মঞ্জিল এক হলেও সেখানে পৌঁছাবার ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা থাকতে পারে।আগের লেখাতেই জানিয়েছিলাম এক র্যাঙ্কিং এ ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকেই পৃথিবীর সেরা শিক্ষাব্যবস্থা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।এর পর পরেই রয়েছে সাউথ কোরিয়া।র্যাং কিং এ কাছাকাছি বলে এদের শিক্ষাব্যবস্থার ধরন যে একইরকম তেমনটা কিন্তু না বরং রীতিমত ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত বলা যায়।ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষাকে যতটাই অপ্রয়োজনীয় মনে করা হয়,সাউথ কোরিয়ায় তাকে তার চাইতে শতগুণ দরকারি মনে করা হয়।এরা পরীক্ষাকে কি পরিমাণ গুরুত্ব দেয়,তার একটা নজির দেওয়া যাক।বড় পাবলিক পরীক্ষাগুলো চলাকালীন সপ্তাহগুলোতে অফিস টাইম পরিবর্তন করা হয়,রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম যাতে না থাকে সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।কেউ যদি মনে করে তার কোন কারণে পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে দেরি হবে তবে তাকে নেওয়ার জন্য পুলিশ কারের ও ব্যবস্থা থাকে।এমনকি প্লেনের শব্দের কারণে যাতে পরীক্ষার ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য হলের উপর দিয়ে যাতে প্লেন না যায় বা শিডিউল পরিবর্তনের ব্যবস্থাও করা হয়!
১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ৭০% কোরিয়ানই ছিল নিরক্ষর।১৯৭০ সালে এদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ২০০ ডলার(এখন ৩২,১০০ ডলার)।তাই এরা ও ফিনল্যান্ডের মত নিজেদের উন্নয়নের সব চাইতে কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও উন্নতিকে বেছে নেয়।তারা যে ভুল করেনি তার বড় প্রমাণ ১৯৬২ সালের পর থেকে সাউথ কোরিয়ার জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০,০০০%(এখন ১.১১৬ ট্রিলিয়ন ডলার) এবং এই মুহূর্তে সাউথ কোরিয়ার অর্থনীতি বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তর অর্থনীতি!
সাউথ কোরিয়ার স্কুলগুলোতে মানবিকতা আর সামাজিকতা শিখার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে হাইস্কুলের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে মার্জিত আচরণ,সামাজিকতা,সমাজের উন্নতির জন্য ভাবনা করা,বৈশ্বিক নাগরিকত্ব,অন্যদেশের সংস্কৃতি সহ নানান বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়া হয়।প্রাইমারী স্কুলগুলোতে পড়ালেখার চাইতে আর্ট-মিউজিক-শারীরিক শিক্ষার উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়।
সাউথ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার সবচাইতে অন্যতম অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার।স্যামসাং কিংবা এলজি’র মত জায়ান্ট ইলেকট্রনিক পণ্যের নির্মাতা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রচুর প্রয়োগ হবে এটাই স্বাভাবিক।প্রাইমারী স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবখানেই উচ্চগতির ইন্টারনেট কানেকশান আছে এবং ক্লাসগুলোতেও প্রযুক্তি ব্যবহার করেই শিক্ষা দেওয়া হয়।কোরিয়ান সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ডিজিটালাইজড করার কথা ভাবছে।এর ফলে যে কোন জায়গা থেকেই ডেস্কটপ,ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেটের মাধ্যমে ক্লাসরুমে সংযুক্ত হওয়া যাবে।EDUNET নামে ইন্টারনেটে শিক্ষাসহায়ক একটি সার্ভিস আছে যেখান থেকে পড়ালেখাসংক্রান্ত যে কোন সাহায্য নেওয়া যায়।এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবেই ডাটাবেজ রাখা হয় যেখান থেকে ছাত্র কিংবা অভিভাবক সকলেই যেন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।মূলত সবার কাছে শিক্ষার আলো সমানভাবে ছড়িয়ে দিতেই এই ব্যবস্থা।
