আজকের দিনটা শৈবালের জন্য স্পেশাল। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছে ও। অন্য আট দশটা দিন হলে নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হয়ে যেত কিন্তু আজকের দিনটা ভিন্ন। আজ সকালে খুব ভালো করে কড়া একটা শাওয়ার নিয়ে ঘরে বসেই নামাজ পড়ে ফেলল সে। লোপাকে দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেল এত সকাল সকাল? আজকে পৃথা হোস্টেল থেকে ফিরবে, ওকে নিয়ে বাসায় ফিরবে শৈবাল।
“ধুর ! লোপা ! এই লোপা!!, নাহ কই গেল এই মেয়েটা? আজকে যে পৃথাকে রিসিভ করতে স্টেশনে যাবো সে কি ভুলে গেছে? কেমন মা যে নিজের মেয়ের ফেরার দিন ভুলে যায়! পারা যাচ্ছে না আর একে নিয়ে!”, বিরক্ত হচ্ছে শৈবাল। লোপা এত সকালে কোথাও যায় না। আজ কোথায় গেল আবার! বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত লোপার সাথে শৈবালের তেমন কোন ঝগড়া হয় নি। খুব ছোট খাটো তর্ক হয়ত হয়েছে কিন্তু কখনই তারা একজন আরেকজনের সাথে খুব উঁচু স্বরে কথা বলে নি। পৃথা যখন খুব ছোট তখনই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেয়ে যাতে কখনই বাবা-মাকে ঝগড়া করতে না দেখে, পরে যদি আবার ভালোবাসা থেকে বিশ্বাসই উঠে যায়! “কিন্তু আজ মনে হচ্ছে লোপাকে একটা কড়া ঝাড়িই দিতে হবে”,মনে মনে ভাবে শৈবাল। আরও মিনিট দশেক অপেক্ষা করে শৈবাল। “নাহ, লোপা নেই বাসায়। আসারও নাম নেই। নাকি সে আবার তাকে ফেলেই পৃথাকে আনতে চলে গেছে!”
“রফিক, গাড়ি বের কর। স্টেশন যাবো। কুইক।”
লোপা বসে আছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। একটু পরই হয়ত শৈবাল এসে পরবে। ওর পৃথার কথা মনে হচ্ছে। কতদিন দেখেনা মেয়েটাকে সে!
শৈবাল তখন সবে মাত্র তার কোম্পানি স্টার্ট করেছে যখন তার সাথে লোপার বিয়ে হল। বিয়ের দুই বছর পর, শৈবালের কোম্পানি তখন খুব চরাই উৎরাই এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল আর মাঝে লোপার কোল জুড়ে এল ছোট্ট ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান। দুজন মিলেই তার নাম রাখল পৃথা। পৃথা বড় হতে থাকল। ছোট্ট বেলার একদম শান্ত পৃথা যতই বড় হয় আর দুষ্ট হতে থাকে। আস্তে আস্তে কিভাবে জানি ছোট্ট মেয়েটা বড় হয়ে যায় টেরও পায় না লোপা। একদিন পৃথার ঘরে ঢুকে মেয়েকে ডুকরে কাঁদতে দেখে ভয় পেয়ে যায় লোপা। “কি হয়েছে মেয়ের?” মেয়েকে জিজ্ঞাস করলে মেয়ে চুপ করে থাকে। একদিন বলে দেয়, “আম্মু পাড়ার কতগুলো ছেলে আমাকে স্কুলের সামনে অনেক বিরক্ত করে। খুব বাজে বাজে কথাও বলে। আবার বলে এসব আব্বুকে বললে আব্বু আর আমাকে দুজনকেই মেরে ফেলবে। আমি ভয় পাচ্ছি আম্মু।” সেদিন থেকে লোপাই মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যায়, নিয়ে আসে। বাসায় কাজ থাকত না লোপার তাই মেয়ের সাথে যেতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু শৈবালকে জানায় নি সে কিছুই, পরে আবার কি না কি করে বসে। যে মেয়ে পাগল বাবা, সামান্য জিনিসকে তাল বানিয়ে ফেলত! কিন্তু আজ লোপার মনে হয় কত বড় ভুল করেছিল সে . . .
“লোপা”
“ও চলে এসেছ!”
“তুমি কি পাগল নাকি? কি ভেবেছিলা মেয়েকে নিতে আমার আগে পৌছে যাবা? দেখছ আমি ঠিক টাইম মত চলে আসছি।”
“চল শৈবাল। আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না এখানে। একটু পর ভীড় হবে। আমাদেরকে এখনি আজিমপুরের দিকে রওনা দিতে হবে।”
শৈবাল কিছু বলে না। তার চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে। লোপার হাত ধরে গাড়ির দিকে পা বাড়ায় সে। পৃথাকে দেখতে যাবে আজ। মেয়ে তার শুয়ে আছে, চলে গেছে চিরকালের জন্য। কিন্তু আজও মনে হয় এই বুঝি চলে আসবে সে, কোন এক ট্রেন ধরে চলে আসবে সে, তাই প্রতি বছর পৃথার মৃত্যুর দিনটাতে স্টেশনে চলে আসে সে। আর লোপা তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায় পৃথার কাছে, যেখানে আসলেই পৃথা শুয়ে আছে, চিরকালের জন্য।
পুনশ্চঃ একদিন পৃথার সাথে স্কুলে যেতে পারে নি লোপা। ঐ দিন পাড়ার সেই বখাটে ছেলেগুলোর কাছে লাঞ্ছিত হয় পৃথা। দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায় পৃথা। সেই ছেলেগুলো তখন আর আশেপাশে ছিল না। ঢাকার রাস্তার মাঝে পরে ছিল শৈবাল-লোপার আদরের সন্তান, ওদের পৃথা।
পড়ে ভালো লাগলো..নিষ্ঠুর বাস্তবতা 🙁
গল্পটা সুন্দর
নির্মম বাস্তবতা
কিন্তু আবারও সেই মন খারাপ করা গল্প :haturi: :haturi: