১)
নাক-মুখ কুঁচকে গেলো মুহিবের!
ইচ্ছেমতো ডেটল ঘষছে মুখে, কিন্তু রক্ত বন্ধ হচ্ছেনা। আফটার শেভ, ডেটল কোনোটাই বাদ নেই, কিন্তু হতচ্ছাড়া রক্তের বাধ যেনো আজ টিপাইমুখের বাধও মানবেনা। কপাল সবই কপাল!
তাড়াহুড়া করে শেভ করতে গিয়ে গাল কেঁটে ফেলেছে মুহিব। কিছুক্ষন আগে তাড়াহুড়া করে ইস্ত্রী করতে গিয়ে বাম হাতে ছ্যাকাও খেয়ে সে একখানা! আজ মুহিবের সব কিছুতেই তাড়াহুড়া! বাচ্চাদের খেলনা কিনে দেবার আশা দিয়ে মার্কেটে নিয়ে গেলে তারা যেমন অনুভব করে, মুহিবের অবস্থাও তাই। আজকে দেড় বছর পরে মুনিয়া তাকে কিছু জানাতে চায়।
মুহিব এখন ফেসপ্যাক দিয়ে তার গালের কাটাদাগ লুকানোয় ব্যস্ত, তার ছোটোবোনের ড্রেসিং টেবিল থেকে সে প্রায়ই ক্রীম, উপটান, ফেসপ্যাক মেরে দেয়। আজ ভালোই কাজে লাগছে সেগুলো! সে আয়নার দিকে তাকালো, এক্কেবারে ব্র্যাড পীটের মতো লাগছে নিজেকে! এখন শুধু একটা লেন্স আর একটু গায়ের ময়লা রংটা ফর্সা করতে পারলেই হলিউড থেকে ডাকটা পেয়ে যেতো!
২)
– দেখুন, আমি লুইচ্চা-লাফাঙ্গা ছেলে পছন্দ করিনা।
– আমিও। আমি কক্ষনো লুইচ্চা ছেলেদের সাথে মিশিনা। আমার আম্মাও আমাকে সবসময় বলছে আমি যাতে লুইচ্চা ছেলেদের সাথে না মিশি।
– আমি একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না। আপনি কি ইচ্ছে করে বুঝে না বোঝার ভান করছেন, নাকি আসলেই বুঝেন নাই? আমি তো লুইচ্চা লাফাঙ্গা আপনাকেই বলেছি!
– কিন্তু আমি তো লুইচ্চামী করিনি কোনো! আমি কি কোনো মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছি? ওড়না ধরে টান দিয়েছি? শিস দিয়েছি? আমি কোনোদিনই এইসব করিনা। এগুলা যারা করে, আমার আম্মা আমাকে সবসময় এদের থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
– আপনার আম্মা কি এটা বলেছে যে ভ্যালেন্টাইন ড্যা তে রাস্তায় একা মেয়ে পেলে তাকে ফুল আর চকলেট দিতে?
– না। আসলে, আমি গতকাল একটা হিন্দী সিনেমা দেখেছি, ঐখানে ৩টা নায়ক এই দিনে গাছের পাতায় ভালোবাসার কথা লিখে দেয়! আমাদের বাসায় শুধু বেল গাছ আছে। এখন বেল পাতায় তো আর চিঠি লিখা যায়না! আর, এই দিনে নাকি কেউ কাউকে সত্যিকার ভাবে ভালোবাসলে, তাকে ফিরিয়ে দেয়া যায়না!
– আপনি আমাকে সত্যিকার ভাবে ভালোবাসেন?
– হ্যা (দাঁত বের হয়ে গেছে মুহিবের)
– কবে থেকে?
– এই তো, কিছুক্ষন আগে থেকে।
– আপনাকে একটা শেষ কথা বলি? আপনি একটা গাধার দুলাভাই বলে আপনাকে আমি এখনও আস্ত রেখেছি। অন্য কেউ হলে আমি আমার বড় ভাইকে ডেকে তাকে ডাবল খত্না করে শহর ছাড়া করতাম।
– আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেনো? আমি তো চার বছর বয়সে একবার খত্না করেছিই! আবার কেনো করবো? আর আজকের দিনে এগুলা কি বলছেন?
– তুই সামনে থেকে যাবি নাকি চড় খাবি?
মুহিব ফুল আর চকলেট ফেলে কোনোমতে দৌড়ে ঐদিন বাসায় এলো! এই ছিলো মুহিব আর মুনিয়ার প্রথম দেখা!
৩)
“এই সি.এন.জি, এই! হেই মামা !! মামা গো!”
কে কার মামা! এতো সময় আছে নাকি তাদের! মুহিবের ফেসপ্যাক আর মাথার জেল গরমে গলে গলে পরতে লাগলো। ঘামের সাথে সেই দুয়ের মিশ্রন এক অবিস্মরনীয় রুপে পরিনত হলো!
বহু কষ্টে মুহিব একটা লোকাল বাসে উঠলো। ঠিক চারটায় আশুলিয়ায় থাকতে বলা হয়েছে তাকে। লোকাল বাসের ঠেলাঠেলী আর অসহ্য ঘামের গন্ধও আজ মুহিবের কাছে স্বর্গীয় মনে হচ্ছে! যেখানে তিন টাকার ভাড়া চার টাকা চাইলে গলার রগ অন্যদিন ফুলে ফেপে উঠে, আজ সেখানে হাসতে হাসতে কন্ট্রাকটরকে ১০টা বখশিস দিয়ে দিলো। কন্ট্রাকটর দশ টাকার নোট উল্টে-পালটে আলোয় নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো।
কিছু মানুষের কপাল ব্যাপক খারাপ। তারা রাশিফলে বিশ্বাস করেনা, কিন্তু শনিগ্রহ কোনো এক কারণে তাদের ভালোবেসে ফেলেছে! মুহিব দরদর করে ঘামাচ্ছে, বাসের চাকা নাকি লিক হয়ে গেছে। কিন্তু সে সময় মতো না পৌছালে তার ভালোবাসা লিক হয়ে যাবে। সে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। সে ভালো করেই জানে, সে কোনোভাবেই হেঁটে এতোদুর যেতে পারবেনা। আজ সব নবাবের ব্যাটারা সি.এন.জি ক্যাব নিয়ে নেমেছে নাকি? দুশো’র জায়গায় ৩০০ সাধলেও এমন এক ভাব করছে যেনো কেউ সুই গরম করে তাদের পিছনে ঐ জায়গায় খোচা দিয়েছে! মুহিব আরো দ্রুত হাটতে, রীতিমত দৌঁড়াতে লাগলো।
৪)
– একদম চুপ করে এখানে বসেন। একটা কথা বলবেন না।
– আচ্ছা
– আপনার সাথে আমি কিছু কথা বলবো। আগে আমার কথা শুনবেন, ভালোভাবে বুঝবেন। এরপর কথা বলবেন, ওকে?
– জ্বী।
“ আমি আপনার সম্পর্কে বেশ কয়কজন বন্ধুর কাছ থেকে খোজ খবর নিয়েছি। তারা মোটামুটি সবাই এক কথাই বলেছে। আপনি নিশ্চয়ই জানার জন্য আকুপাকু করছেন যে কি বলেছে আপনার ব্যাপারে!” – মুনিয়া ভুরু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো। মুহিব কপালের ঘাম মুছে নড়েচড়ে বসলো।
“তারা সবাই আমাকে সুনিশ্চিতিভাবে জানিয়েছে যে আপনি একটা আঁতেল, সারাদিন থাকেন খালি পড়াশুনা নিয়ে। ক্লাসে, ক্যান্টিনে এমনকি ফেসবুকেও আপনি নাকি শুধু পড়াশুনার কথা জিজ্ঞেস করে করে সবাইকে জ্বালান। আরও কথা আছে, তারা আপনার ভালো কিছু কথাও বলেছে যেমন, আপনি সিগারেট খান না। কখনো মেয়েদের সাথে ঠিক মতো কথাই বলেন না, ইভ টিজিং তো দুরের কথা! মানে সব মিলিয়ে একজন আদর্শ পুত্র আর কি! তো, আমার যেটা খটকা লাগে সেটা হলো, আপনি আমার সাথে এমন লুইচ্চামী করলেন কেনো সেদিন ?” মুনিয়া কোমরে হাত দিয়ে ভয়ানক দৃষ্টিতে মুহিবের দিকে তাকালো।
মুহিব কাশি দিলো কয়েকটা। এদিক ওদিক তাকালো। “ আসলে হয়েছে কি, গত পরীক্ষায় আমি থার্মোডায়নামিক্সে সেকেন্ড হাইয়েস্ট নাম্বার পেয়েছি, এরপর আমি খুবি আপসেট হয়ে গেলাম। আমার সবসময় হাইয়েস্ট পেয়ে অভ্যাস। তো, আমার এক বন্ধু আমাকে বললো যে, আপনি হাইয়েস্ট পেয়েছেন। তাও আবার নকল করে! পায়ের উপর নাকি বই রেখে দেখে দেখে লিখেন আর স্যার আসলেই কামিজ দিয়ে ঢেকে ফেলেন! তো আমি খুবি রাগ হলাম! তো সেদিন আবার ১৩ই ফেব্রুয়ারী ছিলো, আমি গটমট করে আপনাকে খুজতে বের হলাম যে, আপনাকে জোর করে ধরে ডীনের কাছে যাবো। পরে, আপনার কাছে গিয়ে আপনাকে ডাক দেবো তার আগেই আপনি আমার দিকে তাকালেন। মনে হলো, পৃথিবীর এন্ট্রপি যেনো শুন্য হয়ে গেছে। আমার হৃদপিন্ডের ব্লাড সারকুলেশন যেনো হঠাত করেই তিন-চারগুন হয়ে গেছে! পায়ে জোর পাচ্ছিলাম না। এতো সুন্দর কোনো মানুষ হয়! মার্সিয়ান কিংবা অন্য কোন গ্যালাক্সির হলে একটা কথা ছিলো! ক্লিওপেট্রার থেকেও সুন্দর লাগছিলো আপনাকে। আমি আবার সুন্দরী মেয়েদের ভয় পাই। তারা খুবি দেমাগি হয় তো, এই জন্য! আমি করলাম কি, তাড়াতাড়ি কেটে পড়লাম! ঐদিনই আবার রাতে একটা হিন্দী সিনেমা দেখলাম। আপনাকে তো বলেছি সেটার কাহিনী। তো, সাহস করে পরদিন গেলাম। তারপর তো সবই ইতিহাস!”
মুনিয়া হাসবে নাকি কাঁদবে! সে হেসে ফেললো। “শোন, আমি আর তুই এখন থেকে ফ্রেনড, বুঝসিশ? তুই অনেক ভালো ছেলে আর অনেক ভালো ছাত্র। আমাকে তুই পড়াবি। আর আমি তোকে আমার থেকেও সুন্দর মেয়ে এনে দিবো। আর কিভাবে প্রেম করতে হয়, সেটাও শিখিয়ে দেবো। রাজী আছিস? রাজী না থাকলে আর আমার সাথে কক্ষনো কথা বলতে আসবিনা বলে দিলাম!”
