আজ একটি লিঙ্ক শেয়ার করেছিলাম একটা গ্রুপে। সেটি ছিল নিচের স্ট্যাটাস
মানলাম বুয়েটে ভর্তি হইতে অনেক কষ্ট এবং পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু পড়াশোনা করেও যারা চান্স পায় না তাদের কী মেধাবী বলা চলে না? আবার ভরা মজলিসে কাউকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় যে আপনি কোথায় পড়ালেখা করছেন? আর সে যদি উত্তর দেয় বুয়েট, ঢাবি অথবা এনএসইউ তবে সম্পূর্ন মজলিস তার দিকে ঘুরে তাকাবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমিও ঢাবি’তে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু চান্স পাই নাই। অবশেষে অর্থের অভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামক এক অদ্ভুত জায়গায় ভর্তি হয়েছি। তার মানে কি আমি ছাত্র খারাপ?
যে কোনো জায়গায় চাকুরীর জন্য রিকোয়ারমেন্টে লেখা থাকে, ‘must study at any reputed private or public university’.
আমাদের সরকার এবং শিক্ষা ব্যবস্থারও এইসব নিয়ে মাথাব্যথা নাই। কারন তারা বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেছে। আর যারা দেশে করেছে তারাও ঐ ঢাবি অথবা বুয়েট থেকে পাশ করা। তো তারা কী বুঝবে আমাদের কষ্ট?শেষে একটা কথাই বলতে চাই। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তার মানে এই না, আমাদের মাথায় কিছু নাই। আর চাকুরী ক্ষেত্রে অগ্রাধীকার পাইনা বলে আমরা দমে যাওয়ার পাত্র নই। দিন একদিন আমাদেরও আসবে। একদিন আমরাও অন্যদের চাকুরী দিব। তখন আমরাও চাকুরীর রিকোয়ারমেন্টে লিখে দিবে, ‘student of reputed public or private univercity are not applicable!’
হাহ!!!
(—Raiyan Prisoner এর স্ট্যাটাস এর অংশ বিশেষ অন্য আরেকজন শেয়ার করেছিলেন)
সরব ব্লগার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রী student মুমু বললেন
টোনটা ভালো লাগলো না। যারা “reputed private or public university”তে চান্স পায় না, তারা মেধাবী না- এটা একটা বাজে কথা, এই বিষয়ে একমত। কিন্তু এই লেখার টোনটা এমন না, আমার মনে হল লেখাতা হল- “ইকুয়ালিটি চাই, তা যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক”। আমার আমার পয়েন্ট বলি-
১) সবজায়গাতেই নিজেকে প্রমান করার একটা ব্যাপার থাকে। পরিবেশ থাকুক বা না থাকুক, যেকেউই নিজেকে প্রমান করতে পারে। এখন, যারা বুয়েট ঢাবি এনএসইউ ও অন্যান্য reputed universityগুলতে চান্স পেয়েছে, তারা তো নিজেদের সেখানে প্রমান করেছে, – এতে তো কারও দ্বিমত নেই, রাইট? মেধাবীদেরকেই তো এপ্রিসিয়েট করার কথা, তাহলে সেখানে তো আইরকম জ্বলেপুড়ে যাওয়ার কিছু দেখি না।
২) এই লেখায় কোথাও এমন বলা নাই যে কোন কাজের স্বীকৃতি নিয়ে বৈষম্য হয়েছে, বরং সাফ হিংসা দেখতেছি- ” তখন আমরাও চাকুরীর রিকোয়ারমেন্টে লিখে দিবে, ‘student of reputed public or private university are not applicable!'” পৃথিবীর যে কোন জায়গায় এমআইটি, হার্ভার্ড থেকে পাস করা মানুষজনের কদর, আমরা নিজেরাই তো এমন শুনলে তাকাই। অন্য কোথাও থেকে নিজেকে কেউ প্রমান করলে তখন ধারণা পরিবর্তন হয় অবশ্যই, যেমন বাংলাদেশকে তো বাইরের কেউ চেনে না, যখন এই দেশের reputed universityর নাম বলা হয় তখন আস্তে আস্তে চিনে, এভাবেই কি আমরা বাইরে নিজেদের প্রমান করতেছি না? তো কেউ কীভাবে ইকুয়ালিটি চাইতে পারে যখন তার নিজেকে প্রমান করা বাকি!
