সাভার ট্রাজেডি এবং হুমকিতে অর্থনীতি

সাভারে রানা প্লাজা ভেঙে পড়ায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩৫০।

এ দুর্ঘটনার পরে সরকারের পক্ষ থেকে অদ্ভুত তথ্য দেয়া হয়েছে, ঘটনাস্থলে থাকলেও ভবন মালিক পালিয়ে যেতে পেরেছে এবং গার্মেন্টস মালিকেরাও চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭০% অধিকার করে আছে যে খাত, তাকে নিয়ে সরকার এবং BGMEA এর হেলাফেলা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পোশাক শিল্পকে?

পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খুবই গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পেয়েছে এই খবর। সব দেশের মানুষের কাছে প্রত্যাশা মতোই প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে এই ঘটনাই। সবাই-ই বলেছেন, তারা বেশি দামে পোশাক পরতে চান, তবুও এই মৃত্যুফাঁদ বন্ধ করা হোক। পোশাক শিল্প এর উপর ধেয়ে আসা এমন ঝড় থামানোর মতো উদ্যোগ তো দেখতে পাচ্ছি না।

বিভিন্ন বিদেশী মাধ্যমে সাভার ট্রাজেডি:

“Some Bangladeshi women have now died as they sat in a collapsing building making cheap clothes for British shops. Some of their children are also dead. Might that have anything to do with the £1.50 T-shirt worn by your child?” –টেলিগ্রাফ

“Back in 2005, a similar building collapsed in the same town, leaving 64 garments workers dead. The factory owner was arrested but did not serve any time in prison. Since then, there have been fires, stampedes and other incidents at various garment factories, causing hundreds of deaths.  Most recently, more than 100 workers perished in a fire at Tazreen Fashions in Ashulia, a township close to Dhaka where hundreds of factories are located. In most of the incidents, the deaths were preventable. Often, workers could not escape because exits were locked. ”-বিবিসি

“The incident is the latest in a series of industrial accidents in Bangladesh. In November, a fire at the Tazreen Fashions Limited factory killed 111 workers. An inquiry blamed the factory management for criminal negligence.” -গার্ডিয়ান

“Bangladeshi building regulations were not robust enough for construction in an earthquake zone and were, in any case, frequently ignored.”-এবিসি নিউজ

“Bangladesh is the world’s second-leading garment exporter, trailing only China, but the industry has been plagued by concerns over safety and angry protests over rock-bottom wages.”- নিউ ইয়র্ক টাইমস

 

সব আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে:

১. বাংলাদেশ থেকে খুবই কম দামে পোশাক রপ্তানি করা হয়।

২. সেই কম দামের জন্য শ্রমিকদের কাজ করতে হয় অমানবিক অবস্থার মধ্যে।

৩. জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই এখানে।

৪. বিভিন্ন ঘটনায় গত কয়েক বছরে এমন দুর্ঘটনায় মারা গেছে আরও অনেকে।

৫. বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের ভবনগুলো অনিরাপদ এবং শ্রমিকদের অনেক সময় দুর্ঘটনার মুহূর্তেও বের হতে দেয়া হয় না।

৬. কম দামে পোশাক কেনার জন্য বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করেন যারা, সবার হাতেই এ শ্রমিকদের রক্ত লেগে আছে।

৭. এ ব্যাপারে  সরকার এবং পোশাক শিল্প মালিক সমিতি খুবই অসচেতন।

একই সাথে পৃথিবীব্যাপী মানুষ কিন্তু একটা কথাই বলছে: কম দামে পোশাক চাই না। এই মৃত্যুকুপ বন্ধ করো।

'মৃত্যুফাঁদ' থেকে বাংলাদেশি পোশাককর্মীদের রক্ষার দাবিতে ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্যাপ ভবনের সামনে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক মাধ্যমে এমন প্রচার(!) পাওয়ার পরেও কিন্তু সরকার এবং BGMEA থেকে কিন্তু এ শিল্পকে বাঁচানোর মতো কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। পোশাক শিল্প কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই শিল্পকে ঠেলে দিয়েছে হুমকির মুখে। তার উপর এমন দুর্ঘটনার পরে যে কোন সময় প্রচণ্ড হুমকিতে পড়তে পারে এই শিল্প।

লন্ডনের সর্ববৃহত শপিংমল প্রাইমার্কের সামনে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করছেন একজন ব্রিটিশ।

করার আছে অনেক কিছু:

এখনও হয়তো সুযোগ আছে। তবে পদক্ষেপ নিতে হবে অত্যন্ত দ্রুত:

১. সরকার ও BGMEA এর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের ঘোষণা আসতে হবে।

২ . বিভিন্ন দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩. শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. গার্মেন্টস ভবনগুলো পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

৫. এই সবগুলো পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মাধ্যমে ঠিকমতো প্রচারের ব্যবস্থা করে ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।

সময় কিন্তু ঠিক এখনই। এর একটুও পরে নয়। এখনই যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তবে এই ঝড় সামলাতে পারবে না বাংলাদেশের অর্থনীতি। সময় কিন্তু এখনই…

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে উদ্যোগ, চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to সাভার ট্রাজেডি এবং হুমকিতে অর্থনীতি

  1. সৌমি বলেছেনঃ

    ‘They died so you can wear cheap Cloths’

    সময় কিন্তু ঠিক এখনই 🙁

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    Some retailers are getting worried about their reputation

    (http://www.abc.net.au/news/2013-04-27/police-arrest-owners-of-collapsed-factories/4655092)

    গার্মেন্টস মালিকরাই এই শিল্প ধ্বংস করবে!

    উন্নত বিশ্বের কোম্পানিরা কখনই মানবাধিকার দেখে না তারা রেপুটেশন দেখে। এরা নারিদের অধিকার দেখবে না দেখবে নিজেদের মানইজ্জত। এবং এরা আসলে বাংলাদেশ থেকে নিজেদের গুটায় নিবে!

    কয়েকটা মালিককে ফাঁসি দিলেই (প্রমাণ অনুযায়ী আইন অনুযায়ী) অবস্থা অনেক উন্নত হইত

  3. সামিরা বলেছেনঃ

    আপনার আরেকটা ট্রেডমার্ক সহজ-সরল গোছানো লেখা। যাদের খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস কম তাদের জন্য এই লেখাটাও রেকমেন্ডেড!

    আইনের শাসনের দেখা যে আমরা কবে/কীভাবে পাবো, সেটাই ভাবছি।

  4. শরিফ চয়ন বলেছেনঃ

    শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর চাপে বাজার অনেকটাই বাংলাদেশের বাইরে চলে যেতে পারে, বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের যে সুবিধাটা এখন পাচ্ছি সেটা হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।

    জানি না কী হবে, একবারও তো বিচার হয়না। বিচার না হলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত নাহলে এসব অনিয়ম থেকে দূরে থাকা মুশকিল।

  5. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    আগে নাকি বিদেশে বাংলাদেশের রেপুটেশনই ছিল ঝড়, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগের দেশ হিসেবে। এখন সেটাতে যুক্ত হবে সাভার ট্র্যাজেডির মত ঘটনাগুলো। শ্রমিকদের মানুষ না ভেবে মেশিন ভাবে শিল্প মালিকরা। তবুও মেশিনগুলোর প্রতি মায়া দয়া থাকতো।

    কিন্তু, এত সস্তা মেশিন। কোন সমস্যাই না…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।