প্রাচীন মিশর। ফারাও যুগ। লোভ আর বিচ্ছিন্ন পাপাচারে টালমাটাল হয়ে গেছে সোনালী এই সাম্রাজ্য। ষড়যন্ত্র, হত্যা আর নিষ্ঠুরতা শুষে নিচ্ছে এর জীবনসুধা। দুর্বল ফারাও সম্রাট মামোস কিছুই করতে পারছেন না। গর্বোদ্ধত সিংহপুরুষ, সেনাপতি ট্যানাসের উপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন দেবতারা,মিসরের দুই রাজ্য একীভূত করার যুদ্ধে সেই দিবে নেতৃত্ব। কিন্তু তার ভালোবাসা উজির কন্যা অপরূপা লসট্রিসকে ঘিরে যাকে আবার ভালোবাসে আর একজন অসামান্য প্রতিভাধর অপুরুষ লিপিকার টাইটা।
এক কথায় এটাই উপন্যাসের মূল কাহিনী, কিন্তু আসলেই কি ট্যানাস পেরেছিল দুই মিশরকে এক করতে?? কিংবা লসট্রিস কি পেয়েছিল তাকে?? আর টাইটা কি বেঈমানি করেছিল বন্ধুর মতো ভালোবাসা ট্যানাসকে?? যা সে বর্ণনা করেছিল এভাবে, “ রানির প্রতি প্রণয় দেশদ্রোহিতারই নামান্তর। ক্রীতদাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব পরিচয় দেয় হীনমন্যতার। ”
নাটকীয়তা আর রহস্যে ঠাসা পুরো উপনাসটি। তবে স্থানে স্থানে লিপিকার টাইটার অনর্থক গর্ব আর অতিশয়োক্তি পাঠককে বিরক্ত করলেও তার জ্ঞানের পরিব্যাপ্তি অবাকও করবে। যেমন সে বের করেছিল, “রথের একবার চাকা ঘুরলে ঠিক তার পরিধির সমান দূরত্ব অতিক্রম করে” কিংবা বলেছিল, “পুরোহিত আর আইনজ্ঞদের জন্য সবচেয়ে বিশ্রী জাহাজ বরাদ্দ করে যার-পর-নাই আনন্দ পেলাম,কেননা এরা হল রাজ্যের রক্তচোষা জোঁকের মতো। ” পুরো উপন্যাস জুড়ে ফুটে আছে মিশরের সেই সময়কার অব্যবস্থাপনা আর ব্যাভিচারের কথা। সেই অবস্থায় মিশরে আক্রমণ চালায় হিকসস বাহিনী, আর তা থেকে মুক্ত হতে মিশরকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১০০ বছর!!
আফ্রিকান লেখক উইলবার স্মিথ এর অত্যাধিক আলোচিত উপন্যাস,রিভার গড বা নদী-ঈশ্বর এর কাহিনীর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক আছে, আছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা। বইয়ের সমাপ্তিতে লেখকের বক্তব্য এই বিতর্কের মূল কারণ, বইটির অসাধারণ জনপ্রিয়তার পর তিনি লিখেছেন এর সিকুয়েল- “দ্যা সেভেন্স স্ক্রল”।
১৯৮৮ সালের ৫ জানুয়ারী, মিসরীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডুরেইদ-ইবনে-আল-সিমা নীলনদের পশ্চিম তীরে , ভ্যালি অব নোবলস এ একটি প্রাচীন সমাধি খুঁজে পান। এ সমাধি আবিষ্কারের প্রায় এক বছর পরে দেয়ালের এক অংশের প্লাস্টার ধসে লুকনো ছোট্ট একটা প্রকোষ্ঠে দশটি অ্যালাবাস্টারের ভাস খুঁজে পান। তার মধ্যে নয়টির মর্মোদ্ধার সম্ভব হলেও সপ্তমটির অর্থ উদ্ধার করতে গিয়েই শুরু হয় এই অভিযানের।
