গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজার ভেঙে পড়ার খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো বাংলাদেশ। দেশ জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাব কাটিয়ে উঠে নিজেদের করণীয় ঠিক করে নেয় সাধারণ মানুষ। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তৎক্ষণাৎ উদ্ধার কাজ শুরু করেন নিজেদের সীমিত সামর্থ নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দ্রুতই সক্রিয় হয়ে উঠে। ব্যক্তি উদ্যোগ ও সংগঠনের উদ্যোগে শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা আর জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগান দেয়ার কাজ। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বৃ্দ্ধি পেতে থাকে ঢাকা থেকে সম্ভব সবরকম সহায়তা। স্বেচ্ছাসবীদের ত্রাণ বোঝাইকৃত সাভারগামী যানবাহনের সংখ্যাও ছিল দেখার মত। আহতদের জন্য রক্ত দেয়ার তাৎক্ষণিক আহবানে গণজাগরণ মঞ্চের সামনে তৈরী হয় হাজারো মানুষের লাইন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বাঁধন’ ও ঢামেকের ‘সন্ধানী’তে জমা হতে থাকে ব্যাগের পর ব্যাগ রক্ত। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস সহ অন্যান্য সরকারী সংস্থাগুলো। কিন্তু এতকিছুর মাঝেও ভাঙা বিল্ডিংয়ের নীচ থেকে বেরিয়ে আসা লাশের মিছিল যেন থামছিল না। কিন্তু লাশের মিছিল দেখে শুধু আতঙ্কিত হয়ে কেউ বসে থাকে নি, বরং সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় গতিশীল হয় আটকে পড়া জীবিতদের জন্য উদ্ধার কার্যক্রম। অগণিত মানুষের বিরতিহীন অক্লান্ত পরিশ্রমে সাভারে রচিত হয় মানবিকতার এক নতুন ইতিহাস।
এই নারকীয় শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের (হ্যাঁ হত্যাকাণ্ড, দুর্যোগ নয়!!) ঘটনায় লড়ে গেছেন সকল শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ। এক বোতল পানি কিনে দেয়া লোকটি থেকে শুরু করে উদ্ধারকার্যে রাতদিন খেটে যাওয়া সবাই, কারও ভূমিকাই নগণ্য নয়। তবু কিছু মানুষের কথা আলাদা করে না বললেই নয়, যারা জীবনবাজি রেখে লড়ে গেছেন এই ক’টা দিন। এই ক’জন অকুতোভয় মানুষের নাম বারবার উঠে এসেছে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে, পত্রিকার পাতায়। আসুন সেই অসম সাহসী মানুষগুলোর সম্পর্কে একটু জেনে নিই।
১. আবু বকর হাজরা পিরোজপুর সরকারী কলেজের বিবিএ এর ছাত্র (১নং ছবি)। ২৩ বছর বয়সী এই যুবক টিভিতে সাভারের দৃশ্য দেখে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে ছুটে এসেছিলেন। সম্বল ছিল ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় বাগেরহাটে উদ্ধারকারী একটি দলের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা । ভেঙ্গে পড়া বিল্ডিং এর ভেতর একজন মহিলা কর্মীর রক্তক্ষরণ বন্ধে যখন কোন ডাক্তার বা ফায়ার সার্ভিসের লোক প্রবেশ করতে সাহস করছিলেন না, এই যুবক ছোট্ট একটা গর্ত দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ঐ মহিলার রক্তক্ষরণ বন্ধ করেন এবং তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
২. উদোম গায়ে যে মানুষটির ছবি দেখছেন তার নাম বাবু (২নং ছবি)। একাই উদ্ধার করেছেন ত্রিশ জনেরও বেশি মানুষকে। জীবনের পরোয়া না করে ভাঙ্গা বিল্ডিং এর ইট সরিয়ে সরিয়ে ভিতরের বিভিন্ন তলা থেকে বের করে এনেছেন জীবিত মানুষদের। মানুষ বাঁচানোর নেশা যেন পেয়ে বসেছিল তাঁকে। তবে মাঝে একবার রক্ত ও লাশের গন্ধে বমি করে দুর্বল হয়ে পড়লেও একটুও কমেনি তার মনোবল। আবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উদ্ধার কাজে।
৩. ব্লগার আরিফ জেবতিক তার এক ফেসবুক নোটে শেয়ার করেছেন ভৈরব থেকে আসা দুইজন রাজমিস্ত্রির কথা। একজন তরুণ, আরেক জন প্রৌঢ়। পুরোনো ভবন ভেঙ্গে বিক্রি করা দলে কাজ করেন তারা। সাভারের খবর শুনে বিবেকের দায়ে ভৈরব থেকে এসেছিলেন উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে। এইভাবে ছুটে আসার কারণ বলতে গিয়ে প্রৌঢ়জন বলেন- ’২১ বচ্ছর বিল্ডিং ভাঙ্গার কাম করি। এই বিপদে আমি না থাকলে কে থাকব কন?’ এই দুইজন মানুষ নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার জন্য সুড়ঙ্গ পথ তৈরিতে।