মুহিবের বুকটায় হাহাকার জেগে উঠলো! হায় হায় ! এই সেই ক্লিওপেট্রা! তার মুখে এইসব কি মাস্তানী ভাষা ! আর কিসের দোস্ত? সে তো স্বামী হতে চেয়েছিলো! মুনিয়াকে হারানোর ভয়ে সে তাকে দোস্ত হিসেবেই মেনে নিলো। তবে, সে আশা ছাড়লোনা।
৫)
সাড়ে চারটা বাজে, মুহিব আতিপাতি করে মুনিয়াকে খুজছে। কিন্তু পাচ্ছেনা। ইতোমধ্যেই তার ফেসপ্যাক আর জেল তার সারা মুখে মেখে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়ে গেছে। মুনিয়াকে ফোন দিলো।
– হ্যালো
– হ্যা বলো।
– তুমি না চারটায় আসতে বলেছিলে, এখন তো সাড়ে চারটা বাজে। আমি এসে পরেছি অনেক আগেই।
– আমি তোমাকে চারটায় আসতে বলেছি, আমি কি বলেছি আমি চারটায় আসবো? বেশী পকপক করো তুমি! আমার আসতে একটু টাইম লাগবে। তুমি এক কাজ করো। নৌকা দিয়ে কিছুক্ষন ঘুরে বেড়াও। সময় কেটে যাবে। আমি আসছি।
মুহিব এক নৌকার কাছে গেলো। দেখলো এক বুড়ো লোক বসে আছে নৌকায়। বিপুল শক্তিতে সে বিড়ি টানছে। যেনো এক টানেই পৃথিবীর সব সুখ সে তার ভেতরে ঢুকিয়ে নেবে! চোখ বন্ধ করে তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে ভিড়ি রেখে, বৃদ্ধাঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে এক অভিনব কায়দায় সে টান দিচ্ছে বিড়িতে। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় তখন তাকে বিড়ি ধরা রবীন্দ্রনাথের মতো লাগছে!
– কাক্কু, শুনতে পাচ্ছেন?
– ত্যাক্ত কইরেন না। ভাড়া উডবেন ? নাইলে ফুটেন!
– জ্বী ভাড়া উঠবো।
– লগের জন কই ? কয় ঘন্টা? পর্দা ফেলায়া নাকি পর্দা খুইলা? পর্দা ফেলায়া পরতি ঘন্টা ছয়শো টেকা। পর্দা উডায়া ঘন্টা ৯০০ টেকা।
– পর্দার ব্যাপারটা বুঝিনি। পর্দা ফেলে দাম কম কেনো?
– পর্দা ফেলাইন্যা পার্টির মার্কেট বেশী! লাভ কম সেল বেশী আর কি! আপনি কোনডা? আপনের লগের জন কই?
– সাথে এখন কেউ নাই। একটু পরে আসবে।
– তাইলে এট্টু পরেই আসেন। একা উইড্ডা মজা নাইক্কা। লগে একজন লয়া উডবেন, পর্দা নামাইবেন। আর কি! ভিত্রে যা যা লাগবো সব আছে!
মুহিব বুড়োর রহস্যময় হাসিতে ভয় পেয়ে গেলো !
৬)
মুনিয়া আর মুহিব বেশ ইয়ার দোস্ত হয়ে গেছে। যদিও মুহিব এখনও মনে মনে মুনিয়াকে বেশ ভালোবাসে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেনা। যদি মুনিয়া রাগ হয়ে সত্যি সত্যি তাকে ছেড়ে চলে যায়? থাক না এইভাবে ! একসাথে চালতার আচার খেয়ে, একসাথে আড্ডা দিয়ে, একসাথে পড়তে বসে, একসাথে হাসাহাসি করে বেশ ভালোই তো দিন কাটাচ্ছে সে! মুনিয়ার কাছে, সে শুধুই একটা আতেল আর ভালো বন্ধু!
মুনিয়া প্রায়ই মুহিবের বাসায় আসে, তার কাছে গাউসের ম্যাগনেটিক ল্য কিংবা ভ্যান ডে গ্রাফের ক্যাপাসিটর বোঝার জন্য। আজ মুনিয়ার আসার কথা। আম্মাকে সে আগেই জানিয়ে রেখেছে, আম্মা ফ্রীজে নাস্তা বানিয়ে রেখে গেছেন মুনিয়ার জন্য। মুহিব বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো। ঐ যে দূরে, ফুটপাথ ধরে ডানাকাটা পরীটা হেঁটে হেঁটে আসছে। ইশশ, একবার বলতে পারতো! একটু গালে হাত দিয়ে বলতে পারতো, “আমার এই হৃদয়টা ক্যাপাসিটরের মতো পৃথিবীর সকল ভালোবাসা ধারন করে আছে, শুধু তোমাকে দেবার জন্য ! ” সবার কপাল রতো ভালো হয়না। মুহিব একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে গিয়ে দরজা খুলে দাড়ালো।
– কিরে? কেউ বাসায় নেই?
– না। আম্মাতো অফিসে আর নীতু কলেজে। তুই দেরী করলি কেনো? ১০টায় আসার কথা, এখন সাড়ে এগারোটা বাজে!
– পকর পকর বাদ দে! ডেসট্রাক্টিভ রেজোন্যান্স বুঝিনা। বুঝায় দে।
কিছুক্ষনের মধ্যে সারা দুনিয়া যেনো অন্ধকার হয়ে গেলো, আকাশ বাতাস ঝাপিয়ে যেনো বৃষ্টি নামলো। মুনিয়ার খুশী দেখে কে!
– চল বৃষ্টিতে ভিজবো!
– অসম্ভব! আমার সাইনোসেটিকের সমস্যা আছে!
– তোর এইডস হোক, আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। তুই আমার সাথে ভিজবি, ছাদে যাওয়া যায়?
– হ্যা যায়।
– চল। প্লীজ দোস্ত!
মুনিয়ার মুখে প্লীজ! আহা, মেয়েটা কতোই না লক্ষ্মী ! মুনিয়া আর মুহিব ছাদে গেলো। বৃষ্টির বিশাল ফোটা একেকটা যেনো চামড়া ভেদ করে ফেলবে! এর মাঝে মুনিয়া ওড়না প্যাচ দিয়ে একেবারে ছাদের মাঝে! ইশশ, একদম সত্যিকারের ডানা কাটা পরীর মতো লাগছে! আকাশ পুরো ঘন কালো, রবী ঠাকুরের ঘন বরিষার জন্য চারিদিক শুধুই বিভ্রম। আর তার মাঝে গাড় সিক্ত নীল জামায় মুনিয়া। মুহিবের বুকটায় চিনচিনে একটা ব্যাথা হতে থাকে। এই মেয়েটাকে সে কতো ভালোবাসে, কোনোদিন মেয়েটাকে জানাতে পারবেনা।
মুনিয়া হঠাত বৃষ্টির ছিটে ছুড়ে মারে মুহিবের মুখে। মুহিব চমকে উঠে।
– আয় ভিজি!
– না। তুই ভিজতে থাক
– প্লীজ দোস্ত আয়! তোর পায়ে পরি! একা একা মজা নেই, আয় না !
মুনিয়া মুহিবকে টেনে আনে। সে মুহিবের হাত ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুরতে থাকে। মুহিবের খুব ইচ্ছে করলো হাতগুলো ধরে রাখতে। সে হঠাত মুনিয়াকে একদম বুকের কাছে টেনে নেয়! মুনিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই তার কানে কানে বললো, “মুনিয়া। আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে। আমি কোনোদিন তোকে ছাড়া ভিজতে পারবোনা বৃষ্টিতে। আমি খুব একা রে। তুই চলে গেলে আমি একদম একা হয়ে যাবো। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি মুনি”
মুনিয়া স্তব্ধ চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। এরপর শক্ত করে মুহিবকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কাদতে থাকে। এই স্বর্গীয় জলধারার এপাশে এক ভালোবাসার মিলনে ওপাশে অন্তরীক্ষে নিশ্চয়ই কেউ মুচকি হাসছিলেন।
৭)
– তোমার আর কিছু বলার আছে?
– হুম
– কি? বলে ফেলো। সময় নেই খুব বেশী হাতে।
– আমাকে কেনো স্বপ্ন দেখালে মুনিয়া? আমি তো আমার সম্পুর্ন জীবনটাকে গুছিয়ে এনেছিলাম। তোমাকে কেন্দ্র করে আমি আমার জীবনটাকে সাজিয়ে ফেলেছিলাম। কেনো এরকম করলে ?
– আমি কিছুই করিনি মুহিব! শুধু শুধু আমাকে ব্লেইম দিবেনা! সেইদিন বৃষ্টির কথা বলছো? আবেগের বশে মানুষ অনেক কিছুই করে! হ্যা, আমি একটা ভুল করেছি। কিন্তু, আমি তো তোমাকে কোনো বন্ড পেপারে সই করে দিয়ে আসিনি। তাইনা? বি প্র্যাক্টিকেল!
– আমি মরে যাবো মুনিয়া। প্লীজ, আমি বাঁচতে চাই! তিনটা মাস আমি পাগল কুকুরের মতো তোমাকে খুজেছি। তুমি সব জেনেও আমার সাথে দেখা করোনি। আজকে এতোটা দিন পরে, আমি অনেক আশা করে এসেছি। মুনিয়া, আমাকে খালি হাতে প্লীজ এভাবে ফিরিয়ে দিওনা।
– মুহিব। আমি যাকে বিয়ে করছি, সে একজন ব্যাংকার। এবার তোমার কথা বলো। তুমি কি করো? মাত্র ভার্সিটি পাশ করেছো। এখনো ২টা টিউশনী করো। কবে চাকরী করবে আর কবে আমার বাবার সাথে দেখা করবে? আমি তো আবেগে চলিনা মুহিব! আমি বর্তমান ভবিষ্যত সব ভেবে কাজ করি! আমার হবু বর একজন স্ট্যাবলিশড ছেলে! আমি কেনো সুযোগ হারাবো!
– মুনিয়া। আমি সব করবো তোমার জন্য, সব! আমাকে একটা সুযোগ ভিক্ষা দাও।
– মুহিব। আমাকে মাফ করে দাও। তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে। ঐদিন তুমি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারতে, আমি নিজেও খুবি আবেগ প্রবন হয়ে গিয়েছিলাম। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে অবশ্যই করতো। কিন্তু তুমি ঠিকই আমাকে বাসায় দিয়ে এসেছিলে। আমি তা ভুলিনি। তুমি আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে পাবে।
– আমি চাইনা ভালো মেয়ে। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।
– প্লীজ! আমি আমার ফ্যামিলির বাইরে কোনো ডিসিশান নিতে পারবোনা। আমি এখন চলে যাবো। তোমাকে কার্ড দিয়ে গেলাম। ইচ্ছে হলে এসো, তোমার ক্যামেরাটা নিয়ে এসো। তুমি তো আবার ছবি ভালো তুলতে পারো! আমি আজ যাই। ভালো থেকো মুহিব।
চারিদিক গাড় অন্ধকার হয়ে আসছে। বাদল মুখর একটা সন্ধ্যার সুচনা হতে যাচ্ছে। মুনিয়া তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে গ্লাস উঠিয়ে দিলো। মুহিব তার সাইনোস্যাটিক বাধা শরীরটা নিয়ে রাস্তার পারে বসে রইলো। বাদল দিনের প্রথম কদল ফুলটি সে মনে মনে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললো। আর কোনোদিন সে বৃষ্টিতে ভিজবেনা। আজই সে শেষ বৃষ্টিতে স্নান করবে। সে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির সাথে মিশে যেতে লাগলো।
( শিরোনামটি রবী ঠাকুরের “শাওন গগনে” গান থেকে নেয়া)
পোলাডা যে কি আঁতেল!!!
