ওয়ার্ড রঙ্গ-০১

 

হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঘটা নানা মজার ঘটনা নিয়ে এই ওয়ার্ড রঙ্গ সিরিজ।আজ থাকছে কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টের একটি গল্প.।

.আজ এক স্যারের সাথে দেখা করার জন্য হৃদরোগ বিভাগে গিয়েছিলাম।স্যার রাউন্ডে ব্যস্ত দেখে রিসেপশনে বসে আছি ।পাশে এক মুরব্বি ইকোকার্ডিয়াম (হার্টের অসুখ নির্ণয়ের পরীক্ষা) করানোর জন্য বসে আছেন ।পেশায় সম্ভবত তিনি শিক্ষক হবেন। যাহোক ,কয়দিন আগেই আমাদের ওয়ার্ডে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম(হৃদরোগ ও রক্তসংবহতন্ত্র বিভাগ) পড়িয়েছে ।তাই ভাবলাম একবার চাচার হিস্টোরিটা নিয়ে ফেলি ।

-চাচা আপনার কি সমস্যা?

-বাবা আমার বুকে ব্যথা ।অনেক দিন ধরে খালি ডাক্তারের পিছে ঘুরছি। কিন্ত ডাক্তার অসুখ ধরতে পারে না ।মনে হয় ডাক্তার নিজেও বুঝতেও পারছে না ,সমস্যাটা কোথায়? হার্টে নাকি পেটে ?

চাচার এই কথা শুনে আমি অবাক। আমি জিজ্ঞাসা করি অসুখ ধরতে পারছে না-এটা কিভাবে বুঝলেন?,

তিনি জবাব দিলেন ‘ এটা না বোঝার কি আছে ! একটা অসুখ নির্ণয়ে এত পরীক্ষা লাগে নাকি?

আমি চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করি-কি কি পরীক্ষা দিয়েছে আমাকে একটু দেখান তো।

তিনি রিপোর্টের ফাইল খুলে রিপোর্ট বের করলেন।তারপর শুরু করলেন, এই ইসিজি ,এটা দিয়েছে হার্টের জন্য আর আল্ট্রাসনোগ্রাম দিয়েছে পেটের পরীক্ষার জন্য ।তারপর়়়়়

উনার জ্ঞানের পরিধি দেখে আমি হতবাক ।কারন এ পর্যন্ত উনার সবগুলো না হলেও কিছু কথা কিন্ত একেবারে মিথ্যে নয়। ফলে এতে যেটা হল,আমার হিস্টোরি নেওয়ার ইচ্ছাও খানিকটা ফিকে হয়ে গেল।কারন স্যারই স্বয়ং যেখানে রোগ ধরতে পারে নি,সেখানে আমি.কোন ছাড় ! না, কোন দুঃসাহস দেখাতে চাই না।

তবে অনেকদূর এগিয়েছি, এখন ফিরেও আসা সম্ভব নয় ।তাই চাচার রিপোর্টের ফাইলটি আমি নিজের হাতে নিলাম।।

আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট হাতে নিতেই উনি শুরু করলেন,বাবা প্রোস্টেটটা একটু বড় হয়ে গেছে ।

আমি তাকে বলি,চাচা এ বয়সে এটা হতেই পারে।কিন্তু উনি মনে হয় আমার জবাবে সন্তুষ্ট হলেন না।

উনি এরপর শুরু করলেন, আসলে প্রোস্টেটের আউটলাইনটা বড় হয়ে গেছে ।সেটা ব্লাডারের উপর চাপ দিচ্ছে।একারনে প্রসাব ফোঁটা ফোঁটা করে বের হচ্ছে।

তার এমন মেডিকেল নলেজ দেখে আমি রীতিমত অবাক।আমি মনে বলি,হায় কপাল !রোগীরা এতো জানলে ডাক্তারদের কি হবে?আল্লাহ,আমারে তুমি উপরে তুলে নাও, আর না হলে দড়ি ফেলে দাও আমি নিজেই বেয়ে উঠব।তোমার কষ্ট করা লাগবে না !!!

 

শুকপাখি সম্পর্কে

নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার অভিপ্রায় বুকে লালন করি সবসময়ই।তাই হয়ত নিরানন্দ মেডিকেল লাইফের বাইরের জগত সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহে কমতি নেই,বরং বোধহয় একটু বেশিই।জানতে, জানাতেই লেখার চেষ্টা করি।লেখা সুখপাঠ্য হয় কিনা জানি না,না হলে না হোক;নিজের আনন্দ লাভের এ উপলক্ষ ছাড়তে চাই না কখনই।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to ওয়ার্ড রঙ্গ-০১

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    হাহা!

    আপনার লেখা দিন কে দিন ভালো হচ্ছে 😀
    চালিয়ে যান।

    আপনাকে দিয়েই হবে 😀

  2. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    হাহাহা আছে এইরকম কিছু অতি জ্ঞানী লোকজন। এইবার তোমার ফন্ট শিরোনাম সব ঠিক আছে। 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।