প্রচীনকাল থেকেই মানুষ সাধনা করে আসছে কিভাবে অমর হওয়া যায় তার একটা উপায় বের করার জন্য। কেউ করেছে অমৃতের সন্ধান, কেউ চেষ্টা চালিয়েছে ধ্যান সাধনা করে, আবার কেউ নিয়েছে যাদুবিদ্যার সাহায্য। অন্যদিকে অধিকাংশ মানুষের কেউ আশ্রয় নিয়েছে বহুজন্মবাদ বিশ্বাসে কিংবা তৃপ্ত হতে চেষ্টা করেছে মৃত্যু পরবর্তি জীবনে বিশ্বাস স্থাপন করার দ্বারা। উদ্দেশ্য একটাই- জীবনটাকে যদি কোনভাবে অমর করা যেত…
এখন আধুনিক যুগে সেইে একই উদ্দেশ্যে অমরত্বের সন্ধানে গরু-খোঁজায় (গবেষণা করায়) যোগ দিয়েছে আধুনিকতম বিজ্ঞানের জ্ঞানীগণ। কিন্তু ফলাফল- মৃত্যুঞ্জয়ী হওয়ার সাধ পূরণ হয়নি এখনও। তবু চির-অতৃপ্ত মানুষ নেই থেমে। চলমান লেখাটিতে সংক্ষেপে আমি সেই দিকগুলোই তুলে ধরব যা আমাদের বয়স বৃদ্ধির জন্য দায়ী, যে ভ্যাম্পায়ার ফ্যাক্টগুলো আমাদের অমরত্বের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজ্ঞান কতটা এগিয়েছে ও কতটা আগানোর সুযোগ রয়েছে।
বয়স বৃদ্ধি হল মানুষের স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি চলতে থাকে। আমাদের এই বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া মূলত ঘটে কোষীয় পর্যায় থেকে । যদিও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞান এখনও অনেক প্রশ্নর উত্তর দিতে পারেনি তবুও একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ ধারণা দিতে চেষ্টা করেছে বেশ কয়েকটি মতবাদ।
যেমন: “disposable soma” মতবাদ অনুসারে প্রতিটি অভিব্যক্তিগত পরিবর্তন (evolutionary adaptation) একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। যেমন- একটি জীন (gene)তার বিকাশের (expression) সময় যে শক্তি, সময়, পদার্থ অপচয় (!!) করে তা পরবর্তিতে অন্য কোন প্রক্রিয়ায় আর ব্যয় করা যায় না কিংবা এনট্রপির যে পরিবর্তন হয় তা-ও রিভার্ট করা যায়না। ফলে নির্দিষ্ট কোন জীবের ক্ষেত্রে একইসাথে বংশবৃদ্ধি ও ক্রমাগত বিকাশ তথা বেঁচে থাকা সম্ভব হয়না। কিন্তু অনন্তকাল বেঁচে থাকার চেয়ে বংশবৃদ্ধিটাই প্রকৃতির কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ । সুতরাং মৃত্যুটাই নিয়তি হয়ে যায়। ।
মৃত্যুকে ‘আত্না-ত্যাগ’ বা ‘দেহ-ত্যাগ’ যাই বলিনা কেন এতটুকু নিশ্চিত যে, আমার সাথে এই দেহটা আর থাকেনা; হয়ত মাটির সাথে মিশে যায়। কিন্তু ‘আমি’ তথা ‘আমার আত্নাটা’ যায় কোথায় ?!! ইহার সমাধান ধর্ম কিংবা দর্শনের হাতে দেয়াই ভাল, ওদিকে আর না এগোই। যাহোক, এতটুকু নিশ্চত হলাম যে, বয়স বৃদ্ধিরই অনিবার্য ফল মৃত্যু এবং মৃত্যকে রুখতে হলে আমাদের ‘বয়স বৃদ্ধি’ প্রকৃয়াটির বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নামতে হবে
সুতরাং, এখন মৃ্ত্যু নিয়ে বিজ্ঞানের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু দেখার চেষ্টা করি।