গল্পটা এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। আর কিছুই বলবো না। স্রেফ অসাধারণ! :clappinghands: :clappinghands:
আঁতেল পোলাদের প্রেমের বাজারে দাম বেশী গো দাদা !! :babymonkey: :babymonkey:
এই ছেলে তো কলেজ লাইফের সব জ্ঞান ঝাড়ল! 😀
তোমার রোমান্টিক লেখার হাত দারুণ! :clappinghands:
(যদিও সব সময় মেয়েটার দোষ দেখালে চলবে না! আরেকটু বড় হলে হয়ত আরেকটু ভিন্নভাবে দেখবে 😛 )
আহা ! কি রুমান্টিকট্যাক্স কুমেন্ট !!! 😀 😀
পড়াশুনা যে এখনুক ছাড়িনাই, তাহার প্রমান এই লিখাটি ;D
( মেয়েটার দোষ আছে। গল্পের ৯৯%ই সত্যের কাছাকাছি (!!!) তবে, যাহা লাউ, তাহাই কদু! মুনিয়ার জায়গায় মুহিব, মুহিবের জায়গায় মুনিয়া পড়লেও খুব একটা কিছু যায় আসেনা!) :yahooo: :yahooo: :yahooo:
পড়লাম। 😀 ভাল হয়েছে!
ব্যাপক ধনে আপনাকে 😀 😀 😳
খুব ভাল লাগল গল্পটা! এতোটাই ভাল লেগেছে যে মুনিয়ার উপর মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে! :pureevil: আর লেখকের সার্থকতা তো এখানেই! :clappinghands:
মুনিয়াকে ঝা ঝা ! :dhisya: :dhisya: :dhisya: :dhisya:
আপনাকে ধইন্যা 😀 :guiter: :guiter:
দারুণ লাগলো। চালিয়ে যাও 🙂
টিংকুশ কিনাদি !!!
আমার দি, তোমার দি!
কিনাদি কিনাদি !
এইটুকুন পিচ্চি কী দুর্দান্ত লেখে! যদিও অনেকগুলো বানান ভুল, তারপরেও ভাল লেখা স্বীকার করতেই হবে। 🙂
গানটা পুরো বাংলায় লেখা ছিল না। ওটা ছিল এরকমঃ
‘শাঙন গগনে ঘোর ঘানাঘাটা’ 🙂
ফিনিক্স পাখি, আমি তোমার থেকে এমন আবেগ জর্জরিত কমেন্ট আশা করিনাই !!! বানান ভুল ও এর পেছনের লেখকের আলসেমীর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তোমার এই আলস্য দেখে আমি ব্যাপক নারাজ !!! 😛 😛
:cancer: :cancer: :cancer:
মাইর চিনস মাইর? :haturi:
চমৎকার গল্প 🙂
ধন্যবাদ দাদা 🙂 :virgo:
ভালো লাগলো 🙂
আমারও 😀
পেরেম কুরতে মুঞ্চায় রে!! 🙁
লাগলে ডাক দিয়েন !!! স্টক সীমিত !!! 😡 😡 !
এ লেখাটা আমার বেশ আগে পড়া। ফেইসবুকে একটা পেইজ আছে, “ভালবাসার গল্প”। তোমার অনেক রোমান্টিক লেখাই ওই পেইজের সুবাদে পড়া হয়েছে। রোমান্টিক লেখা তো বেশ ভালই লিখতে পারো 😉
সবই আপাদের দোয়া 🙂 🙂
দুঃখিত, আপনাদের *
সবই আপাদের দোয়া 😉
তোর পুস্ট। আগে দেখি নাই কেন?
বিশাল…………………… গল্প, পড়ার সময় নাই।
তবে কমেন্ট দেয়ার লোভ সামলাইতে পারিলাম না।
আর …
thanku….
এটা আপনার পাওনা ছিল, ছুটো ভাইয়া…
আমার আবার ঠ্যাঙ্কু আইতে বিশেষ ভালু লাগে 😀 😀 😀 :penguindance: :penguindance: :penguindance:
তয় , কিসের লাইগা সুন্দরীদি ?????
এই গফ তোমার পড়া লাগপেনা, মুখস্ত আচে বলিয়াই ধারণা 😀 😀 দুয়া কইরো
গল্প ভালো লেগেছে, মুনিয়া’র উপর অনেক রাগ হচ্ছে…………..
চলেন, মাঈর দিয়া আসি 😀