ওই কান্না ভেজা আকাশ আমার ভালো লাগে না,
থমকে ত্থাকা বাতাস আমার ভালো লাগে না,
দড়ির তালে নাচতে থাকা ভালো লাগে না,
এই মরে মরে বেঁচে থাকা ভালো লাগে না,,,,
চারিদিকে তাকালে জীবনের পূর্ণতা দেখি। বহুবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেই পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখানোর জন্য, সবুজ প্রকৃতির প্রতি দুশ্ছেদ্য টানের জন্য, এমন জীবন দেওয়ার জন্য। এইতো জীবন- চলছে বেশ! ক্লাসে আড্ডা আর হাসি-গল্প, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানো- এরকম জীবনই হয়ত চেয়েছিলাম। ক্লাস শেষে সর্বোচ্চ শেষ সময় পর্যন্ত আড্ডা দেয়া যতক্ষণ না বাস গুলো ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে… তারপর কখনো একলা পায়ে, কখনো দোকলা, কখনো সারা দিনের সুখস্মৃতি মনে নিয়ে গুনগুনিয়ে হলের পানে হেঁটে চলা, বেপরোয়া ভাবে রাস্তা পাড় হবার মজা নেয়া, বাগানের বসন্তের ফুল আর নতুন গাছের সজীব পাতা দেখা- বুক ভরে পরম তৃপ্তির শ্বাস নেয়া।
কতটুকু তৃপ্তির? ওই তৃপ্তির নীচে চাপা পড়ে থাকে নাকি কোনো দীর্ঘশ্বাস!
“পরস্পরের খুব আপন হওয়া সত্ত্বেও সত্যিই কি কেউ কারো কাছের মানুষ?”
কাছের মানুষ-সুচিত্রা ভট্টাচার্য
পরস্পরের খুব কাছের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কি কেউ কারো মন ছুঁয়ে যায়? পরস্পরের মন ছুঁয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সত্যিই কি কারো সাথে কারো আত্মার সম্পর্ক স্থাপন হয়? তাহলে কেন ভীষণ মন খারাপের সময় এই একলা বোধ আরও মন খারাপ করিয়ে দেয়? কেন অন্ধকার থেকে কেউ আলোতে নিয়ে আসে না? নাকি নিজেই মনের দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখি? বন্ধ করে রাখলে কেউ কেন জোর করে খুলে দেয় না?
সম্পর্কগুলো হয়ত এমনই হয়। একটা সীমার পর আর মনের ভিতর আনগোনা করা যায় না। অজ্ঞাত কোন দেয়াল থাকে। সেটা কী সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা নাকি সম্পর্কের ব্যর্থতা থেকে জন্ম নেয়া একাকীত্ব? আমি অন্যদের দোষ দেখি না। নিজের দোষই চোখে পড়ে।মনে হয় কোনো সম্পর্কই যেন ঠিক মত পালন করতে পারি না। না রাখি সম্পর্কের দাবীগুলো। বন্ধুদের দাবী কতটুকু পূরণ করি যে অন্যের কাছে আশা রাখি? নিষ্ঠুর আমি, স্বার্থপরের মত জীবন যাপন করি, বন্ধুত্বের দাবী রাখা আমায় মানায় না। সব পূর্ণতার মাঝেও কেন যেন সব কিছু খুব শূন্য লাগে, ছলনা মনে হয়। প্রত্যেকের একাকীত্বের উপর মুখোশ দেয়া- দেখ আমি কত সুখী!