৪. স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান শাহ আলম বুধবার সকালে যোগ দিয়েছিলেন উদ্ধার কাজে(৩নং ছবি)। জীবিত উদ্ধার করেছেন ১২জনকে। বের করে এনেছেন ২৩ জনের মৃতদেহ। সঙ্গে কোন কাটার না থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুতের তারের সাথে জড়িয়ে যাওয়া বেশ কিছু মানুষকে তিনি উদ্ধার করেছেন দাঁত দিয়ে তার কেটে!! বিদ্যুৎ না থাকা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব সত্ত্বেও এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ করেননি উদ্ধার তৎপরতা।
এইভাবে শুধুমাত্র বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আসা হাজারো স্বেচ্ছাসেবক নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জীবিত উদ্ধার করা গেছে ২৪৪৩ জনেরও বেশি মানুষকে।
৫. রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর থেকেই আহতদের এক নাগাড়ে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে সাভারের নামযশবিহীন একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই বিপর্যয়ে দেশের নামীদামী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল যা করে নি, এক এনাম মেডিকেলে কলেজের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী সকলের অক্লান্ত খাটুনি তার অনেকটাই পূর্ণ করে দিয়েছে। এনাম মেডিকেল থেকে সব ধরনের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, ওষুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। তাদের সহযোগিতায় তৎক্ষণাৎ এগিয়ে আসে ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস। হাসপাতালে স্টক ফুরিয়ে গেলে জানানো মাত্রই সাধারণ মানুষের অনুদানে আবারও কিনে দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও অন্যান্য সামগ্রী। আর্ত মানবতার সেবার যে নজির এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করেছে তা এদেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এছাড়া কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতাল আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেছে। আহত রোগীদের পরিবহনে এগিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিস, এনাম মেডিকেল, আদ -দ্বীন, মারকাজুল ইসলাম, সীমা মেডিকেল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। আটকে পড়াদের জন্য দরকার পড়েছিল প্রচুর অক্সিজেনের। ওষুধ বিক্রি প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মা অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম কমিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। স্বেচ্ছাসেবকদের অনেকেই ক্রমাগত পরিশ্রম, নিদ্রাহীনতা, সারি সারি লাশের উপস্থিতি, দমবন্ধ বাতাসে শ্বাস নিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের ফিল্ড ক্লিনিক তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের অসুস্থ স্বেচ্ছাসেবককে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন গণজাগরণমঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার। সাভারের এই জাতীয় বিপর্যয় সব বিরোধ ভুলে কেবলমাত্র মানুষ পরিচয়ে সকলের এক কাতারে দাঁড়াবার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
৬. সাভারে বিপদগ্রস্তদের সহায়তায় ফান্ড কালেকশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর তালিকা ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবেই। ফলে যে যেখানে আছে, যা আছে তাই নিয়েই দ্রুত সাহায্য পৌঁছে দিতে পিছপা হয়নি। সাভারের সর্বশেষ অবস্থা জানার মাধ্যম হিসেবেও ফেসবুক বেশ কাজে লেগেছে। এই জায়গাটুকুতে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ফায়দা লোটার চেষ্টা করলেও সচেতন ফেসবুকারদের কারণে সেটি ব্যর্থ হয়েছে। অভিনেতা ইরেশ যাকের তার যাবতীয় কাজ ফেলে সাভারে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় দিন-রাত ব্যস্ত ছিলেন। যখন যা কিছু প্রয়োজন হয়েছে ফেইসবুকে জানিয়েছেন এবং দাতাদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করে সাভারে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন নিজ উদ্যোগে। প্রচারসর্বস্ব প্রোগামে না গিয়ে এই সকল কাজে ব্যস্ত থেকে ইরেশ নিজকে নতুন করে চিনিয়েছেন। ব্লগার আরিফ জেবতিক, আরিফ আর হোসাইন, কারভী রাখসান্দ সহ অনেকেই সাভারের ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং ক্রমাগত সহযোগিতা করে গেছেন। ‘নির্মাণ ব্লগ’ সাভারের ভবন-ধস ও উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে লাইভ ব্লগিং করে গেছে। ‘সরব’ সক্রিয় ছিল প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীর তালিকা প্রদান, সেগুলোর প্রাপ্তি স্থান এবং সাহায্য পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন সাহায্যকারী গ্রুপ ও প্রতিষ্টানের সাথে যোগাযোগের উপায় জানান দিতে। মানুষের কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সক্রিয় ভূমিকা হিসেবে ফেসবুক ও ব্লগসমূহ অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
৭. সাভারের দুর্ঘটনার পর বরাবরের মতই এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে ফান্ড কালেকশন করে জরুরি সহায়তা, খাদ্য,পানীয়,ঔষধ সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ছুটে গিয়েছে সাভারে। যোগ দিয়েছে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে। বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও গিয়েছে জরুরী সাহায্য। ত্রাণসামগ্রী এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও।
ভাবছেন এরাই শুধু ছিল সাভারে? ভুল ভেবেছেন। যে কিশোর স্কুল ফাঁকি দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের পানি খাইয়েছিল তার কথা কেউ বলেনি। মোবাইল নিয়ে যে দু’জন দাড়িয়ে ছিল ফ্রি কল করার সুযোগ দিতে তাদের কেউ টিভিতে দেখেনি। যে মাদ্রাসার ছেলেটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গা ভবন থেকে বের করে নিয়ে আসছিল জীবিত মানুষদের, কোন পত্রিকায় দেখা হয়নি তার কথা। একটি বিস্কুটের প্যাকেট, একটি স্যালাইন, একটি পানির বোতলে তাঁর সর্বোচ্চ সামর্থটুকু নিয়ে যে বৃদ্ধ এসেছিলেন কুন্ঠিত হাতে, কোন সাংবাদিক তুলে রাখেনি তাঁর ছবি। লাশের পর লাশ বইতে গিয়ে ঝরঝর করে চোখের পানি ঝরেছে যে সেনা সদস্যের, তার কথা লেখা থাকবে না কোন বইয়ের পাতায়। নাওয়া-খাওয়া ভুলে ত্রুমাগত রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন যে নার্স, কেউ তাকে লক্ষ্যও করেনি। এরকম নিবেদিত প্রাণ হাজারো মানুষ সাভারে কাজ করে গেছেন বিপন্ন মানবতার সেবায়। আস্তিক-নাস্তিক, শাহবাগী-হেফাজত, ধর্ম-বর্ণ সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে সকলে মিলে প্রমাণ করেছেন- দুর্দিনে এই দেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সহায় সাধারণ মানুষই। তাই সাভারের ভাঙ্গা বিল্ডিং, লাশের মিছিল, স্বজনের বুকফাটা আর্তনাদের ছবির মাঝে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে আরেকটা অব্যক্ত ছবি যা কেবল অনুভব করা যায়, ছুঁয়ে দেখা যায় না; আর তা হল একজন মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের ভালোবাসা।
:welcome: :welcome:
ভালো লেগেছে ইতিবাচকতা
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া :happy:
:welcome:
চমৎকার গোছানো লেখা। যে কোন বিভক্তিতে কাজে দেবে আমাদের এই একাত্মতার গল্প।
এই হাতি পোষ্টটা ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ :happy:
প্রিয় অনুবাদকের কমেন্ট দেখে :penguindance: (সরবের ইমোটিকনের মত মজার ইমো অনলাইন আর চোখে পড়ে নাই!)
*অনলাইনে
হাহা। আমার মতে এই পেঙ্গুইন ড্যান্সটা তার মধ্যে বেস্ট! :penguindance:
:welcome:
সুন্দর লিখা। মানবতা সত্যি জিতে গিয়েছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু :happy:
“শাহবাগী-হেফাজত” somoy upojogi notun shobder abishkar 🙂 . ei na hole lekhok. kulangarder sobai chene. angul diye dekhiye dey. kintu sottikarer birder kew chine na. Lekhok k dhoinna pata, birder porichoy koriye deyar jnne. Golper naam ta serom sundor :clappinghands:
ar ekta bektigoto prosno : apnar keno mone hoy “আমার হবে না আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ!”
পোষ্ট পড়ে বেশ বড় একটা মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ :happy:
সাথে একটা অনুরোধ- যদি সম্ভব হয় মন্তব্য বাংলায় লিখুন। অভ্র ব্যবহার করে খুবই সহজেই বাংলা টাইপ করতে পারবেন। 🙂