৮-১০ জন এগারো- বার বছরের কিশোরের মত রিফাত ততটা উচ্ছল,প্রানবন্ত,চঞ্চল স্বভাবের না। রিফাতের বাবা তিতাস গ্যাস ফিল্ডের একজন বড় অফিসার। রিফাতের বাবা গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় বদলি হন।তারা এখন মতিঝিল থাকে। রিফাত মতিঝিল গভঃ বালক উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে ।
ছোটবেলা থেকেই খুব চাপা স্বভাবের ছেলে সে । খুব বেশী চাপা স্বভাবের হওয়ায় স্কুলে কারো সাথে তেমন একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি। রিফাতের বিচরণক্ষেত্র কেবল তার স্কুল আর ছোট ঘরটার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। স্কুল ছাড়া রিফাতের অবসর কাটে সায়েন্স ফিকশান,আর ডিটেকটিভ উপন্যাস পড়ে। ছবি আঁকতেও খুব ভালবাসে রিফাত। তবে রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকায় ও এখনো কাঁচা । অবশ্য পাকা হয়ে উঠার সময় ও খুব একটা পায়নি। এইতো মাত্র মাস দুয়েক হল একটা আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তবে রিফাতের আর্ট স্কুল এর ম্যাডাম রিফাতের ছবি আঁকায় প্রচণ্ড উৎসাহ দেখে দারুণ খুশী। অবশ্য খুশী না হয়ে উপায় আছে ? রিফাত গত দু মাসে একদিনের জন্যও ক্লাস ফাঁকি দেয়নি,ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই সে হাজির। ক্লাস ছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে ২ ঘণ্টা ও ছবি এঁকে কাটায়।ছবি আঁকাআঁকিতে এতটা রিফাতের এতটা আগ্রহ আর মনোযোগ রিফাতের আম্মু খুব যে পছন্দ করেন তা না। রিফাতের স্কুল পরীক্ষার রেজাল্ট খুব বেশী ভাল হওয়ায় উনি কিছু বলতেও পারেন না,প্রথম ২ সেমিস্টারে ফার্স্ট হয়েছে।
দাদীর মুখে রোজ রাতে গল্প শোনা রিফাতের রুটিন হয়ে গেছে।এমনকি দাদীর পাশে শুয়ে গল্প না শুনলে রাতে ওর ঘুমই আসে না। দাদীও রিফাতকে খুব ভালবাসেন,এবং খুব আগ্রহ নিয়ে গল্প বলেন। অনেক রকম গল্প বলেন তিনি।রক্ষস-খোক্কসের গল্প,রাজকন্যা-রাজপুত্রের গল্প,টুনাটুনির গল্প,বাঘ মামার গল্প আরো কতরকমের গল্প যে দাদী জানেন তার ইয়ত্তা নেই,গল্প শোনে আর বিস্ময়ে রিফাতের চোখ বড় হয়ে উঠে,ভেবেই পায় না একটা মানুষের মাথায় কীভাবে এত গল্প জমা থাকে । এভাবেই ছবি এঁকে,রোজ রাতে দাদীর মুখে গল্প শুনে,জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশান পড়ে সময় কাটছিল রিফাতের।
আজ ৪ঠা এপ্রিল। প্রতিবছর এই দিনটি এলে রিফাতদের পরিবারের সবার মন খুব খারাপ থাকে। বাবার মন খারাপ থাকে,মায়ের মন খারাপ থাকে সবচেয়ে বেশী মন খারাপ থাকে রিফাতের দাদীর,তিনি এই দিনটিতে সারাদিন নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকেন।এ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানে না রিফাত। রিফাতের বড় চাচা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।তিনি ১৯৭১ সালের এই দিনেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। আর ফেরেন নি,না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন,ফিরবেন কেমন করে । পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া আত-দশজন ছেলের চেয়ে রিফাত দেশ,২১শে ফেব্রুয়ারী মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভালই জানে। যার অন্তরালে রয়েছে রিফাতের দাদীর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প। দাদী গল্প বলেন আর মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে যায় রিফাত।
এদিকে রিফাতের ছবি আঁকায় যে একটা ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে তা রিফাতের আর্ট স্কুলের ম্যাডামের বুঝতে বাকি রইল না।এত দ্রুত অঙ্কনবিদ্যার জটিল বিষয়গুলো রপ্ত করছে দেখে তিনি যেমন খুব আনন্দিত সেই সাথে কিছুটা চিন্তিত বোধ করছেন এই ভেবে যে রিফাতকে নতুন আর কি কি শেখাবেন ।এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল।একদিন ক্লাস এ ম্যাডাম এসে একটা আর্ট কম্পিটিশন এর কথা বলেন।তাদের ক্লাস থেকে মোট ৬ জনকে পাঠানো হবে। ম্যাডাম একে একে প্রতিযোগিতার জন্য যে ৬ জন কে সিলেক্ট করা হয়েছে তাদের নাম বলছেন ৫জনের নাম বলা হয়ে গেছে তার মানে কি রিফাতকে ম্যাম সিলেক্ট করেন নি। লজ্জায় চোখে পানি চলে আসে রিফাতের,ঠিক সেই মুহূর্তে ম্যাডাম যখন বলেন,`ষষ্ঠ প্রতিযোগী রিফাত কায়সার রওনক’ ছোট্ট রিফাত সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলে।কিন্তু সবাই যানে এ লোনা জলের উৎস লজ্জা কিংবা ভীতি নয়…………