মৃত্যু মূলত দু’টি ফ্যক্টর এর ওপর নির্ভর করে-
প্রথমত: দেহের অভ্যন্তরীন কারণ ‘কোষের বয়স বৃদ্ধি ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া’ এবং
দ্বিতীয়ত: দেহের বাইরের কারণ হল নানারকম দুর্ঘটনা (রোগবালাই, অনশন, হত্যা, আত্নহত্যা ইত্যদি) ।
জেনেটিক্যালি উন্নত কেউ হয়ত রোগে কম আক্রান্ত হবেন, মানসিক ও শারিরীক সুস্থতার কারণে কিছুটা দীর্ঘায়ু পাবেন কিন্তু মৃত্যুর বাহ্যিক কারণগুলো কোনভানবই সম্পূর্ণ এড়ানো যাবেনা। সুতরাং অমর হতে এটা নিয়ে মাথাব্যথা করে আমাদের লাভ নেই।
এবার তাহলে আসি- ‘কোষের বয়স বৃদ্ধি ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া’ কেন ঘটে সে বিষয়ে ও কোনভাবে রোধ করা যায় কি না। অনেকগুলো কারণ বা ফ্যাক্টর এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। যেমন:
>বেশীরভাগ বিজ্ঞানীই একমত যে প্রোটিন, লিপিড, নিউক্লিক এসিড (DNA/RNA) ইত্যাদি যেসব মলিকুলগুলো দ্বারা আমাদের কোষ তৈরী সেগুলোর ক্রমাগত ক্ষয়ে (Damaged) যাওয়া কোষ ধ্বংসের অন্যতম অনুঘটক। কারণ এই ক্ষয়-ই পরিণতিতে দেহের টিস্যু, অঙ্গ ও স্বাস্থকে নষ্ট করে দেয়।
কিন্তু প্রশ্ন হল damage টা শুরু হয় কোথায় কিভাবে ও কেন?
প্রথমেই আসি অক্সিজেনের কাছে, আমাদের সবার পরিচিত ও দেহের ভাইটাল উপাদান। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল একেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কোষের তথা আমাদের বয়স বৃদ্ধির culprit হিসেবে। সাধারণত একটি অক্সিজেন মলিকুল (O2) চারটি ইলেকট্রন গ্রহন করে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পানিতে পরিণত হয়। কিন্তু যদি একটি অক্সিজেন মলিকুল মাত্র একটি বা দু’টি ইলেকট্রন গ্রহন করে তবে তা খুব দ্রুত বিক্রিয়া করতে সক্ষম অস্থায়ী মৌলে পরিণত হয় যাকে বলে- reactive oxygen species (ROS). এই ROS গুলো দেহের বিভিন্ন জৈবযৌগের অনু থেকে তাদের ইলেকট্রন চুরি বা ডাকাতি বা ছিনতাই করে নিয়ে যায়, পরিণতিতে জৈব অণুটি সর্বস্ব হারিয়ে ধাবিত হয় ধ্বংসের দিকে। এই ROS গুলো আমাদের জীন এর মিউটেশন ঘটিয়ে দিতে পারে, আমাদের কোষের যে আবরণ plasmamembrane তার একটি উপাদান লিপিডের damage ঘটাতে পারে, এমনকি ROS গুলো দেহের প্রতিটি কাজের জন্য যে প্রোটিন অত্যাশ্যক তার ক্ষতি সাধন করে।
অক্সিজেন ছাড়াও আরো কিছু মলিকুল এর Free Radical দেহে তৈরী হয় যার সবগুলোই একইভাবে আমাদের Aging এ ভূমিকা পালন করে।
