পুরনো চাল কি ভাতে বাড়ে না কমে… বুঝতে পারছি না

মাত্র কয়দিন বাদেই পরীক্ষা, সবার পড়তে পড়তে জান খারাপ অবস্থা। আমিও চেষ্টা করলাম কয়দিন একটু বইয়ের পাতা উল্টায়ে দেখতে ভেতরে কি কি জিনিস লুকায়ে আছে।

 

জানি, ফেইসবুকে ঢুকলেই নানারকম কাহিনি দেখে পড়াশুনার পাট শিকেয় উঠবে। রীতিমত ঘোষণাই দিলাম স্ট্যাটাসে, ফেইসবুকে আমি নাই।

 

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আর একবিংশ শতাব্দীর পোলাপান স্বর্গে গেলে ফেইসবুক নিয়ে যাবে…

 

কয়েকদিন আগে একটা পোস্ট দেখে খুব রক্ত গরম হল। এক বন্ধুর স্ট্যাটাস। অনেকদিন ধরেই সমস্যাসঙ্কুল বাংলাদেশের এত হাজার রকম সমস্যায় “রুমানা মঞ্জুর” নামের মহিলাটির কথা সবাই ভুলেই গেছে। সেই বন্ধুটি হঠাৎ তার ‘অবস্থা নবায়নে’ এই মানুষটির কথা মনে করিয়ে দিল।

 

বাঙ্গালী হল হুজুগে মাতাল, বেশি লাফায়। একটা ঘটনা ঘটে, কিছুদিন একটু হৈচৈ হয়। তারপর যেই লাউ সেই কদু।

 

আমাদের অনেক ‘সৌভাগ্য’, এত এত ঘটনা ঘটে চারপাশে, আমরা লেখকেরা সেসব নিয়ে লিখে লিখে বাহবা কুড়াই। শেয়ারের পর শেয়ার যায় লেখা, ‘তারকা ব্লগারের’ খ্যাতি উপভোগ করি।

 

মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

 

রুমানা ম্যামের ঘটনাটা যে সবাই ভাল চোখে নেয় নি,সেই স্ট্যাটাস পড়ে বুঝতে পারলাম। এক নিতান্তই নাদান বালক সেথায় কমেন্ট করে পোস্টের অলঙ্কার বাড়িয়েছেন।

 

কি ছিল তাতে?

 

“একহাতে তালি বাজে না। রুমানা ম্যাম নির্দোষ ছিলেন না।”

 

আমি মাঝে মাঝে এমন কিছু পড়লে হারিয়ে যাই। কই যে হারাই, নিজেই বুঝি না।

 

রুমানা ম্যাম এর দোষ নিয়ে পর্যালোচনা করার আগে মানুষগুলা একবারও ভেবে দেখে না, একজন মানুষ তার সবচেয়ে বড় সম্পদ চোখদুটি হারিয়েছেন। মেধাবী এই শিক্ষিকার দেশটাকে অনেক কিছু দেয়ার ছিল। এখনো হয়তো সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় নি, কিন্তু এই রঙ ঝলমলে পৃথিবীটার আলো দেখা থেকে দুটি চোখকে বঞ্চিত করা হল।

 

কালকের পত্রিকায় পড়েছি। হয়তোবা তাঁর চোখের আলো  কেড়ে নেয়া হয়েছে, কিন্তু মনের আলোতে ঠিকই তিনি আলোকিত পৃথিবীটাকে দেখতে পান।মনের রঙই আসল। মনের রঙেই শিল্পীরা ছবি আঁকেন, নাহয় তো সবাই শিল্পী হয়ে যেত!

 

যে চক্রান্ত করে রুমানা ম্যামের চোখ অন্ধ করে দেয়া হল, সেই চক্রান্ত সফল হয়নি। শারীরিকভাবে একটা মানুষকে থামিয়ে দেয়া যায় ঠিক, কিন্তু মানসিক দিক থেকে?আল্লাহ সেই ক্ষমতা কাউকেই দেন নি।

 

পাষণ্ড হাসানের বিচার কোন পর্যায়ে আছে, জানিনা। শুনেছি, রুমানা ম্যামের কাছে তার আদরের মেয়ে আনুশাহকে যেতে দেয়া হচ্ছে না, তাও ওই হাসান সাঈদের আপিলের প্রেক্ষিতে।

 

অনেক কিছুই দেখার বাকি আছে এখনো। এখন তো মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। তাই আমরা পাই কানিজ আলমাসের মত “মহীয়সী” নারীকে, আমাদের ছবি তুলে ব্যবসা বাড়াতে দেই।

 

শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলি… আর লিখে যাই।

 

হতাশ আমি।

 

আরে ধুর……… আর লিখেই বা কি হবে!

 

(রুমানা ম্যাম আর আনুশাহ… )

এই ছবিটা আমার খুব প্রিয়। দেখলেই মনে হয় স্বপ্নের কথা বলছে ছবিটা। এক মা তাঁর মেয়েকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন… আকাশ ছোঁয়ার।

সবসময় এরকম ছবি দেখতে চাই। নারী তাঁর সন্তানকে নিয়ে হাসিতে ভরিয়ে তুলছেন চারপাশ। চাওয়াটা কি খুব বড়?

 

 

 

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

10 Responses to পুরনো চাল কি ভাতে বাড়ে না কমে… বুঝতে পারছি না

  1. সামিরা বলেছেনঃ

    এক হাতে তালি বাজে না টাইপ কথা যারা বলে, তাদের প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে ঠিক কোন্‌ রকম ‘দোষের’ শাস্তি হিসেবে রুমানা মঞ্জুরের মত অবস্থা হওয়া উচিত অপরাধীর?

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    🙁

    নেট এর কারণে ঢুকতে পারছিলাম না, সরবে 🙁

    ভালো কিছু কথা বললেন আপু।
    লিখলে কেউ কেউ হয়ত বদলাবে! সেটাই তো আমাদের পাওয়া হবে!

    এরা কীভাবে বড় হয়েছিলো? কী পড়ে? কী দেখে? কী শুনে যে এমন নোংরা কমেন্ট করতে পারে?

    আমাদের হয়ত এই জিনিসগুলাই ভাবতে হবে। গালাগাল/নিন্দায় কাজ হবে না।

    রুমানা মঞ্জুরকে যে আমরা ভুলে গেছি আসলেই সেটা সত্যি! সরব এর প্রথম পোস্ট ছিল পরিমল নিয়ে! তার শিরোনামেই এটা আছে!
    http://shorob.com/?p=70

    • নীল রঙ পরী বলেছেনঃ

      ভাইয়া, আপনার তো নেট দেখি প্রায় ধোঁকা দিয়ে বসে!!

      আরও অনেকগুলো মন্তব্য ছিল সেখানে, কিছু এত খারাপ, মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছিল।

      থাক, সেসব কথা আর নাই বলি।

  3. স্বপ্ন বিলাস বলেছেনঃ

    কয়দিন ধরে অনেককে জিজ্ঞেস করছি রুমানা মঞ্জুরের অবস্থার কথা। কেউ কিছু বলতে পারে না!!!
    কবে যে মানুষ একটু নিরপেক্ষভাবে এবং সুস্থ মাথায় চিন্তা করতে পারবে?!!!

    • নীল রঙ পরী বলেছেনঃ

      রুমানা মঞ্জুর কানাডায় চলে গেছেন।
      চিকিৎসা চলছে তাঁর। তবে ভাল হওয়ার সুযোগ নাই।

      চোখ দুটো পুরোপুরিই গেছে।

      কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন শুনলাম। আমি অবশ্য বেশি নিশ্চিত না, তাই লেখায় দেই নি।

  4. অনাবিল বলেছেনঃ

    “আমি মাঝে মাঝে এমন কিছু পড়লে হারিয়ে যাই। কই যে হারাই, নিজেই বুঝি না।”

    ভালো লাগে না কিছু……….. 🙁

  5. প্রজ্ঞা বলেছেনঃ

    এই ছবিটা যতবারই দেখি, চোখ ভিজে যায় ততবারই!

    একজন অপরাধী দিব্যালোকে আরেকজনের জীবন নষ্ট করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর এক দল মানুষ তাকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে!
    কি করে পারে এরা, আপু? কি করে পারে?

    • নীল রঙ পরী বলেছেনঃ

      আমরা যা চিন্তাও করতে পারি না,এরা তা করে দেখাও।
      মানুষ যাই হোক, প্রথমে সে প্রাণী।

      তাই কিছু কিছু মানুষ কেবল আদলটাই পেয়েছে মানুষের, বাকিসবটুকু জানোয়ারের।

      আসলে, জানোয়ার বললেও কম বলা হয়……

  6. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    আমি কোন এক পত্রিকায় পড়েছিলাম কিংবা ব্লগেই পরেছি উনি বেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন।

  7. বাবুনি সুপ্তি বলেছেনঃ

    ব্লেইল হবে*

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।