বকুলকথা

বকুল তাকিয়ে আছে বৃত্তটার দিকে। দড়ির একটা বৃত্ত। অপর প্রান্ত বাঁধা সিলিং ফ্যানের সাথে। ধীর পায়ে বকুল এগিয়ে যাচ্ছে দড়ির বৃত্তটার দিকে। পেছনের দরজার তীব্র করাঘাত তার কানে ঢুকছে না।

*  *  *

আয়নার দিকে তাকালেই বকুলের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আরেকটু ফর্সা হলেই তো অন্তত মা তাকে বলতে পারতো না, “তুই শ্যামলা হলেই তো এতোদিনে তোর বিয়ে হয়ে যেত।”

একদিন সকালে বকুলের বাবা যখন তাকে ডেকে একটা প্যাকেট দিলেন, তখন বকুলের খুশি দেখে কে!! অভাবের সংসারে উপহার তো পায়না আর। কিন্তু, প্যাকেট খুলেই বকুলের মনে হল কেউ তার হৃদয়টা চিড়ে ফেলেছে। ভেতরে ফেয়ারনেস ক্রীমের একটা প্যাকেট। অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকাতেই বকুলকে বললেন, “সামনের মাসে তোকে দেখতে আসবে। এই কয়টা দিন ভালোমতো ব্যবহার করিস।” বাবাকে চোখের পানি দেখাতে চায়নি বলে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এল বকুল।

তার স্বপ্নের মতো কখনো কি কোন ছেলে এসে তাকে বলতে পারে না, “তোমার চোখ দু’টি অনেক সুন্দর”?

 

বকুলকে দেখতে আসার আর সপ্তাহখানেক বাকি। কি হবে দেখতে এসে? কতগুলো মানুষ আসবে, খাবে, তারপর চলে যাবে। কেউ বলবে, “আমরা পরে জানাবো”। আর যাদের ভদ্রতা জ্ঞানটুকুও নেই তারা বলবে, “আমরা তো ফর্সা মেয়ে খুজছি”।

 

এখনো বকুলের বিশ্বাস হচ্ছে না, তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলেটার নাম রাশেদ। অবশ্য রাশেদ আসেনি তাকে দেখতে। তার বাবা-মা এসেছিলেন। তাদের পছন্দই নাকি ছেলের পছন্দ!

 

বিয়ের দিন দুপুরে অদ্ভূত এক কথা শুনলো বকুল! ছেলের বাবা নাকি তিন লাখ টাকা চেয়েছেন বিয়েতে। বিয়ের দিন তাই রাশেদ আসার অনেক আগেই টাকা নিতে এসেছেন তিনি। বকুলের বাবা লোকটার হাত-পা ধরে কত অনুনয় করলেন! কিন্তু, গ্রামের সব জমি বিক্রি করেও তিন লাখ টাকা না হওয়ায় রাশেদের বাবা বলে গেলেন, “টাকা না দিতে পারলে কে নেবে আপনার এই মেয়ে।”

চুপচাপ কথাগুলো শুনে নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করলো বকুল। পেছনে দৌড়ে এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলেন তার মা।

*  *  *

 

বকুল তাকিয়ে আছে বৃত্তটার দিকে। দড়ির একটা বৃত্ত। অপর প্রান্ত বাঁধা সিলিং ফ্যানের সাথে। ধীর পায়ে বকুল এগিয়ে যাচ্ছে দড়ির বৃত্তটার দিকে। পেছনের দরজার তীব্র করাঘাত তার কানে ঢুকছে না।

*  *  *

রাশেদ একটা সিএনজি-তে করে যাচ্ছে। ড্রাইভারকে বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালাতে। টাকার কথাটা আজকেই জেনেছে সে। বাবার প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। বকুলের ছবি মাত্র দুই দিন আগে দেখেছে রাশেদ। এখন বকুলের বাসায় যাচ্ছে সে। বকুলের সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, “তুমি কি জানো তোমার চোখ দু’টি অদ্ভূত সুন্দর। আমি কি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে সারাটি জীবন পার করতে পারি?”

ছুটছে সিএনজি………বারবার ঘড়ি দেখছে রাশেদ……

 

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

20 Responses to বকুলকথা

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    চমৎকার একটা প্লট। গল্পটাও ভালো লাগছে। (আমার মনে হইছে আরেকটু সময় দেয়া যাইত! গল্পটা অনেক ভালো হইতে পারত)

    রাশেদ এর মত ছেলেদের প্রতি শ্রদ্ধা! আমি একটা গল্প লিখছিলাম আলো এবং অন্ধকার এর গল্প। এই থিমটা ছিলো।

    চলুক :dhisya:

  2. শিমন বলেছেনঃ

    শাবাশ বেটা! চরম !!!

    (সাবধানে থাক। স্কুলের পোলাপানের বিটলামি নিয়ে ব্লগ লিখতেসি 😀 )

  3. কিনাদি বলেছেনঃ

    রাশেদ দ্রুত পৌঁছে যাক। 🙂

  4. ফিনিক্স বলেছেনঃ

    এদেশে এমন হাজারো রাশেদ ঘরে ঘরে জন্মাক।

    বাইরের কথাঃ
    তুই খুব তাড়াহুড়া করিস। একটু সময় নিয়ে ঘটনা সাজালে আরো ভাল হত।

  5. নিলয় বলেছেনঃ

    আমিও বলব, ‘এদেশে এমন হাজারো রাশেদ ঘরে ঘরে জন্মাক’ 🙂

    আসাধারণ লেগেছে, ভাইয়া 😀

  6. ছোট্ট দেখেই রুদ্ধশ্বাস ভাবটা টের পেয়েছি! ভালো লাগলো! চালিয়ে যা!

    :dhisya: :dhisya: :dhisya: :dhisya:

  7. ম্যানীফোল্ড বলেছেনঃ

    পৃথিবীটা আমাকে অনেকদূর এনেছে… তার প্রতিদান না দিয়ে এই তুচ্ছ কারণেই নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিবো?

    জীবনটা কি এতই নগন্য মূল্যের?

    শর্ত যদি এমনই হয় ফর্সা না হলে বিয়ে হবে না, যৌতুক না দিলে বিয়ে হবে না, তো করবো না বিয়ে…

    দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চাই…

  8. মাসরুর বলেছেনঃ

    কি ভয়াবহ সুন্দর একটা লেখা!!!

    মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে, বর্ণপ্রথার আমরা কত বিষোদ্গার করি, কিন্তু নিজেরা যে কত বর্ণবৈষম্য করে চলেছি, তার কি প্রায়শ্চিত্ত হবে??

  9. অনাবিল বলেছেনঃ

    🙁 🙁 🙁
    আমরা মুখে অনেক কিছু বলি, কিন্তু কাজের সময়…………… 🙁

    দারূণ লেখনী!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।