>‘কোষের বয়স বৃদ্ধি ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার’ আরেকটি মৌলিক যে কারণ বিজ্ঞান বের করেছে তা হল- ‘Shortening of telomere ’ । আমাদের কোষের ক্রোমজমে যে টেলোমেয়ার থাকে তাকে বলা যেতে পারে ‘কোষের সময়রক্ষক’ (Cellular timekeeper)। প্রতিটি সেল এ এরকম প্রায় ৯২ টি সময়রক্ষক/ ঘড়ি থাকে। প্রত্যেকবার কোষ বিভাজনের আগে কোষ সবগুলো ক্রোমোজম কপি করে নেয় যাতে ডটার সেলটি সম্পূর্ণ একসেট ক্রোমোজম পেতে পারে। কিন্তু এই কপি করার প্রক্রিয়ার কারণেই নতুন কোষের ক্রোমোজোমটি পূর্বের থেকে সামান্য খাট হয়, অর্থাৎ ক্রোমোজমের প্রান্তের কিছু অংশ কপি হয়না। ফলে প্রতিটি কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজম খাট হতে থাকে। এবং এভাবে চলতে চলতে যখন ক্রোমোজমের সাইজ একটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে কোষটি বিভাজিত হওয়া বন্ধ করে দেয়। পরিণতিতে কোষ বিভাজন থেমে যায় ও একসময় জীবটির জীবনের চাকাও বাধ্য হয় থেমে যেতে।
উপরের দু’টি বাঁধা পেরোতে পারলে যে অমরত্ব অনেকটা হাতে চলে আসবে সন্দেহ নেই। ROS এর বিরুদ্ধে কাজ করে এমন উপাদান আমাদের কিছু খাদ্যেই রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant) সমৃদ্ধ খাবার যেমন- সেলেনিয়াম, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি ইত্যাদি খাওয়ার দ্বারা এবং একইসাথে ROS তৈরী করে এমন খাবার কম খাওয়ার মাধ্যমে আমরা মৃত্যুকে ঠেকাতে না পারলেও জীবনকে একটু বেশী সুস্থভাবে যাপন করতে পারি।
অনেক কসমেটিক্স সামগ্রীতেও আজকাল যৌবন ধরে রাখার উপাদান হিসেবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ নানা উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে !!!
অন্যদিকে ‘Shortening of telomere ’ এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞান তেমন কিছু করতে না পারলেও আমাদের একটা আশার আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছে যে- টেলোমারেজ (telomerase) নামের একটি এনজাইম আমাদের বেশীরভাগ কোষেই থাকে, কিন্তু তা জন্মের পূর্ব থেকেই turn off করা থাকে। এই এনজাইম টেলোমারের দৈর্ঘ্য বাড়াতে সক্ষম। কোনভাবে এটিকে যদি turn on করা যায় বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে তৈরী করে দেহে ঢুকিয়ে দেয়া যায় ও তার দ্বারা আমাদের ক্রোমোজমগুলোকে অক্ষত রাখা যায় তাহলে হয়ত আমরা পারব আমাদের আয়ুকে কাঙ্খিত মাত্রায় বৃদ্ধি করতে। To know more visit here.
স্রষ্টা প্রকৃতিতেই যেমন আমাদের জীবন রক্ষার উপাদানগুলো রেখে দিয়েছেন, তেমনি এই প্রকৃতির মধ্যেই মৃত্যুর অমোঘ নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। যদিও ‘Death is the greatest leveler’ তবু মানুষের চেষ্টা থামেনি মৃত্যুকে জয় করার। অন্তঃত কিছুটা সময় বেশী বাঁচার সাধ মেটাতে হয়ত নিরন্তর চলবে মানুষের সাধনা।
দারুণ ইংরেজি টার্মগুলা হঠাত মাঝে দিয়ে এসে এসে কিছুটা বাগড়া বাধিয়ে গেলো যদিও পড়তে ভালই লাগছিলো।
নৈতিক ব্যাপারটা ভেবেছেন? যেমন ধরেন এইটা কি এমন করবে না ধনীরা অনেক দিন বাঁচবে (বাঁচার অধিকার সুযোগ থাকবে) আর গরীবরা অল্প?!
