট। জার্মান গণিতবিদ গেয়র্গ ক্যান্টরকে (Georg Ferdinand Ludwig Philip Cantor, ‘জর্জ ক্যান্টর’ নয়) বলা হয় সেটতত্ত্বের জনক। তিনি অসীম সেটের যে ধারণা দিয়েছিলেন, তা গণিতের রাজ্যে বিপুর আলোড়ন সৃষ্টি করে।

সেটের ধারণা আমাদের কাছে খুব একটা অপরিচিত নয়। দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন বস্তু বা জিনিসের ‘সংগ্রহ’ বা ‘গুছ’ বোঝাতে আমরা সেটের ধারণা পোষণ করি। কোনো বস্তু, সংখ্যা, চিন্তা ইত্যাদির ‘সুনির্ধারিত সংগ্রহ বা সমারোহ’কে আমরা বলি সেট। সেটের প্রতিটি বস্তুকে বলা হয় সেটের উপাদান(elements) বা সদস্য(members)। ‘সুনির্ধারিত সংগ্রহ’ বলতে আমরা আসলে বুঝি যে, সেটে কি কি উপাদান অন্তর্ভুক্ত হবে, আর কি অন্তর্ভুক্ত হবে না তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা। যেমন ধরা যাক, বাংলাদেশের সব ক্রিকেট খেলোয়াড়ের সেট। এখানে দেখুন, আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছি ‘ক্রিকেট খেলোয়াড়ের সেট’, বাংলাদেশে ফুটবল, কাবাডি, কারাতে, হকি ইত্যাদি অনেক খেলোয়াড় থাকলেও এই সেটে তাদের কেউ অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। কেবলমাত্র ক্রিকেট খেলোয়াড়রাই এই সেটের উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

এখানে সেটের একটা বিশেষ প্রকারের কথা বলি। এই বিশেষ প্রকারের সেটটা হল ‘উপসেট’ (Subset)। ধরুন, পোশাক পরিচ্ছদের সেট। এই সেটে ছেলে, মেয়ে, বাচ্চা-কাচ্চা সবার সব পোশাকই থাকবে। এই যেমন, এই সেটটা-

কিন্তু যদি বলি, শুধু পোশাকের সেট , তাহলে কিন্তু কেবলি ছেলেদের পোশাকগুলো সেই সেটে থাকবে। এই যেমন, এই সেটটা-

লক্ষ্য করুন, প্রথম সেটের সকল উপাদান কিন্তু ২য় সেটটাতে আছে। কিন্তু, ২য় সেটের সকল উপাদান ১ম সেটটাতে নাই। এমন হলে, ২য় সেটটাকে ১ম সেটের উপসেট বলে!
[ যদি AB দুইটা আলাদা  সেট হয় এবং A-এর প্রত্যেকটি সদস্য B-এরও সদস্য হয়, তাহলে B সেটটি A এর একটি উপসেট। ]

এবারে সেটের ব্যবহার মূলত কি তা দেখার চেষ্টা করিঃ
বিভিন্ন তথ্যকে গাণিতিকভাবে সহজে প্রকাশ করতে আমরা সেটের ধারণার শরণাপন্ন হই।  তাছাড়া কোন ঘটনায় এর প্রতিটি সদস্যকে সহজে তালিকাভুক্ত করে প্রকাশ করতে, বিভিন্ন গাণিতিক বিবরন প্রকাশ করতে আমরা সেট ব্যবহার করি। সেটের ধারণা যেহেতু মোটামুটিভাবে আমাদের সাথে ফেমিলিয়ার, এ নিয়ে বেশি ভগর-ভগর করে সময় নষ্ট করলাম না তাই আর।

এরপর আমি যাব ক্রমজোড়ের দিকে। ‘ক্রমজোড়’ জিনিসটা আসলে কি?
আচ্ছা, শব্দটাকে একটু ভেঙ্গে দেখি- ক্রম + জোড় = ক্রমজোড়। এই ক্রম কিন্তু ‘গুগল ক্রোম’র ক্রোম না 😛 !! ‘ক্রম’ মানে হল ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, আর ‘জোড়’ মানে তো জোড়ই, ২ টা করে আরকি! তাহলে ‘ক্রমজোড়’ মানে হল কোন একটা জোড়ার মাঝে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। গণিতে আমরা সেটের সাহায্যে এভাবে ক্রমজোড়ের সংজ্ঞা দেই – ‘যদি কোনো সেটের দুটি ভিন্ন বা অভিন্ন উপাদানের মধ্যে কোন একটি প্রথম স্থানে এবং অপরটি দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করবে, তা সুনির্দিষ্ট থাকে, তবে উপাদান দু’টির অবস্থানের এই ধারাকে ক্রমজোড় বলে’। যেমন ধরা যাক, একটা সেটের ২ টা উপাদান আছে। সে দু’টা উপাদান হল x আর y। এখন x আর y দুটি উপাদানের মধ্যে যদি x প্রথম স্থান এবং y দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করে, তবে (x, y) কে ক্রমজোড় বলে।

ক্রমজোড়েকে আমি এখানে টেনে আনার কারণ হল, আমি ক্রমজোড়ের সাহায্যে অন্বয় আর ফাংশনের সংজ্ঞা দেব।
তবে তার আগে আমাদের আরেকটা টার্মের কথা জানতে হবে। এই টার্মটা হল কার্তেসীয়ান গুণজ ।  এটা তেমন কিছু না- ধরুন, A আর B দু’টা সেট। এখন A আর B এর উপাদানগুলোকে নিয়ে যতগুলো ক্রমজোড় পাওয়া যায়, সেই ক্রমজোড়ের সেটই হল কার্তেসিয়ান গুণজ সেট। গুণজ সেট (A x B) আকারে লেখা হয় (উচ্চারন – ‘A cross B’)  একটা উদাহরণ দেখা যাক-
ধরা যাক, সেট A = {x, y, z} এবং সেট  B = {p, q}
তাহলে, A ও B – এর কার্তেসীয় গুণজ সেট, ( A × B) = {x, y, z}×{p, q}
= {(x, p) (x, q), (y, p), (y, q), (z, p), (z, q)}
এখানে, (x, p), (y, p), (z, p) – এগুলো হল একেকটি ক্রমজোড়।

অন্বয় ও ফাংশনঃ
অন্বয় মানে হল গিয়ে সম্পর্ক। যদি A আর B দুইটা সেট হয়, তাহলে এদের কার্তেসিয় গুণজ সেটের অন্তর্গত ক্রমজোড়গুলোর প্রত্যেকটি (অশূন্য) A থেকে B এর মাঝে একেকটি সম্পর্ক নির্দেশ করে।
ওরে বাবা!! কিছুই তো বুঝলাম না!!
আমাদের ক্লাস নাইন-টেনে পড়া একটা উদাহরণ দেই, দেখুন –
ধরুন, সেট A = {x} এবং সেট  B = {p}
তাহলে, A ও B – এর কার্তেসীয় গুণজ সেট, ( A × B) = {x}×{p}
= {(x, p)}
এখানে, (x, p) – ক্রমজোড় থেকে দেখা যায়, x এর পরে p আসে, x এর পরে p আসার এই যে একটা সম্পর্ক, এটাই হল অন্বয়। এটাকে এভাবে পড়া হয় ‘x is related to p’।
ধুড়!! এর চেয়ে আমি একটা উদাহরণ বানাই, দেখুন –
আরো সহজে বলি- ধরুন, প্রেম একটি ভেক্টর (!!!) রাশি। এখন, ফেইসবুকে লগইন করে আপনার বন্ধু মিলনের প্রোফাইলে গিয়ে লিখা দেখলেন, ‘Milon is in a relationship with Jerin’।

এইখানে মিলনের দিক থেকে জেরিনের দিকে একটা প্রেমময় সম্পর্ক আছে। আবার জেরিনের প্রোফাইলে গিয়ে দেখা গেল লেখা আছে, ‘Jerin is in a relationship with Milon’। স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে, দু’টা কথা একই অর্থ বহন করে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন, একটা সম্পর্ক মিলন থেকে জেরিনের দিকে, আরেকটা সম্পর্ক জেরিন থেকে মিলনের দিকে নির্দেশ করে। দুইটা সম্পর্ক একই ‘প্রেম’ নির্দেশ করলেও, দুইটা আলাদা দিক নির্দেশ করে এবং দুইটার মানও আলাদা হতে পারে! মান বেশি না কম, কোন দিকে ক্রিয়াশিল, তা আমাদের দেখার দরকার নাই (এইটা আমরা ফাংশনের সময় দেখব)! আসল কথা হইল এইটা একটা অন্বয় বা রিলেশান! [বাহ, বাহ… অসাম ভেক্টর অ্যানালাইসিস!! 😛 লাইক অ্যা বস!!]