৩) ইদানিং এই মানসিকতার কারনেই আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থার দফারফা অবস্থা। “মেধাবীদের আলাদা স্বীকৃতির দরকার নাই, আমরা সবাই সমান হতে চাই” – এই নীতিতে গ্রেডিং সিস্টেমে ঢালাও গ্রেড দিয়ে করে মেধাবীদেরকেই হেয় করা হল কেবল। দেখেন, সেখানেও যারা কোন কারণে খারাপ করে তারা কি মেধাবী না? অবশ্যই মেধাবী, যদি তারা পরবর্তীতে নিজেকে প্রমান করতে পারে। যতক্ষণ কেউ নিজেকে প্রমান করতে না পারে, ততক্ষন তার ইকুয়ালিটি চাওার অধিকার আছে বলে মনে করি না।বাইদাওয়ে, লেখাটার শেষে লেখা – ” ‘student of reputed public or private univercity are not applicable!'” – তে গ্রামারে ভুল আছে, যেমন- ‘students of’, ‘universities’ হবে, এখানে এমনকি ইউনিভারসিটি (univerCity) বানানটাও ভুল।
এইবার আলোচনা শুরু করা যায়!
মুমুর কমেন্ট এ যুক্তি আছে। (যেমন হিংসা বা জেলাসি না হয়ে এটা কিন্তু অভিমানও হতে পারে!)
তবে সেখানে মনে হয় কিছুটা হলেও এম্প্যাথির অভাব আছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা যেভাবে দেখি…যেন এরা কোন ছাত্রই না…সেটা নিয়ে বলা আছে। meritocracy (মেরিটোক্রেসি)র বিরোধিতার চেয়ে অনুযোগ অভিমানটা বড় মনে হচ্ছে।
হিংসা, ঈর্ষা আর অভিমান- তিনটা কিন্তু তিন রকমের শব্দ!
দাদা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটাই এমন হয়ে গেছে। হবেই বা না কেন বলো? সেশনজটের বিষয়টা কাটাতে পারলে একটা কথা ছিলো। যোগ্যতা কিন্তু অবশ্য জরুরি। আমাদের কথাটাই ধরো, স্যাররা যখন বলছেন তারাই কিন্তু আমাদের নি্রুতসাহিত করে দিচ্ছেন। তাদের মতে বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট সব ছাত্র যব পেয়ে গেলে আমাদের দিকে নজর দেয়া হবে।
“পরিবেশ থাকুক বা না থাকুক, যেকেউই নিজেকে প্রমান করতে পারে।” এই কথাটা আমি মানলাম না। পরিবেশটা খুব দরকার নিজেকে প্রমান করার জন্য। আমি ৪র্থ বর্ষে উঠে গিয়েছি, অথচ আমার সাথে যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে তারা মাত্র ২য় বর্ষ পরীক্ষা দিচ্ছে। অঢেল সময়টাকে ওদের সিংহভাগ কাজে লাগাতে পারে না, হতাশ হয়ে যায়।
গ্রেডিং পদ্ধতিটা আসলে কতটা কার্যকর তা আমি বুঝি না। প্রতিটা সরকার এসে পাশের হার বাড়াতে ব্যস্ত, পড়ার মান বাড়াতে কেউ ব্যস্ত নন। অনেক অনেক ডাবল গোল্ডেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি বিষয়ে পড়ার যোগ্যতাও কিন্তু রাখে না।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই, কারন যেহারে পাশের হার বাড়ছে সেহারে কিন্তু পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সঙ্খ্যা বাড়ছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামটা কিন্তু আবার কারো কাছে অলার্জির মত। কিছু পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে কিন্তু ভর্তির সময় নানান রকম দূর্নীতিও হয়ে থাকে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সবার ধারণা যে সেখান থেকে টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কেনা হয়- এই বিষয়টার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার।
স্ট্যাটাসের যিনি মালিক কিছুটা আক্রমণাত্মকই লাগলো তার কথাগুলো, কিন্তু ইস্যুটা ভালো। reputed university গুলো তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে আসছে দেখে তাদের চাহিদাটা বেশি, এটা মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, স্বীকার করি যোগান কম। সে ক্ষেত্রে অবন্তিকা আপুর কথা মেনে নিলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার একটা কথা আছে, সরকার হয়ত reputed universityগুলোতে ছিট বাড়াচ্ছে না, কিন্তু university র সংখ্যা বাড়াচ্ছে। কিন্তু সেগুলোতে পড়বার মতো সুবিধা কিংবা আগ্রহ কি সরকার তৈরি করছে??
অর্থায়ন, ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান- সব কিছুই কি এক্কেন্দ্রিকরণ হয়ে যাচ্ছে না??
আমি এইবার HSC দিব। আমার কোন বন্ধুর সাথে যখন এক্সামেরে প্রিপারেশান নিয়ে কথা বলি, একটা কথা প্রায়শই কানে আসে। সেটা হলঃ ‘সরকারের লাস্ট বছর! রেজাল্ট এমনি এমনি আসবে!’
কথাটা শুনে হাসি যেমন পায়, বুকের ভেতর মনে হয় যেন শেল বেঁধে! কী ভয়ানকভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা জীর্ণ হয়ে আছে!!
কলেজে আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন (নাম বলব না) যিনি প্রায়ই বলতেন, ‘ এই কলেজে পরে কেউ পড়ে বুয়েট, মেডিকেলে। আর কেউ পড়ে ‘নাচেনাল’ ইউনিভার্সিটিতে।’
একজন শিক্ষক তিনিই যাকে দেখে আমরা শিখতে পারি, যাকে আমরা অনুকরণ করতে পারি। এখন তাদের মুখের ভাষাই যদি এমন হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আর বেসরকারী বিশ্ববেদ্যালয় সম্পর্কে আমাদের ভাল ধারণা আসবে কোথা থেকে??
আবার শ্রদ্ধেয় ওয়ালিউল হক স্যারের একটা কথা,
‘হাতি যেমনই হোক, সেটা হাতি! মরা হাতিই হোক, জীবিত হাতিই হোক, সেটা সবসময়ই হাতিই থেকে যায়। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হল হাতি, আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সজারুরু কাটা ছাড়া আর কিছু না। খালি টাকার কচকচানি! সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সেইটা পাব্লিক হোক আর জাতীয়ই হোক, সেইটা সরকারি। তবে মনে রাখবা, সোনা যেইখানেই যায়, সেইটা সোনাই থাকে! তাঁকে কালো রঙ করে দিলেও সেই রঙ উঠে গিয়ে একদিন সোনালী রঙ বের হবেই!’
এ উদাহরণ আমি খুব সহজেই দিতে পারি, একটা বেসরকারী মেডিকেলে পড়ে আমার এক বড় ভাই এই গত বছর RCPSC এ এফআরসিএস করতে, টাকার জোড়ে না, মেধার জোরে, স্কলারশিপ পেয়ে।
রাইয়ান ভাইয়ার স্ট্যাটাসের বেশ কিছু কথা একটু বেশিই আক্রমনাত্মক। তবে…
থাক। এ নিয়ে আমার কিছু বলাটা সাজে না। রবি ঠাকুর বলেছিলেন, ‘আমি যাহার দর্শন নিজ চোখে করি নাই, তাহা নিয়ে বলিতে যাওয়া কেবলই প্রবঞ্চনা’।
*এক্সামের
**পড়ে
***কাঁটা
****তাকে
***** করতে গেছেন
অনাকাঙ্কখিত বিভ্রাটের জন্যে দুঃখিত!
‘আমি যাহার দর্শন নিজ চোখে করি নাই, তাহা নিয়ে বলিতে যাওয়া কেবলই প্রবঞ্চনা’
বাহ্! দারুণ তো! রবি দাদা এইটা বলেছিলেন নাকি? জানা ছিল না……… এই জন্যই দাদাকে এত্ত বস লাগে! :huzur:
আমার স্মৃতি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না থাকলে এই উক্তিটাই গল্পগুচ্ছে ছিল। 🙂
উনাদের নিয়ে কি আর কিছু বলা চলে!
মানুষে-মানুষে তুলনা চলে, উনারা তো মহামানব!
নতুন মন্তব্য আর কি করবো?
সবাই আগেই অনেক কিছু বলে দিয়েছে।
অনুজের মন্তব্যটা বিশেষ করে খুব ভালো লাগলো।