উড়ো চিঠি (২)

প্রিয় কেঁচো,
বহুদিন পর তোমার কথা মনে পড়লো। আমাকে কি তোমার মনে পড়ে? বৃষ্টির দিনগুলোতে?? সবুজ কার্পেটের মতো বিছিয়ে থাকা শ্যাওলা ধরা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালটার ইটগুলোর ঘুপড়িতে ছিল তোমার বাসা। টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হলেই আমি ছুট লাগাতাম বাসার পেছনের জানালাটাতে,যেখান থেকে দেখা যেত তোমার অবাধ আনাগোনা । আর বৃষ্টির ছোঁয়া পেতেই তোমরা হুড়মুড় করে ঘরের ভিতর ঢুকে যেতে। আর নৃশংস আমি শলার কাঠির খোঁচায় খোঁচায় তোমাদের বের করে আনতাম। কি যে বীভৎস আনন্দ পেতাম!! টুপটুপ আওয়াজ করে একটা একটা দেহ পড়ত ড্রেনের জলে!! কি তীব্র চেষ্টা বাঁচবার, বাঁচাবার!!

যেই আপু দেখত এমন অসৎ কর্মে লিপ্ত আছি আমি, ওমনি গলা ফাটানো চিৎকার দিত, “এই নোংরা মেয়ে কোথাকার!! এগুলো এখন জানালা বেয়ে ঘরে আসবে না!!” আর তাতে আম্মু এসে দিত এক কানমলা আর তাতেই তোমরা যেতে বেঁচে।

এর চেয়ে মজা লাগত যেটায় তা হল তোমার গায়ে লবণ ছেটানোয়। কি শত্রুতা তোমাদের বল তো!! কোনকালে কি অভিশাপ কামায় আসছ কে জানে। আমার কিন্তু দারুণ লাগতো। লাল শরীরটার উপর যেই না শুভ্র লবণগুলো ছিটিয়ে দিতাম ওমনি এঁকে-বেঁকে-তেড়ে লবণগুলো সরিয়ে দিতে চাইতে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পেরে শরীরের সব রক্ত ছেড়ে দিয়ে ধবধবে সাদা শরীরটা ফেলে রেখে যেতে। 😛

সবাই যখন তোমার আগমনে গগনবিদারী চিৎকারে বাসা ফাটাত আমি তখন তোমার ছোট্ট শরীরটা নিয়ে ব্যস্ত। তোমার কল্যাণে অনেক উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলাম,এই যেমন “বস্তি”, “নোংরা”, “উচ্ছনে” আরো কত কি!!

তারপর বহুদিন কিভাবে জানি তোমাকে ভুলে গিয়েছিলাম। হয়ত ঝকঝকে ইট পাথরের জীবনে তোমাকে আর পাইনি বলে। সেদিন বাথরুমের কোণে তোমাকে আবিষ্কার করে আমার ছোট বোনের সে কি কান্না!! তারপর তোমাকে মারবার জন্য পুরো কামান দাগার ব্যবস্থা।

তোমাদেরই সহধর্মী ওই তেলাপোকার কথা বলছি আরকি যাকে দেখলে কারো কারো নাকি জানের পানি চলে যায়, তাকে আমার কেমন নিরীহ নিরীহ লাগে জানো,ঠিক আমারই মতো। ওর সম্মুখে চোখের মতো বড় বড় অংশটা যে চোখ নয়, ওটা যে একটা ভাওতা সেটা বইয়ে পড়বার আগেই আমি আবিষ্কার করেছিলাম টয়লেটে বসে বসে। আর আমি যখন আমার এই আবিষ্কারের কথা “ইউরেকা, ইউরেকা” বলে বলতে লাগলাম, নাক চোখ কুঁচকে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট বোনটা তো আমার সাথে সেদিন ঘুমলোই না!! :crying:

তারপর থেকে বাথরুমে দেরি করলেই দরজায় বাড়ি লাগাত সবাই, “ওইখানে বসে রিসার্চ করতে হবে না, বইয়ে ওসব লেখা আছে!!” 🙁

তবে কেন জানি ভয় পেতাম মাকড়শাকে। সবাই বলত এটা ভালো কিন্তু আমার কেন জানি ভালো লাগতো না। দেখলেই গা গুলিয়ে উঠত,এখনো উঠে।

আমার ছেলেবেলার একটা ক্ষুদ্র অংশ জুড়ে তুমি আছো। শহুরে নোংরা জীবনে তোমার বাস,যারা তোমাকে পায় তারাও নোংরা হয়, সবাই তোমায় ভুলে থাকতে চায়, ফেলে দিতে চায়। কিন্তু কেউ কি কখনো ভাবে, এই আদরে যত্নে গড়া দেহটা একদিন তোমারই আবাস হবে,আহার হবে??

তোমায় নিয়ে খেলতাম যখন, তখন আমি বড় হইনি। মৃত্যু মানে আমার কাছে ১০০ বছর। এখন আমি অনেক বড়, খুব ভয় পাই তোমাকে, খুউউব।
ক্ষমা করো।
ইতি
বিচ্ছিরি সেই পিচ্চিবেলা।

স্রোতস্বিনী সম্পর্কে

স্রোতস্বিনীর বয়ে চলা ঢেউয়ের মত হতে চাই,সৃষ্টিশীল স্রষ্টাদের মাঝে থাকতে ভাল লাগে,ভালবাসি মাকে,বাবাকে,আমার আদুরে বোনকে আর পাশে রাখি বই বন্ধুকে। হতে চাই অনেক কিছু,হতে পারি অল্পকিছু। চেষ্টাটাই বা কম কিসে!!!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে পাগলামি, বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

18 Responses to উড়ো চিঠি (২)

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    অ-নে-এ-কে ভালো লাগলো!
    এত সুন্দর করে লিখেছো! আর শেষটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত আর অসাধারণ। মজাও পেয়েছি পড়তে পড়তে।
    লাইক আ বস! :dhisya:

    • সামিরা বলেছেনঃ

      মাকড়শা আমিও ভয় পাই, কিন্তু ঘেন্না লাগে না। টিকটিকি, কেঁচো, তেলাপোকা ইত্যাদি বাদবাকি সবই ঘেন্না লাগে। টিকটিকি বেশি। 🙁

      • স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

        প্রথমেই তোমার কমেন্ট দেখে আমার তো বুকটা ফুলে দশ হাত হয়ে গেছে… :happy:
        অনেক অনেক ধইন্যাপাতা আপি … :love:
        দোয়া করো লেখালেখি যেন একটু করতে পারি…তোমাদের মতো… 🙂

  2. অবন্তিকা বলেছেনঃ

    কেঁচোয় আমিও লবন ছিটাতাম। শেষে যেয়ে সত্যি ধাক্কা খেয়েছি! দারুণ এণ্ডিং! তবে মাঝে মাঝে স্পেসিংয়ে সমস্যা আছে আপু, ঠিক করে নিও। :guiter:

  3. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    দারুণ লাগলো চিঠিটা!

    আমিও তেলাপোকা ভয় পাই, উড়ন্তটা! 🙁

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    পড়তে অনে…ক অনে……ক ভালো লাগলো……

    আহারে পিচ্চিবেলা, কী যে মায়াভরা……

  5. শারমিন বলেছেনঃ

    অনেক ভালো হয়েছে :love: :love:
    তুই ছোটবেলা থেকেই হাবিজাবি জিনিস ধরতি 😛 😛
    আর তুমি এইটা আমাকে মনে করে লিখেছ??
    আর তোর আর আমার ছোটবেলা অসাধারণ ছিল তাই না রে :crying:
    :love:

    • স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

      অনেক ধইন্নাপাতা ভালো বলবার জন্য। 😀
      তোর কথা ভাইবা লিখছি এইটাতে তো তোর ধন্য হয়ে যাওয়া উচিত। 😛
      আসলেই অনেক অদ্ভুতুড়ে ছোটবেলা ছিল আমাদের… 🙁

  6. স্রোত বলেছেনঃ

    তোমার লেখা দেখে আমি মুগ্ধ ৷ দোয়া করি তুমি জীবনে অনেক বড় কিছু হও ৷ All the best.. 🙂 :happy:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।