প্রলাপ: আমার মৃত্যুকল্পনা

আমি এক মৃত্যুপথযাত্রী, ক’দিনের মাঝেই ‘মৃত্যু’ নামক এক নিকষ কালো আধারের ভয়ানক অতলে আমি হারিয়ে যাব। পৃথিবী থেকে আমি বিদায় নিয়ে চলে যাব ফিরে না আসবার দেশে। একদিক দিয়ে ভালই, যত কম সময় বেঁচে থাকব, পাপও তত কম করব, বেশী পাপ করবার সময়ই পাব না! হা…হা…হা…

ভ্রু কুঁচকে তাকাবেন না যেন! এটা এক পাগলের মূল্যহীন প্রলাপ!

আচ্ছা, একটা জিনিস খেয়াল করেছেন, ‘মৃত্যু’ শব্দটা কানে আসলেই মানুষ কেমন যেন অন্যরকম চোখে তাকায়! মনে হয়, সে যেন ভয় পেয়ে গেছে! কেন? মৃত্যু কি এতটাই ভয়ংকর? হ্যাঁ, মৃত্যু ভয়ংকর। হয়ত পৃথিবীতে প্রচলিত শব্দগুলোর মাঝে ভয়ংকরতম শব্দটা হল এই ‘মৃত্যু’।

কিন্তু কেন মৃত্যু ভয়ংকর?

উত্তরটা আমার জানা নেই। তবে খুব সম্ভবত মৃত্যু কি তা আমরা জানি না, সে জন্যেই মৃত্যু ভয়ংকর। ঠিক যেমন অন্ধকার কি তা আমরা জানি না বলেই অন্ধকারে আমরা ভীত হয়ে উঠি।

আচ্ছা, মৃত্যু কি, তা কি জানা সম্ভব? সম্ভব নিজেকে মৃত্যুর জন্যে ১০০% প্রস্তুত করে তোলা?

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার একটা কথা বলেছিলেন, মানুষ নাকি তখনই কেবলমাত্র কোন কাজের জন্যে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে তুলতে পারে, যখন সে কাজটা ভালভাবে সম্পন্ন করে ফেলতে সক্ষম হয়। সে হিসেবে মৃত্যুর জন্যে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে তুলতে হলে আগে ভালভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হবে। এটা অবশ্য মন্দ না, কিন্তু সমস্যা হল তাহলে নিজের অভিজ্ঞতাকে অন্যদের মাঝে আর ছড়িয়ে দেবার সুযোগটা থাকবে না। ফলে মৃত্যু কি, তা মানুষের অজানাই থেকে যাবে। তবে হ্যাঁ, আমি মারা গেলে অন্তত আমি নিজে মৃত্যুর প্রকৃত স্বাদ আস্বাদ করতে পারব, জানতে পারব মৃত্যু কি।

এই মুহূর্তে যেহেতু সেটা সম্ভব না, আমরা অন্য কোন বিকল্প পথের সন্ধান করতে পারি। আমার মনে হয় মৃত্যুর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলার একটা উপায় হতে পারে নিজের মৃত্যু কল্পনা করা। আমার মরণ নানাভাবেই হতে পারে, মাঝে মাঝে সেই ‘নানাভাবে’র কোন একটা নিয়ে ভাবতে বসে যাই। মনে মনে নিজের মৃত্যুর সেই দৃশ্যটার একটা রূপকল্প তৈরি করি। মাঝে মাঝে খুব সকাল বেলা ঠাণ্ডা মেঝেতে একা একা বসে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করি, আমার সামনে সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো আমার লাশ… অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব! অতৃপ্ত আত্মাটা যেন হঠাৎ করেই সব অতৃপ্তি ভুলে নিজের অতীত চিন্তা করে অনুশোচনায় ভীষণ রকমের কাতর হয়ে উঠে, আতঙ্কে ভেতরটা যেন অসহনীয় কম্পাঙ্কে চিৎকার করে ওঠে, ভয়ানক ভাবে দুলে ওঠে সমগ্র অস্তিত্ব! … কল্পনাটা বেশীক্ষণ প্রবাহিত হতে দিতে পারি  না। হঠাৎ করে চোখ খুলে যায়, প্রচণ্ড শীতের ভোরেও নিজেকে আবিষ্কার করি ঘর্মাক্ত তনুমনে! তবে হ্যাঁ, এই চিন্তাটা মন্দ কাজের পথে আমাকে প্রছণ্ড ভাবে বাঁধা দিতে থাকে। নিয়মিতভাবে এই চর্চাটা করতে পারলে হয়ত একদিন Homo sapiens থেকে সুন্দর-শুভ্র-শুদ্ধ, প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারব। হয়ত গত দেড় বছরে আমার এই আমিত্বে অনেক বেশি পরিবর্তন চলে আসার কারণ এটাই…

হয়ত এরই মাঝে আমাকে বদ্ধ উন্মাদ ভেবে বসে আছেন কেউ কেউ। হ্যাঁ, আমি সত্যি উন্মাদ! বদ্ধ পাগল! পাগল না হলে কি আর এখন ভাবছি ব্রেন ক্যান্সার হয়ে আমার মরণ হলে পারিপার্শ্বিক কি কি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে সবকিছুতে একটা সাম্যাবস্থা নিয়ে আসবে। কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটু সময় ব্যাপ্তির জন্যেও কি হঠাৎ কোন পরিবর্তন আসবে না কোথাও? মৃত্যুর সাথে সাথেই কি একটা মানুষের সব কিছু নিষ্পত্তি হওয়া মামলার ফাইলের মত করে ‘ক্লোজড’ হয়ে যাবে? তাহলে বিজ্ঞানীরা যে বলছেন, মহাবিশ্বের কোন তথ্যই হারিয়ে যাচ্ছে না। মানুষ সামাজিক জীব, সে প্রতিটি প্রাণীর সাথে, মহাবিশ্বের প্রতিটা অণু-কণার সাথে এক অনির্ণেয় সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ। তাই, যখন যেখানে যাই করছে না কেন, সাথে সাথেই তার তথ্য জমা হয়ে যাচ্ছে অনেক স্থানে এবং কালে, নিউরনে-নিউরনে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, প্রতিটা বন্ধনের মাঝে কম্বাইনিং ফোর্সের মধ্য দিয়ে অবিনাশী অণুতরঙ্গের মত প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে অসীম তথ্যভাণ্ডারে। প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণিকা, প্রতিটি DNA অণু  নিশ্চয়ই এই অসীম বিস্তৃতির অসীম সংখ্যক অসীম তথ্য নিয়ে সময়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে… এ এক কল্পনাতীত অসীম মহাকাব্য!

ক্ষুদ্র আমি, ক্ষুদ্রতার মাঝেই আমার পথচলা। বাংলাদেশের অতি ক্ষুদ্র এ আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের চিন্তাধারা অত প্রশস্ত পথে যাওয়া অনুচিত। আমি ফিরে যাই আমার মৃত্যু কল্পনায়, যেখানে এক জীবন্মৃত সত্ত্বা ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিজের মৃত্যুর প্রহর গুণতে ব্যস্ত …

ধরা যাক,আমার ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আমি আছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তলার নিউরোলজি বিভাগের জেনারেল ওয়ার্ডে, বেড নম্বর ১১। ডাক্তার এরই মাঝে মোটামুটি নিশ্চিত যে আমার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। পাশে হয়ত আমার মা বসে কান্নাকাটি করছেন আর সেল ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছেন। ভাইয়া কোন দিকে যেন সরে গেছে। মামা হয়ত কিছুক্ষণের মাঝেই ফোন দেবেন, বলবেন ময়মনসিংহে চলে যেতে। শেষ ক’টা দিন নাহয় আত্মীয়-স্বজনদের সাথেই কাটানো যাবে। আর তাছাড়া সেখানে উনার নিজের ক্লিনিকে নিজের মত করে চিকিৎসা-ফিকিৎসা করাতে পারবেন, যদিও কোন লাভ নেই। মনে হয় খুব বেশি সময় আমাকে হাসপাতালে রাখা হবে না। যার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত, শুধু শুধু তাকে হাসপাতালে বসিয়ে রেখে লাভ কী! বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। তার পর হয়ত ময়মনসিংহে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হবে।

আমি মারা যাচ্ছি, এটা শুনে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি হয়ত মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়ব। ধরা যাক, আমি ময়মনসিংহের বাগমারা রোডের মেডিপ্লাস হাসপাতালের ৪ তলার ১১ নম্বর কেবিনের বেডে আধশোয়া অবস্থায় দেয়ালে ঝুলন্ত রেডিয়াম ঘড়ির কাটাগুলোর মুভমেন্ট দেখছি। কানে আসছে টিক-টিক শব্দ, প্রতিটা সেকেন্ডে আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে যে মৃত্যু প্রবল বেগে আমার দিকে ধেয়ে আসছে। নিজেকে আমি যতটুকু চিনেছি, তাতে মনে হয় ঠিক এই সময় আমার অসুস্থ্য মাথার ভেতরে একটা নতুন পোকা বাসা বেঁধে বসবে। সেই পোকাটার কাজ হল ব্রেন ক্যান্সার কী, কেন হয়, কীভাবে হয়- এসব নিয়ে গো-এষণা শুরু করা! আমার সাথে যদি একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার আর মোডেম থেকে থাকে, নির্ঘাত আমি পাশাপাশি দু’টো ট্যাবে ‘ব্রেন ক্যান্সার’ এবং ‘Brain Cancer’ লিখে সার্চ করা শুরু করে দেব। ব্রেন ক্যান্সার সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করে দেব। একটু একটু করে হয়ত জানতে পারব যে এই ব্রেন ক্যান্সার আসলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোরই একটি। করোটিক গহ্বর এ অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন থেকে সূত্রপাত এই ব্রেন ক্যান্সারের, যাকে অনেক সময় ইনট্রাকার্নিয়াল  টিউমারও বলা হয়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, করোটিড নার্ভ, করোটিকা, পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এবং অন্যান্য মেটাস্টাসিস ব্রেন টিউমার থেকে আস্তে আস্তে একজন ভিক্টিমের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ব্রেন ক্যান্সার ।

একটু পর পর হয়ত সৌমিত্র দা’ বা সাজ্জাদ ভাইয়া বা লুবনা আপু বা হাফসা আপুকে ফোন করে রোগটা সম্পর্কে আবোলতাবোল নানা প্রশ্ন করে বিরক্ত করে তুলব। প্রান্ত ভাইয়াকে ফোন করার সাহসটা হয়ত হবে না। সৌমিত্র দা’র কাছ থেকে হয়ত জানতে পারব ব্রেন ক্যান্সারের নানা কারণ সম্পর্কে। জানতে পারব তেজষ্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে ব্রেন ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে। বাইরে থেকে হঠাৎ কোন আঘাতের কারণেও হয়ত মস্তিষ্কের ভেতরে বসবাস করা কোন ক্যান্সার সেল হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারে। উনি হয়ত এও বলবেন যে হেয়ার ডাই বা হেয়ার কালারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারও অনেক সময় কাল হয়ে উঠতে পারে। এমনকি ব্রেন ক্যান্সার হতে পারে জন্মগতও! জার্মিনাল ডেভেলপমেন্টের সময় এক্টোপিক প্রিমিটিভ সেলের কিছুটা গড়বর হলে সেটাই একসময় হয়ে উঠতে পারে জন্মগত ব্রেন ক্যান্সার!! এসব শুনে আমি আবার চিন্তায় পড়ে যাব, আমার কোন কারণে ব্রেন ক্যান্সার হল! সাজ্জাদ ভাইয়ার কাছ থেকে হয়ত জানতে পারব ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে। তার কাছ থেকে হয়ত জানতে পারব যে, প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, হঠাৎ করে বিনা নোটিশেই বমি হয়ে যাওয়া, এডিমা, চোখের পাতার অতিরিক্ত কম্পন বা চোখের পাতা বন্ধ করতে অসুবিধা হওয়া, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পাওয়া, উদ্ভট বা অলীক চিন্তাভাবনা করা, শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া, খিঁচুনি, মৃগীর ভাব- ইত্যাদি সবই হতে পারে ব্রেন ক্যান্সারের লক্ষণ! অনেক সময় ব্রেন ক্যান্সার আর  স্পাইনাল কর্ড টিউমারের লক্ষণগুলো অন্য রোগের লক্ষণের সাথে মিশে গিয়ে প্যাঁচ লাগাতে পারে… বেশ ক’দিন এভাবেই হয়ত কেটে যাবে। এর মাঝে ফোনের ব্যবহার বেশি করতে দেখে মুরুব্বী গোছের কেউ হয়ত আমার সেল ফোনটা নিয়ে যাবেন, বলবেন মোবাইলে নাকি মাথার ব্যারামের অভিশাপ থাকে! শেষ বেলায় লুবনা আপুকে ফেইসবুকের চ্যাটবক্সে পেয়ে গিয়ে সেখানেই হয়ত একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকব আর তিনি আমাকে এর নানা চিকিৎসা সম্পর্কে বলতে থাকবেন। উনার কাছ থেকে হয়ত জানা হবে ক্যান্সারের নানা সনাতনী চিকিৎসা সম্পর্কে। জানা হবে কেমোথেরাপি বা গামা রশ্মির সাহায্যে রেডিও থেরাপি বা সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসার কথা। আরও হয়ত জানা হবে এর আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে। ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা অনেক বেশি মডারেটেড। বর্তময়ান সময়ে ক্যান্সারের সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতিটি হল মিনিম্যাল ইনভেসিভ থেরাপি। আর হে নাইফ, টিসিএম, রেডিও একটিভ পার্টিকেল থেরাপি,ফটো ডায়নামিক নাইফ ইত্যাদি এর সমন্বয়ে দেয়া এই থেরাপির দ্বারা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা সম্ভব। ততক্ষণে আরও একটা জিনিস আমার জানা হয়ে যাবে, এর মাঝে মহান মৃত্যু সাহেব অবশ্যই আমার আরো কাছে চলে এসেছেন!!

