আকাশে অসংখ্য মেঘ, যেন একরাশ বিহবলতা জড়িয়ে ধরে আছে ওগুলোকে। একটু পরই নিজেদের নিঃশেষ করে দিয়ে বৃষ্টি ঝরাবে। মেঘলা আকাশ, বড় ভাল লাগে মিথিলার।
মেঘগুলো সব কত কত জায়গা থেকে আসে, কতশত বার্তা নিয়ে, কে জানে? দীর্ঘ প্রতীক্ষা নিয়ে যে মানুষগুলো ওদের পথ চেয়ে বসে থাকে সব অজানাদের দৌড় বোধ হয় ওদের বুকের ভেতর। ওখানে গিয়েই নিজেদের মেলে ধরবে। ওই যে ওই মেঘটা, আলো যেন জমাট বেঁধে আছে ওর ভেতর। এটাও কি কোন সংকেত? কারো পাঠানো বার্তা?
মিথিলা আর রাতুল। দুই ভাইবোন। অন্যসব বিষয়ে ওদের যত অমিলই থাকুক না কেন বৃষ্টির দিনগুলোতে দুজনই কেমন যেন আনমনা হয়ে যেত। আকাশ মেঘলা দেখলেই দুজনে চলে যেত ওদের নিচতলার বারান্দায়। অপেক্ষা করত কখন বৃষ্টি নামবে। এর মধ্যে কত গল্প হয়ে যেত ওদের ভেতর।
“জানিস আপু, কাল স্কুলে কি হয়ে ছিল?”
“কিরে?”
“রতন স্যারের ক্লাসে পাশের বাসার আনন্দ আধ ঘণ্টা নীল ডাউন হয়ে ছিল।”
“কেন, কী করে ছিল ও?”
“কী আবার করবে, ক্লাসে বসে মার্বেল খেলছিল…এই আপু দেখ বৃষ্টি নামল, গেটটা খুলে দেই?”
“থাক না, কী করবি গেট খুলে? এখান থেকেই তো ভাল দেখা যাচ্ছে।”
“ধুর, আয়, চল সামনের রাস্তায় সাইকেল চালাই।” বলেই বারান্দার পাশে রাখা সাইকেলটা নিয়ে সামনের গেটটা খুলে বেরিয়ে গেল রাতুল। মিথিলা বারান্দায় বসে দেখছে নির্জন রাস্তায় রাতুল সাইকেল চালাচ্ছে। আকাশ মেঘলা হলেই এদিকের রাস্তাঘাট সব খালি হয়ে যায়।
“আপু, আয় না”, বলে গেটের কাছে সাইকেল থামিয়ে মিথিলাকে একরকম জোর করেই বাইরে নিয়ে যায় ছেলেটা।
“ইশ… দেখত ভিজিয়ে দিলি।” মুখে একথা বললেও আসলে খুব ভাল লাগছিল ওর। বৃষ্টির পানিগুলো সব মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। দু হাত দিয়ে একবার মুখটা মুছে নিলো ও। উপরে তাকিয়ে দেখে রাস্তার বাতিগুলো সব জ্বলে উঠেছে। নির্জন রাস্তায় শুধু ও আর রাতুল।
“রাতুল ওদিকে যাস না”
“আপু, এক্ষুনি আসছি।”
নাহ, ওকে নিয়ে আর পারা গেল না, মনে মনে ভাবে মিথিলা। কেন যে এত সব পাগলামি করে? রাতুল চলে যেতে ও একা হয়ে গেল। আকাশের কান্না ভেজা নির্জন রাস্তায় ও একা।
আচ্ছা… বৃষ্টি নামার আগে সব আঁধার হয়ে আসে কেন? বৃষ্টি থামতেই আবার সব পরিষ্কার? আকাশ কি সত্যি কাঁদে? কেন? শত শত বছর ধরে ও এমনি করে কাঁদছে বুঝি? আকাশের মনে কি অনেক কষ্ট? কে জানে?
“আপু…”, বৃষ্টির শব্দ ভেদ করে রাতুলের ডাকটা কানে আসতেই ওর দিকে তাকিয়ে ভাবনায় ছেদ টানল মিথিলা। কাছে এসে সাইকেল থামিয়ে নেমে পড়ে ও।
“চল, ভেতরে যাই।”
দুজনে আবার বারান্দার ভেতরে এসে মোড়ায় বসে পড়লো।
“আপু, এই নে”, বলে রাতুল একটা আচারের প্যাকেট বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে।
হাতে নিয়েই মিথিলা বলে, “এই আনতে গিয়েছিলি বুঝি?”
