খবরটি ২০০৫ কিংবা ২০০৬ সালের দিকের হবে, সঠিক মনে নেই। খবরটি ছিল এরকম, “ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে কিশোরী দীপালি সূত্রধর। অত্যন্ত দরিদ্র দীপালির পরিবারে ঠিকভাবে দু-মুঠো ভাতও জুটত না। তাই তাদের পরিবারে সবাই পালা করে ভাত খেত অর্থাৎ দিনে যে খেত, রাতে সে খেত না। এভাবেই পালাক্রমে কোনমতে চলছিল পরিবারটি। সেদিন দীপালির ছোট ভাইটির ক্ষুধা বোধহয় একটু বেশিই পেয়েছিল, তাই সে দীপালির একবেলার বরাদ্দ ভাতটুকু খেয়ে ফেলে। পরবর্তীতে ভাত না পেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় আত্মহননের পথ বেছে নেয় দীপালি।”
খবরটা পড়ে অনেক খারাপ লেগেছিল তখন হতভাগা মেয়েটির জন্য। দারিদ্র্য ও জীবনের সাথে সংগ্রাম করেও তো এগিয়ে চলছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষুধার কাছে তার সব সংগ্রাম ব্যর্থ হলো।
দশ টাকা কেজি চালের যখন আশ্বাস পেয়েছিলাম, তখন ভাবলাম, যাক, এবার নিশ্চয়ই আর কোনো দীপালির মন খারাপ করা কাহিনী পড়ে চোখ ভিজে উঠবে না।
কিন্তু সে আশ্বাস তো বিন্দুমাত্র পূরণ হয় নি, এ পুরনো খবর সকলের জানা। বরং সম্প্রতি ছোট্ট সোনাবরুর ভাত না পেয়ে আত্মহত্যার কাহিনী শুনে আবারও নির্বাক হয়ে গেলাম লজ্জায়, বেদনায় ও অনুশোচনায়। ((http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Football&pub_no=650&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&news_id=189897&archiev=yes&arch_date=23-09-2011))
বন্ধুদের সাথে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে কেক কিনে সহপাঠীদের সাথে নিজের জন্মদিন পালন করে সোনাবরু। স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে হাঁড়িতে ভাত না পেয়ে আত্মহত্যা করে সে। তার সহপাঠীদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল এরপরের জন্মদিনগুলো আরো সুন্দরভাবে পালন করবে। নিজেরা কম খাবে, স্যারদের জন্য বেশি কেক রাখবে।
সোনাবরুর ১৩ বছর বয়সী ভাই বহুকষ্টে উপার্জিত ৫০০ টাকা বেতনের ২০০ টাকা দিয়ে বোনের জন্য ব্যাগ কিনে আনে। ব্যাগ পেয়ে ভাইকে বলেছিল, “দেখিস দাদা, যদি বেঁচে থাকি তবে কোনদিনই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হব না।” হায়! সোনাবরুর আর কখনই প্রথম হওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি হয়ত আছি, তাই বাংলাদেশ নিরাপদে আছে। আমার চোখ বন্ধ হলে কি হবে তা আল্লাহ রব্বুল আলামিন জানেন। ” জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, “আচ্ছা, সোনাবরু যখন ভাত না পেয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিল, তখন কি আপনার চোখ বন্ধ ছিল না খোলা ছিল?” কিংবা “কম খাওয়া” তত্ত্বের জনক বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলতে ইচ্ছে করে, “কম না হয় খেলাম। কিন্তু যে ছোট মেয়েটির কাছে দু-মুঠো কম খেতে পারাটাই বিলাসিতা, তাকে আপনি কি পরামর্শ দিবেন?”
না, জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না। কারণ আমি কিছুটা অনুমান করতে পারি কি জবাব পাব – “এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দেশের পরিস্থিতি যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো”, “এগুলো বিগত সরকারের ব্যর্থতা” কিংবা “বিরোধী দলের চক্রান্ত” এর মত শাক দিয়ে মাছ ঢাকা টাইপ অমিয় বাণী।
খাদ্য সংকটের সমাধান বাতলানোর জন্য বিশাল সংবাদ সম্মেলন হবে, বড় ভোজের আয়োজন হবে যার উচ্ছিংশটুকু পেলেও বর্তে যায় দীপালি ও সোনাবরুরা। সেসব সম্মেলনগুলো যে খুব ফলপ্রসূ হবে তা বলতে পারি না, তবে “একদিন বাজারে না গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে” টাইপ আরো কিছু অমূল্য বাণী তো শুনতে পারব। পেটে ভাত না পড়া মানুষগুলোর কাছে এসব বাণী হাস্যরস যোগাবে, তাতে যদি ক্ষুধার যন্ত্রণা কিছুটা ভুলে থাকা যায়, তাতেই বা কম কি?
একটি উক্তি দিয়ে আমি উপসংহার টানতে চাই। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা) বলেছিলেন, “আল্লাহর শপথ! ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তবে আমি দায়ী থাকব। ”
ভাবি, দীপালি বা সোনাবরুরা এসময় মানুষ হয়ে না জন্মগ্রহণ করে কেন যে সে সময় কুকুর হয়ে জন্মালো না?
চোখে পানি এসে গেল লেখাটা পড়ে। আগেও যতবার সোনাবরুর কথা পড়েছি ততবারই অসম্ভব কষ্ট পেয়েছি। এখন আর নেতা-নেত্রী-রাজনীতিবিদদের প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে না। এখন সোনাবরুদের কথা পড়লেই মনে হয়, এ আমার ব্যর্থতা! এই সোনাবরু তো আজ আমার বোনও হতে পারত। জীবনে কী করেছি আমি আমার এমন বোনদের জন্যে? জানি, যেটুকু করেছি সেটুকু কোন সম্পূর্ণ সমাধান নয়। ওদের জন্য আরো অনেক কিছু করবার প্রয়োজন আমাদের।
আজ প্রার্থনা করি, এদেশের সোনাবরুরা ‘দুধে-ভাতে’ নয়, অন্তত ‘শুধু ভাতে’ যেন বেঁচে থাকতে পারে।
(অক্ষরগুলো কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে সব)
“আজ প্রার্থনা করি, এদেশের সোনাবরুরা ‘দুধে-ভাতে’ নয়, অন্তত ‘শুধু ভাতে’ যেন বেঁচে থাকতে পারে”
এ প্রার্থনা যেন সফল হোক।
কেন জানি নিজের অসহায়ত্ব আর আমাদের নেতাদের নির্লিপ্ততায় একটা ভীষণ ক্রোধ হয়! কি জানি একটা ভেতর থেকে জ্বালা ধরিয়ে দেয়, আমরা কেন এমন করে পালটে যাচ্ছি, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে, এখনো……
সবার জন্য একটু খাবার, সেটাই নাহয় হোক শেষ চাওয়া…
চাওয়া তো বেশি কিছুই না। কোনো রাজভোগ কিংবা সুস্বাদু খাবারের জন্যও তো উচ্চাশা করছে না। শুধু দু’মুঠো ভাত চাওয়াটাই কি বড় কিছু চাওয়া? 🙁
সোনাবরুর ঘটনাটা মনে পরলেই মনে হয়, একটা মেয়ে না খেয়ে মরে গেল আর কিছুই করতে পারলাম না। 🙁
“এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দেশের পরিস্থিতি যে কোন সময়ের চেয়ে ভালো”, “এগুলো বিগত সরকারের ব্যর্থতা” কিংবা “বিরোধী দলের চক্রান্ত” এর মত অমিয় বাণী শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। আর সহ্য অচ্ছে না ইদানীং। :mathagorom:
একই বাণী আর কতদিন সহ্য করব? :mathagorom:
মাঝে মাঝে মনে হয়, সবকিছু ভেঙ্গেচুরে নতুন করে ঢেলে সাজাই।
হাসিনা খালেদা দুইজনই ভোটের সময় নির্লজ্জের মত করে। অথচ কাজের সময় না! আর এর জন্য দায়ী হয়ত আমরাই!
এভাবে কত কিছু ঘটে যায়! 🙁
আমরাই আসলে দায়ী, আমরাই দীপালি, সোনাবরুর হত্যাকাণ্ড ঘটার জন্য ওদের পথ সুগম করে দেই। যতদিন পর্যন্ত এই “দুই” (দল) এর চক্রটা ভাঙ্গতে না পারছি, ততদিন কিছুই হবে না।
🙁 🙁
🙁
🙁 🙁
😐
:voypaisi: 😳
😳
নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে। এমন কোনো সিস্টেম যদি থাকতো, আমি এক বেলা না খেলে সোনাবরুর মতো কেউ খেতে পারবে, দিনে এক বেলা খাইতাম , সত্যি ! আর, হাসিনা-খালেদা নিয়া কথা বলার রুচি নাই। এগুলা গরুর গোবরের অনুজীবের ত্যাগকৃত মলরসের থেকেও জঘন্য।
একবার রাস্তায় এক বৃদ্ধার আর্তনাদ শুনেছিলাম, যা ছিল অনেকটা এরকম- ”ধুর! মানুষ না হইয়া, কুত্তা হওন-ই ভালা আছিলো!” কতোটা ক্ষোভ থেকে এই কথা বলা যায়, ভাইয়া?!
এটা নিয়ে একটা পোস্ট দেবো ভেবেছিলাম! আপনিই দিয়ে দিলেন! 😐
🙁 🙁
মাঝে মাঝে ভাষা হারিয়ে ফেলি, ইচ্ছে হয়, ইচ্ছে হয়… কোন এক জাদু দিয়ে যদি আমাদের এই আবাসভূমিটাকে বদলে দেয়া যেত!