এইযে শুনছেন ?
হঠাত্ নারীকন্ঠের আওয়াজে পেছন ফিরে তাকাই ।
-আমাকে বলছেন ?
-না,ঐ জঙ্গলের ভূতকে বলছি ।এই বিকেলে পুকুরপাড়ে এক আমি আর আপনি ছাড়া কে আছে বলুন। তাকিয়ে দেখি সত্যিই তো আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই ।
-আমাকে চিনতে পেরেছেন?
-আপনি নিশ্চয় সন্ধ্যা ।তাই না ? -কেন এখনো অবিশ্বাস হচ্ছে নাকি?
-না,মানে প্রায় দশবছর পরে আবার দেখা তো- আমতা আমতা করি আমি।
।-তবে আমি কিন্তু আপনাকে দেখেই চিনেছি ।চেহারা ঠিক আগের মতোই আছে ।আর সেই মিনমিনে স্বভাব ।একদম কাপুরুষের মত ।তা এবার কোথায় ডাকাতি করবেন বলে ঠিক করেছেন ?ছোটকালে চুরিবিদ্যায় যে জ্ঞানের সাক্ষর রেখেছেন তাতে তো আমার ভয়ই হচ্ছে ?যাই ঘরের দরজায় আগেভাগে খিল দেই ।সেবারতো হাঁসের উপর দিয়েই ঝক্কিটা গেছে ।‘লজ্জায় পড়ে যাই আমি । ।বলি, এখনো মনে আছে তাহলে ।আমি এখন আসি -বলে ফিক করে হেসে চলে যায় সে ।আমি সেদিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে থাকি।সন্ধ্যার চেহারা
আরো লাবন্যময়ী হয়েছে।তবে ছোটবেলার সেই ইবলিশমার্কা একচিলতে হাসি মুখ থেকে সরেনি ।অবিকল আগের মতোই ।বুকের বামপাশে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয় ।কেমন জানি ভাললাগা এসে ভর করে ।এই কি তবে ভালবাসা?ছোটবেলায় মেয়েটাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতন করেছি।কিন্তুু যেদিন এখান থেকে চলে যাই তখন বেশ কেঁদেছিল মেয়েটি ।ফোলাচোখ দেখে বলেছিলাম,’কাঁদছো কেন আর কেউ তোমাকে জ্বালাবে না।‘সে কোন কথা না বলে ফোঁফাতে ফোঁফাতে এক দৌড়ে আমার সামনে থেকে চলে গিয়েছিল ।আমি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন।
মামাবাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাবি ,সবকিছুই আসলে আগের মতো আছে ।সেই পুকুরপাড়,সারি সারি খেজুরগাছ, ,বাড়িঘর ।খালি বদলে গেছি আমরা ।ছোটবেলায় নানুবাড়িতে থাকতাম ।পিঠাপিঠি ভাই থাকায় মা আমাকে নানুবাড়িতে রেখে যান ।এখানেই একটা প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করে দেন মামা ।সেখানেই ক্লাসমেট হিসেবে এমন সব বন্ধু জোটে,যারা ছিলাম দুষ্টুদের শিরোমনি ।বাউন্ডুলেপনা ,চুরি,দুষ্টামি কি বাদ ছিল ?মানুষকে ভীষণ জ্বালাতাম আমরা।শীতের রাতে চুরি করে রস খেয়ে হাড়ি উপুড় করে রাখা,বাড়ন্ত লাউয়ের মুণ্ডুপাত করা ,গরমে আম ,কাঠাল চুরি ,রাতে ছিপ ফেলে মাছ চুরি -কত অপকর্মই না করেছি সবাই ।আমি ,শফিক,সৈকত,বাবুল,শফিক নিয়ে পঞ্চচোরের সেই দলটি ।সন্ধ্যা নামের এই মেয়েটিও তখন আমাদের সাথে একই ক্লাসে পড়ত।কিন্তু সে ছিল পুরোই উল্টো ।আমরা পড়াশোনার ধার দিয়েও যেতাম না ।সেখানে ও ছিল ফার্স্ট গার্ল ।প্রায়ই ক্লাস পালাতাম আমরা।মাঝেমধ্য ওর হাতে ধরা পড়ে যেতাম ।এরপর স্যারকে বলে দিতো সে।ফলাফল হিসেবে আমাদের কপালে জুটত আধাঘণ্টার নীলডাউন ।আমরাও বিভিন্নভাবে পাল্টা প্রতিশোধ নিতাম।একদিনের কথা মনে আছে,ও টিফিন পিরিয়ডে বাইরে খেলতে গিয়েছিল ।তখন চুপিচুপি ওর ব্যাগ খুলে টিফিন খেয়ে একটা তেলাপোকা ধরে ওর টিফিনবক্সে রেখে দিয়েছিলাম।পরে ও স্যারকে বলে দিয়েছিল। সেদিন স্যারের হাতে প্রচন্ড মার খেয়েছিলাম ।মার খেয়ে শোধরানো তো দূরের কথা সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এর শক্ত জবাব দিতে হবে ।কি ভাবে দেওয়া যায় ? সেইদিন বিকেলে আমরা পাঁচজন এই পুকুরপাড়ে বসে এটা নিয়েই ভাবছিলাম ।অবশেষে উদ্ধার করলো সন্ধ্যাই । একপাল হাঁস নিয়ে ঘরের দিকে যাচ্ছিল সে।আমাদের দিকে চোখ পড়তেই সেই বিখ্যাত দাঁত কালান মার্কা হাসি হেসে তাকাল।ঐ হাসিতে যেন পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল ।অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক হল যে,ওদের হাঁসই চুরি করা হবে এবং ঘটনাকে স্মরনীয় করে রাখতে রাতে একটা পিকনিকের আয়োজন করা হবে।সে ভাবে প্ল্যানও করা হলো।তবে মিশন সফল হলেও ঐ ঘটনার দুদিন পরেই ধরা খেয়ে যাই আমরা।বদমাশ শফি ভয় পেয়ে পিকনিক আর হাঁসের কথা সবাইকে বলে দেয় ।।কাঁদতে কাঁদতে সে এসে নানার কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করেছিল।এই জন্য নানা সেবার আমাকে বেশ মেরেছিল ।পরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে নানাবাড়ি থেকে সেই যে বাড়িতে চলে এলাম তারপর আর ওমুখো হইনি ।
।কদিন আগে মামাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে নানী বেশ জোরাজোরি করছিলো, যেন আমি তাড়াতাড়ি চলে আসি ।যাব কি যাব না -ইতস্তত বোধ করছি দেখে নানি হেসে বললেন,তোর হবু বেগম চলে এসেছে।আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলি, এই বেগমটা আবার কে?-কে আবার সন্ধ্যাতারা।-আমি কাউকে চিনি না।– চিনি না বললে হবে?হঁাসচোরাকে সবাই চেনে।আরে বাবা, চুরি করবিতো কর ,বেছেবেছে ওবাড়িতে কেন?সেটা যাইহোক সে বোধহয় চোরার প্রেমে পড়ে গেছে।দেখা হলেই খালি তোরই কথা জিজ্ঞাসা করে ।হঁাসচুরির সাথে সম্ভবত মনচুরিও হয়ে গেছে বোধহয় -নানি একথা বলে হাসতে থাকে। এই কথা শোনার পরে আমি আর দ্বিধা করিনি ।কারন সন্ধ্যাকে ছেড়ে আসার পরেই বুঝেছিলাম ,ওর অভাব কতখানি ।সেই মারামারি- ঝগড়া ,সেই একচিলতে দুষ্টুমিভরা হাসির সৌন্দয্ মিস করতাম সবসময়।কিসের মায়ায় যেন মন ছুটে আসতে চাইতো ওর কাছে সবসময়।পরক্ষনে আবার একটা অভিমান জমত বুকের মধ্যখানে।
এরপরের ঘটনা বেশ সংক্ষিপ্ত । বোনের বিয়ের দুদিন পরেই নানির ঘটকালি শুরু করেন।দুই পরিবারেরই ে বিয়েতে সম্মতি ছিল।এরকম একটা শক্ত ব্যাপার এত সহজে ঘটবে আমরা ভাবতেই পারিনি।নানা নানী এ বিয়েতে প্রচণ্ড খুশি। পরে শুনেছি, এটা নাকি তাদের বহুদিনের ইচ্ছা ছিল।আমরা বড়দের শখ পূরন করতে পেরেছি বলে নিজেরাও খুব খুশি।
বাহ, ভালোবাসার মিষ্টি প্রকাশ! :love:
কথোপকথনের ফরম্যাটিং-এর কারণেই মনে হয় পালটা উত্তর বুঝতে একটু অসুবিধে হলো আমার। এক লাইনে একজনেরই কথা থাকবে- এমনটাই ধরে নিয়ে পড়া হয় তো, তাই।
থ্যাংকু আপু । মোবাইলে টাইপ করেছি এটা।একারনেই দাড়ি কমা তে একটু ঝামেলা হয়েছে।সামনেরবার আরও যত্নবান হওয়ার চেষ্টা থাকবে ইনশাল্লাহ ।
:beshikhushi:
সহজ সরল ভালবাসার প্রকাশ! :love: ভাল লেগেছে।
দাঁড়ি আর স্পেসের ভিতরে গোলমাল হয়ে গেছে। কথোপকথনের ফরম্যাটিংয়েও! ‘ফোঁফাতে’ না ‘ফোঁপাতে’ হবে? আমিও সঠিক জানি না।
আপনি ঠিক বলেছেন ।ফোঁপাতে’ হবে।
দাঁড়ি আর স্পেস এবং কথোপকথনের ফরম্যাটিংয়ে গোলমাল হয়েছে।কারন ঐ একটাই- মোবাইলে টাইপ করেছি।তবে সামনেরবার আরও যত্নবান হওয়ার চেষ্টা থাকবে ইনশাল্লাহ ।
আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া বাকি রয়ে গেছে।বড়সড় একটা ধন্যবাদ আপনার জন্য আপু ।
শুধু ধন্যবাদ দিলেই হবে না ভাইয়া, আরো লেখা চাই, তবে আর একটু বড় যেন হয়! 🙂
http://shorob.com/wp-includes/images/smilies/icon_love.gif
এটা কি গল্প ছিল না কি নিজের জীবনের কাহিনী ছিল???
যাই হোক উপভোগ করেছি।
না ভাই,গল্প ।এমন কপাল নিয়ে বোধহয় জন্মাই নি!
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
nice storry.