ঘটনা-১:
তখন আমি বেশ ছোট, দেড় কি দু’বছর, এই স্মৃতি আমার মনে নাই, আম্মু আর আপুর মুখেই শোনা। পিচ্চিকাল থেকেই বাঁদর ছিলাম বলিয়া আমার বেশ ডাক ছিল। কারেন্টের বোর্ডের ওই সকেট দুটোর ফুটো আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করিত। 😛 তো একদিন সুযোগ পাইয়া টেবিলের উপর উঠিয়া আঙ্গুল দুইখান চালান করিয়া দিলাম, ব্যস, আমাকে আর পায় কে? বিদ্যুৎ আমাকে আটকাইয়া রাখিল!! কপাল ভালো, আমাকে ছাড়াইতে আমার ভগিনী আগাইয়া আসে নাই, সে আম্মাকে ডাক পাড়িল। আম্মা দেখা মাত্র কিছু চিন্তা না করিয়াই আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া হেঁচকা টান মারিল, আমি ছুটে আসলাম কিন্তু আম্মুর হাত অনেক জোরে ছিটকে দেয়ালে বাড়ি খাইল, পুরো হাত নাকি নীল হইয়া গেছিল। 🙁 আল্লাহর রহমতে সেদিন সকলেই বাঁচিয়া গেছিলাম।
ঘটনা-২:
আমি তখন সেভেনে পড়ি। আমার খুব কাছের বান্ধবী, নাম সুমা (ব্যক্তিগত কারণেই ছদ্মনাম দিতে হল)। সারাদিন ওর বাসা নয়তো আমার বাসায়- আড্ডা, ঝগড়া, বই পড়া, টিভি দেখা, সব চলতো। তো একদিন গরমের ছুটিতে ওর মা আমাদের বাসায় আসলেন। আমরা তো চুটিয়ে গল্প করছি, হঠাৎ খেয়াল করলাম আম্মু আর অ্যান্টি কি বিষয় নিয়ে যেন খুব সিরিয়াস হয়ে কথা বলছে। আমি অতোটা গুরুত্ব দেই নেই।
ওরা যাবার পর আম্মু খুব মন খারাপ করে যা বলল,আমার আজো মনে আছে, ওই কথা শুনে আমার মনে হয়েছিল আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছে। সুমা যাকে মা বলে ডাকে উনি ওর মা না,ওর ফুপু!! ওর ছোট বোন হবার সময় ওর মা মারা যান। আর সুমা যখন ক্লাস ফাইভে তখন ওর বাবা মারা যায়, এই ছোট বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে ফুপু আর বিয়ে করেননি!! ওদের বড় করছেন, বাবা-মা হিসেবে যা যা দায়িত্ব তা পালন করছেন। একটা মানুষ কিভাবে এতোখানি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে এটা ভেবে এখনো আমি শিউরে উঠি। সেদিন রাতে আম্মুকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছিলাম, আর আম্মুও আমাকে চুপটি করে জড়িয়ে রেখেছিল। :crying:
সেদিনের পর থেকে আম্মুর সাথে রাগারাগি খুবইই কম করি, করি না যে তা বলবো না, কিন্তু চেষ্টা করি আম্মুকে বোঝানোর। আমার সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক, সুতরাং আম্মুর কোন কথায়, কিংবা কোন সিদ্ধান্তে আমি কষ্ট পেতে পারি, একটু সময় দিলেই উনারা সেটা বুঝতে পারবেন। ধৈর্য ধরতে হবে আমাদের।
এই ছবিটা সত্যি বড্ড কাঁদাল আমাকে। কি চরম আকুতি!! মার একটু ছোঁয়া পাওয়ার…
একজন ইরাকি আর্টিস্ট একটি এতিমখানা থেকে ছবিটি তুলেছেন !! বাচ্চাটার মা নাই , মা কে কখনো সে দেখেও নাই … অনেক ইচ্ছা করে তার, মায়ের কোলে ঘুমাতে … তাই মেঝেতে মা কে এঁকে তার কোলে ঘুমিয়ে পড়ে বাচ্চাটা !!
আমরা অনেকেই বলি, মা যে কি জিনিস যেদিন হারাবা সেদিন বুঝবা। কেন?? হারিয়েই কেন সব বুঝতে হবে?? একটু চোখ মেলে তাকালেই, কান পাতলেই তো শুনতে পারি ‘মা’হীন জীবনের হাহাকারগুলো। ম্যানভিলের সেই ছেলেটার কথা মনে আছে যে একটুখানি ভালোবাসা, একটুখানি আদর পাবার জন্য মিথ্যে বলেছিল অথচ যার স্বভাবেই নেই মিথ্যে বলার??
আজকে বিশ্ব মা দিবস। শত বছর আগে ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক মা-আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস তার সানডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে চালু করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় দিবসটি এখন বিশ্বের এক শতের বেশী দেশে ‘বিশ্ব মা দিবস’-এর মর্যাদায় পালিত হয়। তবে বেশিরভাগ দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার দিনটি পালিত হয়। উদযাপনের জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বড়দিন এবং ভালোবাসা দিবসের পর মা দিবসের অবস্থান। সাধারণত সাদা কারনেশন ফুলকে মা দিবসের প্রতীক বিবেচনা করা হয়।
“ভাইরে-বইনরে, ‘মা দিবস’ কি রে আবার?? আমি মা বলতে খালি একটা জিনিসই বুঝি এই মানুষটাকে কোনোদিন কিছু বলতে হয় নাই, মন ভালো কি মন খারাপ, কেন ভালো কেন খারাপ – সউব্ব বুঝে যায়। আমি যতবার বাসায় যাই, ততবারই তো ওইদিন আমার মা-বাবা-বোন-ভাই-বন্ধু দিবস,এটা আবার নতুন কি !! পরিবার ঘিরে থাকা এই আদুরে জগতে এইসব ছাইপাশ দিবস বড্ড বেমানান। ”
তারপরও বলবো, যদি খুব ব্যস্তই থাকুন, কিংবা প্রতিদিনই মার সাথে খুনসুটির সম্পর্ক থাকে তবু আজকের এইদিনটা শুধুই মা র জন্য থাক। আর যারা তাকে হারিয়েছেন আজকে একটু বেশি সময় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য প্রার্থনা করুন।
“ আল্লাহ যেন আমাদের সবার মা দেরকে- যারা জীবিত আছেন এবং মারা গেছেন, তাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে তাদের জন্য দয়া, ধৈর্য এবং ভালবাসা দান করেন।
” রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়া-নি সগীরা”…“ মায়ের সাথে থাকো, কারণ জান্নাত তাঁরই পদতলে” (ইবনে মাজাহ, সুনান, হাদিস নং ২৭৭১)
আরেকটা জিনিস, আজকাল অনেক খুন-খারাবি হচ্ছে যার মধ্যে মা তার সন্তানকে মেরে ফেলার মতো জঘন্য বিষয়ও আছে। মা দিবসে সেটা নিয়েও কথা হচ্ছে। আমরা তো জানিই, পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। মা-সন্তানের সম্পর্ক স্বর্গীয়, সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার আগে আমাদের নিজেদেরই কি শোধরানো উচিত না?? অন্তত আজকে কি একটা প্রতিজ্ঞা করতে পারি না যে, “বৃদ্ধাশ্রম” নামক বিভীষিকাময় জায়গায় এই স্বর্গীয় মানুষগুলোকে কখনো ফেলে আসবো না ??