কেবলই নির্মল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।
প্রতিযোগিতার দিন সকাল সকালই বাংলা একাডেমী তে আব্বু আম্মুর সাথে পৌঁছে যায় রিফাত । ও ভাবতেই পারেনি এত তাড়াতাড়ি সব প্রতিযোগীরা এসে পরবে। সবার হাতে আর্ট পেপার,পেন্সিল বক্স,রং তুলি। যেন প্রতিযোগিতার আমেজ সবার মধ্যেই বয়ে যাচ্ছে। প্রধান আতিথি হিসেবে ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।
প্রতিযোগিতা শুরু হয় সকাল ১০ টায়। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পরপরই রিফাত প্রথম কিছুটা চাপ অনুভব করে।।‘সি’ ক্যাটাগরিতে রিফাতের ছবি আঁকার বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ।কি আশ্চর্য মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কি ছবি আঁকবে সে,কিছুই ভেবে পাচ্ছে না রিফাত! তার চারপাশের প্রতিযোগীদের দেখতে থাকে,সবাই গভীর মনোযোগে ছবি আঁকছে। পেন্সিল হাতে তুলে নেয় রিফাত। কিন্তু একি আঁকছে সে?
সময় শেষ! একজন এসে রিফাতের ছবিটি নিয়ে গেল,সবার মুখেই হাঁসি। গোমড়া মুখে রিফাত বেরিয়ে এলো,নিজের উপর কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নয় সে।রিফাতের অন্যান্য বন্ধু যাদের অঙ্কনের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ তারা তাদের নিজেদের ছবি নিয়ে গল্প করছিলো। সবাই কত সুন্দর চিন্তা করেছে,এই ভেবে নিজেকে মনে মনে হাজার টা গালি দেয় রিফাত।ইতোমধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরা ব্যক্তিতা শুরু হয়ে যায়।সবার শেষে বলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি প্রতিভা বিকাশে এই ধরনের প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন।
অবশেষে আসে সেই উত্তেজনার মুহূর্ত,ফলাফল ঘোষণা পর্ব শুরু হয়।একে একে বিভিন্ন বিভাগের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়,সিনিয়র ক্যাটাগরিতে রিফাতদের স্কুল এর রঙ্গন ১ম হয়।সব বিভাগের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা শেষ হয়।এখন শুধুমাত্র প্রধান ও বিশেষ অতিথির পছন্দমতে ঘোষণা করা হবে ‘চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’। চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড কেবলমাত্র সেই প্রতিযোগীকেই দেয়া হয় যার ছবির বিষয়বস্তু ছাপিয়ে যায় অন্য সবকিছুকে। প্রধান অতিথি মুস্তাফা মনোয়ার বলেন-‘এখন দেয়া হবে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড,এটি যাবে জুনিয়র বিভাগে,বিজয়ী হয়েছেন মতিঝিল গভঃ বালক উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত কায়সার রওনক । মুহ মুহ করতালিতে ভরে উঠে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গন।রিফাতের মা রিফাতের কপালে চুমু খান।
পুরস্কার প্রদানের পর রিফাতকে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে বলা হলে রিফাত বলে,‘সত্যি বলতে আমি যে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড পাব তা ভাবতে পারি নি।ছবিতে ভারী কাঁচের চশমা পরা মহিলা যার হাতে ফুটফুটে শিশু তিনি আর কেউ নন আমদের সবার মা,আমদের দেশ।দেশ তো আমাদের মা ই,তাই না?মা যেমন করে আগলে রাখে তার সন্তানকে,দেশমাতাও তো আমাদের আগলে রাখেন সেইভাবে।মা সন্তানের এই মিলন মুহূর্তে তাইতো সূর্য্যি মামা হেঁসে তাঁর দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে,মায়ের ভালবাসার প্রতিদান কিন্তু মায়ের সন্তানেরা দিয়েছে একাত্তরে,মায়ের ভাষার দাবিতে রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল বায়ান্নে।আবার দরকার পড়লে আমরা তো আছি ই।নিজের জন্মদাত্রী মায়ের চেয়ে তাঁকে এতটুকু কম ভালবাসি না………..’
