রিফাত,
কেমন আছ তুমি,যদিও খারাপ থাকার কোন কারণ দেখছি না। আজ ৫ই শ্রাবণ- মনে আছে এই দিন টির কথা, খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। ক্লাস শেষে তুমি দাড়িয়ে ছিল বারান্দায়, বৃষ্টি কখন কমবে সেই প্রতীক্ষায় ছিলে। আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে তোমাকে দেখি, অসম্ভব সুন্দর লাগছিল সেদিন তোমায়। আমি তোমাকে আমার ছাতাটা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি একরোখা ছিলে আমার ছতা নিবে না। আমি বলেছিলাম,`আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভাল লাগে তুমি ছাতাটা নিতে পার ’ তবুও তুমি রাজি হলে না, আছছা তোমার মনে আছে, তখন আমি ছাতাটা তোমার হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে এসেছিলাম, তুমি তখন আমায় অনেক ডাকলে কিন্তু আমি একটি বারের জন্যও পিছু ফিরিনি ।
তুমি তখন আমার নাম, কোন ক্লাস এ পড়ি, এসব কিছুই জানতে না। তার ৩ দিন পর যখন আবার আমাদের দেখা হল, তুমি যখন জানতে পারলে বৃষ্টিতে ভিঝে আমার জ্বর হয়াছে একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল ।আমি তখন মুগ্ধ চোখে দেখেছিলাম তোমায়,ভেবেই পাছছিলাম জ্বর হয়েছে শুনে এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে ? সেই থেকে চেনা, বন্ধুত্ব, ভাললাগা, ভালবাসা…
সে দিন থেকে বৃষ্টিতে ভেজায় তোমার কড়া নিষেধ। তুমি আবার কদম ফুল ভীষণ পছন্দ করতে। মনে আছে তোমার, বৃষ্টিতে কাকভেঝা হয়ে কদম ফুল নিয়ে হঠাৎ-হঠাৎ তোমার বাসায় হাজির হতাম আর তুমি ভেঝা শরীরে আমায় কাঁপতে দেখে রাগে নীল হয়ে যেতে। অ্যান্টি কিন্তু তার হবু জামাই ঠিক চিনতে পেরেছিলেন।
স্যরি স্যরি, দুষ্টুমি করছিলাম, রাগ করো না প্লীজ? একটু আধটু দুষ্টুমি করলে কী এমন মহাভারত আশুদ্ধ হয়ে যায়? আচ্ছা বাবা আর করব না, এবার খুশী?
তবে আমার বৃষ্টিতে ভিঝে তোমায় কদম ফুল দেয়ার কিন্তু আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল অ্যান্টির হাতের ভুনা খিচুড়ি আর মুরগীর পাতলা ঝোল যা আজও আমার মুখে লেগে আছে।
আমি আবার তখন ভালো ভায়োলিন বাজাতাম কি -না। আচ্ছা, তোমার মনে আছে, জ্যোৎস্না রাতে তুমি ভায়োলিন শুনতে চাইতে, আমি তখন ভায়োলিনে তুলতাম তোমার সবচেয়ে প্রিয় গানটা, Every night in my dream I see you I feel you…
আমি চোখ বন্ধ না করে ভায়োলিন বাজাতে পারতাম না, চোখ মেলেই দেখতাম তোমার চোখে জল, লোনা জল…রিফাত, এতটা ভালো আমায় না বাসলে চলত না? তোমার সেই বাঁধন যে আজও আমার সমস্ত অস্তিত্ব বেঁধে রেখেছে।
রিফাত তোমার মনে আছে, একদিন তুমি আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে`আচ্ছা রঙ্গন তুমি এখন যেমন আমার হাত ধরে আছ, ঠিক এমনি করে সারটি জীবন ধরে থাকবে তো?’ আমি বলেছিলাম যতদিন আমার এই হাত দুটি থাকবে আমি তোমায় ছাড়ব না, ধরে রাখব,পাশে থাকব, প্রমিজ-প্রমিজ-প্রমিজ। তবে কেন এত অল্প ক্ষণের জন্য আমায় ধরতে দিয়ে, হাড়িয়ে গেলে। একটা বেপরোয়া ট্রাক, মাতাল ড্রাইভার তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল ।
সেদিনও ছিলো ৫ই শ্রাবন, যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল । কাথাছিল সারাদিন রিক্সায় ঘুরে বেড়াব।
হ্যা, সারাদিনই বেড়িয়েছিলাম তোমায় নিয়ে। বলেছিলে বেস্ট ৫ টা রেস্টুরেন্টে যাবে। হ্যা, গিয়েছিলাম। তোমাকে সেদিন ঢাকার সেরা ৫ টা হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম। একে একে সবাই বলেছিল-Sorry, She’s out of our control. quickly অন্য হসপিটালে নিয়ে যান…দেখলে রিফাত ৫ই শ্রাবন আমাদের সব ইচ্ছেই পুরণ হয়েছিল ।
রিফাত তোমার মনে আছে, তুমি আইস্ক্রিম খেতে চাইলে,আমি তোমায় রিক্সায় রেখে আইস্ক্রিম আনতে গেলাম, ফিরে এসে দেখি… হ্যাঁ আমিই তোমায় খুন করেছি। তুমি আমার সাথে যেতে চেয়েছিলে, আমি বলেছিলাম, ‘ম্যাম অনলি ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করেন, আমি আসছি’। কিন্তু তুমি অপেক্ষা করলে না…
আজ ৫ই শ্রাবন, ২০ বছর ধরে আমি অপেক্ষা করছি,করে যাব যতদিন বেঁচে থাকি। দেশে যতদিন ছিলাম প্রত্যেক ৫ই শ্রাবণ তোমার কবরের পাশে ভায়োলিন বাজাতাম। আচ্ছা, তুমি কি উপর থেকে শুনতে আমার ভায়োলিন? আচ্ছা শুনে কি আগের মতোই কাঁদতে নিঃশব্দে?
চেষ্টা করি তোমার সবচেয়ে প্রিয় সেই গানেটা তুলতে, Every night in my dream I see you I feel you… তবে চোখ বন্ধ করে নয়, তোমার পানে চেয়ে।
ভাল থেকো, কিপ স্মাইলিং
রঙ্গন
লেখাটা সুন্দর! তবে এত বানান ভুল কেন! স্পেসিংয়েও প্রচুর গোলমাল!
:thinking: 😳 🙁 :crying:
চিরায়ত প্রবলেম।
যদি এমনটা হতো যে আপনি আমার গল্পের ভুলগুলো ঠিক করে আমাকে পাঠিয়ে দিতেন! 🙂
ফিনিক্স’পু আর সামিরা’পুর পোষ্টগুলা দেখো। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। পোস্ট করার আগে খেয়াল করবা, তাতেই হবে। 🙂
হুম, ফিনিক্সদি, সামিরা আপুর সব পোস্টই দেখি ,
তবে শেখার জন্য বোধহয় কখনো সেভাবে পড়া হয় নি।তবে অবচেতন ভাবে অনেক কিছুই শেখা হয়ে যায়।
চেতন মনে শেখার চেষ্টা করতে হবে :thinking:
দোয়া কইরেন আপু,
‘ঝলসে যাওয়া বেগুনী ভালবাসা’ 🙂 ……
আপনিও কম যান না 😛
লেখার ভেতরে এত কষ্ট কেন? 🙁
ক্লান্ত আমার চোখ,ক্লান্ত চোখের পাতা।
তার চেয়ে ক্লান্ত আমার দু পা,
মাঝ উঠোনে সাধের আসন পাতা,
একটু বসি জবাব আসে ‘না’। 🙂
আপু কোন কারণ নাই এমনি। হুমায়ুন আহমেদের প্রেমের বিয়োগাত্মক উপন্যাসগুলো পড়ে গল্পের নায়কের জায়গায় নিজেকে চিন্তা করলেই হয় 🙂
দুঃখিত আপতি ভুলে গেছিলাম,
উপরের কবিতাটা যে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের ‘আজ রবিবার’ নাটক থেকে নেয়া।
এই সংলাপটি আমার অসম্ভব প্রিয় 😀
ক্লান্ত আমার চোখ,ক্লান্ত চোখের পাতা।
কী অদ্ভুত লাইনগুলো!
সত্যিই আপু , লাইনগুলা অদ্ভুত সুন্দর 🙂
ভালোই চলছিল তো ।কি দরকার ছিল এমন একটা অ্যাকসিডেন্ট করানোর!
অ্যাকসিডেন্ট না করালে যে গল্পের নাম শুধু ‘অযাচিত কিছু কথা’ ই হতো
‘নোনতা স্বাদ’ অংশটা হাড়িয়ে যেত 🙂
তবে একটা সড়ক দুর্ঘটনার ইমপ্যাক্ট একজন মানুষের জন্য যে কতটা বেদনাদায়ক তাও উঠিয়ে আনার চেষ্টা ছিল।
জানিনা কতোটুকু পেড়েছি।
৫টা রেস্টু বনাম ৫টা হসপিটাল…. 🙁
হুম 🙁