আচ্ছা, এবারে ফাংশনের দিকে তাঁকান যাক। ফাংশন হল একটা বিশেষ ধরণের রিলেশান। মানে সেই বিখ্যাত ডায়লগের অনুসারী, ‘সকল ক্ষারই ক্ষারক, সকল ক্ষার ক্ষারক নয়’। তবে এইখানে হবে, ‘সকল ফাংশনই রিলেশান, সকল রিলেশান ফাংশন নয়’ 😛 ।
যাই হোক, বইয়ের পাতায় ফাংশনের একখানা সংজ্ঞা আছে, সেইটাই আগে উল্লেখ করিঃ
“যদি, X ও Y দুইটি অশুন্য  সেট ও এবং একটি নিয়ম f এমনভাবে সম্পর্কিত হয় যে, নির্দিষ্ট এলাকায় X এর যে কোন উপাদান x এর জন্য উক্ত এলাকায় Y সেটের একটি এবং মাত্র একটি উপাদান হয়, তা হলে এই সম্পর্ককে ফাংশন বলা হয় এবং একে y = f(x) দ্বারা প্রকাশ করা হয়”।

পাঠক, কিছু কি বুঝেছেন?
আমি কিন্তু কিছুই বুঝি নি!! এই সংজ্ঞার কোন মূল্যই তাই আমার কাছে নাই।
একটু অন্যভাবে ভেবে দেখি-
ফাংশন হল আসলে একটা মেশিন। এখানে কিছু একটা কাঁচামাল (ইনপুট) দিলে কিছু একটা প্রোডাক্ট (আউটপুট) পাওয়া যায়।
যেমন ধরুন, আলু ভর্তা বানানোর মেশিনের নাম হল f। এই মেশিনে আলুকে যদি কাঁচামাল হিসেবে দেই, তাহলে সে আলুকে চটকে আলু ভর্তা বানিয়ে আপনার হাতে ধরিয়ে দেবে! সাথে যদি ঘিঁ দিয়ে দেন, সে তাও ভর্তার সাথে মিশিয়ে দেবে, পাবেন ঘিঁ মেশানো আলু ভর্তা!!
এই ঘটনাটাকে আমরা মেশিন f এর ফাংশন আকারে এইভাবে লিখতে পারি,
f(আলু) = আলু ভর্তা
বা পরেরটাকে এইভাবে লিখা যায়- f(আলু + ঘিঁ) = ঘিঁ মেশানো আলু ভর্তা
প্রথমে যে f টা লিখেছি এইটা কিন্তু জাস্ট ফাংশনের একটা নাম, এর কোন স্পেশাল সিগ্নিফিকেন্স নাই। f এর বদলে g, p, z – যা ইচ্ছা ধরা যায়। এরপর ব্র্যাকেটের ভিতরে আছে ইনপুট আর সমান চিহ্নের পরে আছে আউটপুট।

এখন আমরা ঐ বিতিকিচ্ছিরি সংজ্ঞাটার দিকে তাঁকাব। আমার উদাহরণের প্রেক্ষিতে এই সংজ্ঞায় আসলে X বলতে আলুর সেট (যেখানে x হল একটা আলু) আর Y বলতে আলু ভর্তার সেট (y হল x থেকে যে আলু ভর্তাটুকু পেয়েছি, সেইটা) আর f  তো আলু ভর্তা বানাবার মেশিনই!

এই সাধারণ ব্যাপারটাকেই বইতে এইভাবে জটিল-কঠিন করে লেখা আছে!


