-
বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে ।সেই সকাল থেকে মুষলঝাড়ে শুরু হয়েছে আর থামাথামির কোন নাম নেই।রফিক সাহেব ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন ।আজকে তার প্রচণ্ড অস্থির লাগছে । কিছুক্ষন পরপর হাতের রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন।পরক্ষনেই আবার মেয়ের রুমের দিকে তাকাচ্ছেন ।এগারোর কাটা ছুঁতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকি।অর্পা এখনও ওর রুম থেকে বের হয়নি ।কিছুক্ষন আগে অবশ্য ব্যলকর্নির নিচ থেকে ওর সাথে কথা বলে এসেছেন । বৃষ্টি ওর খুব ভালো লাগে ।ছোটবেলা থেকেই বৃষ্টিতে ছাদে চুল ছাড়িয়ে ভেজা ওর খুব প্রিয় একটা অভ্যাসের একটা ।বৃষ্টি হচ্ছে অথচ সে ঘরে আছে –এমন যদি কখনো হয় -তাহলে ধরেই নিতে হবে ওর মন খারাপ ।তাহলে কি আজ ওর মন খারাপ ?
রফিক সাহেব একজন শিল্পপতি ।অঢেল টাকার মালিক তিনি । অনেক ক্ষমতাবান একজন মানুষও বটে ।তার দুর্বলতার জায়গা হল তার একমাত্র মেয়ে অর্পা। মেয়েকে তিনি অসম্ভব ভালবাসেন ।ওর মা মারা গেছে বহুদিন ।এরপর শুধু ওর কথা ভেবে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন নি। প্রতিদিনই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মেয়েকে নিয়ে একসাথে নাস্তা করেন তিনি । কিন্ত আজ অনেক বেলা হয়ে গেছে ।মেয়ে দরজাই খোলে নি। একবার ভাবেন,মেয়ের রুমে আবার নক করবেন কি না ।মাঝেমাঝে প্রচণ্ড টেনশন দেয় মেয়েটা।সকালে ঊঠেই কাজের মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,সে উঠেছে কিনা? না জবাব শুনে আত্মা যেন তার একেবারে নাই হয়ে গিয়েছিল। দরজায় নক করতেও সাহস হচ্ছিল না ।হয়তো ঘুমাচ্ছে । ঘুম থেকে ডেকে তুললে প্রচণ্ড রাগ করে সে । খুব জেদ ওর ।দেখা যাবে,রাগে হয়ত দুদিন বাবার সাথে কথায় বলছে না । তার চেয়ে অপেক্ষা করাই ভালো । কিন্ত দশটা পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি আর মনকে বুঝাতে পারলেন না।কি জানি খারাপ কিছু করে বসে নি তো? আজকালের মেয়ে, কখন কি করে বসে , তার ঠিক নেই ।
সে কারনে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা হাতে বাইরে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।ওর ব্যলকর্নির দিকে তাকিয়ে দেখেন ,সে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে ।বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে কিন্ত সেদিকে ওর কোন খেয়ালই নেই যেন ।দেখে বুকটা ধক করে উঠলো তার ।কিছু হয়নি তো ওর ? নাকি অসুখ বেরে গেল ? অজানা আশঙ্কায় কেপে উঠেন তিনি।
-
বছরখানেক আগে অর্পার লিউকেমিয়া ধরা পরে ।এরপর দেশ বিদেশ মিলিয়ে বহু চিকিৎসা করিয়েছেন।কিন্ত কোন লাভই হয়নি ।ডাক্তার বলেছে,সে এখন এন্ড স্টেজে আছে । খুব বেশি হলে মাস তিনেক আর বাঁচবে।তিনি নিচ থেকেই মেয়েকে বললেন,মা এভাবে ভিজলে অসুখ করবে ।যাও ভিতরে যাও।মেয়ে তার ডাক শুনে কিছু না বলেই খানিকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে ।কিছু বলছে না দেখে রফিক সাহেব আবার বললেন, ঠিক আছে মা। তোর ইচ্ছে হলে থাক ।একথা শুনে মেয়ে হঠাৎ করে হেসে উঠলো ।
-
-বাবা তুমি বৃষ্টির ভেতরে বাইরে কেন ? ভেতরে আসো ।তোমার সাথে কথা আছে ।
বলেই হেসে ওঠে সে ।রফিক সাহেব যেন হাফ ছেড়ে বাচেন ।না ,তার মেয়ের কিছু হয়নি।রফিক সাহেব সেই থেকে মেয়ের জন্যই বসে আছেন ।তিনি চা শেষ করে মেয়ের দরজায় আলতো করে নক করেন ।
– অর্পা মা, আসবো ?
-হ্যা বাবা এসো ।বলেই অপ্রুস্তুত হয়ে চোখ মুছতে থাকে অর্পা ।
-অর্পা,কি হয়েছে তোর? কাদছিস কেন?
অর্পা বাবার হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে আসে ।
-বাবা তুমি আমাকে এতো ভয় পাও কেন ?
-তোকে আমি আবার ভয় পেতে যাব কেন ? বলেই সশব্দে হাসার চেষ্টা করেন তিনি ।
-মা ,আমাকে একটা কথা বলবি?
-বল বাবা ।
-তুই হঠাৎ এভাবে বদলে গেলি কেন?
-ঠিকমত খাস না।আমার সাথে কথা বলিস না ।তোর কি খারাপ লাগছে ।ডাক্তারকে ডাকবো ।
-না ,বাবা ।আমি ঠিক আছি ।ডাক্তারকে ডাকতে হবে না ।
– আশিস কিছু বলেছে? ওকে আসতে বলি ?
-না ,বাবা ।আমি একাই বেশ আছি ।মরতে বসা কোন মানুষকে কেউ ভালবাসতে চায় না।করুনা করতে চায় ।আমি কারো করুণা পেতে চাই না ।
রফিক সাহেব চুপ করে থাকেন তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে ।
– বাবা,তুমি কাদছ কেন? এতে কাঁদার কি আছে ?
-বাবা,মানুষ এতো স্বার্থপর কেন হয় বলতে পারো?
– জানি না। আশিস আগামি মাসের ৩ তারিখে বিয়ে করছে ।
-তাই?
– হুম। বাবা আমি কি ওকে বিয়ে করতে বলেছি? শুধু বলেছিলাম আমি যে কদিন বাঁচি সে যেন আমার পাশে থাকে।আমি আর কতদিনই বাঁচবো বাবা।দুমাস/ তিন মাস ?
– বাবা ,তোমার না অনেক টাকা ।অনেক ক্ষমতা।তুমি ঐ ছেলেটির হাতপা ভেঙে দিতে পারবে না?
রফিক সাহেব চোখ মোছেন ।
-মা এটা করা ঠিক হবে না ।সেও তো কারো বাবা মায়ের ছেলে ।
-না আমি যা বলছি তুমি তাই করো ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ।তুই যখন বলছিস করবো ।
– কবে করবে ?
-তুই যখন বলবি । তুমি ওর বিয়ের আগেই হাতপা গুড়ো করে দিবে ।
-কিন্তু ?
-না কোন কিন্তু নয় ।আর এখন তুমি যাও ।
তিনি যেতে যেতে ভাবেন ,সে কি সত্যিই এমনটি চায় নাকি ? একটু জেদি হলেও সে এ পর্যন্ত কখন কারো উপকার ছাড়া, ক্ষতি করেনি ।হয়তো প্রচন্ড কষ্টে সাময়িক এরকম হতেই পারে ।হয়ত পরে ভুলে যাবে। -
-বাবা আজ ১ তারিখ ।তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলেছ তো ?
-আচ্ছা তুই কি সত্যিসত্যি ওকে মারবি ?
-তোমার এখনো কি বিশ্বাস হচ্ছে না ।আর হ্যা ,এখন আমাকে হাজার বিশেক টাকা দাও তো । আর তোমার গাড়িটাও ।
-কেন ?
-এখন এতো কথা বলো না । সন্ধ্যায় আমি এক জায়গায় যাব ।তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে কিন্তু ।
*** -
আমরা যাচ্ছি আশিসের হবু বৌয়ের বাসায় ।ওর বৌয়ের জন্য একটি টুকটুকে লাল বেনারসি কিনেছি।বাবাকে দেখিয়েছি শাড়িটা ।বাবা কিছু বলেননি ।শুধু চোখ মুছেছেন । এখন অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।খালি খুশি লাগছে আমার।নিজের আনন্দ বিলিয়ে দেবার খুশি।
গল্পটা তো ভালোই, তবে ফন্টের এই অবস্থা কেন ?
থ্যাংকু আপুনি।আর ফন্টের সমস্যার জন্য মাফ চাইতেছি …………….।
আরে পাগল মেয়ে, মাফ চাওয়ার কী আছে ? ফন্টের সমস্যা কি তোমার পিসির কোন প্রবলেমের কারণে ?
হুম আপু। 🙂
এমনটা হবে বুঝি নাই, মিষ্টি লাগল!
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য থ্যাংকু আপু।