তবে প্রযুক্তি একেবারে সহজলভ্য হলেও কোরিয়ার শিক্ষা খরচ অতিমাত্রায় বেশি।দেশের জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ ব্যয় হয় কেবল শিক্ষাখাতে।এবং অভিভাবকদের আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ ব্যয় হয় সন্তানদের পড়ালেখার পিছনে।ব্যয়ের এই অত্যধিক বোঝার কারণে বেশিরভাগ মা-বাবাই একটি বা দুটির বেশি সন্তান নেন না।টেকনোলজির এত ছড়াছড়ির পরেও এত শিক্ষাব্যয় কেন?কারণ কোরিয়ান শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৪ ভাগই স্কুলের পরে কোচিং সেন্টারগুলোতে যায়(যাকে কোরিয়াতে HAGWON বলে)।২০১০ সালে এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রতিটি শিক্ষার্থী বছরে প্রায় $২৬০০ এই কোচিং সেন্টারগুলোতে খরচ করে এবং এসব প্রাইভেট টিউটরেরা মিলিয়ন ডলার কামিয়ে নিচ্ছেন।এছাড়া রয়েছে সরকারী ইউনিভার্সিটির অপ্রতুলতা।এইসব ভার্সিটি গুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়।সন্তান কোথায় পড়ালেখা করে এটা একটা ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ যার কারণে বাবা মা’রাও সন্তানের পড়ালেখার পিছনে সর্বোচ্চ অর্থ-শ্রম ব্যয় করেন।
ফিনল্যান্ডের মত সাউথ কোরিয়াতে ও শিক্ষকতা বেশ প্রেস্টিজিয়াস জব।উচ্চ বেতন ও সামাজিক সম্মানের কারণে এই পেশা কোরিয়ান তরুণদের কাছে সবচাইতে আকাঙ্খিত।এখানেও সেই প্রতিযোগিতা। মোট আবেদনকারীর মাত্র ৫ শতাংশ চাকরি পান এবং এই চাকরি ছেড়ে যাওয়ার হার মাত্র ১ শতাংশ।শিক্ষকরাও প্রচুর শ্রম দেন ছাত্রদের পিছনে।তবে তাঁরা ফিনল্যান্ডের শিক্ষকদের মত যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করেন না।শিক্ষকরা ছাত্রদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনতে পারেন।কিন্তু শাস্তি প্রদানের জন্য তাঁরা অধিকারপ্রাপ্ত নন।এজন্য আলাদা বিভাগ আছে যারা কাউন্সেলিং-জরিমানা কিংবা অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে এইসব সমস্যার নিষ্পত্তি করেন।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে সাউথ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা ব্যপকভাবে পরীক্ষার উপরে নির্ভরশীল।সারা বছর বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে ধরে রাখতে হয় শিক্ষার্থীদেরকে।এবং এজন্য প্রচুর পড়াশোনাও করতে হয় তাদের।সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করে এরা আবার কোচিং সেন্টার গুলোতেও পড়তে যায়।এবং সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত(কোথাও এর ও বেশি!) পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকে।এখানেই শেষ না।বাসায় ফিরে আবার হোমওয়ার্ক নিয়ে বসতে হয় তাদের।অর্থাৎ দিনের প্রায় ১২-১৬ ঘন্টা সময় কেবল পড়ালেখার পিছনেই ব্যয় করতে হয়।ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা যেখানে দিনে প্রায় ৭৫ মিনিট সময় পায় একেবারে মুক্ত থাকার সেখানে কোরিয়ান শিক্ষার্থীদের ভরসা কেবল এক ক্লাসের শেষে অন্য ক্লাস শুরু হওয়ার জন্য যে ১০ মিনিট সময় থাকে কেবল সেটা।বছরে ২২০ দিন স্কুলের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হয়।তবে কোরিয়ান শিক্ষাব্যবস্থায় যত বেশি না ক্রিয়েটিভিটির উপর জোর দেওয়া হয় তার চাইতে বেশি জোর দেওয়া হয় মুখস্থ করার উপরে এবং পরীক্ষায় তা পারফর্ম করার উপরে।
এই যে এত পড়াশোনার চাপ-ব্যস্ততা কিংবা ‘EXAM-HELL’ এই সব কিছু নিয়ে কেমন আছে কোরিয়ান শিক্ষার্থীরা?বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে অসুখী শিশু হচ্ছে সাউথ কোরিয়ান শিশুরা।কারো কারো কাছে এই চাপ এতটা অসহনীয় যে তারা আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নেয়।এমনিতে বিশ্বের Suicide Capital হিসেবে সাউথ কোরিয়ার কুখ্যাতি আছে।প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন মানুষ আত্মহত্যা করে পুরো সাউথ কোরিয়া জুড়ে।বলাই বাহুল্য,এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যকই হচ্ছে শিক্ষার্থী।২০০৯ সালে চালানো এক জরিপে জানা গিয়েছিল স্কুলগামী ৯% শিশুই কোন না কোন একসময় আত্মহত্যার কথা ভেবেছে।সবচাইতে বেশি সংখ্যক আত্মহত্যার পিছনে Bullying বা সহপাঠীদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপই দায়ী বলে জানা গেছে।মার্চ ২০১৩ তে সম্পন্ন এক সার্ভেতে দেখা যাচ্ছে প্রতি দুইজনের একজন আত্মহত্যাকারী এই Bullying এর শিকার হয়েই এই আত্মহননের রাস্তা বেছে নিয়েছেন।এমন করুন দশার কারণে কোরিয়ান শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে যারা কিনা রাত দশটার পরে কোন HAGWON খোলা থাকে কিনা বা কোন শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করে কিনা তা নজরদারি করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
সব মিলিয়ে যখন এমন একটা অবস্থা তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক অবামা সাউথ কোরিয়ান শিক্ষাব্যবস্থার অভাবনীয় সাফল্য দেখে প্রশংসা করে বলেছেন,এমন ব্যবস্থা ইউএসএ তে চালু করা যায় কিনা তা ভেবে দেখবেন।কিন্তু এদিকে এশিয়ার বিভিন্ন উন্নত দেশগুলো ভাবছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার নামে এমন যাঁতাকল থেকে বের করে ইউরোপীয় কিংবা ইউএসএ’র মত আনন্দ-স্কুল টাইপ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে।আমার কেবল একটা কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে -বেড়ার ওইপাশের ঘাস সবসময়ই সবুজ মনে হয়!
পুনশ্চঃ ১.আগের লেখাতেও বলেছি এবং এখানেও আমরা দেখলাম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষাখাতে জিডিপির উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ব্যয়ের কোন বিকল্প নেই।কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল এবারের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমেছে এবং ব্যয় বরাদ্দের ক্ষেত্রে এর অবস্থান এখন চার।অথচ শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার একটা ট্রেন্ড মরহুম এম সাইফুর রহমান চালু করে গিয়েছিলেন এবং সেটা ধরে রাখা খুব একটা কঠিন কিছু ছিল না। এখন আর দলাদলির সময় নেই।একটা সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধে জর্জরিত ছিল এবং বাংলাদেশের পিছনে থাকলে ও তারা এখন আমাদের ছাড়িয়ে চলে গেছে।তাদের শিক্ষার হার ৯০ শতাংশ বিধায় তারা যেখানেই হাত দেয়,সেখানেই সোনা ফলে।আমাদের নীতিনির্ধারকরা এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন বলে আশা করি।
২.শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আর কোন লেখা লিখবার পরিকল্পনা না থাকলেও এই লেখাটা লিখবার অন্য একটা কারণ আছে।সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আমাদের বাবা-মা’রা সন্তানদেরকে যেভাবে দিনভর অবিরত শিক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে কি হতে পারে তার একটা নমুনা হিসেবেই এই লেখার অবতারণা।সাফল্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ,কিন্তু যে সাফল্য অনেক মূল্য নেয় তা কি আসলেই খুব জরুরি?অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষের পরিণাম কি হতে পারে তা দেখতে পারেন এখানেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো যে স্টিম রোলার চালানো শুরু করেছে তা লং টার্মে কিসে রূপান্তরিত হতে পারে সেটা সাউথ কোরিয়ার চাইতে আর কেউ ভালো জানেনা।এর সাথে যুক্ত আছে সহপাঠিদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ আর বাবা-মা’র অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা-গঞ্জনা।এবং আমি আশংকা করছি ‘অদূর ভবিষ্যতে পড়ার চাপ সইতে না পেরে শিশুর আত্মহত্যা’ এমন শিরোনাম হয়তো পত্রিকার পাতায় দেখতে হতে পারে।অসীম করুণাময় আল্লাহ যেন আমার আশংকাকে মিথ্যা প্রমাণ করে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
ঋণ স্বীকারঃ
http://www.ncee.org/programs-affiliates/center-on-international-education-benchmarking/top-performing-countries/south-korea-overview
http://www.huffingtonpost.com/2012/11/27/best-education-in-the-wor_n_2199795.html
https://sites.google.com/site/southkoreaneducation
http://www.edudemic.com/2013/05/south-korea-vs-u-s-education-new-report-examines-key-differences
http://beyondhallyu.com/culture/the-pressures-of-the-south-korean-education-system
http://asiasociety.org/education/learning-world/south-korean-education
http://www.time.com/time/magazine/article/0,9171,2094427,00.html
http://www.weareteachers.com/hot-topics/special-reports/teaching-around-the-world/south-koreas-school-success
http://rdbangla.blogspot.com/2013/06/blog-post_8.html
কোরিয়া ভালো নাহ ! 🙁 ফিনল্যান্ডই বেস্ট !
