আমাদের মিডিয়াঃ জনতার মুখপাত্র না কর্পোরেট দালাল ?

অনেকেই জনসচেতনতামূলক অনেক বিষয়ে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর যথাযথ ভূমিকার অভাব নিয়ে বেশ মনকষ্টে ভোগেন।

কমপ্ল্যান-হরলিক্সের ভাওতাবাজী,
ডানো-নিডোর কারসাজি,
স্ক্র্যাপড জাহাজের লোহা গলানো বার নিয়ে বিএসআরএম-কেএসআরএমের হম্বিতম্বি,
ফেয়ারনেস ক্রিমের মরণঘাতী জারিজুরি,
রিয়েল স্টেটের গাঁজাখুরি,
এসেম্বলিং বেইজড দোয়েল-ওয়ালটনের গুমর,
থ্রিজি – ফোরজির মূলা ঝোলানো,
গলাকাটা কল-রেট কিম্বা ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের চড়া দাম- ব্লা ব্লা ব্লা ;

— এইসব নিয়ে কেন কোন সন্ধানী প্রতিবেদন জনস্বার্থে বাংলাদেশী মিডিয়াগুলো বানায় না ? কোটি টাকার এই প্রশ্ন অনেকেরই মনে মনে ঘুরপাক খায়, অফিস-ভার্সিটি-পাড়ার চায়ের দোকানগুলোর গরম আলোচনার বিষয় হয়।

আমি ভাই দুই ট্যাকা মূল্যের সাধারণ মানুষ।দামি প্রশ্নের সস্তা উত্তর খুঁজতেই ভালোবাসি।যেমন আমার কাছে এই কোটি টাকার প্রশ্নের সোজা উত্তর হইলো- বাংলাদেশের চুতিয়া মিডিয়াগুলা জনস্বার্থের চাইতে কর্পোরেট স্বার্থের দ্বারা বেশি তাড়িত হয়। বুঝে আসে নাই কথাটা ?

আইচ্ছা , সোজা কইরা বলি। একদম শেষের টপিক্সটা ধইরাই টান দেই আগে।

ইদানীং ইন্টারনেটের দাম নিয়া বেশ হৈ চৈ চলতেছে। ইউরোপ-আম্রিকার কথা বাদ দিলাম, প্রতিবেশী ভারত কিম্বা পাকিস্তানের তুলনায় দেশে ডাটা সার্ভিসের দাম চড়া, মান খারাপ।যার টাকা আছে, সে ভালো স্পিডে ডাটা সার্ভিস পাইতে চাইলে বেশি টাকা দিবে, যার টাকা নাই, সে একেকটা পেইজ লোড দিয়া বইস্যা বইস্যা আঙ্গুল চুষবে। আর বিটিসিএল অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ টাটা ফোটন কিম্বা ভারত সঞ্চার নিগমের কাছে বিক্রি করে রাজস্ব ভাণ্ডার (!) বাড়াবে, সেই রাজস্ব দিয়ে আমাদের মন্ত্রীরা দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর রেকর্ড করবে, একবারের জায়গায় দশবার পাল্টানো হবে জাতীয় স্থাপনাগুলার নাম।

সম্প্রতি জানা গেলো, ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলা নাকি সরকারের কাছে থেকে থ্রিজি-ফোরজি ব্যাসিসে একেক গিগা ডাটা কিনে ৫-১৫ টাকায়, আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে নুন্যতম ১৭৫ টাকা (কিউবি-বাংলা লায়ন) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩১০ টাকায় (মোবাইল নেট সার্ভিস প্যাকগুলায়) !! ১৫% ভ্যাট আর ফেয়ার ইউসেজ পলিসির কথা না হয় বাদই দিলাম।

এখন কথা হইলো, এই ব্যপারগুলায় আমাদের চাইতেও বেশি তথ্য-প্রমাণ হাতে থাকার পরও বাংলাদেশের মিডিয়াগুলা এইগুলা নিয়ে চুপ থাকার কারণ একটাই- কর্পোরেট স্বার্থ ! বাসায় পেপার রাখেন ? একটু খুলে দেখেন তো – সামনের/পেছনের পাতা জুড়ে দেয়া সবচে’ বড় বিজ্ঞাপনগুলো কাদের ! পত্রিকার বিজ্ঞাপনযোগ্য প্রতি বর্গইঞ্চি হাজার টাকায় বিক্রি হয়রে ভাই !! বাংলা চ্যানেল ছেড়ে বসে থাকেন কিছুক্ষণ। ৩০ মিনিটের সিরিয়ালের মাঝখানে ৩০-৬০-৯০ সেকেন্ডের ইয়া বিশাল বিশাল মিউজিক ভিডিও টাইপ এডগুলা কারা দিচ্ছে ভাই ?? এমন একেকটা বিজ্ঞাপন বানাইতে যত টাকা লাগে, নামি মিডিয়াতে সেগুলা প্রচার করতে তার চাইতে ম্যালাগুন বেশি টাকা লাগে ! কারিকারি টাকার এই সোর্সগুলো ধরে রাখতে না হয় খানিকটা কর্পোরেট দালালিই করতে হচ্ছে আমাদের মিডিয়াগুলোর, এ আর এমন কি!

হয়তো বলবেন, নাহ ! “সব মিডিয়া এক না। ব্যাতিক্রমও আছে।”
মানলাম। তবে সেইটা হাতে গোনা।

বহির্বিশ্বের সিএনএন/আলজাজিরা/পিসটিভি কিম্বা এদেশের ইসলামিক টিভির মত ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের সরাসরি অনুদান যে মিডিয়াগুলার নাই, তাদের তো ওই পথ ছাড়া আর উপায়ও নাই ! লাইসেন্স নবায়ন, ক্ষমতাসীনদের বখরা, সাংবাদিক-কর্মচারী-শ্রমিকদের বেতন, প্রোগ্রাম কেনা, পরিবহনপুলের খরচা- কোটি কোটি টাকার ব্যয়, তারউপর আবার মোটা অঙ্কের লাভের টেনশন, সব কর্পোরেট ব্যাপার স্যাপার। এইখানে জনসেবার জায়গা/সময় কই !

এঁরে-ফোরে যে যাই বলুক, দিন শেষে সব কর্পোরেট মাদারি একঘরেই ঢুকে, বুঝলেন ভাই ?
এবং সবচে’ মজার কথা হইলো, এইটা একটা ইউনিভার্সাল সিনারিও।

সুহৃদ সম্পর্কে

সবার কথা শুনি আমি , আমার শ্রোতা নাই ... ।।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to আমাদের মিডিয়াঃ জনতার মুখপাত্র না কর্পোরেট দালাল ?

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    এইখানে জনসেবার জায়গা/সময় কই ! – না জনসেবা করতে বলা হচ্ছে না। দায়িত্ব পালন করতে বলা হচ্ছে।

    যেহেতু পত্রিকাগুলো তাদের কাজ করছে না তার মানে দায়িত্বে অবহেলা করছে

  2. একলা পথিক বলেছেনঃ

    সবচে’ মজার কথা হইলো, এইটা একটা ইউনিভার্সাল সিনারিও।

    লেখা দারুন হইসে।
    :love:

    • সুহৃদ বলেছেনঃ

      সেইটাই ভাই! খালি দেশী মিডিয়ার দোষ দিয়ে তো লাভ নাই, বিদেশী মিডিয়াগুলাতেও এমন কাজ অনেক হয়।

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    সত্য বড়ই তিতা !! 🙁

    • সুহৃদ বলেছেনঃ

      এবং গুরু-পাক, ফলে বদ হজম হয় ! সেই বদ-হজমের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। আর যারা মসনদে বসে থাকে, তারা পাঠায় পেটুয়া বাহিনী। কেইস ডিসমিস।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।