চার হাজার বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিল মিসরীয় সাম্রাজ্যের বারোতম বংশধারার ফারাও মামোসের বিপুল পরিমাণ সমাধি সম্পদ। ঘটনাক্রমে এই সম্পদ উদ্ধারের দায়িত্ব পরে সুন্দরী মরুকন্যা রোয়েন আল সিমার হাতে, আর তার সাথে সহযোগী হন সাহসী অভিযাত্রী, নিকোলাস কুয়েন্টন হারপার। কিন্তু এ এমনই এক সম্পদ, যার জন্য খুন করতেও দ্বিধা নেই রক্ত-লোলুপ লুটেরাদের। মিশর ছেড়ে ইথিওপিয়ার দুর্গম অঞ্ছলে ছুটে যায় তার। তারপরই শুরু হয় ইঁদুর দৌড়। তিন তিনবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় রোয়েন আল সিমা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি টাইটার সপ্তম স্ক্রল ওদের পৌঁছে দিয়েছিল ফারাও মামসের গুপ্তধনের কাছে?? এ আরেক অসাধারণ রুদ্ধশ্বাস অভিযান।
এই দুটো উপন্যাসে কোনটা সত্যি কিংবা কতটুকু মিথ্যে তা নয়তো ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক, আমরা নাহয় আপাতত রোমাঞ্চকর অভিযানের সঙ্গী হই। অ্যাডভানচার-রোমাঞ্চ-বই-প্রিয় মানুষদের তালিকায় রাখবার মতো বই দুটো।
রিভিউটা পড়ে বই গুলো পড়ার প্রচন্ড লোভ হচ্ছে।
ভাল লেগেছে রিভিউটা।
ধইন্নাপাতা… যোগাড় করে ফেলুন,বইগুলো খারাপ লাগবে না আশা করি। 🙂
(কাল দেখছি দাঁড়াও। সরব এর বুক রিভিউয়ার হয়ে যাচ্ছো। দারুণ দারুণ 😀 )
:happy: দোয়া করবেন ভাইয়া। “দ্যা সেভেন্স স্ক্রল” মণির কাছে আর “রিভার গড” আমার কাছে আছে… 🙂
তুই আমার নামের বানান ভুল লিখেছিস মণি না মনি :haturi:
দ্যা সেভেন্স স্ক্রল বইটা পড়ে বেশ ভালো লেগেছে
রিভিউটাও ভালো লেগেছে চালিয়ে যা :love:
ক্যান??সোনামণির ‘মণি’ তো এইটাই… ;thinking:
ভালো লাগছে তোমার বইটা??!! 😉 কেন বুঝছি তো…মেয়ে বেশি পেকে গেছে… “রিভার গড” ও তাহলে ভালো লাগবে… 😀
শারমিন পরের সিক্যুয়েল আগে পড়ে ফেলছে! 😛
আপি, আমিও না জেনে আগেই ওইটা পড়ে ফেলছিলাম,তাতেই বরং “শাপে বর” হইসে।তাই ওকে ও আগে ওইটা দিসি। 😀
এমনটা হইছিল জুল ভারনের “মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড” আর “টুয়েন্টি থাউজেন্ট লিগস আন্ডার দ্যা সী” বই দুটোর ক্ষেত্রে। 😛
‘শী’ আর ‘রিটার্ন অব শী’-ও দেখি অনেকেই উলটো করে পড়ে! 😛
এমনিতেই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী পড়তে দারুণ লাগে, তারুপর দিলি তো লোভ ধরায়ে! 🙁
আচ্ছা, দশটা ভাসের অর্থোদ্ধার কী আগেই করা হয়েছিল সপ্তমটা বাদে? এই জায়গাটা বুঝি নাই ঠিকমত! 😳
হুম আপি,সপ্তমটা বাদে বাকিগুলো ওরা বের করতে পেরেছিল,কিন্তু সপ্তমটায় গুপ্তধনের একটা দিক ছিল বলে টাইটা একটু চালাকি করেছে ওইটাতে।
আসলেই লোভ লাগানো বইগুলো। আমি তো লোকটার প্রেমেই পড়ে গেলাম পুরো। :love:
আমাকেও তাইলে অতি সত্বর প্রেমে পড়তে হবে দেখছি! 😛
তখন আমরা ভাগাভাগি করে উনার বই কিনব,কেমন?? 😐
:happy: :love:
ভালো লাগলো। তবে একটুখানি কঠিন কঠিন!
আমি জীবনে একটা মাত্র বুক রিভিউ লিখছি! কিন্তু প্রায়ই ইচ্ছা করে লিখতে।
আপু,অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীগুলো এমনেই বিস্তারিত ধরনের,সংক্ষেপে লিখতে গেলেই কঠিন হয়ে যায়… 🙁
রিভার গড বইটা উপহার পেয়েছিলাম। দারুণ থ্রিলিং, আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়–আসলেই ঘতনার সত্যতা কতটুকু…… কী অদ্ভুত যে লেগেছিল পড়ে…… কেমন যেন রহস্য ভরা……
সেভেন্থ স্ক্রোল পড়া হয়নি এখনো।।পড়ে নিতে হবে……
মিশর তত্ব আমার ববাবর-ই খুবই দারূন এক্তা বিষয় মনে হয়… খুব-ই থ্রিলিং……
রিভিউ পড়তে ভালো লাগলো…… মাঝে মাঝে আমারো লিখতে ইচ্ছে করে…এখন বই বেশ কম পড়া হয়, তবে যা পড়ি, গুডরিডস এ কয়েক লাইন হলেও রিভিউ লিখে রাখি…… 🙂 🙂
প্রথমেই থাঙ্কু মন্তব্যের জন্য… 🙂
বইটা পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল,মুভি হবে কবে এইটার??!! 😀
উইলিয়াম সাহেবকে না, সরাসরি মিশরে গিয়েই জানতে ইচ্ছে করে, আসলেই সত্য কিনা ঘটনাগুলো।
শুরু করে দিন লিখা,আমি তো আপনাদের মতো অত জটিল চিন্তা করতে পারি না তাই যা পড়ি তাই লিখে রাখি। 😳
আমার মনে হয় মুভি না হলেই ভালো!!
বই থেকে বানানো মুভি গুলো আমার মোটেই ভালো লাগে নি এখন পর্যন্ত, বই পড়ে কল্পনাকে যেভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায়, মুভি যেন এসে সেগুলোর গলা টিপে ধরে… 😛
কল্পনার আকাশে কোন বাধা চাই না… :happy:
অবশ্য আমি মুভি খুব-ই কম দেখি……
তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। ভাবলাম,মিশরীয় উপাখ্যানের উপর ‘the mummy’ আর ‘the mummy returns’ টা তেমন খারাপ লাগে নাই। 😐
এবার বইমেলায় যতদিন মেলায় গিয়েছি, ততদিন লোভাতুর দৃষ্টিতে বই দুইটা (অনুবাদ) দেখে আসছি। শেষে লজ্জায় আর ‘রোদেলা’র সামনে না যেয়ে দূর থেকে দেখতাম। দেড় মাস পর যখন দুঃখ একটু একটু ভুলতে শুরু করছি তখনই এই পোস্ট ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ 🙁
:opps:
আশা করছি কাছে ধারে এবার কারো কাছে পেয়ে যাবেন,তখন নিশ্চয়ই আর ভুল হবে না।
মিশর আছে যেখানে আমি সেখানেই আঁকুপাঁকু করে ছুটে যাই!! এই বইটা তো না পড়ে ছাড়ছি না…দারুণ লাগল রিভিউ। 😀
অনেক অনেক ধইন্নাপাতা মন্তব্যের জন্য … 🙂
বইটা পড়ে কিন্তু আপু অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো…