যারা কথায় কথায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে ‘পিছিয়ে পড়া’ বলে আখ্যা দিতে আনন্দবোধ করেন, তারা সাধারণত সুযোগ পেলেই “মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন… আধুনিকীকরণ প্রয়োজন” টাইপের মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে থাকেন। হ্যাঁ, কথাটা আংশিক সত্য বটে। কিছুটা আধুনিকীকরণের আসলেই প্রয়োজন আছে বৈকি! কিন্তু এ ব্যাপারে বাস্তবতা হল, একদিকে যেমন নীতিনির্ধারকগণ মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য ‘নিরলস পরিশ্রম’(?) করে যাচ্ছেন বলে দাবি করে থাকেন, তেমনি অপরদিকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের যেন রীতিমত হিমশিম খেতে হয়, এবং শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে হয়, সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেন!
কীভাবে? সেটাই একটু দেখার চেষ্টা করা যাক।
আমাদের সংবিধানের ২৮(৩) নং অনুচ্ছেদ বলছে,
“কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।”
এছাড়া সর্বশেষ প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ এ শিক্ষার ৩০টি ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ এর ৮ নং ধাপে বলা হয়েছে,
“বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা। শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।” ((‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ এর পিডিএফ ডাউনলোড লিঙ্ক))
কিন্তু সংবিধান বা শিক্ষানীতিতে যাই থাকুক না কেন, উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে অহেতুক শর্তারোপ করার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করা এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা একটু খোঁজখবর রাখেন তাদের জন্য পুরনো খবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় প্রতিবছরই মাদরাসা শিক্ষার্থীরা প্রথম সারি দখল করে নিলেও তারা কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২৬টি বিভাগের মধ্যে ১৩টিতেই ভর্তি হতে পারে না (সর্বশেষ ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের নীতিমালা অনুযায়ী)! উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজিতে ২০০ নম্বরের শর্তারোপ করে ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বপ্রথম বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করে। এরপর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে শর্তারোপ করা হয়। ২০০৮ সালে বেশ কয়েকটি বিভাগে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে ফের শর্তারোপ করে বিশ্ববিদ্যালয়। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রশাসন সব বিষয়ে ভর্তির শর্ত তুলে নেয়। ২০০৯ সালে প্রশাসন আরও কয়েকটি বিভাগে শর্তারোপ করে। বিষয়গুলো হচ্ছে – ভাষাবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অর্থনীতি, উন্নয়ন অধ্যয়ন এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতি। এরপর ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে সমাজবিজ্ঞান বিভাগেও ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়। সর্বশেষ গত বছর (২০১২ সালে) তিনটি বিষয় শর্তারোপ করা হয়েছে। বিভাগগুলো হচ্ছে – আইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা (ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি স্টাডিজ) ও পপুলেশন সায়েন্স। ((সূত্রঃ মানবজমিন – বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২))
এখানে একটু বলে নেয়া দরকার, স্বাভাবিকভাবেই মাদরাসা শিক্ষার্থীদেরকে কুরআন ও তাফসীর, হাদীস ও উসূলুল হাদীস, আরবী ১ম ও ২য় পত্র, ফিক্হ্ ও উসূলুল ফিক্হ্ এর মত কিছু বিষয় অন্যদের চাইতে বেশি পড়তে হয়। তাই অ্যাডজাস্ট করার জন্য বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে তাদের পরীক্ষার নম্বর থাকে ১০০ করে। কিন্তু পরীক্ষাটা ১০০ নম্বরের হলেও মূল বিষয়গুলোতে তাদের আদৌ খুব বেশি ঘাটতি থাকে না। বাংলার ক্ষেত্রে শুধু উপন্যাস বা নাটক ধরণের সহপাঠ বাদ দিয়ে সাহিত্য, ব্যাকরণ, রচনা সবই পড়তে হয়। যেই রচনা অন্যরা ২০ নম্বরের জন্য লিখে, সেটাই তারা ১৫ নম্বরের জন্য লিখে। ইংরেজির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। Vocabulary Test, Filling Gaps টাইপের প্রশ্নে প্রতি শূন্যস্থান পূরণের জন্য অন্যরা ১ নম্বর পেলে তারা পায় ০.৫ করে। অন্যরা ৩০ নম্বরের জন্য Paragraph, Application, Composition লিখলেও তারা ঐ একই জিনিস লিখে ২০ নম্বরের জন্য। এভাবেই নম্বরটা অ্যাডজাস্ট করা হয়। আমি বলছি না যে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে তাদের কোনই সীমাবদ্ধতা থাকে না। তবে মূল পার্থক্যটা আসলে এই জায়গাতেই।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মজার ব্যাপার হল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত বিষয়গুলোর কোথাও “এই বিভাগে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে না” – এই ধরণের ঘোষণা দেয় না। বরং প্রতিটি বিষয়ে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয় যাতে তাদের ভর্তির পথ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়! বেশিরভাগ বিষয়ের জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা ও ইংরেজির প্রতিটিতে ২০০ নম্বর করে পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে। আর অর্থনীতি ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে যে, ‘ইসলামী অর্থনীতি’ (যেটা মাদরাসায় আলিম শ্রেণিতে পড়ানো হয়) উচ্চ মাধ্যমিক অর্থনীতির বিকল্প বলে বিবেচিত হবে না! ((ঢাবি’র ‘খ’ ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ ভর্তি নির্দেশিকার লিঙ্ক। তবে সম্ভবত ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়েই কেবল এটা দেখা যায়))
শর্তগুলো নিতান্তই হাস্যকর। এমন একটি উদাহরণ হল, ভর্তি নির্দেশিকার অংশ থেকে নেয়া নিচের ছবিটির মাঝের কলাম থেকে জানা যাচ্ছে, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য প্রার্থীর উচ্চ মাধ্যমিক/আলিম পরীক্ষায় বাংলা অথবা ইংরেজি থাকতে হবে, অপরদিকে ডানপাশের কলামে দেয়া শর্তের মাধ্যমে আলিম পরীক্ষা দিয়ে আসা ছাত্রদের সুযোগ সম্পূর্ণ নাকচ করে দেয়া হয়েছে!
প্রশ্ন হল, যারা ভর্তি পরীক্ষায় অসংখ্য মেধার ভীরে নিজেদেরকে বিকশিত করতে সক্ষম হয়, তারা বাংলা ও ইংরেজিতে কত নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে আসলো, তাতে কী আদৌ কিছু আসে-যায়? এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের প্রভাবটা ঐ বিষয়গুলোর পরবর্তী শিক্ষাজীবনে আসলে কতটুকু? আমার অভিজ্ঞতা বলে, অনেকে এমনকি এ ধারণাও পোষণ করেন যে বাংলা ও ইংরেজি ১০০ নম্বর করে পড়ে আসার পর ‘অযোগ্য’(!) হওয়া সত্ত্বেও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় টপ-রেজাল্ট করে থাকে নিতান্তই ‘ভাগ্যের জোরে’ (যদিও আমার বিবেচনায় এটা অসম্ভব)! তাছাড়া ঐ ১ ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষায় মেধার সঠিক মুল্যায়ন হয় না। ফলে ভর্তির পর বিভাগে তাদের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, আর তাই তাদের ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাটা নাকি যুক্তিযুক্ত! বটে…!! সেক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্যে আমার কথা হল, অনুগ্রহ করে নিষিদ্ধ হওয়া বিভাগগুলোর ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আইন বিভাগে গিয়ে ২০১২-১৩ সেশনে শর্তারোপ করার আগের ৫/৬টি ব্যাচের খোঁজ নেন, তবে ১ম, ২য় কিংবা ৩য় স্থানে কোন মাদরাসা শিক্ষার্থী নেই এমন ব্যাচ খুঁজে পাওয়াই আপনার পক্ষে দুষ্কর হবে! তাহলে এরপরেও আইন বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয় কোন যুক্তিতে? অনুরূপভাবে শুধু আইন নয়, অন্যান্য বিভাগেও তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।
যাই হোক, এই পর্বে ‘খ’ ইউনিট নিয়ে যে কথাগুলো বললাম সেগুলো এর আগে বিভিন্ন সময় অনেকবার আলোচনায় এসেছে। মামলা হয়েছে, রিট হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে, মিডিয়ার আলোচনা ও রিপোর্টে এসেছে। কথাগুলো তাই পুরাতন। কিন্তু যে বিষয়টা নতুন, সাধারণত এতদিন সকলের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে, তা হল মাদরাসায় আলিমে সায়েন্স গ্রুপে পড়ে আসা শিক্ষার্থীরাও ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এক ধরণের হয়রানির শিকার হয়! আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এ বিষয়টা ভুক্তভোগী ছাড়া প্রায় সকলেরই অজানা! তাই পরের পর্বে কিছু ঘটনার উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে সে বিষয়টা তুলে ধরবার আশা রাখছি।
(২য় পর্বে সমাপ্য)
খুবই জরুরি একটা ইস্যু।
স্পষ্টত সংবিধান লঙ্ঘন এবং একই সাথে মানবাধিকার লংঘন বলেই মনে হয়!
ঘুরে ফিরে দুই আইডোলজির অসম যুদ্ধ আর কি …
কিন্তু, এই ছেলেমেয়েগুলার জন্য কেউ কিছু করতে পারবে না যদি না কোন এক সরকারের সুনজর না পড়ে………
এগজ্যাক্টলি… আমারও তাই মনে হয়!
ঢাবির কথা বলা যায়, তারা নিজস্ব একটি নীতিমালায় পরীক্ষা নিচ্ছেন যাতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা ‘এমনিতেই বাদ পরে যায়’ উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় আনছি, ঢাবির কোনো নীতিমালায় সরাসরি উল্লেখ করা হয় নি মাদরাসায় পড়লে কেউ ভর্তি হতে পারবে কি পারবে না। তাই কর্তৃপক্ষ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের দায় এড়িয়ে যেতেই পারে।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ পড়ে ছোটোবেলা থেকেই আমার মনে একটি প্রশ্ন ছিল। তাহলে বাংলাদেশ ‘মাদরাসা’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকাটা সংবিধান্সিদ্ধ হয় কি করে। কোনো মাদরাসা ‘মুসলিম’ ছাড়া অন্য ‘ধর্মের’ কাউকে ভর্তি নেয় না! IUT শুধু মুসলিমদেরকেই সুযোগ দিচ্ছেন। সে যায়গায় অনেক মিশনারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসনীয় কাজ করে দেখিয়েছেন।
ঢাবির কথায় ফিরে আসি। ঢাবি যদি মনে করে ২০০ মার্কের বাংলা ও ইংরেজি না পড়ে কেউ ঐ বিশয়গুলোতে ভর্তি হতে পারবে না তাহলে সে নিয়ম তারা করতেই পারে। ধরুন এমন একটা নিয়ম করা হলো যাতে ইংরেজি মাধ্যমের কেউ আবেদন করতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে এতোটা বাঁকা চোখের স্বীকার হতে হত না। কিন্তু ধর্মের সাথে বিষয়টা জড়িয়েছে বলেই বিপত্তি।
ঢাবির ফার্মেসীতে পড়তে গেলে যেমন রসায়নে ন্যূনতম ১৫ স্কোর পেতেই হবে, এই নিয়মের মতোই উপরোক্ত নিয়মটি আমার কাছে যুক্তিযুক্ত ও স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এমন বৈষম্যের খুব সুন্দর সাফাই গাইলেন।
দারুন !
এরা কি এডমিশন টেস্ট না দিয়ে ,সবার সাথে প্রতিযোগিতা না করে , দেয়াল ডিংগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইছে মনে হয় !!!
একটু খেয়াল করবেন, আমি শুধু ঢাবির কথা এখানে বলি নি। সাথে মাদরাসা ও IUT এর উদাহরণ ও এনেছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের রিকোয়ের্মেন্টস্ আলাদা আলাদা হবে। সেটাই স্বাভাবিক।
এক হিন্দু মাদরাসায় পড়তে যাবে কোন দুঃখে,আমারে বুঝান রে ভাই !
আপনার হয়তো জানা নাই, পশ্চিম বঙ্গের মাদ্রাসাগুলাতে অনেক হিন্দু ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে।
কারন কি জানেন?
কারন ঐ দেশের সরকার তাদের সকল পাবলিক পরীক্ষায় মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের এক্সেস দেয়।
বাংলাদেশে মুসলিমরা বাদে কেউ নিজের ধর্ম ফালায়া আইসা ইসলামরে নিয়া স্টাডী করতে চায় না।
আর আইইউটি র কথা যে বলেন, আইইউটি কার প্রতিষ্ঠান, তা জেনে তার পরে কথা বইলেন।
ওআইসি তাদের প্রতিষ্ঠানে কাদের পড়তে দেবে এইটা তাদের ব্যাপার।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এমন বৈষম্যের তীব্র নিন্দা,ধিক্কার জানাই।
ভাইয়া, আপনি অনেক ভালো লজিক দেন। তবে “আপনার হয়তো জানা নাই” বা “জেনে তার পরে কথা বইলেন” এই বাক্যগুলো ব্যবহার করাটা অনেকেই পছন্দ করবেন না। সেখানে বলতে পারেন “আপনি জেনে থাকবেন” বা “আপনি হয়তো জানেন” 🙂 (শুধুই পরামর্শ)
আর ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য’ বিষয়টি বারবার বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। সে ক্ষেত্রে আবারো বলতে চাই ঢাবির সকল বিষয়ে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার দেয় না সেটা তো নয়। কিছু কিছু সাব্জেক্ট যদি তাদের জন্য একটি মিনিমান রিকোয়ের্মেন্ট তৈরি করে থাকে সেক্ষেত্রে এটা সংবিধান লংঘন হয় না বলেই মনে হয়। আমি উদাহরণে বলেছি বিেশষ বিশেষ সাব্জেক্ট এর বিশেষ রিকোয়ের্মেন্ট ফুলফিল করতে হয়।
বিষয়টা বুঝতে আরো সহজ হবে যদি এভাবে চিন্তা করেন, আমি ছোট বেলায় এটা জেনেই ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি হব যে বড় হলে আমি কিছু কিছু বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবো কিছুতে পাবো না, একই ভাবে কারিগরিতে পড়লে কিছুতে পাবো, কিছু পাবো না। সে ভাবেই বলা যায় মাদরাসায় পড়লে কিছু বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন কিছুতে পাবেন না। এটা আমাদের দেশের বহুমুখী শিক্ষাব্ব্স্থার একটা চিত্র। মাদরাসা বিষয়টি চলে এসেছে বলেই এখানে আপনি ‘রাষ্ট্রীয় বৈষমাই’, ‘বাম পন্থি বা কমিউনিস্ট’ এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। সাদা চোখে দেখলে এটা খুব বেশি বিচিত্র কিছু না বলেই মনে করি।
১.মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি এই এলারজির কারণ কি এইটা স্পষ্ট না।বিভিন্ন আলিয়া মাদ্রাসাগুলো থেকে পাস করা এতগুলো শিক্ষার্থীর জন্য চাহিদানুযায়ী কোন ইসলামী ইউনিভার্সিটি নাই।এরা যদি মেইনস্ট্রিমে আসতে চায় তবে আসতে দেওয়া উচিত বলেই মনে করি।আমি যতদুর শুনেছি ঢাবির বিভিন্ন বিভাগে মাদ্রাসায় এইচ এস সি পর্যন্ত পড়েছেন এমন শিক্ষক ও আছেন।এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এখনও যেসব বিভাগে পড়েন ভালোই রেজাল্ট করেন।তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড তাদের সাফল্যের পথে কাঁটা হয়নি।
২.”শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।” এই লাইন সংবিধানে আছে জানতাম না।এইটা বিবেচনায় আনলে প্রথমে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর উপরে খড়গ নেমে আসার কথা।
৩.পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসায় মুসলিম ভিন্ন অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীরা ও পড়তে পারে।তবে সেগুলো আমাদের মাদ্রাসার মত না।বিস্তারিত এখানেঃhttp://khabarsouthasia.com/bn/articles/apwi/articles/features/2012/12/06/feature-01
৪.
“IUT শুধু মুসলিমদেরকেই সুযোগ দিচ্ছেন। সে যায়গায় অনেক মিশনারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসনীয় কাজ করে দেখিয়েছেন।”
এই ব্যাপারটার সাথে একমত।তবে আবার একথাও প্রযোজ্য যে বিশ্বজুড়ে একটা সময় যে পরিমাণ মুসলিম বিজ্ঞানী ছিল বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ছিল তার অনেকটাই এখন আর নাই।যার দরুন OIC হয়তো ভেবেছে যে তারা পর্যাপ্ত টাকা-সুযোগ-সুবিধা ব্যয় করে কিছু তরুণ প্রকৌশলী তুলে আনবে।এটাতে দোষের কিছু দেখি না।সেটাই 🙂 আমিও সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালা থাকতেই পারে। যেমন IUT’র আছে। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ঢাবিতে একদমই যে চান্স দেওয়া হয় না তা যে ঠিক নয় সেটা আপানাদের বক্তব্যেই প্রমাণিত, কিছু কিছু শিক্ষকও সেখানে আছেন যারা মাদরাসা থেকে পড়েছেন।
আর যে যে বিষয়ে তারা সুযোগ কম পাচ্ছেন সেটা ঐ বিভাগের নিজস্ব নীতিমালার কারণে। একটা ন্যূনতম রিকোয়ের্মেন্টের কারণেই।
@আবদুল্লাহ আল ইমরান ভাইয়া…
১. বলতে/শুনতে খারাপ লাগলেও আসলে এটা স্পষ্ট যে এলারজির কারণটা রাজনৈতিক। আর কিছু না। আর আপনি ঠিকই জানেন, “মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এখনও যেসব বিভাগে পড়েন ভালোই রেজাল্ট করেন।তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড তাদের সাফল্যের পথে কাঁটা হয়নি।”
২. লাইনটা ‘সংবিধান’-এর না কিন্তু। আমি উল্লেখ করেছি ঐ কথাটা “‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ এ শিক্ষার ৩০টি ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ এর ৮ নং ধাপে বলা হয়েছে”
তবে এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি’র চাইতে স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের ‘প্রাইভেট ব্যাচ/টিউশনী’র উপর খড়গ নামাতেই মনযোগী দেখা গিয়েছে প্রশাসনকে।
৩. লিঙ্কটার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। পড়লাম। আর এ ব্যাপারে আরও কিছু স্টাডি করার ইচ্ছা তৈরি হল।
৪. এ ব্যাপারে কিছু বলার নাই। সামান্য যেটুকু ছিল, সৌরভ ভাইয়ার মন্তব্যের উত্তরে বলে দিয়েছি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@সাইব্রিয়ান সৌরভ ভাইয়া, আপনার মন্তব্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ। রিপ্লাই আলাদা আলাদাভাবে না দিয়ে একসাথে দেয়ার চেষ্টা করছি।
# আপনি বলেছেন, “ঢাবির ফার্মেসীতে পড়তে গেলে যেমন রসায়নে ন্যূনতম ১৫ স্কোর পেতেই হবে, এই নিয়মের মতোই উপরোক্ত নিয়মটি আমার কাছে যুক্তিযুক্ত ও স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।”
প্রথমতঃ আপনি যে স্কোরের কথা উল্লেখ করেছেন সেটা ‘ভর্তি পরীক্ষা’য় কত পেতে হবে সেই রিকোয়ারমেন্ট। আরও আছে, তাকে উচ্চ মাধ্যমিকে তাকে রসায়নে ন্যূনতম ‘এ’ গ্রেড পেতে হবে। আপনি যে “বিশেষ বিশেষ সাবজেক্ট এর বিশেষ রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল” করার কথাটা বলেছেন সেটা কিন্তু এতেই পূরণ হয়। সেটা করতে কেউ ব্যর্থ হলেও তাকে নিতে হবে এমন অযৌক্তিক দাবি আমি করি নি! একটু খেয়াল করবেন ভাইয়া, ফার্মেসীতে পড়ার জন্য রসায়নে ‘কত নম্বরের পরীক্ষা’ উচ্চ মাধ্যমিকে দিয়ে আসতে হবে সেটা কিন্তু বলা হচ্ছে না! কারণ? কারণ মাদরাসাতেও তারা রসায়নে ২০০ নম্বরের পরীক্ষাই দেয়। কাজেই ঐ দু’টি নিয়ম তুলনা করলে বোধহয় একটু ভুল হচ্ছে।
# আপনি বলেছেন, “মাধ্যমিকে উচ্চতর গণিত না থাকলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তে নেন না। যদিও তারা মাধ্যমিকে সাধারণ গণিত করেই আসেন।”
এই তথ্যটি একটু ভেরিফাই করে দেখবেন কি? আমি জানি সেটা আপনারই ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু ‘ক’ ইউনিটের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি নির্দেশিকাতে আমি এরকম কোন রিকোয়ারমেন্ট দেখছি না। সেখানে আমি দেখছি, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের জন্য প্রার্থীকে ‘উচ্চ মাধ্যমিকে’ পদার্থবিজ্ঞানে ‘বি’, গণিতে ‘বি’ গ্রেড এবং ‘ভর্তি পরীক্ষা’য় পদার্থবিজ্ঞানে ১২, গণিতে ১২ পেতে হবে। ‘মাধ্যমিকের উচ্চতর গণিত’ বিষয়ে সেখানে কোন কথা নেই।
আর মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি… এখানেও একই কথা, বিভিন্ন স্তরে প্রার্থীর *রেজাল্ট* দেখা হচ্ছে। *কত নম্বরের পরীক্ষা* দিয়েছে তা কিন্তু দেখা হচ্ছে না।
# আপনি বলেছেন, “ধরুন এমন একটা নিয়ম করা হলো যাতে ইংরেজি মাধ্যমের কেউ আবেদন করতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে এতোটা বাঁকা চোখের স্বীকার হতে হত না। কিন্তু ধর্মের সাথে বিষয়টা জড়িয়েছে বলেই বিপত্তি।” এই কথার সাথে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করছি। ইংরেজি মাধ্যমের কেউ আবেদন করতে না পারার নিয়ম করলে মানুষ বাঁকা চোখে দেখত না, এটা যেমন মানতে পারছি না; তেমনি বিষয়টা যে ধর্মের সাথে জড়িত এবং সেজন্য বিপত্তি হয়েছে সেটাতেও একমত হতে পারলাম না। হ্যাঁ, মাদরাসা ধর্মশিক্ষা দেয়ার প্রতিষ্ঠান বটে, কিন্তু এখানে ধর্মের কথা হচ্ছে না, কথা হচ্ছে প্রাপ্য অধিকারের।
# আপনি IUT’তে শুধু ‘মুসলিম’দেরকেই নেয়া হচ্ছে, এভাবে দেখলেন! শুধু এই পয়েন্ট থেকে দেখছেন কেন? এভাবেও তো বলা যায় যে, সেখানে শুধু ‘ছেলে’দেরকেই নেয়া হচ্ছে!! আসলে ব্যাপারটা হল, তারা হয়ত একটা নিজস্ব পরিবেশ তৈরি করতে চায়। সেখানে অন্যান্য যোগ্যতা থাকার পরও যেমন অন্য ধর্মের কোন ছেলে ভর্তি হতে পারছে না, তেমনি মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কোন যোগ্য মেয়েও সেখানে ভর্তি হতে পারছে না!! কিন্তু সেই ‘প্রাইভেট’ প্রতিষ্ঠানের সাথে ‘পাবলিক’ প্রতিষ্ঠানের তুলনা দেয়া কি আদৌ চলতে পারে?
# “মাদরাসায় মুসলিম ছাড়া অন্য ধর্মের কাউকে নেয় না” এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, সেখানে অন্য ধর্মের কেউ পড়তে চাইছে কি না? যদি চায়, তাহলে তাদের জন্য অবশ্য সুযোগ তৈরি করাই উচিৎ!
সর্বোপরি… ‘নিজস্ব নীতিমালা’ বা ‘মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট’ তো থাকতেই হবে, কিন্তু সেটা যুক্তিযুক্ত হওয়া চাই। সেটা *যোগ্যতার মাপকাঠি* হওয়া চাই। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিয়ে আসার পরও যদি ভর্তি পরীক্ষায় কেউ ১ম স্থান অধিকার করে নিতে পারে, এবং ‘মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি’ বিভাগে ভর্তি হবার পর সেখানেও যদি নিয়মিত ১ম সারিতে রেজাল্ট করে, তাহলে কোন যোগ্যতার অভাবে সেই বিভাগে অহেতুক ‘রিকোয়ারমেন্ট’ তৈরি করে তাদের ভর্তি বাধাগ্রস্ত করা হবে – এই বিষয়টা একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করে দেখার অনুরোধ রইল।
ভাই রে,আপনার অনেক ধৈর্য্য!
কি রকম এক কমেন্ট দিসেন,মাশাআল্লাহ…
ভাই, আই ইউ টী নিয়ে ২ টা ব্যাপার বলতে চাই,
১) আই ইউ টি “প্রাইভেট” নয়। “আন্তর্জাতিক” , এইটা “ইউ জি সি” এর ওয়েবসাইট এ আছে।
২)আই ইউ টি তে বর্তমান এ পি জি ডি তে একজন মেয়ে “অধ্যায়ন রত” আছেন। আই ইউ টি এই ব্যাপার এ অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিলেও, ছাত্রী মেস এর জমি না পাওয়া ও হোস্ট কান্ট্রি এই বিশয়ে কোন সারা না দেওয়াএ এটি থেমে আছে এবং শুধু পি এইচ ডি , পিজি ডি র ছাত্রি রে পরতে পারে ।
৩) মুসলিম নেবার বেপারে বলে, ” এক কালে মুসলিম রা শিক্ষা খাতে অনেক এগিয়ে ছিলেন। ওই রেনেসা ফির্ইয়ে আনতে এই উদ্যোগ ।
আমার কাছে এই জিনিসটা খুব ক্লিয়ার।
বাম কম্যুনিস্টরা এই সকল ডিপার্টমেন্ট দখল করে বসে আছে।আর সরকার তো তাদেরই।তাইলে আর কি চিন্তা!নিজের মতো করে মগের মুল্লুকের নিয়ম বানিয়ে নেয়া হয়েছে,
যারা আল্লাহ,রাসূল (সাঃ) রে বিশ্বাস করে,মানে,অনুসরন করে তাদেরকে আর কোনভাবেই এই সকল ডিপার্টমেন্ট ঢুকতে দেয়া যাবে না।
কিন্তু মজার বিষয় হলো,ভর্তি পরীক্ষায় আর্টসের ইউনিটে কিন্তু ওই মাদরাসার ছেলে মেয়েগুলাই তাদের প্রতি বিদ্বেষীদের মুখে লাথি মেরে ফার্স্ট,সেকেন্ড হয় আমাদের মত আমাদের মত কলেজ পড়ুয়াদের পিছনে ফেলে।
সবাই সব কিছু বুঝি কিন্তু কিছুই বলার নাই আর কি।
বললেই……………… :dhisya: :fire: :dhisya: :haturi:
ও আচ্ছা, সব ‘বাম কমুনিস্ট’ বসে আছে? আর আপনার কি ধারনা যারা ইংরেজি বা বাংলা মিডিয়াম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, তারা কেউ আল্লাহ-রাসুল মানে না? শুধু মাদ্রাসার স্টুডেন্টরাই মানে?
একটা জায়গা বা বিষয় সম্পর্কে একেবারেই না জেনে এরকম একটা মন্তব্য করে ফেলা কি উচিত?
ঢালাওভাবে কাউকে বলতে চাচ্ছি না।
আমি বুঝাতে চাইছি, মাদ্রাসার ছেলেগুলা সাধারনত আমাদের চেয়ে বেশী প্র্যাকটিসিং,যার ফলে ইসলাম কেন্দ্রীক মুভমেন্টে যদি এরা জড়িয়ে যায় তবে বামদের সমস্যা হয়ে যাবে নিশ্চিন্তে রাজনীতি করতে।
সব মিলিয়ে এই ছেলেগুলা তিনাদের মাথাব্যাথার কারন।
@একলা পথিক… ভাইয়া, আপনি সব মন্তব্যেই রিপ্লাই করে ফেলেছেন দেখছি। এবং বিষয়টা স্পষ্ট যে আপনি এই পোস্টের স্বপক্ষেই অবস্থান করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিনয়ের সাথে কিছু কথা বলতে চাইঃ
আপনার মন্তব্যগুলো লুক লাইক আ লি’ল বিট টূ এগ্রেসিভ। আমার মনে হয় এতটা এগ্রেসিভ হবার প্রয়োজন নেই। বরং আপনি যেই বিষয়টা বুঝেন তা যদি ‘টু দ্য পয়েন্ট’ জবাব দিয়ে অপরের ভুলগুলো ভাঙাতে পারতেন, তাহলে সেটাই বরং বেশি ভাল হত, তাই নয় কি? আমার মনে হয়, অন্য আর দশটা ব্লগে যেখানে আরও বেশি অহেতুক তর্ক হয়, এমনকি নোংরা গালাগালিও চলে, সেসবের সাথে ‘সরব’এর পার্থক্যটা এখানেই। আমি নিজেও সরবে নতুন। এবং ঠাণ্ডা মাথায় নিজের মতপ্রকাশ করার পরিবেশ আছে বলেই আমি এখানে।
আরেকটা বিষয়… এই ইস্যুগুলো নিয়ে শুধুই তর্ক চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে এই মুহূর্তে বোধহয় আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, আন্তরিকভাবে মানুষের ভুল ধারণাগুলো ভেঙ্গে সবার মিলিত প্রচেষ্টায় ঐ শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য ন্যায্য মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখা।
আমার মন্তব্যে ভুল বুঝবেন না আশা করি। ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
বুকে টেনে স্বাগতম ভাইজান !
আরেকটা বিষয় আনা প্রয়োজন, যেমন ধরুন মাধ্যমিকে উচ্চতর গণিত না থাকলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তে নেন না। যদিও তারা মাধ্যমিকে সাধারণ গণিত করেই আসেন। সাধারণ গণিত করাটেকে যদি কর্তৃপক্ষ ‘যথেষ্ট’ মনে না করেন তাহলে এখানে আর কি বলার আছে।
বিষয়ভিত্তিক এই শর্তগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষ ঠিক করার এখতিয়ার রাখেন , এখানে সংবিধান লংঘন বলে চালানো যায় না।
এইখানে সাধারন আর উচ্চতর বলে আলাদা দুইটা সাবজেক্ট আছে দাদা !
কিন্তু মাদরাসার স্টুডেন্টদের জন্য লেজ লাগায় দেয়া হইসে,তারা দুই পার্টে ইংরেজি পড়ে নাই।আর এই অপরাধে অল্প দুই একটা সাবজেক্ট ছাড়া সব সাবজেক্ট এর দুয়ার তাদের জন্য বন্ধ !!
তাইলে সরকার সিলেবাস বদলে তাদেরকে দুই পার্টে পড়াক।কিন্তু তা ও করবে না তারা।
মানে,এভাবেও খেতে দিবে না আর ওভাবে ও খেতে দিবে না।
মাদ্রাসা বোর্ড চাইলেও কি সরকার সিলেবাস বদলে দুই পার্ট পড়াবে না? দুইটা পার্টেরই তো দরকার আছে। একটা সম্পূর্ণই গ্রামার, অন্যটা লিটারেচার। বরং আমার মতে বাংলা মিডিয়ামের প্রথম পত্রটাও আরো সংস্কারের দরকার, সে জায়গায় কোনটা বাদ দিলে বা কমালে শিক্ষার মানে প্রভাব পড়বেই।
তবে আমার মতে কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষা ডিঙ্গিয়ে টেকে, তারপরো কয় পেপার পড়েছে সে কথার মাধ্যমে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হয় না।
“তবে আমার মতে কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষা ডিঙ্গিয়ে টেকে, তারপরো কয় পেপার পড়েছে সে কথার মাধ্যমে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হয় না।”
এই কথা আপু আমারো…
মাদরাসার সিলেবাস বদলানো সরকারের পক্ষে কতটা সহজ? এই সরকারই যে পরিবর্তনটা করেছেন (যেটা আগের থেকে তুলনামূলক উত্তম) সেটাই বা কতোজন প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন?
পরামর্শ ধন্যবাদের সাথে গ্রহন করা হইলো।
এই ব্যাপারে আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।
তালগাছ আপনারে দিলাম। :happy: :love:
ইংরেজিতে নাম্বার কম থাকায় প্রচুর ছাত্রছাত্রী প্রতিবছর পছন্দের সাবজেক্ট নিতে ব্যার্থ হয়, এটা শুধু মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বাধা দিচ্ছে তা না। মাদ্রাসার ছাত্রী না হয়েও আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও তা-ই। মাদ্রাসায় বাংলা ও ইংরেজি প্রবর্তন করার ফলে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার নাম্বার অনুযায়ী আগে এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়া হয়। বাংলা-ইংরেজিতে কাঙ্খিত নাম্বার যদি মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীরা না পেয়ে থাকে, সেই দায়িত্ব তো মাদ্রাসা বোর্ডের।
ইসলামী অর্থনীতি কেন উচ্চ মাধ্যমিক অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে? দ্বিতীয়টিতে যা যা পড়ানো হয় তা কি প্রথমটিতেও পড়ানো হয়? আর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে যারা অর্থনীতি পড়ে আসে না,তারাও তো বাদ পড়ে যাচ্ছে। এটা কি বৈষম্য হল? যে ক্রাইটেরিয়া পূরণ করবে না, সে-ই বাদ পড়বে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যদি ইচ্ছা থাকে পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষায় আসার, তাহলে উচ্চমাধ্যমিকে তারা কোর্স পালটে নিতে পারে আশা করি।
মোট নম্বরের যে প্রসঙ্গটা, সেটাতেই আসলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে প্রেজুডিস বা আপত্তির অভিযোগটা যথার্থ। কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে, তাহলে কত মার্কে পড়েছিল অতীতে সেটা বিবেচ্য হতে পারে না। শিক্ষকদের যদি মনে হয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা তাদের কোর্সের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, তাহলে ধানাই পানাই না করে সরাসরি বলে দেওয়া উচিত।
সমাজবিজ্ঞান ফ্যাকাল্টিতে পড়তে গিয়ে মাদ্রাসাপড়ুয়ারা কীরকম সমস্যায় পড়ে সেটাতো আমি নিজের চোখেই দেখেছি। অতীতের ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মিল না থাকলে মানিয়ে নেওয়া কি এতোই সোজা? ইংরেজি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা কি চাইলেই বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়তে পারে? যে ইস্যুগুলি ইসলামে সম্পূর্ন ইররেলেভ্যান্ট, সেগুলি আগ্রহ নিয়ে পড়তে অনেকেই মনস্তাত্তিকভাবে প্রস্তুত থাকে না। নেহাত বাধ্য হয়ে পড়ে যায়, শিক্ষা নেওয়ার মত কিছু আছে বলে মনে করে না। এরকম মনোভাব নিয়ে পড়তে চাওয়ার কি অর্থ সেটাই বুঝি না। বরং মাদ্রাসায় কিছু কর্মমুখি ট্রেনিং (প্রজেক্ট প্রোপোজাল লেখা, রিসার্চের উপযোগী স্টাটিস্টিকস ইত্যাদি) দিয়ে সরাসরি চাকরির বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা এর থেকে বেশি লজিকাল।
# আপনি “বাংলা-ইংরেজিতে কাঙ্খিত নাম্বার যদি মাদ্রাসা ছাত্রছাত্রীরা না পেয়ে থাকে, সেই দায়িত্ব তো মাদ্রাসা বোর্ডের” – কথাটা দিয়ে কী বলতে চেয়েছেন, তা বুঝতে আমি ব্যর্থ হয়েছি। যদি যোগ্যতার অভাবে কাঙ্ক্ষিত নম্বর না পাওয়া কোন শিক্ষার্থীর কথা আপনি বলে থাকেন, তাহলে তো সেটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু যদি আপনি তাদের ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে না পারার প্রসঙ্গে বলে থাকেন তাহলে বলি – বিষয়টা আসলে এতটা সহজ না। বাংলা ও ইংরেজিতে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা দেবার যোগ্যতা যে তাদের নেই, তা তো না। ব্যাপার হচ্ছে, তাতে করে যদি কুরআন-হাদীস তথা মাদরাসার মৌলিক বিষয়গুলোতে নম্বর কমাতে হয়, তাহলে তো বেশি চাপ পড়ে যাবে, তাই না? তাছাড়া মাদরাসা জিনিসটার স্বকীয়তাও তো ঐ বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করছে।
# “আর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে যারা অর্থনীতি পড়ে আসে না,তারাও তো বাদ পড়ে যাচ্ছে” – এই কথাটা বোধহয় ভুল আপু। ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকা যদি একটু খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন সেখানে অর্থনীতির বিকল্প হিসেবে গণিত কিংবা পরিসংখ্যান বিবেচিত হচ্ছে! কারণটা সহজ। গণিত বা পরিসংখ্যান এর বেসিক নলেজ দিয়ে একজন সহজেই অর্থনীতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। ঠিক তেমনি আপনাকে জানিয়ে রাখি, ‘ইসলামী অর্থনীতি’তে আগে সাধারণ অর্থনীতির মতই মূল বিষয়গুলো পড়ানো হয়, তারপর ইসলামের আলোকেও বিষয়গুলো পরিস্কার করা হয়। এবং সেই বেসিক দিয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভালভাবেই খাপ খাইয়ে নেয়া সম্ভব।
# আপনি সমাজবিজ্ঞান ফ্যাকাল্টিতে মাদরাসা পড়ুয়াদের সমস্যার কথা বলেছেন। আচ্ছা একটা প্রশ্ন, সমস্যা কী অন্যদের মোটেই হয় না? বাকিরা সবাইই কি সবসময় ভাল রেজাল্ট ধরে রাখতে পারে? ঠিক তেমনি যে তারা ভালও করছে অনেক জায়গায়? ফার্স্ট হচ্ছে? তার কী হবে?
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে আমার চিন্তাভাবনার। সাধারণ কেউ পিছনের সারিতে পড়ে গেলে আমাদের নজরে সেটা স্বাভাবিক হয়, আর মাদরাসা পড়ুয়া হলেই আমরা ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করি।
# সর্বশেষ আপনি বলেছেন, “এরকম মনোভাব নিয়ে পড়তে চাওয়ার কি অর্থ সেটাই বুঝি না” – এর উত্তর আপনার এই কথার ঠিক আগের লাইনেই আছে। তারা “নেহাত বাধ্য হয়ে পড়ে যায়।” যেমন একজন মাদরাসা শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট হল, অথচ সে তার স্বপ্নের বিষয় অর্থনীতি/আন্তর্জাতিক সম্পর্ক/আইন পড়তে না পারায় তাকে ইসলামিক স্টাডিজ নিতে হল! তবে সে কি তার আগ্রহ ধরে রাখতে পারে আপু? কী মনে হয়?
এসব ক্ষেত্রে ন্যায্য সুযোগটুকু পেলে হয়ত যেটুকু সমস্যা তাদের হয়, সেটা অনেকাংশেই কমে যেত।
যাই হোক… ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। 🙂
ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের নোটিশটা আসলেই হাস্যকর রকমের। সোজা কথা সোজায় বলে ফেললেই হয়, পেঁচিয়ে নিয়ম বানানোর কোন মানে নাই। মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের মেইন্সট্রিমে আসতে দেয়ার জন্য পথ করে দেয়াটা আমাদের দায়িত্ব, আর এইটা স্বাধীন দেশে নাগরিক হিসেবে অধিকার। আর তাছাড়া দফায় দফায় এত নিয়মকানুনই বা রদবদল করছে কেন ? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন কিন্তু করা হচ্ছেই, একটু ফাঁকফোকরে পড়ে বেঁচে যাচ্ছে বলে সত্যটা মিথ্যে হয়ে যায় না।
একদম ঠিক বলেছেন আপু! ধন্যবাদ আপনাকে। আসলেই এটা এখন আমাদেরই দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা বিষয়গুলো অনুভব করি।
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। নিয়মটি দেখে আপাত একে সংবিধান লঙ্ঘন বলেই মনে হয়। তবে উপযুক্ত যুক্তিতর্ক কিন্তু দুদিক থেকেই আসতে পারে।
প্রথমত আমি বলব minimmum requirement দ্বারা উল্লেখিত বিষয়গুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অনুপযুক্ত দাবি করা হয়েছে বিসয়টি আমরা এভাবে দেখছি কেন? বরং এটাও তো বিবেচনায় আনা যায় যে হয়তো ওই বিষয়গুলোই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত নয়?
সবগুলোর কথা আমি জানি না কিন্তু কিছু কিছু বিষয়গুলোতে যা বা যেভাবে পড়ানো হয় তা অনেকক্ষেত্রেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ, শিক্ষা বা জীবনবোধের পরিপন্থী বলেই মনে হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যদি উপযুক্ত ধারনা না নিয়ে চলতি priority দেখে ভর্তি হয় তবে পরবর্তীতে তার পক্ষে কিন্তু মানিয়ে নেয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
তাছাড়া পেশাগত দিক বিবেচনায় আনলে বলা যায় এসব বিষয়ে পাশ করে মুলত বিসয়সম্পরকিত যেসব পেশায় যাবার কথা চিন্তা করা যায় সেগুলো ধর্মসম্মত কিনা? যেমন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কি ল তে পড়ে তথাকথিত আইনব্যবসায় নিজেদের জড়ানোর কথা চিন্তা করবে? যদি না করে তবে আর ওতে পড়ে লাভ কি হল? শুধুই জানার জন্য??
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যাপক ভর্তুকি দেয় জানি। এর output সম্পর্কে যদি শুরুতেই এমন সন্ধেহের অবকাশ থাকে তাহলে তারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের শুধু শুধু entry দেবে কেন?
তবে যেভাবে মার্কামারা criteria র কথা বলে তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে তা তো নিসন্দেহে অযৌক্তিক। বিষয়টি খোলাসা করা দরকার। হয় তাদের সুযোগ দেয়া হোক না হলে বাদ দিতে চাইলে তা স্পষ্ট করা হোক যাতে প্রশ্ন না ওঠে।
আর একটা কথা উচ্চশিক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত বিষয়গুলো কিন্তু মাদ্রাসা বোর্ড নির্ধারণ করে দিতে পারে। তাহতে আর কথার অবকাশ থাকে না।
পক্ষান্তরে আরও যা বলা দরকার… শিশু বয়সে একজন শিক্ষার্থী কোন লাইনে যাবে সে সিদ্ধান্ত পারিবারিকভাবেই নেয়া হয়। পরবর্তীতে সে mainstream এ আসতে চাইতেই পারে। সেক্ষেত্রে সে দাখিল পাশের পর normal hsc level এ পড়তে পারে যদি সে আলোচিত বিষয়গুলোতে পড়তে চায় কারন ততদিনে তার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা এসে যাওয়া উচিত।
আমার মনে হয় “ssc/hsc বা সমমানের পরীক্ষায় বাংলা/ ইংলিশের দুই পেপারে ২০০ মার্কের পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে” এটা বাদ দিয়ে শুধু hsc বা সমমানের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা বলা যেতে পারে। তাহলে উপরের পয়েন্ট বিবেচনায় আর বৈষম্য থাকলো না।
অফটপিকঃ IUT এর সাথে খ্রিস্টান মিশনারির তুলনাটা কেন এলো? শুধু কি ইসলামিক না খ্রিস্টান শব্দ দুটোর জন্য?
আমার মনে হয় এ তুলনা হবার আগে প্রতিষ্ঠান দুটোর পেছনের উদ্দেশ্যও চিন্তায় আনা উচিত ছিল। তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হতো। তাছাড়া ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশে শুধুমাত্র সংখ্যালাঘুদের নিয়ে আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাবার কথা হয়তো ভাবা যায় না। আর মাদ্রাসাতে হিন্দু শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বলব তারা কি ওতে পড়তে ইচ্ছুক??
তোমার মন্তব্যটা পড়ে আর ‘যুক্তি'(?)গুলো দেখে কেন যেন হাসি পেয়ে গেল… হয়তবা এরকম মন্তব্য আশা করি নি, তাই…
# “বরং এটাও তো বিবেচনায় আনা যায় যে হয়তো ওই বিষয়গুলোই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত নয়?” – কিসের ভিত্তিতে?? বুঝলাম না। উপযুক্ত/অনুপযুক্ত হবার ভিত্তি যদি হয় মেধা, কিংবা রেজাল্ট; তাতে তো তারা অনেক আগেই উতরে গিয়েছে! এর উদাহরণ আমি উল্লেখ করেছি, এছাড়াও আরও অনেক প্রমাণ আছে! চাইলে দেয়া যাবে।
# “কিছু কিছু বিষয়গুলোতে যা বা যেভাবে পড়ানো হয় তা অনেকক্ষেত্রেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ, শিক্ষা বা জীবনবোধের পরিপন্থী বলেই মনে হতে বাধ্য।” – ২/১টা উদাহরণ দিতে পার? ভেবে দেখতাম। আর তাছাড়া সেই ‘কিছু কিছু’ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা পড়বে কি পড়বে না, সেটা তাদের নিজেদেরই ঠিক করা উচিৎ, নাকি? আমরা সেই পথ বন্ধ করার কে?
# “তাছাড়া পেশাগত দিক বিবেচনায় আনলে বলা যায় এসব বিষয়ে পাশ করে মুলত বিসয়সম্পরকিত যেসব পেশায় যাবার কথা চিন্তা করা যায় সেগুলো ধর্মসম্মত কিনা?” – এ প্রসঙ্গে তুমি আইনব্যবসার উদাহরণ টেনেছ, এবং একে ‘তথাকথিত’ বলে অভিহিত করেছ। যদি তাই হয়, তাহলে সেই ‘তথাকথিত’-এর জায়গা থেকে যদি একটা ‘সুন্দর’ অবস্থায় নিয়ে যেতেই হয়, আর সে রকম আইন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য যদি কোন মাদরাসা শিক্ষার্থী ভূমিকা রাখতে চায়, তবে তো তাকে আগে আইনজ্ঞ হতে হবে, আইন সম্পর্কে স্টাডি করার সুযোগ পেতে হবে, নাকি?
আর তোমার এই প্যারার উত্তর “সুখী মানুষ” তার নিচের মন্তব্যে দিয়েছেন। সেটাও দেখে নিও।
# “output সম্পর্কে যদি শুরুতেই এমন সন্ধেহের অবকাশ থাকে” – আমার হাসি পাওয়ার কারণটা মনে হয় এই লাইনটাই। হা হা, স্কুল-কলেজ থেকে পড়ে আসা শিক্ষার্থীদের output সম্পর্কে বুঝি কোনই সন্দেহের অবকাশ থাকে না? তাদের কত পার্সেন্ট মহাপন্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়?
আর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সেই অবকাশটা কীভাবে তৈরি হল? আই মীন, কিসের ভিত্তিতে?
বাকি প্রতিটা লাইনের বিপরীতেই অনেক কিছু বলা যায়, কিন্তু আপাতত ধৈর্যে কুলাচ্ছে না। শুধু এটুকু বলি, মাদরাসা থেকে আলিম পড়ে যে সবাই এদিকে চলে আসছে তাও না। অনেকেই ফাজিল, কামিল পড়ছে। কিন্তু যদি কেউ আলিম পর্যন্ত পড়ে মেইন্সট্রীমে আসতে চায়, “তাহলে তাকে দাখিলের পর ডিসিশন নিয়ে নিতে হবে” – এসব যুক্তি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করবার ‘অধিকার’ আমাদের নেই, আসলেই নেই।
”তাছাড়া পেশাগত দিক বিবেচনায় আনলে বলা যায় এসব বিষয়ে পাশ করে মুলত বিসয়সম্পরকিত যেসব পেশায় যাবার কথা চিন্তা করা যায় সেগুলো ধর্মসম্মত কিনা? যেমন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা কি ল তে পড়ে তথাকথিত আইনব্যবসায় নিজেদের জড়ানোর কথা চিন্তা করবে? যদি না করে তবে আর ওতে পড়ে লাভ কি হল? শুধুই জানার জন্য??” এর জবাবে বলছি । আমি যে প্রকৌশলবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছি সেখানে আমার সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক(২৫%) নারী প্রকৌশলী পাশ করেন । তাদের মধ্যে শুধু একজন প্রকৃতপক্ষে প্রকৌশলী হয়েছেন (তার ডিগ্রি প্রেকটিস করছেন) । তাদের ৯০ % এরও বেশি এই বিদ্যা ব্যবহার করেননি । তার মানেকি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের বছর থেকে রুল করে মেয়েদের ভর্তি বন্ধ করে দিতে হবে ? কারণ ঐ ২০ জন মেয়ের জায়গায় যদি ২০ জন ছেলে ভর্তি হত তাহলে জীবনের প্রয়োজনে হলেও তাদেরকে এই বিদ্যা ব্যবহার করতে হত । দেশ কিছুটা উপকার পেত ।
আমি জানি, আমি উপরে যে লজিকটুকু দিলাম তাতে অনেকে চরমভাবে মনক্ষুন্ন হয়েছেন (হওয়ার কথা । আমার উদ্দেশ্য ছিল যাতে আপনার মন খারাপ হয়)। উপরের লজিকটুকু যেভাবে মেয়েদেরকে খাট করে (কিছু অংশে অপমান করে ) ঠিক একই ভাবে আপনি যে লজিকগুলো দিলেন তাতে মাদ্রাসার ছাত্রদের অপমান করা হয় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান (যদিও স্বায়ত্তশাসিত) । মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডও একটি সরকারি প্রতিষ্টান । মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের যদি পাঠ্যসূচিতে সমস্যা থাকে, তাহেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে পিতার ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল । ঢা বির উচিত ছিল যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়া যাতে মাদ্রাসার ছাত্ররা কিছু সংখ্যার খপ্পরে না পরে দেশের ”অনুজ” নাগরিকে পরিণত না হয় । কারণ ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে অনেক আগ থেকে প্রচুর মাদ্রাসার ছাত্র বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ছাপ রাখছেন , তাই নয়কি ? উচ্চশিক্ষায় মাপকাঠি হওয়া উচিত মেধা, কোন চিহ্ন বা তত্ত্ব যাতে বিবেধ তৈরি করতে না পারে ।
ধন্যবাদ আপনাকে। কথাটার জবাব আমি হয়ত এভাবে দিতাম না। তবে আপনি দিয়ে দেয়ায় এটাই দেখে নিতে বললাম মন্তব্যকারীকে।
“উচ্চশিক্ষায় মাপকাঠি হওয়া উচিত মেধা, কোন চিহ্ন বা তত্ত্ব যাতে বিভেদ তৈরি করতে না পারে।” – এই শেষ কথাটার সাথে পুরোপুরি সহমত। কথাটা একেবারে খাসা! :clappinghands:
কিন্তু আমরা ভুলে যাই। 🙁
অনেক আগেই পড়েছি লেখাটা মন্তব্য করা হয় নি। :happy: কমেন্ট ও উত্তরগুলো পড়েও অনেক কিছু শিখতে পারলাম। 😀
সত্যি বলছি, এই বিষয়টি নিয়ে এত সুন্দর বিশ্লেষণমূলক লেখা আর পড়ি নি। আপনাকে ধন্যবাদ। :clappinghands:
আচ্ছা, এখন মাদরাসা বোর্ডের সিলেবাস ত পরিবর্তন করা হয়েছে, এই ব্যাপারে আপনার কি মতামত? নিজেদের সাবজেক্টগুলোর পাশাপাশি ২০০ নম্বরের বাংলা-ইংরেজী মাদরাসা-শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না? 😳
উপরে একজন মন্তব্যকারী অর্থনীতি সাবজেক্টটার ব্যাপারে বলেছেন, ইসলামী অর্থনীতি কেন উচ্চ মাধ্যমিক অর্থনীতির সমকক্ষ হতে পারবে না। জোর দিয়ে বলছি, উচ্চ মাধ্যমিক অর্থনীতিতে যা পড়ানো হয় অনার্স পড়তে এসে তা খুব যে কাজে লাগে তা কিন্তু নয়। ওটার তাৎপর্য ফার্স্ট সেমিস্টারেই শেষ হয়ে যায়। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীটির-ই অর্থনীতি নেয়ার অধিকার থাকা উচিত।
তবে সামগ্রিকভাবে বলছি যে ‘গণিত’ বিষয়টা উচ্চমাধ্যমিক ও আলীমে বাধ্যতামূলক করা উচিত সে যে বিভাগেই পড়ুক না কেন। অন্ততঃ কিছু বেসিক জ্ঞান নিয়ে তবেই অনার্স পড়তে আসা উচিত। জানি না এইটা কতটা ফলপ্রসু বাংলাদেশের কনটেক্সটে। 🙁 বিশ্বের সাথে পাল্লা দিতে গেলে এই দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন!
কষ্ট করে লেখা ও সুচিন্তিত ভাবে কমেন্টের উত্তরগুলো দেয়ার জন্য আপনাকে আবারো অনেক অনেক ধন্যবাদ। 😀
অতিরিক্ত একটি ই-প্রত্যয় ভুলে দিয়ে ফেলেছি 🙁
আমিও আপনার মন্তব্যটা আগেই পড়েছি কিন্তু রিপ্লাই দেয়া হয় নি! 😀
সিলেবাস পরিবর্তন বিষয়ে ২য় পর্বে বিস্তারিত লিখলাম। পড়ার আমন্ত্রণ রইল। 🙂
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার কাছ থেকেও “মাদ্রাসার শিক্ষার্থীটির অর্থনীতি নেয়ার অধিকার থাকা উচিত।” – কথাটা শুনে ভাল লাগলো। আসলে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করলে যে কারোই এটা বুঝতে পারার কথা।
আর… গণিতের বিষয়টা ভালই বলেছেন। কিন্তু ‘বাধ্যতামূলক’ করার ব্যাপারটা বোধহয় অতটা সহজ নয়। এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনেক ফ্যাক্টর মাথায় রাখতে হয়, লাইক, মফস্বল বা অজ গ্রামের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করতে হয়। অবশ্য আপনি ‘বেসিক’ জ্ঞানের কথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে যেমন মাধ্যমিক লেভেলে ‘সাধারণ’ ও ‘উচ্চতর’ দু’টি আলাদা ভাগ আছে, উচ্চ মাধ্যমিকেও তেমন করা যেতে পারে। যাতে বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের খুব বেশি না ভোগায়।
লেখাটি পড়ার জন্য এবং সুচিন্তিত মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। :happy:
বিভাগীই শহর বাদে সব জায়গায় মাদরাসাই বেশি চলে। যদি মাদরাসার শিক্ষানীতির উন্নতি না করেন দেশ আরও পিছাবে। শহর গুলোতেও মাদরাসায় প্রচুর ছেলে মেয়ে পড়ে। এই শিক্ষানীতির উন্নতি না হলে দেশের উন্নতিও হবে না। 😳
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা দিতে পারবে কি?
so true..
রিসেন্টলি এই বৈষম্যের শিকার হলাম! কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।ছোটবেলা থেকেই ইংলিশ ফেভারিট সাব্জেক্ট এন্ড এইটা নিয়ে ই পড়ার স্বপ্ন দেখে আসছি।অন্য কোন সাব্জেক্ট নিয়ে পড়াশুনা করার কথা ভাবতে ও পারছি না।
আমি কোনো তর্কে যেতে চাচ্ছি না। আই জাস্ট ওয়ান্ট ইংলিশ সাব্জেক্ট 🙁
কস্ট করে এডমিশন টেস্টে কি পাশ করছিলাম এই দিন দেখার জন্য!
আমাদের বসে বসে কান্না করা ছাড়া আর পরিস্থিতির কাছে হার মেনে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই??
সত্যিই কিছুই করার নেই!
কারো কাছে কোনো উত্তর আছে কি!