দুনিয়াতে ত্যানার পরিমাণ বেশি তাই, প্রথমেই কিছু অপ্রয়োজনীয় ডিসক্লেইমার দিয়ে নাই, তারপর আসল কথায় যাবো ।
দুনিয়াতে অনেক জরুরী-অজরুরী বিষয় আছে, দেশেও তাই; সবাই সব কিছু নিয়ে আলোচনা গবেষণা করে না । আমিও করিনা । আমি কোন বিষয়ে পন্ডিত না – আমার কোন বিষয়ে পিএইচডি নাই । তারপরেও মাঝেমধ্যে কথাবার্তা বলি, বললেই লোকজনের গায়ে লাগে – সত্য কথা নাকি সবার সহ্য হয় না । যাই হোক, সব কথার সত্যতা আমি নিরূপন ও করতে পারি না; তবে আমি সহিষ্ণুতা পছন্দ করি (এই সহিষ্ণুতা নিয়েও অনেকে পক পক করবেন, আমি তাদের বলে রাখি, সবার মতামতেরই দাম আছে, আমিও কোন হনু না, আপনিও সর্বজ্ঞ না) । দেশের জরুরী জরুরী বড় বড় বিষয় নিয়ে বড় বড় অনেক মানুষ কথা বলে, আমি ছোট মানুষ – আমি যেটা নিয়ে কথা বলি সেটা বড় নাও হতে পারে । আর যেটা নিয়ে অনেক মানুষ ইতিমধ্যে যথেষ্ট কথা বলেই ফেলছে সেটা নিয়ে আরো অতিরিক্ত বাক্যত্যাগ করার পক্ষপাতী আমি না । এখন আমি একটা বিষয় ‘ক’ নিয়ে কথা বললাম মানেই ‘ক’-ই আমার একমাত্র বিবেচ্য সেটা মোটেই না; কেও যদি সেরকম ট্যাগ করার চেষ্টা করেন সে চোখে ঠুলি আর কানে তুলা লাগায়ে বসে থাকতে পারেন ।
That being said! আসল কথায় আসি ।
আজকাল পাঠ্যপুস্তকের ছোট একটা “ঝামেলা” নিয়ে অনেক “ঝামেলা” হচ্ছে । রটনা হলো, মাধ্যমিক “ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা” পাঠ্যবইতে লেখা আছে, “দেবদেবী বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত হারাম”
এটার অর্থ করা নিয়ে ঝামেলা দাঁড় করাইতেছে অনেকে ।
যেসব আলেম বইটা লিখছেন তাদের মাথায় এই জিনিসটা ছিলো না, বা এটা আসলে এভাবে খেয়ালই করে নাই কেও । সম্ভবত এই ইন্টারপ্রেটেশন মাথায়ই আসে নাই।
আমরা স্কুলে থাকতে নভেম্বর ২০০০ এ প্রকাশিত বইতে ২য় অধ্যায় পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪ এ লেখা ছিল “৪. যেসকল প্রাণীকে কোন দেব-দেবী’র নামে উৎসর্গ করা হয়, তার গোশ্ত হারাম ।”
কোরআনে লেখা আছে (2:173) “He has forbidden to you … what has been dedicated [with it] to other than Allah.” । পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ সহ আরবী পড়তে দেখুন: তনাজিল এ বাকারা ১৭৩ এবং একই সংক্রান্ত আয়াত মায়ীদাঃ ৩ ।
সম্ভবত, ২০০০-০১ এর ওই বাক্য থেকে উন্নত করে, আর কুরআনের বক্তব্যকে আরো ভালোভাবে প্রতিফলিত করতে গিয়ে, “আল্লাহ ব্যাতীত আর কারো নামে” উৎসর্গ করা হারাম এইটা যোগ করতে চেষ্টা করেন বইটির লেখক শ্রদ্ধেয় আলেমগণ । একই সাথে তাঁরা, দেবদেবীর নামে উৎসর্গ করা জিনিস যে হারাম সেটাও সরাসরি রাখতে চেয়েছেন; এবং দুটো কথা একটা সংক্ষিপ্ত বাক্যে আঁটাতে গিয়েই (সম্ভবত) তারা অবতারনা করেছেন খুবই বিব্রতকর একটা “বাক্যরীতিগত অনিশ্চয়তা” বা বাক্যিক দ্ব্যর্থতার (Syntactic ambiguity) ।
যারা বাক্যিক দ্ব্যর্থতা সম্পর্কে বিশেষ পরিচিত নন, তাদের জন্য হালকা করে বলি, ধরেন কেও বললো, “সৈকত রিকশায় যাওয়ার সময় সাব্বিরকে দেখলো ।” এখানে, রিকশায় কে ছিল? বাংলা ব্যকরণ অনুযায়ী বাক্য সঠিক, কিন্তু অর্থ অনিশ্চিত । যেকোন ভ্যালিড গ্রামারে পার্স করলে এটা আসলে তিনরকম অর্থই করতে পারে, (ক) সৈকত রিকশায় ছিল, সাব্বির রিকশায় ছিল না (খ) সাব্বির রিকশায় ছিল, সৈকত রিকশায় ছিল না (গ) দুজনই রিকশায় ছিলো । এখন এমন কোন গ্রামার ই কনস্ট্রাক্ট করা সম্ভব না যা, বাংলার জন্য সঠিক কিন্তু এই বাক্যকে দ্ব্যর্থহীনভাবে পার্স করতে পারে ।
আমাদের আলোচ্য বাক্য “দেবদেবী বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত হারাম” তে এই সমস্যাটা চলে আসছে । এটা থেকে অর্থ আসতে পারে, (ক) {দেবদেবী বা আল্লাহ} ব্যতীত অন্যের নামে… (খ) {দেবদেবী} বা {আল্লাহ ব্যতীত অন্যের} নামে…
যাহোক, কোথাও দেখলাম, “দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত হারাম” এক্ষেত্রে সুচিন্তিত রিডিং এ অর্থ আসবে, {দেবদেবীর নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত হারাম} বা {আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত হারাম} ।
তবে, আমি এনসিটিবি’র বইতে (পৃঃ৮২) দেখলাম লেখাঃ
“৫. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উৎসর্গকৃত পশুর গোশত খাওয়া ।”
তো, এই বিষয়টা নিয়ে ফায়দা লুটতে চেষ্টারত অনেকেই । নয়া দিগন্ত তার কাজ করবেই!
তবে, সাধারণত সিনট্যাকটিকাল অ্যাম্বিগিটি অ্যাভয়েড করাটাই ভালো । অবশ্যই যেসব আলেমগণ বইটার রচনার সাথে ছিলেন তারা অন্য কিছু মনে করেন নাই । অ্যাম্বিগিটিও চোখে পরে নাই । এখন পুরা বই Ambiguity Checking এর জন্য Bengali Parser এর মধ্যে দিয়ে চালাইলে তাইলে এসব বিভ্রান্তিমুক্ত বই পাওয়া যাবে ।
বাক্যিক দ্ব্যর্থকতা সাধারণতা রিজোল্ভড হয় সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি তথ্য থেকে, অর্থাৎ, বাক্যটারে বাইরেও আমরা আরো যা যা জানি তার থেকে আমরা এসব ক্ষেত্রে সঠিক অর্থ কোনটা হবে সেটা ধরে নেই । বাস্তব জীবনে এধরনের সমস্যা অহরহ হয় না, বইতে এরকম বাক্য আসলেও পড়তে পড়তেই সঠিক অর্থ বোঝা হয়ে যায় ।
যাইহোক, আমরা লেখার সময় এরকম বাক্যিক অনিশ্চয়তা যেন না হয় তা খেয়াল করার চেষ্টা করবো ।
হাহা! ছাগু ট্যাগ খাবা তো!
শুনলান এনসিটিবি নাকি চেইঞ্জ করবে!
এত শুদ্ধ হয়ে গেছে! বুঝা গেলো সরকার মারাত্মক ভয়ে আছে!
আমি এনসিটিবি’র যে বই দেখলাম (.pdf) তাতে তো কোন ভুল নাই, অ্যাম্বিগিটিও নাই । আমার আর্গুমেন্ট এর শেষাংশ দ্রষ্টব্য ।
পোস্টটা যে কী চরম ভালো পাইলাম! সুপার লাইক! হ্যাটস অফ! সবকিছু দিলাম!