রিফাতের কথাগুলো শুনতে শুনতে চোখে পানি চলে আসে রিফাতের মায়ের।কিন্তু সবাই জানে এই জলের উৎস………………………….
কেবলই নির্মল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ।
ফরম্যাটিং খুব বড় ইস্যু।
দাঁড়ি/ কমা ইত্যাদি চিহ্ন লাগিয়ে লিখতে হবে এইভাবে। এভাবে নয় । স্পেস হবে না!
কোন লেখা কোন প্যারায় যাবে বোঝা উচিৎ।
গল্পটা ঠিক পরিষ্কার হয় নাই!
তবে লিখতে লিখতেই লিখিয়ে!
দাঁড়ি/ কমা মানে ছেদচিহ্ন লেখার সময় আমাকে সবচেয়ে ঝামেলায় ফেলে,বানান গত ত্রুটিও অনেক বেশী হয় 😳 ।স্পেস এর প্রয়োগ নিয়ে আমার ধারনাও তেমন স্পষ্ট নয়।পুরো গল্প লেখার পর বিভিন্ন প্যারায় সেগুলোকে সাজাতে গিয়ে কম দ্বিধান্বিত হই না :thinking: । এখন ‘রিফাতের চোখে দেশ’ গল্পটা লিখার সময় আমি যেভাবে ভেবেছিলাম সেটা বলি,আমি হয়তো আমার লেখায় তার উন্মেষ খুব কমই ঘটাতে পেড়েছি 🙁 ।আমার ইচ্ছা ছিল কিশোর রিফাতের মাঝে প্রবল দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটানো এবং তা প্রকাশ করাতে চেয়েছি এই লাইনগুলোতে- ”সত্যি বলতে আমি যে চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড পাব তা ভাবতে পারি নি।ছবিতে ভারী কাঁচের চশমা পরা মহিলা যার হাতে ফুটফুটে শিশু তিনি আর কেউ নন আমদের সবার মা,আমদের দেশ।দেশ তো আমাদের মা ই,তাই না?” তবে আমি যদি রিফাতের আঁকা ছবিটাই এখানে দিয়ে দিতে পাড়তাম,যেটা ওর বয়সী অন্যান্য প্রতিযোগীদের মধ্যে সত্যিই বিরল ছিল তাহলেই হয়তো পাঠকদের কিছুটা হলেও রিফাতের চোখে দেশপ্রেমটাকে অনুভব করাতে পাড়তাম ।তবে তা সম্ভব হয়নি কারণ আমি ছবি আঁকাতে বরাবরি খুব কাঁচা 😛 ধন্যবাদ ভাইয়া এখন যেভাবে ভুলগুলো ধরিয়ে দিলেন ভবিষ্যতেও তাই করবেন বলে আশা করি 🙂 (যদিও চেষ্টা করবো ভুল কমিয়ে আনতে)
ফরম্যাটিং বাপ্পিদা এখন দেখেন তো?
আগের চেয়ে কি কিছুটা ভালো হয়েছে ? 🙂
বাপ্পিদা সরি,ফরম্যাটিং শব্দটা ১ম লাইনে চলে গেছে 😛
প্রশ্নটা হবে- ফরম্যাটিং আগের চেয়ে কি কিছুটা ভালো হয়েছে ? 🙂
আর এন্টার বাটন বেশি চাপলেই সুন্দর প্যারা প্যারা হয়ে যেত! দেখে মনে হচ্ছে যে এই গল্পে মাত্র দুইটা প্যারা। কিন্তু আসলে তো অনেকগুলো ছোট ছোট প্যারাও আছে। না?
নিয়মিত লিখো, হাত চলে আসা ব্যাপার না। 😀
:welcome:
ধন্যবাদ আপু 😀 🙂
গল্পটা আমার ভালোই লেগেছে। শিশুতোষ তবে সবারই ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ 🙂