প্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের যে অভ্যাসগুলো আজ বদলে যাচ্ছে তা হল বই পড়ার অভ্যাস। কাগজে মুদ্রিত যে বইকে দেখে আমরা অভ্যস্ত কিছুদিনের মধ্যে যে তা ইতিহাসেই লেখা থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। কাগজ আজ ক্লান্ত জ্ঞানের বিরাট বোঝা(!) বয়ে বেড়াতে ও অসংখ্য মানুষের কাছে অতি দ্রুত পৌঁছে দিতে।
সে তার দায়ীত্ব ধীরে ধীরে যে উত্তরসূরীকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার নাম- “ই-বুক” ।
প্রতি মূহুর্তে বেড়ে চলেছে পৃথিবীর জ্ঞান-ভান্ডার, এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতা। বাড়ছে মানুষ কিন্তু বাড়ছে না পৃথিবীর আয়তন; বাড়ছে চাহিদা বাড়ছেনা সম্পদ। ফলে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে মানুষের অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অতন্দ্র প্রহরী আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। শিক্ষার জগতে সেই প্রযুক্তিরই এক যুগান্তকারী রূপ এই ই-বুক। একটি জরিপে দেখা যায়- যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ই-বুক পাঠকের তুলনায় এ বছর পাঠকের হার ৭ শতাংশ বেড়ে ২৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এদিকে ছাপা বইয়ের পাঠক কমেছে ৫ শতাংশ। বর্তমানে ৬৭ শতাংশ পাঠক ছাপা বই পড়ছেন। (তথ্যসূত্র)। গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের হলেও ঘটনাটি একইভাবে সত্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। কম্পিউটার বা আধুনিক স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট বাঁচিয়ে দিচ্ছে আমাদের মুদ্রিত বই কেনার টাকা, দূর করছে বহন ও সংরক্ষণ করার ঝামেলা।
১৯৪৫ সালের ১লা জুলাই Vannevar Bush এমন একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেন যাতে তিনি তার সব বই, দলিলপত্র ও চিঠিপত্র সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এই যন্ত্রটি তিনি যথেষ্ট গতিসম্পন্ন ও ফ্লেক্সিবল করে তৈরী করেন। সেখান তিনি বিশেষভাবে তৈরী একটি ডেস্ক ব্যবহার করেন যাতে একটি স্বচ্ছ পর্দার মধ্য দিয়ে বইয়ের পেজগুলো দেখঅ যেত।
পরবর্তিতে ১৯৬৭ সালে Brown University ‘র Andries van Dam “hypertext editing” পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন যার মাধ্যমে বইয়ের পাতার বদলে লেখা তথা সরাসরি টেক্সট্ সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল।
পরিবর্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে Project Gutenberg (এর হিস্ট্রী ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন: http://www.gutenberg.us/, এখানে বই খুঁজতে চলে যান এখানে এবং এখানে। “ eBook তৈরী করা ও বিতরন ও প্রচারের” জন্য এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক সেচ্ছাসেবী প্রচেষ্টা। Michael S. Hart ছিলেন এই প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল লাইব্রেরীর জনক।১৯৭১ সালে নেয়া উদ্দোগের ফল হিসেবে সর্বপ্রথম তৈরী করা ঐ লাইব্রেরীটি ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত দীর্ঘস্থায়ী একটি জ্ঞানভান্ডার।
২০০০ সালের মাঝে ১০,০০০ ই-বই বের করার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা করলেও ১৯৯৬ সালে মাত্র ১০০০ টি বই প্রকাশ করে। অবশ্য ১৯৯০ সালের পর থেকেই উন্নত সফটওয়্যার এর বদৌলতে নতুন উদ্দমে সমৃদ্ধ হতে থাকে লাইব্রেরী। ২০০৪ সালে ব্রাউজিং ও বই প্রাপ্তি আরো সহজলভ্য করা হয়। Project Gutenberg এর বর্তমান হোস্ট University of North Carolina এর ibiblio.
২০০৩ সালের আগস্টে তারা একটি CD প্রকাশ করে যেখানে ৬০০ টি “best” e-books সংরকক্ষণ করা থাকে। একই সালের ডিসেম্বর এ প্রকাশ করা DVD তে 10,000 বইয়ের সংগ্রহ থাকে। ২০০৭ সালে প্রকাশ করা DVD টির নতুন ভার্সনে থাকে ১৭০০০ বই। বর্তমানে উক্ত প্রজেক্টের আওতায় অনলাইনে সংগৃহীত আছে প্রায় ৭৫০০০ ই-বই ও ই-ডকুমেন্টস।
প্রজক্টটির মাত্র ১৪ বছরের Growth Curve নির্দেশ করে ই-বুক এর বর্তমান পাঠকপ্রিযতার হার, ই-বুকের উন্নতি ও অগ্রগতির মাত্রা:
১৯৯১, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে যথাক্রমে Microsoft, Google ও Amazon তাদের ই-বুক কর্মসূচী শুরু করে। এছাড়াও ১৯৯০সালে Sony Discman অডিও বুক, ১৯৯৮ সালে NuvoMedia আবিষ্কার করে ‘first hand held ebook reader: The Rocket’ ।
ই-বুক তথা ‘ইলকট্রনিক বুক’ বর্তমানে প্রধানত জনপ্রিয় অনলাইনে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের ও প্রধান সব ভাষারই রয়েছে ই-বুক সাইট। বাংলা ভাষার ই-বুক পাওয়া যাবে এমন কয়েকটি সাইট হল- www.ebook.gov.bd, www.allbdbooks.com, freebanglapdfdownload.blogspot.com , www.banglaebook.net, www.banglainternet.com, banglabooks4free.blogspot.com, banglaebookscollection.blogspot.com, www.banglabook.org ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল প্রথম তথা সরকারীটি ছাড়া এদের কোনটি অনলাইনে বই ‘প্রকাশক’ নয়; পূর্বে মুদ্রণ আকারে প্রকাশিত বইয়ের অনলাইন ভার্সন বের করে থাকে শুধু; এমনকি আরো পরিতাপের বিষয় সেক্ষেত্রে কখনো লেখকের ও মেইন পাবলিশার্স এর অনুমতি নেয়া হলেও বেশীরভাগ সময়ই তা হয় না।
জেফ বেজোস এর একটা টকে দেখেছিলাম ইবুক রিডার এর কল্যাণে রিডিং হ্যাবিট বদলাইছে। মানে এখন কয়েক গুণ বেশি পড়তেছে মানুষ!
হুম ঘটনা সেইরকম-ই । কিছুদিন পর আমারাও বদলে যাব, এমনকি যাচ্ছি already…
আমিই বোধ হয় সেকেলে রয়ে গেলাম ! ই-বুক পড়তে ভালো লাগে না। নতুন বইয়ের নতুন পৃষ্ঠা আর মলাটের ঘ্রাণ নিব, তারপর আয়েশ করে শুয়ে শুয়ে কিংবা বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়ার তুলনা হয় না। তবু বাধ্য হয়ে ই-বুক পড়ি মাঝেসাঝে।
সরবে তো সরাসরি ই-বুক প্রকাশ করা হয়, জানেন বোধ হয়। লেখাটা তথ্যবহুল, ভালো লেগেছে।
Apu akebare notun boi ar anek purono boi er smell purai oshadharon,
Vobissot jodi E-book er hatei chole jay nishchoi science oi smell er kisu perfume baniye felbe, laptop ba pumptop e boi porben, ar tar age room just perfume ta spray kore deben…
hoye gelo… 😛
হাহাহা বুদ্ধি তো ভালোই…ডিজিটাল ! 😀
আমিও বদলে যাচ্ছি ।
তবে যত যাই হউক না কেন কাগজে বই পড়া এবং নতুন বইয়ের কাগজের গন্ধ……..সেই কাগজ বই পড়ার অনুভূতি ইবুক রিডারে পাওয়া যাবে না।
বদলে সবাই যাচ্ছি… হয়তো বাধ্য হয়েই…
বই হাতে নেবার অনুভূতি-ই অন্যরকম!!! ঘ্রাণ নেয়া, আয়েশ করে পাতা উলটানো আরো কত কী……
তবে ই-বুক রিডারে ও শুয়ে শুয়ে পড়া যায়! 🙂
ভালো জিনিস লিখেছেন, লিঙ্কগুলো কাজে দেবে ডাউনলোড করার জন্য…
প্রিয়তে রাখছি…
ধন্যবাদ :happy: