গতকাল সন্ধ্যায় ফেসবুকে লগইন করতেই দেখি কেবল তেঁতুল আর তেঁতুল :thinking: ঘটনা কি তলিয়ে দেখতেই দেখি এক ভিডিওর কারণে এত মাতামাতি।
আল্লামা শাহ আহমেদ শফির এক বক্তব্যের কারণে এত সমালোচনা।বিতর্কিত সেই বক্তব্যের উল্লেখ্যযোগ্য অংশ হলঃ
* আপনি স্বামীর ঘরের মধ্যে থাইকা উনার আসবাব পত্র এগুলার হেফাজত করবেন।
* জেনা কইরা টাকা কামাই করতেসে, বরকত থাকবে কেমনে?
* আপনারা মেয়েদের স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে লেখাপড়া করাইতেসেন। কেন করাইতেসেন? তাদের ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত পড়াইবেন যাতে বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা পয়সার হিসাব রাখতে পারে।
* যতই বুজুর্গ হন আপনার মনের মাঝে কু খেয়াল আইসা যাবে। কেউ যদি বলে মেয়ে মানুষ দেখলে আমার দিলের মাঝে লালা ঝরে না, তাহলে বলব তোমার ধ্বজভঙ্গ রোগ আছে। তোমার পুরুষত্ব নস্ট হয়া গেসে। তাই মহিলাদের দেখলে তোমার কু ভাব আসে না।
* “জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল হল পুরুষদের মরদ থাইকা খাসী কইরা ফেলা।
* পারলে চাইরটা পর্যন্ত বিবাহ করবা। খাওয়াইবো তো আল্লাহ। বার্থ কন্ট্রোল করবা না। এইটা বড় গুনাহের কাজ।”
এই অভিযোগ অনেকদিনের পুরাতন যে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী জলসা মাহফিলে নারী প্রসঙ্গ আসলেই নানাভাবে নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত কথা শোনা যায়।নারীকে কেবল শুনানো হয় পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা।কিন্তু সমাজ তাকে বিনিময়ে কি দিবে এবং সেগুলোর প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই দেখা যায় না।এইসব ব্যাপার সামনে এনেই দাবী করা হয় ইসলাম নারী বান্ধব নয়।কিন্তু আসলেই কি তাই?বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের সময়-সুযোগ না থাকলেও চেষ্টা করলাম কেবল আল্লামা শাহ আহমেদ শফির উপরোক্ত দাবী খন্ডনের।
রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন,তোমাদের যে কারো যদি তিনজন কন্যা বা বোন থাকে আর সে তাদের সুন্দরমত দেখাশুনা করে,তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।(তিরমিযী)
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ আরো ইরশাদ করেছেন,তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।(তিরমিযী)
হুজুর কিভাবে নারীরে দমন করা যায়,তার ব্যাপারে এতকাল শিখিয়ে এসেছেন।কিন্তু ইসলাম নারীকে কি মর্যাদা দিল, সেটা কেন শোনান নাই?নারী স্বামীর আসবাব আর টাকা পয়সার হেফাজত করবে কিন্তু নারীর অধিকারের হেফাজত হবে কিভাবে,সেইটা কেন বললেন না?নারীরে প্রাপ্য বুঝিয়ে না দিলে আল্লাহ কি শাস্তি দিবেন,সেইটা কেন ওয়াজ-বয়ানে বলেন না??মেয়েরা যদি ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্তই পড়ে,চিকিৎসক না হয় তাহলে ঘরের মা-বোন-কন্যা শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে কার কাছে যাবে?কিংবা ঐ ফোর ফাইভ পর্যন্তই বা কার কাছে পড়বে?যেহেতু আমাদের পুরুষদের বুজুর্গ হলেও নারী দেখলে ‘লালা ঝরে’,সেহেতু দুনিয়ার কোন নারীই আমাদের কাছে নিরাপদ না।কি বলেন?তাহলে আর চোখের-গোপনাঙ্গের হেফাজতের আয়াত-হাদিস বর্ণনা করা কেন?
বার্থ কন্ট্রোল এমন একটা ইস্যু যেটার ব্যাপারে আমার জানামতে এখন পর্যন্ত ইসলামে কোন ফাইনাল ডিসিশন নাই।তবে দারিদ্র্যের ভয়ে কেউ যাতে সন্তান হত্যা না করে সে ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কঠোর নির্দেশনা আছে।রিজিকের মালিক অবশ্যই আল্লাহ,তবে উনি আমাকে দুনিয়াতে পাঠানোর সময় আমার মাথায় ‘মগজ’ নামে একটা জিনিস ও ঢুকিয়ে দিয়েছেন।আপনি হয়তো রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করতে পারেন,কিন্তু ঐচ্ছিক জন্মনিয়ন্ত্রণ এর না।
Now coming to the issue of birth control, there is nothing in Islam that prohibits it so long as it is done consensually for valid reasons such as the following: putting off pregnancy until such time when the spouses are in a better position to shoulder the responsibilities of parenting, to allow for space between pregnancies in order to provide proper nurturing and care to existing children, et cetera. Birth control is, however, forbidden or undesirable when it is resorted to as a permanent measure to prevent conception altogether; likewise, it is forbidden if resorted to for fear of poverty. Allah says, “Don’t kill your children for fear of poverty; it is We who provide sustenance for them and you; verily killing them is a most heinous crime!” (Al-Isra’: 31). After reflecting on this verse, scholars have concluded that practicing birth control for fear of poverty is unlawful since it implies weakness of faith and trust in Allah as the Provider and Sustainer of all beings.”
ইসলাম কেন চারটা পর্যন্ত বিবাহের নির্দেশ কেন দিয়েছে সেটার কিছু কন্টেক্সট আছে।কারো মনে চাইল আর ধুম করে গিয়ে বিয়ে করে ফেলল-ব্যাপারটা তেমন না।যে আয়াতে আল্লাহ চার বিয়ের ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন,তার শেষে এই লাইনটা ও আছে, ‘আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না,তবে একটি…’(সূরা নিসাঃ৩)
আবার তাদের মধ্যে যে শতভাগ সমতা রক্ষা যে অসম্ভব সে কথা ও বলে দিয়েছেন আল্লাহ।ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না।সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড় না…(সূরা নিসাঃ১২৯)
হুজুর আল্লাহর ওয়াস্তে তথ্য সন্ত্রাস করবেন না।আমরা মুসলিমরা এমনেই অনেক প্যারার মধ্যে আছি।আপনারা যদি নতুন করে এইসব রসালো কথাবার্তা বয়ান হিসেবে দেন,তখন আমাদের কাছে অসহায় মনে হয়,বিপন্ন মনে হয়।ইসলামের আবির্ভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে,সে পুরোহিতবাদ ঠেকিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আপনাদের অবস্থা দেখলে মনে হয়,আপনারা সেটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।
আল্লাহ সকলের মঙ্গল করুক
যেখানে বিবি খাদিজা নিজে ব্যবসায়ী ছিলেন সেখানে বেশী কথা বলার কি প্রয়োজন। এই সব কম জানা অবশ্যই তারা ব্যাখ্যা কম জানেন বলেই নিজেদের মত করে মেয়েদের বেঁধে রাখার জন্য বলেন। সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণণাকারীদের একজন হযরত আয়েশা (রাঃ) , এটা কি তারা জানেননা ।
রাসুলের পত্নীগন নিশ্চয় খালি রান্নাবান্নায় ব্যস্ত ছিলেননা, তারা যুদ্ধও করেছেন ।
ইসলামকে পেছনে টেনে নিতে এই মোল্লাদের ভূমিকা কোন অংশেই কম নয়।
এমন সব কথা বলছেন উনারা যে লজ্জা পাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।বাহিরের দেশের ইসলামিক স্কলারদের কথার ধরন একরকম,ইনাদের আরেকরকম
উনার এই সব সাবেকী,ছিঁড়াফাড়া কথায় মেজাজাখান খারাপ হই গেল। :haturi:
ইসলাম তো সবসময়ই একরকম।ইনারা যেটা বলছেন সেটা সাবেকি না বরং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন
“এইসব রসালো কথাবার্তা বয়ান হিসেবে দেন,তখন আমাদের কাছে অসহায় মনে হয়,বিপন্ন মনে হয়।ইসলামের আবির্ভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে,সে পুরোহিতবাদ ঠেকিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আপনাদের অবস্থা দেখলে মনে হয়,আপনারা সেটা আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।”
১০০ ভাগ সহমত। কথাগুলো শুনে মজা করবার আগে নিজেকে অসহায় মনে হয়েছে বেশি। তার চেয়েও ভয়ঙ্কর লেগেছে কারো কারো মন্তব্য দেখে। ঘাড় কাত করে হুজুর যা বলেছে মেনে নিয়েছেন, যেই তর্ক করতে জাচ্ছেন, তাকেই “হুজুরের সমান যোগ্যতা নেই” বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে!!
গঠনমূলক সমালোচনা করতে শিখবো কবে আমরা??
আল্লাহ সকলের মঙ্গল করুক……
কেউ যখন এইসব কথাকে রেফারেন্স হিসেবে সামনে এনে ইসলাম বা মুসলিমকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে তখন লজ্জায় ক্ষোভে মাথা নিচু হয়ে আসে।১৫০০ বছর আগে যে ইসলাম নারীকে ভোগ্যপণ্য আর সন্তান উৎপাদনের যন্ত্রের বদলে মায়ের-বোনের-স্ত্রীর-কন্যার মর্যাদা দিয়ে অতল গহবর থেকে তুলে এনেছিল আজ সেই ইসলামকে হাতিয়ার করে কেউ কেউ ইসলামকে স্রেফ নিন্দা আর সমালোচনার যোগ্য করে ফেলছেন।লজ্জা আর লজ্জা…..
নিজেদের সেরা দাবি করে আমরা নিজেদের কমিউনিকেশনের ত্রুটি কেন দূর করব না?
আর উনার আইডিয়াগুলাও তো ইতিবাচক না মোটেও পুরাই সাপ্রেস করে রাখার মতো।
সমস্যা তো ভাইয়া সেখানেই।উনারা মর্ডান কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই এগুতে চান না।কোন সংস্কার প্রস্তাব সামনে আনলেই ভাবেন সেটা ‘ষড়যন্ত্র’।কিন্তু উনারা নিজেরাও যে অনেক পজিটিভ কিছু করতে পারছেন তেমনটা না।বাংলায় ইসলাম আসার এত বছর হয়ে গেছে,এখন পর্যন্ত বাংলায় কোন মৌলিক তাফসীর নেই।ইসলামের খেদমত মানে শুধুই মাদ্রাসায় পড়া না।ইসলামকে একটা পূর্ণাংগ বিধান হিসেবে সামনে নিয়ে আসাটাই আসল সার্থকতা।
ইসলামে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের কাজের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বরং পর্দার মধ্যে থেকে সকল কাজের সম্মতি দেওয়া হয়েছে। 🙁
হ্যাঁ,এইটা সত্য যে ইসলাম নারীর বাহিরে কাজকে নিরুৎসাহিত করে কিন্তু পরিপূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ না।কিন্তু উনি যেভাবে বললেন সেটা সত্যিই বেশ হতাশাজনক 😳
পাইকারী ও খুচরা, সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। :happy: পুরাই সস্তা হয়ে গ্যাছে বয়ান।
মুফতি ইজহার দাবী করেছেন এই বয়ান নাকি গরীব ও কম শিক্ষিত মানুষদের জন্য করা হয়েছে
“This was hujur’s [Shafi’s] sermon for uneducated people considering the environment and culture of villages. His speech will be different for educated urban people.”
http://www.thedailystar.net/beta2/news/sermon-shafi-style/
গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা, এইসব নিয়ে লেখালিখি দরকার আরও। একটা বিশেষ শ্রেণি এই সকল দেশি হুজুরদের কথাবার্তা দিয়ে ইসলামকে পচানোর জন্য ওত পেতে থাকে বলতে গেলে। এই লেখাটাও দেখা প্রাসংগিক ও যুক্তিযুক্ত। https://www.facebook.com/notes/yasif-kayes/%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B9/648779368484027
স্যরি ভুল লিংক দিয়ে ফেলছি :crying:
এইটা হবে https://www.facebook.com/notes/jabal-at-tariq/%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A6%AB%E0%A7%80-%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%81%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%93%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%83-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%A4/10151821228743474
নোটের সাথে আমিও একমত।ইসলাম এত ঠুনকো না যে কেউ একটা কিছু বললেই তার মান যাবে।তবে হুজুররা যে এই পুরাতন ধ্যান ধারণা থেকে বের হতে পারছেন না সেটা ভেবেই খারাপ লাগে।বাহিরের স্কলাররা অনেক দূর চলে গেছেন।উনারা এখন বিবর্তনবাদ নিয়ে গবেষণা করেন।রিচার্ড ডকিন্সদের পাল্টা দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।সেখানে আমরা তো বহুদূর! ধন্যবাদ নোটটার লিঙ্ক শেয়ারের জন্য ।
যাক,আলোচনার মধ্যে বোনাস হিসেবে একটা গল্প পাওয়া গেল 😀
:happy: