আচ্ছা, তোমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে পৃথিবীতে কোন জিনিসটা একটা মানুষকে বদলে দিতে পারে, তাহলে তুমি উত্তরে কী বলবে? জ্ঞান, প্রজ্ঞা নাকি ভালোবাসার কথা? নাকি বলবে বিবেক, বোধ আর বুদ্ধির কথা? কিন্তু কী কঠিন কঠিন সব ব্যাপার এগুলো- আমার তো এতসব ভারি ভারি জিনিস শুনলেই অস্থির লাগে! আমি একটু সহজ করে বলি? আমাকে যদি কেউ এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করে, তাহলে আমি উত্তরে বলবো যে শব্দই একটা মানুষকে আমূল বদলে দিতে পারে। শুধু মানুষটাকেই নয়, শব্দ একটা মানুষের জীবনকেও বদলে দিতে পারে! কারণ তোমার ভেতরের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ভালোবাসা, বিবেক, বুদ্ধি- এতসব কিছুর প্রকাশ কিন্তু ঘটাতে পারে কেবল ঐ শব্দ!
শব্দের জোর কতখানি চিন্তা করে দেখো। এই শব্দের জোরেই আমাদের কাছে কিছু মানুষ হিরো হয়, কেউ আবার ভিলেইন হয়। আমরা মানুষকে চিনি তার শব্দ দিয়ে। মানব ইতিহাসে যেকজন লিডার বা নেতা আমাদের মনে ভেতর আসন গাড়তে পেরেছেন, সেও ঐ শব্দের জন্য। নেলসন ম্যাণ্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র থেকে শুরু করে গান্ধীজি, মাদার তেরেসা, এমনকি এদেশে বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছেন কেবলমাত্র মানুষের মাঝে একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে দেবার জন্য, যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে কেবল কিছু শব্দ দিয়ে! অর্থাৎ আমাদের মাঝে নিজের ও অন্যের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হয় কিছু শব্দ দিয়ে, আর সেই বিশ্বাস পরিবির্তিতও হয় কিছু শব্দ দিয়ে! আরো সহজভাবে বললে, আমাদের প্রত্যেকের ভেতর একটা সুপ্ত ক্ষমতা আছে শব্দগুলোকে ব্যবহার করার। আর এই ক্ষমতার জোরেই আমরা পরিবর্তন আনতে পারি আমাদের চারপাশে, কাজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি সামনে। সাথে সাথে আমাদের জীবন ধারণের মানোন্নয়নও করতে পারি এই সুপ্ত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে।
অ্যান্থনি রবিনস ফাউণ্ডেশনের কর্ণধার ও আমেরিকান লেখক অ্যান্থনি টনি রবিনস সুদীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে কাজ করেছেন কেবল মানুষ নিয়ে। কাজ করতে করতে তিনি দেখেছেন যে একে অন্যের সাথে কথা বলার সময় যদি একজন মানুষ মাত্র একটা মূল শব্দ বদলে অন্য আরেকটা শব্দ ব্যবহার করে আলাপচারিতা চালায়, তাহলে উলটো দিকে থাকা শ্রোতার প্রতিক্রিয়ায় তার অনুভূতি ও ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়! অর্থাৎ শুধুমাত্র অভ্যাসবশত যে শব্দগুলো আমরা কথোপকথনের সময় ব্যবহার করি, যে শব্দগুলো দিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করি, সেই শব্দগুলোকে একটু এদিক ওদিক করে নিলেই বদলে যাবে আমাদের সমস্ত প্রকাশভঙ্গি- কেমন করে আমরা চিন্তা করি, অনুভব করি, এমনকি কেমন করে বেঁচে থাকি তা-ও! টনি রবিনস শব্দের এই বিশেষ ক্ষমতার নাম দিয়েছেন ‘ট্রান্সফর্মেশনাল ভোকাবুলারি’- যার মাধ্যমে জেনে-বুঝে শব্দ ব্যবহার করে আমরা বর্তমান আর ভবিষ্যত জীবনকে এক ধাপ উপরের দিকে নিয়ে যেতে পারি।
আমাদের বাংলা ভাষায় মোট কতগুলো শব্দ আছে? কালের কণ্ঠের রিপোর্ট অনুসারে, আমাদের দেশে পূর্ণাঙ্গ বাংলা অভিধান এখনো অসম্পূর্ণ। আর বাংলা একাডেমীর অভিধান বলছে যে বাংলা ভাষায় শব্দসংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারের মত। তাহলে একজন সাধারণ বাংলাভাষীর জীবনে তার শব্দ ভাণ্ডারে গড়পড়তা কতগুলো শব্দ থাকতে পারে- সর্বোচ্চ ২০০০ থেকে ৩০০০? অথচ আমাদের নিত্যদিনের হিসেবে আমরা একেকজনই বা কতগুলো করে শব্দ ব্যবহার করি- গড়ে বড়জোর ২০০ থেকে ৩০০? এই ২০০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যে বেশিরভাগ শব্দ দিয়েই আবার আমরা নিজেদের আবেগ-অনুভূতিগুলো প্রকাশ করি।
যে অনন্য সম্পদ দিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা-আবেগ প্রকাশ পায়, সেই সম্পদের পরিমাণের দিক দিয়ে কেন তবে এত গরিবী হালে থাকতে হয় আমাদের? কারণ আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক সবসময় চেষ্টা করে কীভাবে আমরা দ্রুত চিন্তা করতে পারি, দ্রুত কাজ করতে পারি আর পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারি। আর সে কারণেই আমরা একই শব্দ ব্যবহার করে যাই বারবার, নতুন কোন শব্দ জানার বা ব্যবহারের আগ্রহটাও এজন্য অনেক সময়েই আমাদের মাঝে থাকে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়টা কি জানো? শর্টকাট উপায়ে আমাদের চিন্তার এই প্রকাশভঙ্গিকে আমরা যত বেশি ব্যবহার করতে থাকি, জীবনে আমাদের আবেগগুলোও ঠিক ততটাই বেশি শর্টকাট হয়ে যায়!
ছোট্ট একটা প্রমাণ তোমায় আমি এখনই দিতে পারি। ধরো, তোমাকে যদি আমি বলি যে পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যে তুমি যে অনুভূতিগুলো জীবনে সাধারণভাবে অনুভব করো, তার একটা লিস্ট তৈরি করে ফেলতে, তাহলে তুমি কতগুলো শব্দ খাতায় লিখে ফেলতে পারবে? ১২ থেকে ১৫টা বড়জোর? ২০টা শব্দও কি তুমি লিখতে পারবে? এবার খেয়াল করে দেখো তো, তোমার এই অনুভূতি প্রকাশ করার শব্দগুলোর মধ্যে কতগুলো শব্দ আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করছে আর কতগুলোই বা খারাপ লাগার অনুভূতি প্রকাশ করছে? ঠিক এই পরীক্ষাটাই করেছিল অ্যান্থনি রবিনস ফাউন্ডেশন। হোক ২০০০ কী ৩০,০০০ মানুষ, তারা দেখতে পেয়েছেন, শতকরা ৯০ ভাগই গড়ে মাত্র এক ডজন করে শব্দ লিখতে পারে, যেগুলোর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আবার নেতিবাচক শব্দানুভূতি প্রকাশ করে!
তার অর্থ তাবে কী দাঁড়ায়? যদি আমরা ধরেও নেই যে আমাদের প্রায় ৮০ হাজার শব্দ থেকে মাত্র ২০০০ শব্দ অনুভূতি প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়, আমরা সেই ২০০০ শব্দের ভেতর মাত্র ৫ থেকে ৬ রকম শব্দের ব্যবহারে ভালো বা আনন্দের অনুভূতি অনুভব করি, আর খারাপ অনুভূতিগুলো জীবনে বারবার বারবার বারববার করে অনুভব করতেই থাকি (ঐ যে আমাদের ব্রেইন অভ্যস্ত ব্যাপারগুলোতেই বেশি রিঅ্যাক্ট করে, মনে রাখে)! তাই আমরা খুশি হই, আনন্দ পাই, কিন্তু তার পরপরই আমাদের মনে গেড়ে বসে দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, আর আমরা বিরক্ত-রাগ-যন্ত্রণায় কাতর হই!
সবথেকে বড় সমস্যা হলো, আমরা খুব জেনে-বুঝে আমাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করি না। যখনই আমরা কোন কিছু অনুভব করি, তখনই আমাদের অভ্যস্ত শব্দগুলোকে আমরা নিজেদের অজান্তেই অনুভূতি প্রকাশ করতে জুড়ে দেই। ফলে যে শব্দগুলোকে আমরা আমাদের অনুভূতির অভিজ্ঞতায় বেঁধে দেই, কেবল সেই শব্দগুলোই একদিন আমাদের অনুভূতি হয়ে ওঠে!
যদি আমি বলি তুমি কি বিশ্বাস করবে যে শব্দেরও প্রাণরাসায়নিক, ইংরেজিতে যাকে বলে বায়োকেমিক্যাল ভূমিকা আছে আমাদের সবার ওপর? এক্ষুণি তোমাকে একটা উদাহরণ দিলে হয়তো তুমি বুঝতে পারবে আমার কথাটা। ধরো, তুমি যদি বলো যে ‘এই মুহূর্তে আমার নিজেকে পুরো বিধ্বস্ত লাগছে’ তাহলে তোমার শরীরে যে মেটাবলিক এফেক্ট হবে, সেটা কিন্তু তুমি যদি বলো যে ‘এই মুহূর্তে আমার একটু হতাশ লাগছে’ এই কথার মেটাবলি এফেক্ট থেকে ভিন্নতর। যেই মুহূর্তে তুমি ‘বিধ্বস্ত’ (ধ্বংসাত্মক অর্থে) শব্দটা উচ্চারণ করবে, ঠিক সেই মুহূর্তে তোমার মানসিকতা পুরো পালটে যাবে তোমার শরীরের বায়োকেমিক্যাল কার্যকলাপের কারণে।
শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয়, মানুষের আচার-ব্যবহার-অনুভূতির পরিবর্তনে শব্দের এই ভূমিকা কিন্তু চাইলে অন্য দু’জন মানুষের কথোপকথনের ভেতরেও তুমি সহজেই দেখতে পারবে, শুধু দেখার মত দৃষ্টিটাকে একটু সজাগ রাখতে হবে। ধরো, কথোপকথনের ব্যক্তি দু’জন হলাম আমরা- আমি আর তুমি। এখন আমি যদি তোমাকে তিনটা বাক্য বলি, তোমার আচরণ কিন্তু এই তিনটা বাক্য শোনার সাথে সাথে তিন রকম হবে। ধরো আমি তোমাকে বললাম-
- তুমি মনে হয় কোথাও একটা ভুল করছ!
- তুমিই (তোমার কাজ) ভুল!
- তুমি মিথ্যা কথা বলছ!
সত্যি করে বলো তো, তোমার কি তিনটা বাক্য শোনার সাথে সাথে একই রকম অনুভূতি হচ্ছে? আমি জানি, হচ্ছে না। আমাদের দুর্ভাগ্যটা আসলে ঠিক এই জায়গাতেই। আমরা কথা বলার সময় যাকে বলছি তার অনুভূতি নিয়ে কখনোই ভাবি না, আমরা কেবল নিজেদের নিয়েই সচেতন!
তাহলে আমরা এখন কী করতে পারি? আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করে এমন অভ্যস্ত শব্দগুলো কি রাতারাতি বদলে ফেলা আমাদের পক্ষে একেবারেই সম্ভব? শুধু শব্দগুলো পালটে দিয়েই আমাদের অনুভূতির প্যাটার্ন কি সহজে আমরা বদলে ফেলতে পারব? আমাদের অভ্যাসে পরিণত হওয়া শব্দের বাইরে গিয়ে সুচিন্তিতভাবে শব্দ ব্যবহার করে অনুভূতির প্রকাশ করাটা কি আমাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যাবে না?