টেলোমারেজ এখনো টার্ন অন হয় নাই, চিন্তা নিয়েন না ভাইয়া। 😛
টেলোমারেজ যদি বাই চান্স টার্ন অন হয়েই ব্যাপারটা পৃথিবীর জন্য খুব ভালো হবে বলে মনে হয়না অবশ্য!!!
Thanks Bohemian bro…
Vaia Scientific kisu likfte gele kisu english term na likhe parai jayna… 🙁
Yet I will try to use pure Bangla words for next posts…
Morality?!! Good hok ar bad hok we must admit that “Survival for the fittest”. Goribra to akhono shoshito hosse, takar avabe anek medical treatment nite parse na…
Is there anything to stop this?!
ফার্স্ট-সেকেন্ড ইয়ারের পড়াগুলো রিভিশন দিলাম লেখায়! 😛
লেখা ভালো হয়েছে, কিছু মজার ছবি আশা করেছিলাম। সেগুলো যোগ করলে দারুণ হতো!
তবে লেখায় কঠি ব্যাপারগুলো সহজে তুলে আনার জন্যে একটা ধন্যবাদ অবশ্যই লেখকের প্রাপ্য। :beshikhushi:
Sobigulo amar agei deyar issa silo, uchit silo, but tar sujog silona 🙁
Jak, akhon diye dilum 🙂
Thanks for inspiring me…
জ্ঞানী পোস্ট।
সুন্দর হইসে ! :love:
Thank you Pothik vai 🙂
কোন জনমে পড়া বায়োলোজিক্যাল টার্মগুলো মনে হয়ে গেল আবার। টেলোমিয়ার এই জিনিসটা মাথায় ঢুকত না আমার। এখনও অনেক কিছুই আধা আধা বুঝলাম। তবে জটিল লাগল যেটা, এই পিচ্চিতম কোষের মধ্যে আল্লাহ কত সূক্ষ্ম সব প্রসেস করে রেখেছেন, আর তা দিয়েই আমরা চলছি। এই মন্তব্যটা ভেবে যে লিখছি, এর মাঝেই কত হাজার বিক্রিয়া, সিগনাল চলে গেল কোষে কোষে !!
ইন্টারেস্টিং পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
এই যে আমি আপনার মন্ত্যব্যের রিপ্লাই দিচ্ছি সেই মুহূর্তেই ঘটে যাচ্ছে কত সহস্র ঘটনা এই ছোট্ট দেহটার ভেতরে।
কত জটিল সব জিনিসপত্র ভেতরে ও কঠিনভাবে রেগুলেটেড সব প্রক্রিয়া !!!
ভাবতেই অবাক লাগে; আর স্রষ্টার প্রতি অবচেতনভাবেই মাথাটা নত হয়ে যায়…
জ্ঞানী পোস্ট।
কঠিন ভাষাকে সহজ করে তুলে ধরা হয়েছে। :love: :love: :love:
Thanks brother.
বিষয়গুলো আসলেই আরো অনেক কঠিন ও বিস্তারিত।
আমি চেষ্টা করেছি খুব অল্পতে যতটা জানানো যায়…
অনেক ভাল লিখেছেন জনাব… :happy:
ধন্যবাদ জনাব…
মরে গেলে মানুষ আকাশে চলে যায় – ছোটবেলায় শুনতাম!!
আপনি তো আকাশ, তো ভাই বলেনতো এতো মানুষ আপনি রাখেন কই?? 😛
এরকম লেখা পড়তে গেলে দাঁত ভেঙে যায়। 🙁 কঠিন বিজ্ঞান! তারপরেও বুঝলাম লেখা ভালো হয়েছে। 😀