একাকীত্ব কী সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক? আড়ালে-আবডালে কী নিজের কোনো ভালো লাগা নেই? কেন জানি এখন একলা থাকতে খুব ভালো লাগে। কী লাভ একাকীত্বই যদি সব সঙ্গের শেষ কথা তাহলে অযথা মিথ্যা সান্ত্বনার? একলা থাকতে খুব মজা। মরুভূমিতে চলার মত। পথ হারানোর কোনো মাথা ব্যথা নেই, নেই পথ খোঁজার কোনো তাড়া।
দিন দিন এক কোণে থেকে আরো কোণে যাচ্ছি। মরে মরে বেঁচে থাকা। মৃত্যু মুখে চেয়ে থাকা। অসামাজিক জীবে পরিণত হচ্ছি। সামাজিকতার কিছু মনে হয় বাকিও নেই। ভালো লাগে আমার এক কোণে পড়ে থাকতে। আমার রাজ্যে আমিই রাজা, আমিই প্রজা।
নিজের মত থাকতে ভালো লাগে।কথা বলতে ক্লান্ত লাগে। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রত্যেকে তার চিন্তা-ভাবনা, তার বিশ্বাসে বিশ্বাসী। তাহলে কার সাথে কথা বলব, কী কথা বলব! নিজের কথার পিঠে নিজেই উড়ে বেড়াতে খারাপ লাগে না। চুপ করে থাকতে খারাপ লাগে না। এক কোণে বসে আকাশ দেখা যায়। আকাশটা তখন একলা আমার। এর চেয়ে বিশাল আর কি হতে পারে?
কাছের মানুষগুলো থেকে কতটা দূরে চলে আসলে এমন একলা লাগে? কতটা দূরে আসলে একলা থাকতেই ভালো লাগে? কেন দূরে থাকার একেকটা বাহানা দেখানো লাগে? কেন এমন হয়? আর কারো কি এমন হয় নাকি আমার শুধু এমন হয়?
কোনো কিছুই ভালো লাগে না। সারা দিন শুনি একটা গান, মাথায় ঘুরঘুর করে একই লাইনগুলো……
কান্না-কাটি হল্লা-হটি ভালো লাগে না
সবুজ দ্বীপে মরণ ঘাঁটি ভালো লাগে না।
দলছুটের গান ((http://doridro.net/download/Band/Band%20Albums/Bappa%20N%20Dolchut/Dolchut%20-%20JochhonaBihar/Bhalo%20Lage%20Na.mp3.html))
“একলা থাকতে খুব মজা। মরুভূমিতে চলার মত। পথ হারানোর কোনো মাথা ব্যথা নেই, নেই পথ খোঁজার কোনো তাড়া।” – ভালো অনেক ভালো লেগেছে। 😀
😀 ধন্যবাদ 😀
এই টুকু কোট করলাম : “নিজের মত থাকতে ভালো লাগে।কথা বলতে ক্লান্ত লাগে। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রত্যেকে তার চিন্তা-ভাবনা, তার বিশ্বাসে বিশ্বাসী। তাহলে কার সাথে কথা বলব, কী কথা বলব! ”
সঠিক বিশ্বাস এর পথে থাকলে, একলা থাকতে ভালো-ই লাগে বেশ…… 🙂
আবার এই পৃথিবীর কোন এক কোণে আর কেউ এমন অপেক্ষায় বসে আছে, এই ভাবনাও বেশ…… 🙂
কথা তখন বলতে ভালো লাগে না যখন জানি অপর জন নিজের বিশ্বাসে এমন ভাবে বিশ্বাসী যে সে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে সে অন্য কারো কথা মানবে না, নিজেরটাই ঠিক- তখন আর বোঝাতে ইচ্ছা করে না (তবে অবশ্যই সেটা তখনই যখন জানি নিজের বিশ্বাসটা সঠিক 🙂 )
নিজের বিশ্বাসগুলি ঠিক কিনা সেটা ‘জানো’ কীভাবে? 😀
পড়ে পড়ে যা মনে হয়… 🙁