গুগলে সার্চ করতে করতে হয়ত জেনে যাব, মস্তিষ্কের ক্যান্সার গ্লিওব্লাস্টোমার জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী রোগটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক জিনগত পরিবর্তনের কথা জানা গেছে। এর আগে টিউমার নমুনার তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে যে তিনটি জিনগত পরিবর্তনের কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি সেগুলোর বিষয়ে এই পরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানীরা নতুন অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন।

হয়ত জানা হয়ে যাবে ক্যান্সার সম্পর্কিত অনেক সাম্প্রতিক গবেষণার কথা। জানতে পারব যে, সম্প্রতি ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার এক নতুন পদ্ধতি ক্যান্সার চিকিৎসায় আশার আলো জাগিয়েছে। পাইরোভাইরাস নামের এক ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে এই টিউমার দমন করা যাবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এটা নাকি ক্যান্সারের কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম।বিজ্ঞানীরা মানুষের টিউমারের জিন কয়েকটি ইঁদুরে ঢুকিয়ে তারপর পাইরোভাইরাস ইনজেকশন দেন। এতে দেখা যায়, প্রথমে ক্যান্সার কোষগুলো বাড়তে থাকে এবং তারপর হঠাৎ মারা যায়। বিজ্ঞানীদের আশা, এই ভাইরাস দিয়ে ইঁদুরের মতো মানুষেরও ব্রেন টিউমারের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা সম্ভব।

অন্তত এক সপ্তাহ চলবে আমার ব্যাপক পড়াশোনা। এর মাঝে মাথা ব্যথা, বিনা নোটিশে বমি করে ফেলা, ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়া, কানে কম শোনা- এগুলোও বাড়তে থাকবে। তবু আমার এই পড়াশোনা হয়ত চলবেই। হয়ত এর মাঝে ব্রেন ক্যান্সার নিয়ে ছোটদের উপযোগী নতুন একটা আর্টিকেল লিখে ফেলব, তারপর ফেইসবুকে বা বিজ্ঞান স্কুলে বা সরবে আপ করে দেব। সেখান থেকে হয়ত সে আর্টিকেল আবার কোন একটা বিজ্ঞান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হবে। লোকে পড়ে বলবে, ‘কি সব ছাতা-মাতা লিখে রাখছে আর তাই ছাপাই দিছে’। সম্মানিত পাঠক যখন এই কথা ভাবছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে যমদূত হয়ত আমার সামনে দাঁড়িয়ে… অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই হয়ত আমি দূর আকাশের তারা হয়ে যাব!

আমার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে হয়ত…
পাঠক, বেশি বিরক্ত হচ্ছেন?
হবেনই বা না কেন! পাগলের প্রলাপ শুনে কে না বিরক্ত হয়!
কথায় আছে না, ‘পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়!’…

থাক, আর বিরক্ত করব নাহ! ভাল থাকুন। শুদ্ধ হয়ে উঠুন। Homo sapiens না, প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠুন… রিমেম্বার, ডেথ ইজ দ্যা গ্রেটেস্ট লেভেলার অ্যান্ড ইউ ক্যানট চিট ডেথ…

 

[ লেখাটি আমার ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে গত ১৫ই মার্চ প্রথম প্রকাশিত হয়। ]

অনুজ সম্পর্কে

সাদা কাগজে কালো কালিতে লিখতে গেলে হয়ত লিখতে হবে - প্রথমত আমি রক্ত মাংসে গড়া এক মানুষ, দ্বিতীয়ত চিরন্তন সত্য, মৃত্যুর সাথে করি বসবাস... https://www.facebook.com/CoercedAnuj
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে পাগলামি, বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

18 Responses to প্রলাপ: আমার মৃত্যুকল্পনা

  1. সিরফল বলেছেনঃ

    এক ক্যান্সার রোগীর মুখে শুনেছিলাম, হসপিটালে তাঁর মতো আরও অনেক রোগী দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন। এতো বেশি রোগী!
    তিনি মারা গেছেন জেনেছি। না জানা আরও অনেক মানুষও মারা গেছেন।

    ভাগ্যিস, সৃষ্টিকর্তা তাঁর মহাজাগতিক বই এ অজানা এই মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কিছু প্রকাশ করে দিয়েছেন। মৃত্যু টা আর ‘রহস্য’ কই থাকল? যেন বড় ধরনের গবেষণা থেকে রেহাই পাওয়া।
    কিন্তু ভয় তো থেকেই যায়। মৃত্যু মানেই মন খারাপ করা চিন্তা। ” তবে হ্যাঁ, এই চিন্তাটা মন্দ কাজের পথে আমাকে প্রছণ্ড ভাবে বাধা দিতে থাকে। নিয়মিতভাবে এই চর্চাটা করতে পারলে হয়ত একদিন Homo sapiens থেকে সুন্দর-শুভ্র-শুদ্ধ, প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারব।”

    সব কথা ফেলে এবার আসল কথাটা বলি- অনুজ কেমন আছে জানতে চাইলে ভয়ংকর কিছু শুনতে হবে না তো!

  2. অবন্তিকা বলেছেনঃ

    গো-এষণাই তো করে ফেললি। কথা হচ্ছে সার্চ দেবার আগেই জানলি কিভাবে! পোষ্টটা অনেক ভাল লেগেছে!

  3. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    আমারও মনে হয় এইরকম একটা প্রশ্নের উত্তর খুব জানতে ইচ্ছে করে, জানিস? আমার মৃত্যু হলে কে কী বলবে- আমি লাশ হয়ে শুনতে পাব!
    মৃত্যুর পরেও নার্ভ অ্যাক্টিভ থাকার কারণে কিছুক্ষণ তো মানুষ শুনতে পায়। তাই মাঝে মাঝেই মনে হয়, মরে গেলে জানা যেত যে আমাকে নিয়ে কে কী ভাবছে।
    ভাবনাটা যতবার ভাবি, ততবারই কেমন একটা শিহরণ বয়ে যায় শরীর জুড়ে।

    তোর এই অল্প বয়সে এরকম একটা লেখা আশা করি নি।
    বয়সের তুলনায় তুই এত্ত ম্যাচিওরড লিখিস- ভাবলে অবাক লাগে!

    লেখার টাইটেলে ‘প্রলাপ’ শব্দটার পরে বিসর্গ না দিয়ে কোলন দিস।
    বিসর্গ আর কোলনের পার্থক্যটা তো জানিসই বোধহয়।

    • অনুজ বলেছেনঃ

      আপু, মাঝে মাঝে খুব বেশি জানতে ইচ্ছে করে মানুষ আমাকে নিয়ে কী ভাবছে, কেন ভাবছে! কিন্তু, জানা আর হয়ে উঠে না!
      এই ধরণের চিন্তাগুলো সত্যিকার অর্থে খুব বেশি অন্যরকম! আমি কোন কূলকিনারা খুঁজে পাই না!
      আমার কেন জানি মনে হয়, আমি খুব বেশিদিন পৃথিবীতে থাকব না। হয়ত সেজন্যেই আমার মধ্যে একটা তাড়াহুড়া খুব বেশি কাজ করে… খুব দ্রুত কিছু একটা করে যেতে হবে… চিন্তা তো আর বসে থাকে না… চোখ যা দেখে, মন যা ভাবে, তাই চিন্তায় চলে আসে! আর ম্যাচিওরেশানের ব্যাপারটা তো পুরোপুরি আপেক্ষিক! এই লেখাটাই যদি আমার বন্ধুমহলের কেউ দেখে, আমাকে ‘আঁতেল’ বা ‘ভাবিস্টিক লাইতার’ বলবে (ইতিমধ্যে শুনেছি এই কমেন্ট, তাই বললাম।)

      দুইটা ফোঁটার মত আছে দেখে আর ভালমত দেখি নাই 😳 । ঠিক করে দিচ্ছি। 🙂

  4. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    অনুজীয় লেখা! 😀

  5. হাসান বলেছেনঃ

    “ডেথ ইজ দ্যা গ্রেটেস্ট লেভেলার” কথাটি আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। Thanks a lot to make all remember it…
    আর লেখা পড়ে সত্যই অনেক ম্যাচিউর্ড লাগছে এবং ভালো লেগেছে।। :happy:

  6. শুকপাখি বলেছেনঃ

    আহারে! আমার কি খারাপটাই না লাগছে মৃত্যুর কথা ভেবে।
    এদিকে আপনি হিস্টো আর নিউরোলজির ব্যাবচ্ছেদ করে ফেলেছেন!
    ভাল লিখেছেন।

  7. তুসিন বলেছেনঃ

    মন্তব্য করব না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।