আচ্ছা, এখন আরেকটা ফাংশনের চেহারা দেখি-
ধরুন, একটা ফাংশন এইরকম দেয়া আছে –
f(x)=x²
বলুন তো এই ফাংশনের কাজ কি??
হ্যাঁ, ঠিক তাই!
এই ফাংশনের কাজ হলো যাকে পাবে তাকেই ধরে পিটিয়ে-পুটিয়ে ভর্তা বানিয়ে বর্গ করে ছেড়ে দেবে। ঠিক এইভাবে-
f(-2) = (-2)² = 4
f(44.396) = 44.396² = 1971  (apprx).
কিন্তু সমস্যা হল সব ফাংশন এরকম নিরীহ প্রকৃতির না। এদের বেলায় হয় কি, এদের চেহারা দেখে আমরা বুঝতে পারি যে এরা কি কাজ করে বা কি করতে পারে বা এদের ক্রিয়ার ফলে কি হবে। কিন্তু কোন না কোন কারণে আমরা ঠিক জোড় দিয়ে বলতে পারি না যে এইটাই হবে! এই যেমন ধরুন এই ফাংশনটা- f(x)= \frac{x^{2}-4}{x-2}
এই ফাংশনে x এর মান 2 হলে ফাংশনটার মান আর বেরই করা যায় না !!
\frac{2^{2} - 4} {2 - 2} = \frac{4 - 4}{2 - 2} = \frac{0}{0} = Indeterminate !! 8)
এরকম ঝামেলাযুক্ত আরো কিছু চেহারা হল- 00, 1, ∞ − ∞, ∞/∞, 0 × ∞ এবং ∞0
এই রকম চেহারা গুলোর সমাধান আমরা খুঁজে বের করতে পারি না। তাহলে উপায়?

না, অত সহজে দমে যাবার পাত্র আমরা নই!! এদেরকে শায়েস্তা করবার জন্যে আমরা ‘সীমা’ (Limit) নামের এক দারুন কার্যকর অস্ত্র নিয়ে হাজির হই। এই দারুন হাতিয়ার সম্পর্কে আমরা জানব। তবে ফাংশনের কথা এলেই কেন জানি আমার মাথায় একটা বিশেষ ধরণের ফাংশনের কথা বলতে ইচ্ছে করে। সেই বিশেষ ধরণের ফাংশনটা হল ইনভার্স ফাংশন। অনেকেরই এই ইনভার্স ফাংশন নিয়ে কনসেপ্টে একটু সমস্যা থেকে যায়। যাই হোক, আমি এইখানে ইনভার্স ফাংশন নিয়ে কিছু বলব না, শুধু একটা ছবি দেবার চেষ্টা করব। আমার মনে হয়, আমার কথা চেয়ে এই ছবিটা ইনভার্স ফাংশনের মূল বিষয়টা বোঝানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে –


এইটা নিয়ে আর কিছু নাইবা বললাম। আমার চেয়ে আপনারাই মনে হয় ভাল বুঝে গেছেন। আমি বরং ‘সীমা’ আপুর কাছে যাই…

[ Note: আচ্ছা, বলুন তো ভাগ মানে কি? শৈশবে ভাগ তো সবাই শিখেছি, বলুন তো আসলে ভাগের মূল সিগ্নিফিকেন্স কি? এই যেমন ধরুন, \frac{15}{3}=5। . এর মানেটা আসলে কি?
এই ভাগটা দিয়ে আসলে আমরা এটাই বোঝাতে চাই যে, ৫ কে ৩ দিয়ে গুণ করলে ১৫ পাওয়া যায়! এক অর্থে, ভাগ আসলে গুনেরই একটা বিশেষ রূপ বৈ কিছু নয়!!
যদি, y কে x দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল z পাওয়া যায়, তার অর্থ হল এই যে, x কে z দিয়ে গুণ করলে y পাওয়া যায় (y = z X x)!
আচ্ছা, ১৫ কে যদি ৫ দিয়ে ভাগ না করে ০ দিয়ে ভাগ করতাম, তাহলে কি হত?
ধরা যাক, ১৫ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হত z. তাহলে ভাগের সংজ্ঞানুসারে, 15 = z X 0.
কিন্তু, কোন সঙ্খ্যাকে 0 দিয়ে গুণ করলে তো গুণ ফল শুণ্যই হবে!!
আসলে, z এর কোন মানের জন্যেই 15 = z X 0 আমরা নির্নয় করতে পারি না। এভাবে বলা যায়, আপনি যদি ১৫ তা গণিত বই ৫ জনের মাঝে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে প্রত্যেককে ৩ তা করে বই দিতে হবে। কিন্তু ১৫ টা বই ০ শুণ্য জনের মাঝে ভাগ করে দেয়া যায় না, কিংবা কয়টা করে বই দিতে হবে তা আমরা নির্ণয় করতে পারি না।! এই ঘটনাটাকে গণিতবিদেরা নাম দেন অসংগায়িত বা Undifined।
একইভাবে, কেউ যদি প্রশ্ন করে \frac{0}{0} = কত, আসলে প্রশ্নটার কোন উত্তরও আমরা জানি না।
আমার কাছে ০ টা বই আছে মানে কোন বইই নাই, আমি আবার সেই ‘নাই’ বইগুলোকের আরো ০ জনের মাঝে ভাগ করে দিতে চাই! এই কথার আসলে কোন মানেই হয় না!
\frac{0}{0}=zধরে নিলে, 0 = z X 0 হতে হবে। কিন্তু z এর মান যাই হোক না কে, z X 0 এর গূনফল তো ০ ই হবে! ফলে,  এর মান যে আসলে কত, তা আমরা বের করতে পারি না। ]

সীমা বা লিমিটঃ
সীমা বা লিমিটের কথা বলতে এসে আমি আবারও প্রথমে আমাদের বই থেকে সীমার সংজ্ঞাটা দিতে চাইব-
“একটি চলরাশি x এর সীমা হবে একটি ধ্রুবক a যখন চলরাশিটি ধ্রুবকটির এরূপে নিকট থেকে নিকটতর হয় যেন চলরাশি ও ধ্রবুকটির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্য অতি ক্ষুদ্র ধন্যাত্নক সঙ্খ্যা   থেকে ছোট হয়। এখানে  একটি পূর্ব নির্ধারিত অতি ক্ষুদ্র সঙ্খ্যা। অর্থাৎ, ধ্রুবক a হবে চলরাশি x এর সীমা, যদি 0 < |x – a| < \delta হয়। চলরাশি x যেকোন ধ্রুবক a এর দিকে অগ্রসর হলে তা x→a প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং পড়তে হয় “x tends to a”; উপোরোক্ত প্রতীকে x এর মান a থেকে বড় বা ছোট যেকোন কিছুই হতে পারে।”
বোঝা গেল না?
উদাহরণ দেখুন-
ধরুন বলা আছে, x→ 3
এখানে x হল একটা চলরাশি যার মান হতে পারে 2.999, 2.9999, 2.99999… … ইত্যাদি। দেখুন, এগুলোর একটাও 3 এর সমান না, কিন্তু খুব কাছাকাছি। আবার এমনও হতে পারে, x এর মানগুলো হল 3.001, 3.0001, 3.00003… … ইত্যাদি। দেখুন, এবারেও সবগুলো মানই 3 এর খুব কাছাকাছি, কিন্তু সমান না। আবার, x এর মান এমন হল যে, 2.999, 2.9999… … ইত্যাদি এবং 3.001, 3.0001, 3.00001… … ইত্যাদি, মানে 3 এর চেয়ে একটু খানি কম একটুখানি বেশি, কিন্তু সমান না। এই রকম ঘটনাগুলোকেই আমরা এইভাবে প্রকাশ করি যে, “x is tends to 3”। মানে x এর মান 3 এর খুব খুব খুউউব নিকটবর্তী

এইবারে আমরা আগের ফাংশনটার কাছে ফিরে যাই- f(x)=\frac{x^{2}-4}{x-2}

আমরা আগেই দেখেছি, x এর মান 2 হলে এই ফাংশনটা অনির্নেয় হয়ে যায়, মানে এর মান এক্সেক্টলি কত তা আমরা আর বের করতে পারি না। কিন্তু x এর মান 2 না নিয়ে যদি 2 এর খুব কাছাকাছি কিছু একটা নেই, তাহলে? মানগুলো বসিয়েই দেখি, কি হয়-
f(1.999)=3.999
f(2.9999)=3.9999
f(2.001)=4.001
f(2.00001)=4.00001
দেখা যাচ্ছে, x এর মান 2 এর কাছাকাছি কিছু দিলে পুরো ফাংশনের মান মোটামুটি 4 এর খুব কাছাকছি থাকছে! X এর মান 2 এর যত কাছাকাছি দেয়া হয়, ফাংশনের মান 4 এর ঠিক ততটা কাছাকাছি হয়!! মানে, ফাংশনটার মান আমরা বের করতে পারছি না ঠিকই, কিন্তু এর মান যে কি হলে সবচেয়ে ভাল হয়, সেটা আমরা বুঝে ফেলেছি! আর এটাও ফিল করতে পারছি যে, x এর মান 2 হলে আসলে ফাংশনটার মান হওয়া উচিত ছিল 4 হওয়া। কিন্তু, x এর মান 2 হলে লব আর হর দুই জায়গাতেই ০ চলে এসেই প্যাচটা লাগাচ্ছে। গণিতবিদেরা তাদের এই ‘ফিল’টাকে প্রকাশ করলেন এইভাবে- \lim_{x\rightarrow 2}\frac{x^{2}-4}{x-2}
এর মানে হলো x এর মান যখন 2 এর ‘খুউউউব কাছাকাছি’ পৌঁছাবে তখন  এর মানও 4 এর ‘খুউউউব কাছাকাছি’ হবে। x এর মান 2 দিলে অনির্ণেয় হয়ে যায় তো কি হয়েছে, 2 এর খুব কাছাকাছি হতে তো কোন দোষ নাই 😀 [তুমি চল পাতায় পাতায়, আমি চলি শিরায় শিরায়… হি…হি…হি…]। মানে x এর মান 2 হলে কি হয়, সে ঝামেলার দিকে আর আমরা যাবই না! বরং আমরা বলব, x এর মান যখন 2 এর এক্কেবারে কাছে চলে যায়, তখন ফাংশনটার মান হবে 4  8) । তবে কিছু কিছু ফাংশন বড্ড বেশি শয়তান!! তাদের এই লিমিট দিয়ে শায়েস্তা করা যায় না! তাদের জন্যে আরও শক্তিশালি হাতিয়ার লাগে। তবে আপাতত আমরা সেদিকে যাচ্ছি না।

এতক্ষন লিমিট আর ফাংশন নিয়ে যা কিছু বললাম তার শতকরা ৭০ ভাগই চমক ভাইয়ার কাছ থেকে ধার করা, সামনে ডিফারেন্সিয়েশান নিয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করব, তাতে হয়ত এর চেয়েও বেশি অংশ তাঁর কাছ থেকে ধার করে নেয়া। তবে ডিফারেন্সিয়েশানের আগে ঢাল নিয়ে খানিকটা ঢালাঢালি করে আসা দরকার।

(চলবে)

অনুজ সম্পর্কে

সাদা কাগজে কালো কালিতে লিখতে গেলে হয়ত লিখতে হবে - প্রথমত আমি রক্ত মাংসে গড়া এক মানুষ, দ্বিতীয়ত চিরন্তন সত্য, মৃত্যুর সাথে করি বসবাস... https://www.facebook.com/CoercedAnuj
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে টিউটোরিয়াল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

20 Responses to ভুং-ভাং ক্যালকুলাসঃ কচকচানি-১

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    এই অসামান্য পোস্ট এর জন্য একটা খানা পাওয়া রইলো! 😀

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    দারুণ 😀

  3. শাহরিয়ার বলেছেনঃ

    অছাম…!!! :clappinghands: :clappinghands: 8) 8)

    • শাহরিয়ার বলেছেনঃ

      কিন্তু আলোচনা তো অনেক কিছু নিয়েই করা হল। শিরোনামে শুধু ‘ক্যালকুলাস’ উল্লেখ করা হল কেন?

      • থ্যাঙ্ক ইউ, ভাইয়া… 😀
        আলটিমেট টার্গেট ক্যালকুলাসের একদম ভেতরের, একদম মূল কথাটা ধরিয়ে দেয়া। এর জন্যে অন্য যে রিলেটেড টপিকগুলো আছে, সেগুলোরও একটু ধারণা উল্লেখ করে নেবার চেষ্টা করেছি। আর কিছু বাড়তি কথা এসেছে বেসিক হিসেবে।

        • শাহরিয়ার বলেছেনঃ

          হুম… রিয়েলি ভেরি গুড জব!! এগিয়ে যাও!! :clappinghands:

          আমার একটা ইন্টার-পড়ুয়া “পিচ্চি গ্রুপ অ্যান্ড প্রাঃ লিঃ” আছে। 😛 তাদেরকে তোমার এই অসাধারণ সিরিজটা সাজেস্ট করেছি। :love:

          • অনুজ বলেছেনঃ

            অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া… দোয়া করবেন… :happy:
            ‘পিচ্চি গ্রুপ অ্যান্ড প্রাঃ লিঃ” … :thinking: আই শুড বি অ্যা মেম্বার অফ দ্যাট গ্রুপ…
            আসলে ভাইয়া এইটা সিরিজ না। পুরোটা একসাথেই ছিল, কিন্তু ব্লগে অত বড় কন্টেন্ট ধরে না। সাথে ল্যাটেক্সও ঝামেলা করে। তাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে শেয়ার করতে হয়েছে (অলস মানুষ, তাই মাঝে এত দেরী হয় আপ করতে)। লাস্ট পার্টটার সাথে পিডিএফ লিঙ্ক দিয়ে দেব। তাহলে পুরোটা একসাথে পাওয়া যাবে।

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    দারূণ!
    এই পোস্ট পড়ে গণিতের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবেই… 🙂

  5. একুয়া রেজিয়া বলেছেনঃ

    দুর্দান্ত পোস্ট।
    অনুজকে আসলেও দেখি ডাবল আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।

  6. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    সেটের ছবি দেখে বিশাল মজা পাইছি!
    পিচ্চিটাকে আসলেই একটা আইসক্রিম না খাওয়ালেই নয়! 😐

    এইরকম আরো কয়েকটা বিষয় নিয়ে সহজ সিরিজ করিস তো পারলে। 😀

    • অনুজ বলেছেনঃ

      টিঙ্কু মিঙ্কু :penguindance: :penguindance:

      পাওনা রইলো… [ আগে মনে হয় আরো কিছু পাওনা ছিল… মনে পড়তেছে না! আমার স্মৃতি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতেছে! :haturi: ]

      আমি ভাই ‘আইলস্যা’ মানুষ, পশ্চাৎদেশ হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ঘ্রাণ নাসিকা রন্দ্র দিয়া না ঢুকিলে পিছন ফিরেও দেখি না! আসলে কেমিকেল বন্ড, কেমিকেল কাইনেটিকস, বায়োলজির ক্লাসিফিকেশান, হিউম্যান বডি নিয়ে বেশ কয়েকটা সিরিজ আমার অর্ধেক বা ড্রাফট করা আছে। কিন্তু বেশি বড় হওয়ায় অলসতা করে আর কমপ্লিট করা হয় না। 🙁

  7. ঈশান বলেছেনঃ

    ভাল আছিস অনুজ? তোর লেখার উদ্যোগ টা প্রশংসনীয়। এটা অ্যামেচারদের জন্য খুব কাজে দিবে মনে হয়। কিন্তু তোর লেখাগুলো পরে দেখলাম তুই সচেতনভাবে ক্যালকুলাস এর গভীর এ ঢুকিস নাই 😛 আর একটু সাহস কর ভাই……… 😀

    • অনুজ বলেছেনঃ

      ভালো আছি রে…
      ব্যাপার হল, এটা একেবারে বিগিনারদের জন্যে। এখানে হঠাৎ করে খুব বেশী ভেতরে ঢোকার কোন ইচ্ছাই আমার ছিলো না। যদি সব কিছু ঠিক থাকে, সামনে বিস্তারিতভাবে ক্যালকুলাস নিয়ে টিউটোরিয়াল আকারে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।
      আসলে ভেবেছিলাম, এখানে ভালো সাড়া পেলে ওটার কাজে হাত দেব। কিন্তু সেভাবে সাড়া পাই নি। তাই দেরী করছি… 😛
      যাই হোক, আমি তবুও ওটা করব। 🙂
      জানিসই তো,
      আমার সাহস, ধৈর্য্য – দুইটাই খুব কম!! 😛

    • অনুজ বলেছেনঃ

      আর তুই মনে হয় পরের পর্বগুলো দেখিস নি… প্রতিটা লেখার শেষে পরের পর্বের লিঙ্ক দেয়া আছে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।