আমার সাথে গতকাল এক ব্যক্তির যুদ্ধ হয়ে গেছে এইটা নিয়ে। সেইটা আমার জীবনের এমন এক তিক্ত অনুভূতি ছিল যা আর বলবার নয়।
পিডিএফ আমি দেখি নাই। কিন্তু মেইন বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি এক ছোট ভাই দিয়েছিল ফেসবুকে, সেখানে দেখেছিলাম ‘দেবদেবীর’ শব্দটা লেখা। যাই থাকুক না কেন, অর্থটা যে ঠিকই আছে এবং আল্লাহকেও যে বিন্দুমাত্র খাটো করা হয় নি এটা খুব কম মানুষই বুঝছেন!
এরপর থেকে আমার কাছে কেউ ধোঁয়া তুলতে এলে আপনার এই পোস্টটা সাজেস্ট করব আমি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। :huzur:
ধন্যবাদ!
ভালো লাগলো শুনে চরম পুলকিত বোধ করছি ।
যাহোক, আপনার ও পরবর্তী কমেন্টের প্রেক্ষিতে আমি আমার এক বন্ধু হৃদ্য সাদরেআলা পাারভেজ কে উদ্ধৃত করব, “কেউ যদি বলে যে দেখছ কি করছে? ইসলাম শেষ করে দেবার জন্যে এই লেখা লিখছে, তখ্ন সাধারন পাবলিকে তোমার মত অত চিন্তাও করবে না, ফেস্বুকে ব্যাখ্যাও খুজবে না।
তাই আমার মত হল, বাংলা বাক্যটার গঠন যেহেতু অনেকের কাছে কন্ফিউজিং বা এম্বিগাস মনে হচ্ছে, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে এটা পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত কিংবা কতৃপক্ষের কাছ থেকে একটা ব্যাখ্যা আসা উচিত যাতে এইটা নিয়া কোনো রকম উদ্দেশ্যসাধন কেউ না করতে পারে।
ভুল না হৈলেও ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে, ভুল করি নাই বলে গোঁ ধরে থাকলে সমস্যা সমাধান হয় না।”
সেটা আমিও বলি ভাইয়া।
বাঙালির ধর্মীয় বোধ আবার বিশেষ টনটনে কিনা। তাই এতকিছু ব্যাখ্যা করার সুয় তাদের থাকে না। এক্ষেত্রে বাক্যটা ঠিক অর্থ প্রকাশ করলেও আমার মতে এইরকম দ্বিধাব্যঞ্জক বাক্য এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। পরিবর্তন করলেই এখন খুশি হব। এত ক্যাচাল আর ভালো লাগছে না।
সমস্যাটা শুরু হয়েছে ত্যানা প্যাঁচানোর জায়গা রেখে দিয়েছে দেখেই, সত্যি বলতে এই জিনিসটা আগেই ঠিক করা উচিত ছিলো, বোঝা উচিত ছিলো সুযোগ-সন্ধানীরা এইরকম স্পর্শকাতর একটা জিনিস পেলে লাফানো শুরু করবেই!!
কষ্টটা এখানেই, না বুঝেই জনতা “শেয়ারায়ে দু জাহানের অশেষ নেকী পাইলাম” ধরণের একটা ভাব নিয়া থাকে……
শেয়ার করুনের আগে একটা কথা লিখা জরুরি…আগে ভাবুন, তারপর শেয়ার করুন!
ভালো বলেছেন, পু বললে “পুঁটিমাছ” না বুঝে যারা “পুংলিঙ্গ খারাপ” বুঝে তাদেরকে আর কিইবা বলা যাবে! 🙁
খাসা বলেছেন! 🙂
ফিনিক্স এর মন্তব্যে আমার উত্তরটাও দেইখেন ।
আজকে ফেইসবুকেও একজন খুব সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটা বুঝালো তার স্ট্যাটাসে।
ভালো লাগলো। গুছিয়ে, যুক্তি দিয়ে, ব্যাকরণ দিয়ে নিন্দুকদের চোখ খুলে দেওয়া হয়েছে। :clappinghands:
পুলকিত পুলকিত 🙂
ভাল লিখছ…
ধইন্যাপাতা