উপায় তো অবশ্যই আছে। সেই যে শুরুতে বলেছিলাম, ‘ট্রান্সফর্মেশনাল ভোকাবুলারি’র কথা, মনে আছে না? এই ‘ট্রান্সফর্মেশনাল ভোকাবুলারি’ কিন্তু একজন মানুষের ভেতরে অনেক বড় একটা ক্ষমতার জন্ম দিতে পারে। হতে পারে, চিন্তাভাবনা করে কথা বলাটা শুরুতে আমাদের জন্য একটু কঠিন হবে, কিন্তু তবু তুমি ভেবে দেখো, শুধু একটুখানি সময় নিয়ে একটা শব্দ তুমি বললে তোমার ভেতরের অনুভূতিটা কত ইতিবাচকভাবে তোমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে! এটা এমন একটা ক্ষমতা যার মাধ্যমে তোমার খারাপ লাগার অনুভূতিগুলো দিন দিন কমে আসে এবং একসময় এমন পরিস্থিতির জন্ম দেয় যখন কোন খারাপ বা নেতিবাচক অনুভূতি তোমাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, উলটো তুমি তোমার ভেতরের খারাপ অভ্যাস বা অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জোরটা অর্জন করে ফেলতে পারো। পাশাপাশি এই ক্ষমতা তোমার ভালো লাগার অভিজ্ঞতার ঝুলিটাকে প্রতিনিয়ত ভারি করতে করতে তোমাকে জীবনে আনন্দ উপলব্ধির অন্য এক চূড়ায় নিয়ে যেতে পারে, যা তোমার কল্পনারও অতীত।
তোমার ভেতরের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ভালোবাসা, বিবেক, বুদ্ধি- এসবের প্রকাশভঙ্গি, সর্বোপরি তোমার পুরো জীবনের মান বদলে ফেলার কারিগর কিন্তু তুমি নিজেই। তুমি যদি চাও তোমার জীবনকে নতুন করে ছাঁচে ফেলে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ দিতে, তোমার কাজ, তোমার চিন্তাভাবনা আর সিদ্ধান্তগুলোকে ইতিবাচক মাত্রা দিতে, তাহলে যথোপযুক্ত শব্দ দিয়ে তোমার অনুভূতির প্রকাশভঙ্গিটাই হবে তোমার জীবনে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধনের বাক্সটার সত্যিকারের চাবি।
বহুত দিন পর দুর্দান্ত একটা লেখা। :dhisya:
ফিনিক্স ইজ ব্যাক
এই ভিডিওটা এর আগে দেখেছিলাম
দারুণ একটা উদাহরণ।
পরীক্ষা, আরো হাবিজাবির ঝামেলায় এতদিন অনেক ব্যস্ত ছিলাম।
বাট ইট’স অলওয়েজ ওয়ান্ডারফুল টু বি ব্যাক! :happy:
থ্যাংকু মেংকু! 😛
অসাধারণ লেখা !!
আসলেই দু একটা শব্দ পরিবর্তনে পৃথিবী বদলে দেয়া যেতে পারে !
:huzur:
আমাদের পৃথিবীকে আমরা সত্যিই কতটুকু ভালোবাসি- সেটা ভাববার বিষয়। আজকাল সবকিছুই তো বড্ড বেশি আমি-কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। পৃথিবী নিয়ে ভাববার অবকাশ কি আদৌ আমাদের আছে? :thinking:
শব্দ প্রক্ষেপণের পরিচ্ছন্ন অনুভূতিগুলো আসলেই খুব জরুরী, জানিস, আমি সবসময়েই এমন সব শব্দ ব্যাবহারের বিপক্ষে যেগুলো মানব অনুভূতিকে অপবিত্র করে, অথবা জীবনীশক্তির অবশ্যম্ভাবী উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। চিন্তার বিকেন্দ্রীকরণের পর থেকে মানুষ অনেকটাই দীনতায় ভুগছে, বৈশ্বিক অস্থিরতার জ্বরে হলুদাভ চোখ এখন জীবনের চেয়ে দ্রুত গতিতে নড়ছে। হাত এবং পা গুলোকেই যেখানে স্থির রাখা দায়, সেখানে চিন্তার সন্তরণের আশা তো আপত্তিজনক। তাছাড়া এখানে পেটে ভাতে যাদের দিন যায় তাদের আর শব্দ গোনার সময় কোথায়??
তবে সবচেয়ে অবাক হই, যখন শিক্ষিত মানুষগুলোও একই ভাবে তাদের দরিদ্রতা প্রকাশ করে বিষণ্ণ করে দেয় বিপরীত বলয়। অবিবেচকের মত অসংলগ্ন শব্দ ব্যবহারে দূষিত করে তুলছে সমগ্র সমাজ।
তাছাড়া উন্নত শব্দ ব্যবহার মানুষের রুচির প্রাণান্তকর বহিঃপ্রকাশ। সেটা যদি না থাকে তাহলে অনেক দামী একটা কিছুই অনুপস্থিত রবে এক একটি জীবনে। লেখাটি আমাদের বোধের মাস্তুলে হাওয়া লাগাক।
এখানে পেটে ভাতে যাদের দিন যায় তাদের আর শব্দ গোনার সময় কোথায়??>> এই বাক্যটা পুরো তীর হয়ে বুকে এসে বিঁধলো!
বিশ্বাস করো, লেখার সময় আমি এই *তাদের* কথা সত্যিই ভাবি নি! শুধু মনে হয়েছিল, আমাদের দিক থেকে আমরা কেন সহানুভূতিশীল হতে পারি না? আমরা তো শিক্ষিত। সার্টিফিকেটের ভাষায় মার্জিতও। তবু আমাদের ভেতরে কেন অপরকে ‘মার্জনা’ করার প্রয়াসটা এত এত কম?
আসলেই দুর্দান্ত লেখা। বিশেষ করে ভালো লাগলো যেটা, পড়তে পড়তে বোঝা যায় নাই যে শেষে এসে কী মেসেজ দেওয়া হবে। 😀
ভিডিওটা আগে দেখছি, গল্পটা তো অনেক পরিচিত। অবশ্য জেনে-দেখে তেমন লাভ হয় নাই। তোমার লেখা পড়ে কতটুকু কী হবে জানি না। কিন্তু ট্রান্সফর্মেশনাল ভোকাবুলারি ব্যাপারটাই খুব ভালো লাগলো। 🙂
শেষ করার আগ পর্যন্ত বোঝা যায় নাই যে কী ম্যাসেজ দেয়া হবে!
এতকিছু ভেবে লিখি নি। তবে পাঠকের মাঝে এরকম অনুভূতির জন্ম দিতে পারলে সত্যি মন্দ লাগে না। 😐
শব্দ নিয়ে এভাবে ভাবিই নি আগে!
এখন থেকে ভাববার অবকাশ পাওয়া যাবে, আশা করি। 🙂
আহ! অসাধারণ!!
সিরিয়াসলি গুপ্তধনের বাক্সের একটা দারুণ ক্লু দিয়ে দিলেন, দেখি চাবি ঠিক মত ঘুরাতে পারি কিনা
:clappinghands:
চাবি পেয়ে গেলে অবশ্যই সেটা ঘুরাতেও পারবেন।
সময়-সুযোগ করে শুধু আমাকে জানিয়েন কতটা কী ঘুরিয়েছেন জীবনের চাকা। শুনলে ভালো লাগবে। 🙂
ভীষণ রকমের :dhisya: :dhisya:
মজার ব্যাপার হল এই ‘ট্রান্সফর্মেশনাল ভোকাবুলারি’র ধারণা না থাকলেও শব্দ যে মানুষের রি-অ্যাকশনে অনেক বেশি এফেক্ট করে সেটা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম।
একটা দূর্দান্ত ফিনিক্সীয় লেখা । :clappinghands:
টার্মটা না জানলে কী হবে? ব্যাপারটা বুঝতে পারাই হলো মূল কথা! সবাই তো সেটুকুও ঠিকঠাক পারে না রে পাগলা! :beshikhushi:
লেখাটা পরে আমি যা বুঝলাম – অন্যের সাথে কথা বলবার সময় খানিক হলেও সতর্ক থাকতে হবে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে; কারণ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে একটা সাইকোলজিক্যাল ইফেক্ট পড়ে।
সাধেই কি আর বলে, শব্দচয়নে সতর্ক হও ! 😛
লেখা ভালো হয়েছে :clappinghands:
*লেখাটা পড়ে
লেখার অর্থ বুঝতে পারাটাও একটা বিশাল ক্রেডিট!
আর কথোপকথনের সময় এটা মাথায় রাখলে তো কথাই নাই! আমার এই লেখাটা তাহলে অল্প একটু হলেও সার্থকতা পাবে। :beshikhushi:
সামান্য টাইপো নিয়েও এখন মানুষগুলো কত সতর্ক!
দেখলেই কেমন শান্তি শান্তি লাগে! :happy:
😛
:love:
“অসাধারন”! ! ! আর কোন শব্দ মাথায় আসছে না এখন। 😛
কৃতজ্ঞতা- আর কোন শব্দ আমারও মাথায় আসছে না এখন। 😛
শব্দ পালটে দিতে পারে সবকিছু, “চিন্তা”র জায়গায় ভাবনা, “ভালো আছি”র জায়গায় “বেশ আছি” এমনকি, “কী খবর” এর জায়গায় “আরে! কেমন আছিস!”……পালটে দিতে পারে অনেক কিছুই…
দুর্দান্ত এমপ্যাথিক একটা ভাবনার জায়গা তৈরি করে দিয়েছে লিখাটা……
এম্প্যাথি তৈরি করতে সত্যিই পেরেছি!
আমার তো বরং মনে হয় যে ওটা অনুভব করার বোধটা কেবলই পাঠকের স্বকীয় গুণ। 😐
লেখাটা গতকাল একবার পড়েছিলাম, আজকে আবার পড়লাম। *অনুভূতি প্রকাশ* করার জন্য একটা মন্তব্য করবো ভাবছিলাম, কিন্তু মনে হয় *গুপ্তধনের বাক্সটার সত্যিকারের চাবি*টা হারিয়ে ফেলেছি!! তাই *যথোপযুক্ত শব্দ দিয়ে* লেখাটা পড়ার পরের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না!! 🙁
হাহাহা!
চাবি খুঁজে বের কর আবার। আমার লেখার মন্তব্য করার জন্য না, জীবনের গুপ্তধনের বাক্সটা খুলতে হবে তো! :beshikhushi:
লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো আপু। সঠিক শব্দচয়ন একজন মানুষের ব্যাক্তিত্বেরও প্রতিফলন ।
তবে সবসময় শব্দের এই গুরুত্ব মাথায় থাকে না। 🙁
প্রায়ই এমন হয় যে, কাউকে কিছু একটা বলে পরে ভাবি ব্যাপারটা অন্যভাবে বললে তার গুরুত্ব অন্যরকম হত। 🙁
তবে চেষ্টা থাকবে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার। 🙂
মানুষ তো ভুলে যাবেই- এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আবারো মনে করার চেষ্টাটাই স্বকীয়, এই চেষ্টা কারো ভেতর থাকলে ভুলে গেলেও ভুল করে ভুল পথে হেঁটে চলার ভয় আর থাকে না। 🙂
আপু এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন কীভাবে?পড়ে খুব ভালো লাগলো 🙂
‘এটা এমন একটা ক্ষমতা যার মাধ্যমে তোমার খারাপ লাগার অনুভূতিগুলো দিন দিন কমে আসে এবং একসময় এমন পরিস্থিতির জন্ম দেয় যখন কোন খারাপ বা নেতিবাচক অনুভূতি তোমাকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, উলটো তুমি তোমার ভেতরের খারাপ অভ্যাস বা অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জোরটা অর্জন করে ফেলতে পারো।’ :clappinghands:
তন্বী আপু যেটা বললেন-‘প্রায়ই এমন হয় যে, কাউকে কিছু একটা বলে পরে ভাবি ব্যাপারটা অন্যভাবে বললে তার গুরুত্ব অন্যরকম হত’ এটা খুব কমন একটা প্রবলেম এবং এটা মনে একধরণের হতাশার সৃষ্টি করে। 🙁
হতাশা থেকেই ফের আশার জন্ম হয় কিন্তু।
সেটা ভুলে গেলে চলবে? 🙂
ভুলি নি আপু
এই লাইনগুলোতে যে আছে অগাধ বিশ্বাস
‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে,
হারা শশীর হারা হাসি
অন্ধকারেই ফিরে আসে।’
কিন্তু আপু তবুও মাঝে মাঝে ……… 🙁
মানুষের মন তো, একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে।
দারুণ একটা লেখা।
ইতিবাচকতার এমন চর্চা ও পারস্পারিক আদান-প্রদান সরব ছাড়া বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের আর কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই।
আমরা ইন্টারমেডিয়েটে থাকতে বাংলা ১ম পত্রে সম্ভবত অস্তিবাচক ও নেতিবাচক বাক্যের রূপান্তর পড়েছিলাম। কিন্তু বাস্তব জীবনে নেতিবাচক বাক্য থেকে অস্তিবাচক বাক্যের রূপান্তরের প্রয়োগ খুব কমই করেছি। এটা মনে হয় আমাদের এই উপমহাদেশের মানুষের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য। আমরা ভালো জিনিস গ্রহণ করতে পারি না। মনে হয় একটা অভেদ্য পর্দা মাঝখানে রয়ে গেছে।
দ্যাখেন! এত ভালো একটা পোস্টে এসে আমিও নেতিবাচক কথা শুরু করে দিলাম।
সবশেষে অনেক অনেক ধন্যবাদ। চমৎকার একটি ফিনিক্সিয় লেখা উপহার দেবার জন্য।
ইতিবাচকতার এমন চর্চা ও পারস্পারিক আদান-প্রদান সরব ছাড়া বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের আর কোথাও হয় বলে আমার জানা নেই।>> এই বাক্যটা শোনার পর কী যে ভালো লাগল ভাইয়া! বলে বোঝাতে পারব না সবটুকু! :beshikhushi:
আশা করি, ইতিবাচক শব্দগুলো আমাদের জীবনেও বাস্তব রূপ পাক। 🙂
সমস্যা হইলো, মাথা গরম থাকলে গোছানো ও মার্জিত শব্দ চয়নটা একটু কঠিনই মনে হয়। 🙁
মাথা গরম কখন থাকে বল তো?
যখন শব্দ চয়নটাই উল্টো-পাল্টা হয়! অন্য কারো শব্দ চয়নের রিঅ্যাকশানই কিন্তু মাথা গরম, তাই না? 😛
একই রকম রি-অ্যাকশান চাইলে তুই-ও দেখাতে পারিস। ওটাই সহজ, ব্রেইন ওটাকেই সহজে অ্যাক্সেস করে। কিন্তু চাইলে বিপরীত কিছুও ঘটতে পারে, অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে কেবল এজন্য। 😐
আচ্ছা , ঠিকাসে, মানছি । :huzur:
অসাধারণ একটা লেখা। :clappinghands:
এমনভাবে কথা বলার চেষ্টা করি, তবে আরও চেষ্টা করতে হবে।
আমিও চেষ্টা করে যাচ্ছি এখনো। 🙂
লেখাটা সত্যি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে!! (শুধু এইজন্য লগ-ইন করলাম) 🙂
যথোপযুক্ত শব্দ দিয়ে অনুভূতি প্রকাশের চেষ্টাটা আমিও করি তবে ‘ট্রান্সফর্মেশনাল ভোকাবুলারি’ টার্মটা জানতাম না, এইটা নিয়ে কী কী গবেষণা হয়েছে তাও জানতাম না। উচ্চ মাধ্যমিকে সাইকোলজি পড়ার সময় সামাণ্য ধারণা হয়েছিলো, শব্দ কীভাবে মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। তোমার লেখা পড়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম আপু। :beshikhushi:
আমরা কথা বলার সময় যাকে বলছি তার অনুভূতি নিয়ে কখনোই ভাবি না, আমরা কেবল নিজেদের নিয়েই সচেতন! ধরো, এই কথাটা তুমি আমাকে বলবে সামনা সামনি, কারণ আমি একটু আগে তোমার সামনেই একজনের সাথে ঝগড়া করেছি। কীভাবে বলবে আপু? 😛
কথা শুধু শব্দ দিয়েই পরিবর্তন করবো তাও না, আমার বাচনভঙ্গী, কন্ঠের কোমলতা ও দৃঢ়তা, আন্তরিকতা ইত্যাদি ইত্যাদিও অনুশীলনে আনা দরকার, তাই না আপু? ভালোবাসা নাও! :love:
অবশ্যই অবশ্যই!
বাচনভঙ্গী, কন্ঠের কোমলতা ও দৃঢ়তা, আন্তরিকতা ইত্যাদি ইত্যাদিও অনুশীলনে আনা অবশ্য কর্তব্য।
যদি তুই আমার সামনে ঝগড়া করতিস, তাহলে তোকে চিন্তা করে দেখতে বলতাম যে কেন ঝগড়া করলি।
সবচেয়ে কমন উত্তর হলো- ও এইরকম বললো বা করলো বলেই না মেজাজটা চটে গেলো!
তখন আমি বলতাম- ওর বলার ভঙ্গি তোর উপর যেমন প্রভাব রেখেছে, তোর ভঙ্গিটাও তাই। এভাবেই আমরা নিজেরা না বুঝে কথা বলে ফেলি যা অন্যদের আঘাত করে। আমরা কথা বলার সময় যাকে বলছি তার অনুভূতি নিয়ে কখনোই ভাবি না, আমরা কেবল নিজেদের নিয়েই সচেতন! তাই আমাদের আরো অনেক অনেকবার ভাবতে হবে কিছু বলার আগে। আজ তুই ভাববি, কাল তোর থেকে আরেকজন ভাববে। মানুষের মাঝে এভাবেই তো ভালো বোধগুলো ছড়ায়। 🙂