আমাদের দেশে তো অলরেডি প্রতি বছর এস এস সি/এইচ এস সি এর পরে আত্মহত্যা চলেই আসছে। এইটা মনে হয় এখন আর কারও গায়ে লাগে না। মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে এখন এসেছে সমাপনী আর জে এস সি ! এইটুকুন বাচ্চাগুলোর পড়ালেখার চাপ দেখলে কান্না পেয়ে যায় । একে তো শিক্ষাব্যবস্থার করুণ দশা, তার উপর এখন খরচও করতে চায় না শিক্ষা খাতে। “শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড” এইটা বাংলাদেশের জন্য এখন রূপকথা হয়ে যাচ্ছে।
নাহ!ফিনল্যান্ডকে হয়তো সিস্টেম বিচারে সেরা বলতে পারেন তবে সব মিলিয়ে ভালো না।আত্মহত্যার হার বিবেচনায় ফিনল্যান্ড ৫ নম্বরে।অর্থনৈতিকভাবে তারা ভালোই স্বাবলম্বী,কিন্তু কোথায় যেন তারা দেউলিয়া!বোহেমিয়ান ভাই বলছিলেন নৈতিক শিক্ষার কথা।আসলেই তাই।এদের বাহিরের মানুষগুলোই কেবল ধনী ভিতরেরটা না।পরিবার বলতে তেমন কিছু নাই।অতিমাত্রায় ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তি কেন্দ্রিকতায় বিশ্বাসী।সব কিছু পেলেও কিছু যেন আর পায় না।এই কথা মোটামুটি সব উন্নত দেশের জন্যই প্রযোজ্য
বাংলাদেশে যেটা ঘটে এটা অস্বাভাবিক কিছু না।কেউ ক্রমাগত ব্যর্থতা কিংবা আত্মসম্মানের কথা ভেবেই করে।আর এত এত পরীক্ষা দিয়ে কোন ঘোড়ার ডিমের লাভ হয়?আমি তো কোন পজিটিভ কিছু দেখিনা।উল্টো ছেলেমেয়েদের যৎসামান্য মাসিক ছুটি গুলোর আনন্দ পুরো মাটি!
রাস্তাঘাট আর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকেই সরকার উন্নয়ন বলে ভাবছে।শিক্ষা খাতে টাকা পয়সা খরচ করলে তা যেন বিনিয়োগের মত দশ বছর পরে ফল দিবে সেটা হামড়া চোমড়ারা জানেন না বা জানলেও না জানার ভাব করে পড়ে থাকেন।।কারণ উনাদের সন্তানেরা এই দেশের স্কুল কলেজে বা শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ে না।তাই উনারা টাকা বরাদ্দ দেন না,খেয়াল বা নজরদারি করেন না।গত কয়েক সপ্তাহ আগেই হঠাত করে বিরোধী দলের হরতাল দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল।এমন গরম সময়ে হঠাত নরম অবস্থানে সবাই অবাক!ত্রিশঙ্কু মল্লিক নামের একজন ফেসবুকে জানালেন,বিরোধীদলীয় নেত্রীর এক ভাইপো এ-লেভেল কিংবা ও লেভেল পরীক্ষা দিচ্ছে।যার কারণে জনগণকে হরতাল থেকে একটু ‘নিষ্কৃতি’ দেওয়া!অথচ একই দেশে এইচ এস সি পরীক্ষা হল প্রায় দুই মাসের কিছু বেশি সময় ধরে।এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা।
হায় হায় ফিনল্যান্ডও পাঁচ নাম্বারে ? আসলেই হয়তো সিস্টেম ভালো, কিন্তু সব উন্নত দেশেই অতি স্বাধীনতার কুফল বিরাজমান। নো ফ্যামিলি টাইস, কী যে বিদঘুটে একটা সমাজ এদের। আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকেরা যদি শুধু সৎ আর নিষ্ঠাবান হতেন, তাহলে আসলেই সোনার দেশ হতে বেশিদিন লাগত না।
দিন দিন কেন জানি মনে হয় সোনার দেশ ব্যাপারটা কেবল সোনায় বাঁধানো ‘রূপকথার বই’তে পাওয়া যাবে।প্রাচ্য যদি তার নৈতিকতার সাথে জ্ঞানমুখী বিদ্যার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারে তবে রূপকথা বই থেকে বাস্তবে উঠে আসবে