“হুম, খেয়ে দেখ, বৃষ্টির দিনে আচার খেতে অন্যরকম মজা, অন্যসময় এ মজাটা পাবি না।”
ভিজে গায়ে দুজন বসে বসে আচার খায়। এর মধ্যে বৃষ্টি অনেকটা থেমে এসেছে।
“এই যা! যাই তোয়ালেটা নিয়ে আসি, একদম মনে ছিল না রে।”, বলে তোয়ালে আনতে ভেতরে চলে গেল মিথিলা। মিনিট খানেক পর তোয়ালে নিয়ে ফিরে দেখে রাতুল নেই……
জানালার পাশে বসে পুরনো কথাগুলো আবার মনে করতেই বৃষ্টির ছাঁট এসে চোখে লাগলো মিথিলার।
“ইশ”, বলেই জানালাটা বন্ধ করে দেয় ও।
“কিরে, জানালা বন্ধ করে দিলি?” কে যেন হঠাৎ বলে উঠলো কথাগুলো।
চমকে উঠে বন্ধ জানালাটা ও খুলে দিল আবার। বসে রইল ওখানে। বৃষ্টির ছাঁট এসে চোখমুখ সব ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । কখন যে কাঁদতে শুরু করেছে টের ও পায়নি। আকাশের কান্নারা সব ওর কান্নাগুলোকে ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
“কিরে, কিছু বলছিস না কেন?”, আবার বলে উঠলো কেউ। “ও দিকেও বৃষ্টি নামল বুঝি? পাঠাবো আজকে তোর কাছে কোন মেঘদূতকে? এদিক থেকে আজ ওদের অনেকে রওনা হচ্ছে তোদের ওদিকে যাবে বলে, পাঠাবো?”
ভালো লাগল বৃষ্টিবিলাস ! বৃষ্টি আসলেই বোধ হয় মনের প্রতিচ্ছবি… 🙂
প্রকৃতিবিলাসও বলতে পারেন আপু…নিজেদের অনেক রূপই তো আমরা ওতে খুঁজে নেই।
ধন্যবাদ :love:
”বৃষ্টির ছাঁট এসে চোখমুখ সব ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । কখন যে কাঁদতে শুরু করেছে টের ও পায়নি। আকাশের কান্নারা সব ওর কান্নাগুলোকে ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।” 🙂
ভাল লেগেছে 🙂
ধন্যবাদ :yahooo:
😀
ধাক্কা খেলাম শেষে এসে!
চমকটা দারুণ ছিল সত্যি! :beshikhushi:
তবে আরো একটু পড়তে ইচ্ছে করছিল। 🙁
তোমার ভাল লেগেছে জেনে কি যে খুশি লাগছে আপুমনি :yahooo:
হুম, আমারও মনে হচ্ছিল ছোট হয়ে যাচ্ছে…কিন্তু অস্থির লাগছিল খুব, তাই আর বাড়াইনি…
অনেক ভালো লেগেছে :love:
শেষটায় এসে সত্যি ধাক্কা খেয়েছি।
ধন্যবাদ আপুনি তোমাকে :penguindance:
লেখার সাবলীলতা হিংসা করার মত!! 😛
কারণ, আমার হাতে গল্প-কবিতা আসে না। 🙁
তবে গল্প লিখতে না পারলেও পড়তে অবশ্য খুব ভাল লাগে।
আর, তোমার ফিনিশিংগুলো আসলেই ভাল হয়! :beshikhushi:
ধ্যাৎ, কি যে বল… :voypaisi:
শুভকামনা রইল
:love:
মনটা খারাপ ছিল, গল্পটা পড়ে আরো খারাপ হয়ে গেল। 🙁
তবে মাঝে মাঝে দুঃখবিলাস ভালোই লাগে।
শুভকামনা রইল।
ইশ, মন খারাপ করে দিলাম বুঝি 😳
ধন্যবাদ পড়ার জন্য…বেঁচে থাকুক দুঃখবিলাস :guiter:
কীভাবে লেখো? গল্পের শেষটা এমন হবে ভাবি নি…
মন খারাপ করা ভালো লাগলো… 🙁