২০১২ সালের প্রথম ভোর। বুয়েটের প্রাঙ্গনে আমাদের নির্ঘুম রাত কেটেছিল, কিছু দুষ্কৃতিকারীর শাস্তির দাবিতে। সিনিয়র ব্যাচের ঈশান ভাইকে নির্মমভাবে প্রহারের শাস্তি চেয়েছিলাম আমরা। বুয়েটের আঙিনায় সন্ত্রাসীদের ঠাঁই নাই — এ ছিল আমাদের স্লোগান।
প্রায় দেড় বছর পর আরও একবার হলে এসে বুয়েটিয়ানকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠালো বহিরাগতরা। আজ সকাল ১১টার ঘটনা এটি, নজরুল হলে।
এবার প্রশ্ন, আমাদের রিঅ্যাকশন কী হবে তাহলে?
আপনি বলবেন, ওমা! একই তো ঘটনা, একই প্রতিক্রিয়া হওয়াই কি উচিৎ নয়?
তখন আপনাকে বলা হবে, দাঁড়ান দাঁড়ান। এবারে কিন্তু মার্কামারা পলিটিক্সে জড়িত একজন মার খেয়েছে।
তখন আপনি দুবার ভাববেন। ওহ ঘটনা তো তাহলে বহুমুখী-ডাইমেনশন-ওয়ালা। প্রতিবাদ করার আগে তো দুইবার ভাবা উচিৎ।
ফেসবুকজুড়ে নানান মত দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ সহানুভূতি দেখাতে একদম নারাজ, ছেলেটার অতীত রেকর্ড মোটেই ভালো না! কেউ কেউ বলছেন, ভালো তো, ছাত্ররাজনীতিতে জড়িতরা নিজেরা নিজেরা ‘ব্যালেন্স’ করে নিচ্ছে।
ফাঁকতালে এবারের ক্রিমিনালগুলো বাড়িতে বসে পেপারে আর্টিকেল পড়ছে। টিভিতে হেডলাইন দেখছে। ফেসবুকে লাইক মারছে। হো হো করে হাসছে।
এর মাঝেও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এই দুটি ঘটনায় নিজেদের অবস্থানকে সরলরেখায় আনতে পারছেন। সেবার সন্ত্রাসীদের স্পর্ধার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম সকলে, এবারও কি স্পর্ধা সীমা ছাড়িয়ে যায়নি? দিনে দুপুরে হলে ঢুকে মাথা ফাটিয়ে দেয়া? প্রশাসন নামে কিছু একটা থাকার কথা ছিল, নিরাপত্তা নামে কিছু একটা থাকার কথা ছিল, কোথায় গেল সব?
দিনশেষে, হিপোক্রেসি-বোধটা আসলে নিজের কাছে।
ভাই একটা কথা বলি, মানবিকতা ভিতর থেকে আসতে হয়। ও যা করসে সব যদি দেখো তাহলে ঘৃণা না এসে যাবে না। তার তুলনায় ঈশান ভাই ফেরেশতা, যদিও আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। আমার কথা হল, দীপের জন্য নাকি কান্নার কোন মানে নেই। ও সুস্থ হোক, এট্টুকই বলব। আমি “আমি ব্যক্তিগতভাবে দীপকে পছন্দ করি না, কিন্তু এটা মানা আমার পক্ষে সম্ভব না।” এই কথা বলার কারণে ওদের কাছের মানুষ এক মেয়ে, আমার ক্লাসের অন্য সেকশনে পড়ে সে আমাকে উল্টো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলতে চাইসে। আমি জানি না, দীপের প্রতি সাধারণের যা ঘৃণা, সেটা ভুলে কীভাবে অশ্রু বিসর্জন করা যায়। একটা ব্যাপার দেখো, একটা শিবিরকে পিটালে কিন্তু কেউ কিছু বলত না। ফেলো বুয়েটিয়ান (যদিও সে গত ৩ টার্মের রেজিস্ট্রেশন করে নাই) হিসেবেই যদি শুধু ভালবাসতে হয়, তাহলে শিবিরের ছেলেরা কী দোষ করল?
আমরা এই বিতর্ক কিন্তু পুরোপুরি এড়িয়েও একটা কমন অপিনিয়নে আসতে পারি।
এবারের অপরাধীদের বিচার চাই কিনা শুধু সেই প্রশ্নটা।
বিচার চাইলে বিচার দাবি করতে হবে।
সেটা করতে চাই কিনা।
বাকিটুকু ব্যক্তিগত অপিনিয়নই থাক।
আত্ন-দ্বন্দ্ব-ই জন্ম দেয় এসব পরিস্থিতি।
তবে আপনার পয়েন্ট টি যৌক্তিক, যেখানে একটা খারাপ মানুষের নিরাপত্তা থাকেনা, সেখানে একটা ভালো মানুষের নিরাপত্তা তো আরো দূরের ব্যপার- এটাই ভাবার বিষয় 🙁
🙁
– কার মাথা ফাটছে?
– ছাত্রলীগারের।
– ছে ছে ! বালাইচ্চে !!! আমার কুনু সহানুভুতি নাই।
******
– কার কল্লা নামাইছে?
– কমুনিশটের।
– ছে ছে ছে ! বালাইচ্চে, আমার কুনু সহানুভূতি নাইক্কা।
*******
*******
*******
এভাবেই রাজনীতি থেইকে পরে, ভার্সিটি-কলেজ আলাদা হওয়াতেও সহানূভুতি আসবে না।
আর, উপরে একজন শিবিরের কথা টানলেন ? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষনাকারীও কি একই শ্রেণীভুক্ত ?
আমি বলেছি বোঝেন নি মনে হয়। শুধু বুয়েটিয়ান বলে তাকে সহানুভূতি দেখাব, এটা কোন কাজের কথা না। সে মানুষ হিসেবে শুভকামনা পাক যাতে সুস্থ হয়ে ওঠে।
আমি যা বলেছি*
আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম, মাথা অত্যধিক গরম থাকায়। সেটা হল দীপ ছাত্রলীগ করে বলে ওকে পছন্দ করি না এটা কেন ভাবছেন তা বুঝলাম না। আমাদের ব্যাচের যারা আমাকে এবং দীপকে চেনে, তারা সবাই জানে যে ও পচে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার ভালো বন্ধু ছিল, এমনকি আমার বাসার মানুষেরাও ওর নাম জানে অনেক আগে থেকে। আর কোন ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি থাকে, সেটা হল ফ্রন্ট। এখন ওকে অপছন্দ করলেই যদি স্টেরিওটাইপড করে ফেলার চেষ্টা করা হয় তাতে আমার বিন্দুমাত্র এসে যাবে না।
আমরা যখন দীপকে সহানুভূতি জানাব কিনা তা নিয়ে ক্যাচাল করছিলাম, তখন অপরাধীরা হো হো করে হাসছিল।
তাই, পোস্টের শিরোনামটাই বদলে দিলাম।
ফোকাস ঠিক রাখার জন্য।
প্রথমত, ‘সেই ঘটনার একজন অপরাধী’- এই কথাটার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। আমরা ওর হাজারটা দোষ খুঁজে পাব হয়তো, কিন্তু ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি ওকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেছিল এবং আমরাও সে রায় মেনে নিয়েছিলাম।
দ্বিতীয়ত, শুধু একজন ফেলো বুয়েটিয়ান না, পাশাপাশি একজন ফেলো হিউম্যান বিইং হিসেবেই চাই, ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। এ ব্যাপারে যারাই ‘ভাল হইসে’, ‘এমনই তো হওয়ার ছিল’,’আমার কোন দু;খ নাই’-এসব বলছেন, ভেতরে ভেতরে তারাও একেকটা পশু। শুধু সুযোগ পাননা দেখেই প্রতিপক্ষকে জখম করতে পারেন না।
তৃতীয়ত, এই লেখার মূল পয়েন্ট যেটা – what goes around ,comes around -সেটা আসলে আমরা প্রত্যেকেই খুব ভাল করেই জানি। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে এটা খুব ছোট্ট একটা ঘটনা। এমন ঘটতেই থাকবে; টনক কারো নড়লে বহু আগেই নড়ত।
আমার খালি একটাই প্রত্যাশা , বুয়েটের হলগুলোর নিরাপত্তা আরো জোরদার হবে। শুধু বাইরের আক্রমণ নয়, ভেতরের হাঙ্গামাগুলোতেও যেন আর কাউকে বারান্দা দিয়ে ফেলে দেয়া না হয়, হকিস্টিক দিয়ে পেটানো না যায়- সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই ব্যবস্থাটুকু কী বুয়েট করতে পারে না???
অসংখ্য ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। শুধরে নিয়েছি!
আপনার সাথে দুই এবং তিন নম্বর পয়েন্টেও সম্পূর্ণ একমত।
মূল পয়েন্টে ফোকাস জোরদার করার জন্য পোস্টের শিরোনামও বদলে দিলাম।
আগে একটা কথা শুনতাম, নোংরা ছাত্ররাজনীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত কোনো সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি আমাদের দেশে থেকে থাকে তবে তা ছিলো বুয়েট। আর আজ মাত্র চার-পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উত্থানে রীতিমত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে যেন সেই স্বপ্নের বুয়েট। হ্যাঁ, আগেওতো ছাত্রলীগ ছিল, শিবির ছিলো, ছাত্রদল ছিলো, কিন্ত এরকম নজিরবিহীন নিরাপত্তাহীনতাতো ছিলো না হলগুলোতে। প্রশাসন যদি ঠিক না হয়, আর বিচারের নামে ভাওতাবাজি চলে, তবে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে না তার গ্যারান্টি কি?
না। আমরা আমাদের প্রাণের এ প্রতিষ্ঠানটিকে এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। এক দফা এক দাবী- “বুয়েটের আঙ্গিনায় সন্ত্রাসীদের ঠাই নাই”। এ মুহূর্তে বুয়েট থেকে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানাই। এবং বুয়েটে যে কাউকে অন ক্যাম্পাস ও হল ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।
কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
“ফাঁকতালে এবারের ক্রিমিনালগুলো বাড়িতে বসে পেপারে আর্টিকেল পড়ছে। টিভিতে হেডলাইন দেখছে। ফেসবুকে লাইক মারছে। হো হো করে হাসছে।”
আর কিছু বলতে চাই না।
লেখাটা সম্পাদন করে মূল ফোকাসটা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলাম। আগের ভার্সনে ভাষাগত+তথ্যগত ত্রুটির কারণে ফোকাস হচ্ছিল না। হো হো করে হাসানোতে যেন আরও ঘি ঢালা হচ্ছিল :/