১) এক বনে বাস করতো এক খরগোশ যে তার দ্রুত গতির জন্য খুব আত্মহংকারী ছিল এবং দেহের তুলনায় ছোট পা বিশিষ্ট কচ্ছপের ধীরগতির জন্য অবজ্ঞা করত! কে শ্রেষ্ঠ তা বাছাইয়ের জন্য একদিন আয়োজন করা হল এক দৌড় প্রতিযোগিতার। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময় শুরু হয় প্রতিযোগিতা স্বভাবতই দ্রুতগতির জন্য শুরুতে এগিয়ে থাকে খরগোশ তবে শুরুতে এগিয়ে থেকেও অলস অধিক আত্মবিশ্বাসের দরুন নিরলস, পরিশ্রমী, ধিরস্থির মানসিকতার কচ্ছপের কাছে প্রতিযোগিতায় হেরে যায় খরগোশ।
ছোটবেলায় পড়া এই গল্পটি সবার জানা তাই সংক্ষেপে শেষ করলাম কিন্তু যদি এমন হতো…
২) কচ্ছপের মত ধীরগতির একটা প্রাণীর কাছে দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় তীব্র হতাশায় ভুগতে থাকে বেচারা কচ্ছপ কারণ সে ভালো করেই জানে যদিনা সে গাছতলায় ঘুমিয়ে পরত তবে কচ্ছপের সাধ্যি কী যে তাকে হারায়! তিব্র হতাশা একই সাথে প্রবল জেদ জেগে উঠে খরগোশের মনে। সে মনে মনে ভাবে আরেকটি দৌড় প্রতিযোগিতা হবে না কেন? যেই চিন্তা সেই কাজ, বনের সবাই খরগোশের আরজি মেনে নিল। কচ্ছপও কোন আপত্তি জানালো না।
নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হলো দৌড় প্রতিযোগিতা। এবার শুরু থেকেই প্রাণপণে ছুটতে থাকে খরগোশ কারণ তার মাথায় তখন একটি বাক্যই ঘুরছিল ‘আমায় জিততে হবে’। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে পৌছে গেল সেই গাছটির কাছে যেখানে বিশ্রাম নেয়াই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্য, হেরে গিয়েছিলো কচ্ছপের কাছে। এবার আর সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করলো না সে, সেই গাছে একদলা থুতু ছিটিয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করে খরগোশ। তাই কচ্ছপের চেয়ে অনেক আগেই পৌছেযায় অভীষ্ট লক্ষ্যে, ফিরে পায় নিজের হারানো মর্যাদা।
অথবা যদি এমন হতো…
৩) দানে দানে তিন দান! কচ্ছপ, খরগোশ উভয়ের সম্মতিতে বনের অন্যান্য পশুপাখিরা সাগ্রহে আরেকটা আরেকটি দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে রাজি হলো। তবে, এবার ট্র্যাকে কিছুটা পরিবর্তন আনা হলো মানে এবার গন্তব্বে্য পৌছতে দৌড়ের সাথেসাথে দুজনকেই অতিক্রম করতে হবে একটি ছোট নদী।
নির্দিষ্ট সময় ভাল্লুকের বাঁশি ফুঁ দেয়ার শুরু হলো চূড়ান্ত দৌড় প্রতিযোগিতা। স্বভাবতই কচ্ছপের চেয়ে বেশ খানিকটা আগেই নদীর তীরে পৌছে যায় খরগোশ। নদীর পাড়ে এসে দাড়িয়েই টনক নড়ে উঠে খরগোশের কারণ সে যে সাঁতার জানেনা! মহাচিন্তায় পরে গেল খরগোশ। ইতোমধ্যে কচ্ছপ এসে পড়ছে, সে এতটুকুও চিন্তিত ছিলোনা, কেনই বা থাকবে? সে যে সাঁতার জানে। ওইদিকে বেচারা খরগোশের দুঃখ আর দেখে কে, তার আর শেষ রক্ষা করা হলো না।
‘বন্ধু খরগোশ, তুমি আমার পিঠে ওঠো তুমি সাঁতার না জানলেও আমি তো জানি। তোমাকে ফেলে আমি সাঁতরিয়ে নদী পার হলে আমি হয়তো খুব সহজেই জিতে যাব কিন্তু তাহলে সেটা আর কোন প্রতিযোগিতা থাকবে না। সত্যি বলতে জয়ের মাল্যটা তোমারই প্রাপ্য। তুমি আত্মহংকারী না হলে এ প্রতিযোগিতার কোন দরকার ছিলনা ভাই।’ কচ্ছপের কথাগুলো শুনে খরগোশের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিলো কিন্তু সেই চোখে ছিল না আগের মত হিংসা, কোন আত্মহংকার, ছিল না লেশমাত্র দাম্ভিকতার চিহ্ন, ছিল শুধু আগাধ কৃতজ্ঞতা…
কচ্ছপের পিঠে চড়ে নদী পার সহজেই নদী পাড় হল খরগোশ। নদী পার হওয়ার পরই প্রতিযোগিতা শেষ নয়, বাকী রয়ে গেছে আরও বেশ খানিকটা পথ। এদিকে দৌড়, সাঁতার দুয়ের পর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পরে কচ্ছপ। তার আর দৌড়ানোর শক্তি ছিল না। কচ্ছপকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে খরগোশ বলে উঠলো,‘তোমার দৌড়নোর শক্তি না থাকলেও আমার তো আছে বন্ধু, চেপে বস আমার পিঠে।’ কিছুটা হেসে খরগোশের পিঠে চেপে বসে কচ্ছপ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে যায় খরগোশ এবং কচ্ছপ। অবাক হয়ে বনের সকল পশুপাখি দেখতে থাকে বিরল এই দৃশ্যটি। খরগোশ এবং কচ্ছপ দুজনই জয়ী! বিজয়ের মালা পরিয়ে দেয়া হয় দুজনকেই!