“পরস্পরের খুব আপন হওয়া সত্ত্বেও সত্যিই কি কেউ কারো কাছের মানুষ?”- এই কথা ভেবে ভেবে আমাদের কতজন যে একাকী থাকার জন্য নিজেকে জোর করি… “নাকি নিজেই মনের দরজা-জানালা সব বন্ধ করে রাখি? বন্ধ করে রাখলে কেউ কেন জোর করে খুলে দেয় না?” – একাকী থেকেও নিজের অগোচরেই কেমন যেন একা থাকতে না চাওয়ার ইচ্ছা কাজ করে আমাদের… মানুষ অবাক জীব।
অনেক ভালো লাগলো লেখা 🙂
“পরস্পরের খুব আপন হওয়া সত্ত্বেও সত্যিই কি কেউ কারো কাছের মানুষ?”- এই কথা ভেবে ভেবে আমাদের কতজন যে একাকী থাকার জন্য নিজেকে জোর করি…
তাই নাকি?! আমার তো উল্টাটা মনে হয়। এই কথা ভেবে কত সময় একলা থাকাটাকে সান্ত্বনা দেই…… 🙂
ভালো লাগলো যেনে ভালো লাগলো, ধন্যবাদ 😀
আমার অসম্ভব প্রিয় একটা গান আর একটা বইয়ের থেকে কোট করেছো, আগেই বায়াসড হয়ে গিয়েছি তাই…তবু এখন কোট করতে হচ্ছেই…
“একাকীত্ব কী সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক? আড়ালে-আবডালে কী নিজের কোনো ভালো লাগা নেই? কেন জানি এখন একলা থাকতে খুব ভালো লাগে। কী লাভ একাকীত্বই যদি সব সঙ্গের শেষ কথা তাহলে অযথা মিথ্যা সান্ত্বনার? একলা থাকতে খুব মজা। মরুভূমিতে চলার মত। পথ হারানোর কোনো মাথা ব্যথা নেই, নেই পথ খোঁজার কোনো তাড়া।”
অনবদ্য! আমি একটু ক্ষ্যাপা বলেই কী না জানি না, কিন্তু অদ্ভুত ধরণের ভালো লেগেছে! মুক্তগদ্যের অপেক্ষায় রইলাম আরো! :clappinghands:
ধন্যবাদ 😀 ধন্যবাদ 😀 ধন্যবাদ :beshikhushi:
আপ্লুত হয়ে গেলাম :yahooo: :guiter:
কেন কেন কেন সুচিত্রার লেখাই কোট করতে হবে? আমার অসম্ভব প্রিয় একজন লেখিকা। আর দলছুট তো আমার টপমোস্ট পছন্দ! :love:
আচ্ছা, লাইনটা কি ‘দড়ির তালে নাচতে থাকা’ নাকি ‘নুড়ির তালে নাচতে থাকা’ ছিল? :thinking:
যদি লেখার পিঠে মন্তব্য করতে হয় তাহলে বলবো নিজের লেখাটাকেই আরেকবার পড়ে নিতে। কারণ লেখার প্রতিটা লাইন আমারও মনের কথা। অনেক অনেক ভালোবাসা লেখিকাকে। :beshikhushi:
তোমাকেও অনেক ভালোবাসা……
‘দড়ির তালে’ই তো মনে হইলো শুনে…… :thinking:
“পরস্পরের খুব আপন হওয়া সত্ত্বেও সত্যিই কি কেউ কারো কাছের মানুষ?”
কাছের মানুষ-সুচিত্রা ভট্টাচার্য
“একলা” শব্দটাই আমাকে টানে খুব। একলা থাকা, একলা হাঁটা, একলা স্বপ্ন দেখা ভালো পাই। একলা জীবন কাটাতেই ভীষণ রকমের অভ্যস্ত আমি। অদ্ভুত ব্যাপার হল একলা থাকা বা একলা থাকতে ভালোবাসা মানুষগুলোর মাঝে অদ্ভুত একটা মিল আছে। কী মিল আছে তা নিজেও ঠিক জানি না।
মুক্তগদ্য অনেক ভালো লেগেছে। তোমার লেখার হাত সহজ এবং ঝরঝরে। লিখতে থাকো। 🙂
:beshikhushi: :beshikhushi: ধন্যবাদ
প্রতিটা লাইন যেন আমারই কথা! দারুণ! :clappinghands:
ধন্যবাদ :guiter: