( কচকচানি- ১ এর পর থেকে… )
ঢাল নিয়ে ঢালাঢালিঃ
‘ঢাল’! এ আর এমন কি!!
কতই তো দেখেছি পুলিশ হরতালের সময় মোটা কাঁচের কি জানি একটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সেইটাই তো ঢাল, কত মুভিতেও তো দেখেছি যোদ্ধারা লোহার ঢাল নিয়ে কি যুদ্ধটাই না করে 😛 !!
ক্লাস নাইনে উঠার আগ পর্যন্ত ঢাল সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা এর চেয়ে খুব একটা ভাল থাকে না। কিন্তু গণিতে ঢালের একটা আলাদা মর্যাদা আছে। গণিতের এই মর্যাদাশীল ঢালের (Slope) সাথে আমাদের প্রথম পরিচয়টা ঘটে ক্লাস নাইনে উঠে ফিজিক্স বইয়ের ৩ নম্বর চ্যাপ্টারে গিয়ে।
কিন্তু সে সময় আমাদের বেশিরভাগেরই ঢাল যে কি জিনিস তার ধারনাটা থাকে- ‘দোচালা বা চৌচালা টিনের ঘরের চাল যে বাকা হয়ে থাকে, সেইটাই ঢাল’। অন্তত আমার ক্ষেত্রে এইটাই ছিল গণিতের এর মর্যাদাশীল ‘ঢাল’র পরিচয়। আর এরপর আমার ভাবনাটা ছিল – ‘রাজমিস্ত্রিরাও এত ম্যাথ জানে! এত হিসাব-কেতাব করে টিনের ঘর বানায় :thinking: ’!!
যাই হোক, ঢালের সাথে আমার প্রথম বাতচিত হয় সুব্রত দাদা’র কল্যানে। সেখান থেকেই কিছুটা শেয়ার করবার চেষ্টা করছিঃ
গণিতের ভাষায় ঢাল হল- ‘একটি সরলরেখা X অক্ষের ধনাত্মক দিকের সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে সেই কোণের ট্যানজেন্টের অনুপাতের মানকে ঐ সরলরেখার ঢাল বলে’। কিন্তু সমস্যা হল, এই সংজ্ঞা থেকে আসলে ঢাল সম্পর্কে কিছুই ধারণা করা যায় না। অন্তত আমি কিছুই ধারণা করতে পারি না।
আমি বরং আমার মত করে একটু বলতে চেষ্টা করিঃ
ঢাল দিয়ে আসলে বোঝানো হয় একটা সরলরেখা কতটুকু খাড়া তার পরিমাণ। ছবিটা দেখুন-
এখানে দেখুন, নীল রেখাটা সবুজ রেখাটার চেয়ে বেশি খাড়া। আবার লাল রেখাটা সবুজ রেখাটার চেয়ে আরও বেশি খাড়া। এই ব্যাপারটাকেই গণিতবিদেরা বলেন এইভাবে যে, নীল রেখাটার চেয়ে সবুজ রেখাটার ঢাল বেশি এবং সবুজ রেখার চেয়ে লাল রেখার ঢার আরও বেশি!!
ঢালের এই সংজ্ঞাটা আরও অন্যভাবে দেয়া যায়। তবে আমার কাছে সবচেয়ে সহজ মনে হয় এই সংজ্ঞাটা – ‘x এর মান ১ বাড়লে y যতটুকু বাড়ে সেটাই ঢাল!!’
অর্থাৎ, ঢাল হচ্ছে (y এর পরিবর্তন) ভাগ (x এর পরিবর্তন) বা, বা,
। এবারে আমরা ঢালের মূল সংজ্ঞাটা বোঝার চেষ্টা করি। নিচের ছবিটা দেখুন, θ কোণের জন্য ট্যানজেন্ট অনুপাতের মান হবে
। লক্ষ্য করুন, রেখাটি ঋণাত্বক X অক্ষের সাথে অর্থাৎ Y অক্ষের বাম দিকে X অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে । আমরা X অক্ষের সাথে রেখাটি যে বিন্দুতে মিলিত হয়েছে, সেখানে ডানে ও বামে দুইটা আলাদা আলাদা কোন থাকলেও কেবল ডান দিকের কোণটাকে বিবেচনা করে, মানে θ কোণের বিবেচনায় Tan অনুপাত নেব। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, X অক্ষের ধনাত্বক দিকের সাথে কোণ বলতে কোন রেখা X অক্ষের সাথে যে কোণগুলো উৎপন্ন করে তার মাঝে কেবল ডান দিকে যে কোন উৎপন্ন হয় সেইটাকেই বিবেচনা করা হয়, Y অক্ষের কোন দিকে সেটি আছে, তা বিবেচ্য হবে না।
এখন এই কোণের ট্যানজেন্ট (এইখানে, ) নিলে সেটাই হবে এই সরলরেখার ঢালের মান, বা সরলরেখাটি কতটুকু খাড়া তার পরিমান। তার মানে ট্যানজেন্টের মাধ্যমে যে সংজ্ঞাটা , সেটা ঠিক আছে কিন্তু এটাই মূল বিষয় নয়। ঢালের মূল বিষয় হল x এর সাথে y এর পরিবর্তনের হার।
যাই হোক, ক্যালকুলাস এর জন্যে প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা দরকার হয়, সেটুকু আমরা মোটামুটিভাবে আলোচনা করেছি। এখন আমি সরাসরি ক্যালকুলাসের ভেতর ঢুকে পড়ব। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখছি, আমি কেবল HSC ২য় বর্ষের ছাত্র। এই লেখাটি লেখার ঠিক ১৬ দিন আগে প্রথম ক্যালকুলাসের সাথে সরাসরিভাবে পরিচিত হয়েছি। একেবারেই নতুন পরিচয়, ভুল-টুল থাকতে পারে। ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, আর খুব খুশি হব চোঁখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিলে।
ক্যালকুলাসঃ
‘ক্যালকুলাস’, বাংলায় ‘কলনবিদ্যা’। ক্যালকুলাস শব্দটির উৎপত্তি মূলত ল্যাটিন শব্দ ‘Calculary’ থেকে। ‘Calculary’ বলতে বোঝায়, ছোট ছোট নুড়ি পাথর গণনা করা। ক্যালকুলাসে আমরা মূলত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাশি নিয়ে কাজ করে থাকি, তাই এ ধরণের নামকরণ। ক্যালকুলাসকে বলা হয় ‘Mathematics of Changes’।
এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ক্যালকুলাসের সংজ্ঞা কি, আমি বলব আমি জানি না। অনেক গণিতবিদ বলে থাকেন, গণিত হল বাস্তবতাকে সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপনের একটি উপায় যা কিনা আমাদেরকে পরিমান নির্ধারণে সাহায্য করে কিংবা সমস্যা সমাধানের এলগরিদম প্রদান করে… … (আমি কিন্তু কিছুই বুঝি নাই, জাস্ট অনুবাদ করে কপি করলাম)। ক্যালকুলাস আসলে ঠিক এই একই কাজগুলোই করে, তবে খুবই ক্ষুদ্র ব্যাপ্তিতে কিন্তু বিশাল পরিসরে। আমি ক্যালকুলাসের কিছুই জানি না, চিনি না কে ও। ক্যলাল্কুলাসের সাথে খুবই অল্প সময়ের এই পরিচয়ে আমার মনে হয়েছে ক্যালকুলাস হল বাস্তবিক জীবনে পাওয়া নানা সমস্যা সমাধানের একটু উৎকৃষ্ট উপায়। ক্লাস সেভেনের গণিত বইতে একটা সমস্যা ছিল এমন – ‘এমন দুটি সংখ্যা নির্ধারণ করো যাদের গুনফল ১০০০ এবং যোগফল সর্বনিম্ন’। পাঠক এই ধরণের সমস্যা আমাদের বেশ পরিচিত এবং অনেক উপায়েই আমরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি। পাটিগণিত বা বীজগণিতের সাহায্যে বা পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে আমরা এর সমাধান করতে পারি। এই পদ্ধতিতে এর সমাধান করাটা বেশ সহজ। কিন্তু সমস্যা হল, ব্যাপারটা বেশ সময় আর পরিশ্রম সাপেক্ষ। কিন্তু ক্যালকুলাসের সাহায্যে এই সমস্যাটি সমাধান করে ফেলা যায় খুব সহজেই এবং অনেক অল্প সময়ে। অনেক ক্ষেত্রে আপনি হয়ত সাধারণ বীজগণিত বা ত্রিকোণমিতি বা জ্যামিতি দিয়ে সমস্যা সমাধান করবার কোন পথই খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে ক্যালকুলাস প্রায়শই খুব সহজে সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করে দিতে পারে/করে। মূলত, ক্যালকুলাস হল গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একটা বিশেষ কৌশল। বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতির যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু ক্যালকুলাসের। এটা মূলত এডভান্সড বীজগণিত আর জ্যামিতির একটা সমন্বয়। ক্যালকুলাসে সাধারণ বীজগণিতীয় এবং জ্যামিতিক সূত্র/উপপাদ্যগুলো আমরা ব্যবহার করি কিন্তু ক্যালকুলাসের সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া অবশ্যই বীজগণিত এবং জ্যামিতির মত নয়, অনেক আলাদা।
বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করবার চেষ্টায় রত স্বাধীনভাবে ক্যালকুলাসের জন্ম হয়েছিলো নিউটন, লাইবনিৎসের হাত ধরে- এমনকি তাদের ব্যবহার করা ক্যালকুলাসের ধারণাগুলোকে প্রকাশ করার প্রতীকগুলো অনেকক্ষেত্রেই ছিল আমাদের আজকের ক্যালকুলাসে ব্যবহার করা অনেক প্রতীকের চেয়ে আলাদা। তবে ক্যালকুলাসের ধারণা প্রথম আমরা তাঁদের কাছেই পাই।
(চলবে)
শুরুতে আগের পোস্ট এর লিঙ্ক দিলে ভালো হয়।
অসাধারণ লেখা। :dhisya:
দিয়ে দিয়েছি… 🙂
থ্যাঙ্কু… 😀
মজা লাগছে পড়তে, গল্পের মতো। এইচ এস সি শেষ করে ফেললেও শিখতে ভালো লাগছে…আর ছোট দের ধরিয়ে দিচ্ছি পড়ার জন্য… 🙂
আনন্দিত এবং আনন্দিত … 😀
ভালো লেগেছে 😀
ধন্যবাদ 😀
ইশ! আমাদের সময়েও যদি এমন করে কেউ বুঝিয়ে দিতো……
দুর্দান্ত ধরণের ভালো হয়েছে লিখাটা!
দারুণ!
😀 😀 😀
৪ তারিখের পর আজ আবার একটু ভাল বোধ করছি। সম্ভবত এত বড় বড় কমেন্টগুলো পড়তে পড়তে…
“ঢাল নিয়ে ঢালাঢালি”কে প্রথমবার পড়লাম “ঢাল নিয়ে ঢলাঢলি”!
তারপর চোখ কচলে আবারো পড়তে হলো! 😐
খাইছে! তোমারই এই দশা হইলে যাদের জন্যে লেখা তাদের কি হবে!! 😯