নীতিকথা-১: ছোটবেলায় পড়ে আসা ‘খরগোশ ও কচ্ছপের’ গল্পের মরাল আমাদের সকলেরই জানা-
জেতার জন্য অলস, গতিশীল হওয়ার চেয়ে সময়নিষ্ঠ ও ধীর-স্থির হওয়া বেশী জরুরী।
নীতিকথা-২: চিরায়ত গল্পের একটু ভিন্ন রূপ আমদের শেখায়-
(জেতার তীব্র ক্ষুধা + সময়নিষ্ঠতা + গতিশীলতা ) এই তিনের সমন্বয় ঘটাতে পারলে জয় অনিবার্য।
নীতিকথা-৩: প্রথম দুটি গল্প এবং তাদের নীতিকথা বা মরাল দুটি ব্যাক্তিকেন্দ্রিক চিন্তাধারায় দীক্ষিত। কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের প্রিয় দেশটা তখনই এগিয়ে যাবে যখন আমাদের মধ্যে উন্মেষ ঘটবে তৃতীয় গল্পটির অন্তরালের ভাববস্তুটি। আমরা যখন পারব আমাদের চিরায়েত ‘আত্মকেন্দ্রিকতার’ খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসতে তখন আমাদের দেশও এগিয়ে যাবে মুক্তি পাবে অনেক রাহু গ্রাস থকে এবং আমাদের পরম আদরের এই দেশটার জন্য এটি খুব দরকার।
Concept: মাহমুদুল হাসান সোহাগ ভাই যিনি ‘উদ্ভাসে’ পড়ার সময় এভাবে চিন্তা করতে শেখাতেন, চিন্তা করতে বলতেন।
তীব্র হতাশায় ভুগতে থাকে বেচারা কচ্ছপ
খরগোশ হবে
এইটা সম্ভবত একটা ভিডিও! আমি ভিডিওটা দেখেছি প্রায় ৮০% মনে পড়ছে
‘তীব্র হতাশায় ভুগতে থাকে বেচারা কচ্ছপ
খরগোশ হবে ‘ মানে কচ্ছপ খরগোশ হতে চেয়েছিল :thinking:
বাপ্পিদা,
কচ্ছপ খরগোশ হতে চায়, এই কথা শুনে,
ভিডিওটা দেখার তীব্র স্বাদ, জেগেছে মনে। 😛
নিজেকে কচ্ছপ বলে স্বীকার করতেও তো কেউ রাজি নয়।
সবই নিজ নিজ দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চায়।
সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ আপু 🙂
সরি ভাইয়া, শারমিন আপুকে লিখতে যাওয়া কমেন্ট দিয়ে ফেলেছি আপনাকে 😛
এটা মানুষের সহজাত একটা প্রবৃত্তি। মানুষ তার নিজের সীমাবদ্ধতাকে কালো পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে, তাইতো নিজেকে কচ্ছপ বলে স্বীকার করতে চায় না।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ 🙂
ভালো লেগেছে 😀
ধন্যবাদ, শারমিন আপু 🙂
“(জেতার তীব্র ক্ষুধা + সময়নিষ্ঠতা + গতিশীলতা ) এই তিনের সমন্বয় ঘটাতে পারলে জয় অনিবার্য”…….. মূল্যবান গুপ্তধন, পেয়ে গেলাম :happy:
চিন্তার চমৎকার কৌশল শিখলাম, গল্পের ভিন্নধর্মী মোরাল শিখলাম…
অনেক ধন্যবাদ হৃদয়….
হাসান ভাইয়া, আপনাকে এত কিছু শিখিয়ে দিলাম 8) ; আপনারও তো উচিৎ আমাকে কিছু দেয়া,তাই না? 😛 এখন প্রশ্ন হতে পারে সেটা কী? :thinking: কী আবার হবে-
ট্রিইইইইইইইই………………………………ইইইট :happy:
পাওনা রইল কিন্তু 🙂
khadder binimoye shikkha kormoshuchi……. Valo valo…
atodin student der khabar deya hoto, akhon dekhi teacher rao khete chay.
😛
ki ar kora, jug avabei bodlay……. 🙁
Treat hobe, no problem, MMC asena?!!!
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া 😀 😛