খুবই ভালো লাগল আপু লেখাটা
অনেক অনেক ধইন্নাপাতা ভাইয়া… :happy:
ঘটনা এক পড়ে যার পর নাই মজা পাইলাম। মানে আরকি তোমার কাণ্ড দেখে ! ছবিটা বড্ড করুণ, মা কী তা আসলেই অনেকে বোঝে না, হারানোর পর বোঝে। মা দিবসের ইতিবৃত্ত জানতাম না, জেনে ভালো লাগল। তবে কেন যেন কখনোই এই দিবসকেন্দ্রিক ভালোবাসাটা ঠিক টানে না আমাকে। এই ট্রেন্ডটা দশ-বারো বছর আগেও ছিল না, ভয় হয় পশ্চিমাদের মত যান্ত্রিক হয়ে যাব না তো আমরা ? তবে এই দিবসগুলো যদি নতুন করে কাউকে বোধোদয় এনে দেয়, তাহলে খারাপ না…
ভালো লেগেছে লেখা। যে গানটার নামে শিরোনাম, ঐটা যখন প্রথম শুনেছি, শুধু ঝরঝরিয়ে কেঁদেছি।
“এই ট্রেন্ডটা দশ-বারো বছর আগেও ছিল না, ভয় হয় পশ্চিমাদের মত যান্ত্রিক হয়ে যাব না তো আমরা ?” সহমত আপু, ঠিক এই ভয়টা আমারও কেননা “ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়” যে। 🙁
মা কি এক অদ্ভূত নাম তাই না……….. কত আপন মনে হয় এই নামটা 🙂
ভাল লাগল লিখাটার পড়ে।
বিশেষ করে ছবিটা দেখে ।
“একজন ইরাকি আর্টিস্ট একটি এতিমখানা থেকে ছবিটি তুলেছেন !! বাচ্চাটার মা নাই , মা কে কখনো সে দেখেও নাই … অনেক ইচ্ছা করে তার, মায়ের কোলে ঘুমাতে … তাই মেঝেতে মা কে এঁকে তার কোলে ঘুমিয়ে পড়ে বাচ্চাটা !!”
মা বিষয়ক সব কিছুই একেবারে অন্যরকম, অতুলনীয়। আর ছবিটার কথা কি বলবো, ভেতরটাকে নাড়া দিয়ে যায় পুরো … 🙁
দ্বিতীয় ঘটনা আর ছবিটা পুরো স্ত্বব্দ করে দিল……………… 🙁 🙁
মা-বাবা উপাধি না পাওয়া এই মানুষগুলোর পাওনা ও কিন্তু কম না…. সাদা মনের মানুষ মনে হয় এদেরই বলে- কোনো প্রাপ্তি নয়, ভালোবেসেই মানুষকে জড়িয়ে রাখে। 🙁
ভালো লেগেছে পিচ্চি 😛 :love:
ওয়ে … আসছে পিচ্চি !!! :haturi:
নিজে গলাবাজি করলেই কি আর উপাধি ছাড়া যাবে… 😛
আপুর লেখাটা এতো ভালো কেন হইলো?
মনটা নরম হয়ে গেছে।বিশেষ করে ঐ পিকটা দেখে।
আম্মুরে অনেক জ্বালাইসি।আর না।আল্লাহ মাফ করুক।
* আপনারে পুরা ৫০ গ্রাম ধইন্যা।(সার ছাড়া ধইন্যা)
‘মা’ নামের ওই মানুষটাই যে অনেক ভালো, ওঁকে নিয়ে যাই লিখুন ‘ভালো’ হয়ে যাবে… 😀
ভবিষ্যতের ‘মা’দের চিন্তাভাবনা নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে, দেখি কিরাম পারি… 🙂
*মন্তব্যের জন্য আপনাকেও এক বাটি ধইন্যার চাটনি। (ঝাল বেশি) 😛
চাটনি মজা হয় নাই ! 😛
:opps:
অনেক ভাল লেগেছে লেখাটা আপু , অনেক শুভকামনা থাকলো 🙂
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য…
আপনার জন্যও অনেক শুভকামনা রইল… 🙂