এক বন্ধুর শ্যালিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে, পাত্র পিএইচডি স্টুডেন্ট। বন্ধুটি সারা জীবন পিএইচডি করার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে আসলেও এবার সে মনস্থির করেছে পিএইচডি করবে বলে এবং এই উপলক্ষে আমার সাথে তার যোগাযোগ। তার পিএইচডি করার কারণ হলো, শ্বশুড়বাড়িতে তার ইজ্জত নিয়ে টানাটানিতে দড়ি ছিঁড়ে যায়যায় অবস্থা, দড়ি ছিঁড়ে গেলে তা বেয়ে উপরে উঠা বেশ মুশকিল হয়ে যায়, নিচুতে আর কাহাতক বসে থাকা 😀 -ছোট মেয়ে জামাইয়ের চাইতে বড় মেয়ে জামাইয়ের ইজ্জত কমে গেলে প্রবলেম! বন্ধুর ভাষায় ছোট মেয়ের জামাইয়ের পিএইচডির বিপরীতে বড় মেয়ের জামাইয়ের মাস্টার্স অনেকটা ইজ্জতহানির মতো। বুঝলাম পৃথিবীর হাওয়া বেশ বদলে গেছে এবং ইজ্জতের পরিমাপক হিসেবে ডিগ্রী এখন একটা ফ্যাক্টর। :thinking:
আর একটা জিনিস ভেবে পুলকিত হলাম যে আমি চাকরী ছেড়ে পিএইচডি শুরু করে খুব একটা ভুল করিনাই। শত আকাম-কুকাম করলেও পিএইচডি আমার ইজ্জতের ঝান্ডা শ্বশুড়বাড়িতে তুলে ধরবে-এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হলাম। 😛
এক বন্ধুর মনে হলো, সৃষ্টিকর্তা তার উপর অবিচার করেছে। কারণ হলো, তার বাবা-মা সরকারী চাকুরিজীবি হওয়াতে আয়-রোজগার কম, তাই তাকে ধনী হবার পথের যাত্রা একদম শুন্য থেকে শুরু করতে হচ্ছে। অন্যদিকে তার এক বন্ধু যে কিনা তার চাইতে কম মেধাবী, ডিগ্রীর বহর কম সে অলরেডি নিউ ব্র্যান্ড বিএমডব্লিও চালায়, কারণ তার বন্ধুটির পিতা একজন শিল্পপতি।
এই যে আমাদের সমাজের প্রায় সবার বড় হবার ইচ্ছা, বাকি সবার চাইতে নিজেকে উঁচা দেখানোর চেষ্টা এটার একটা সুন্দর নাম হতে পারে ‘ইবলিশ শয়তান ইফেক্ট’।
আদমকে সেজদাহ করতে হবে-আল্লাহর এমন আদেশের জবাবে ইবলিশের জবাব ছিলো, ‘আমি আগুনের তৈরী, আমি এতো বছর ইবাদত করে ফেরেশতাদের সর্দার হয়েছি, আমি কিভাবে মাটির তৈরী আদমকে সেজদাহ দিবো’।
আমাদের সবার এখন হয়েছে ইবলিশ দশা। আমার ডিগ্রি বেশি, সুতরাং আমার ইজ্জত বেশি। আমার জিপিএ বেশি, সুতরাং আমি এলিট। আমি অমুক নামদার, ইজ্জতার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি-তাই আমার সন্মানের আসন অনেক উঁচুতে। অন্যকে নিচুতে নামিয়ে আমরা বেশ আনন্দ পাই। আমরা জিতার জন্য জিততে চাইনা, অন্যকে হারানোর জন্য জিততে চাই।
অন্যকে নিচু দেখিয়ে নিজেকে উঁচা সমাজের বাসিন্দা হিসেবে প্রমানের চেষ্টা তথা ইবলিশ ইফেক্ট যতদিন আমাদের মাঝে থাকবে ততোদিন পর্যন্ত আমরা সম্ভবত নিজের, সমাজের বা দেশের কোন কাজেই আসবোনা।
(আগে অন্য কিছু প্লাটফর্মে নিয়মিত ব্লগিং করলেও এখন আমি নিয়মিত ব্লগার নই, ফেসবুক স্ট্যাটাস সাইজের লেখা সরবে ব্লগ পোস্ট হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছি আলসেমির কারণে। একটানে এই লেখাটা লেখার সময় সরব বোহেমিয়ান এর লেখা ‘এরশাদ সিনড্রম’ এর কথা মাথায় ছিলো)
বটমলাইন: আমাদের মধ্য থেকে ইবলিশ ইফেক্ট দূর হোক।
আমরা জিতার জন্য জিততে চাইনা, অন্যকে হারানোর জন্য জিততে চাই।
খুব সহজ করে লিখে ফেললেন দেখে ভালো লাগলো……নিজেরা না বদলালে আসলে কিছুই হবে না…বুকে হাত দিয়ে ক’জন বলতে পারে সত্যিকারে উচ্চডিগ্রীর/ক্ষমতা ইত্যাদির একজনের চাইতে একদম সাধারণ সহজ একজন মানুষকে সে বেশি মূল্য দেয়? কথায় না, কাজে, বাস্তবে??
🙁 🙁
এই ব্যাপারটা সবসময়েই কষ্ট দেয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই অন্যের চেয়ে বড় দেখানোর বিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে। অনাবিলের সাথে একমত, আসলেই কয়জনকে পাবো আমরা অমন যারা কথায় না কাজেও প্রমাণ দেয় ?
“ইবলিশ ইফেক্ট” এর চেয়ে সার্থক নামকরণ বোধ হয় সম্ভব ছিল না। :clappinghands:
“অন্যকে নিচু দেখিয়ে নিজেকে উঁচা সমাজের বাসিন্দা হিসেবে প্রমানের চেষ্টা তথা ইবলিশ ইফেক্ট যতদিন আমাদের মাঝে থাকবে ততোদিন পর্যন্ত আমরা সম্ভবত নিজের, সমাজের বা দেশের কোন কাজেই আসবোনা।”
খুব সহজে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন। শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও আমাদের সমাজটা এখন এরকম অনেক অসুস্থতায় আক্রান্ত!!
মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন, খুব দ্রুত।
হুম বুঝলাম,
তবে এই যুগে প্রতিটা মানুষ ই পন্য। প্রথমে টিকে থাকা, পরে বেঁচে থাকা, তারপর ভালোভাবে বেঁচে থাকা… এবং মানুষের অভাব লিমিটলেস।
তবে একটা সময় সবারই বুঝা উচিত কখন পন্য থেকে মানুষ হতে হবে। সমাজ কি চায়?
মানুষ না পন্য?
নামকরন অসাধারন হয়েছে 😀