আজাইরা প্যাঁচাল

 

থিসিস এর প্রেসেন্টেশন হবে, হাতে সময় একদমই নাই। তার উপরে সেমিস্টার ফাইনাল চলতেছে। RA আর TA গিরির কাজ তো আছেই…সব মিলে মাথা একটু আউলা আছে। অনেক কাজ, অনেক প্রেসার, এইসব চিন্তা যখন মাথায় বেশি ঘুর ঘুর করে তখন বালিশ মাথার উপরে দিয়ে ঘুমই আমার সম্বল 😛

বউয়ের ল্যাপটপের ব্যাগটা ক্যাম্পাসে আমাকেই বহন করতে হয়। সে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছে এইটা নাকি আমার দায়িত্ব। ভালোবাসার যুক্তি মেনে নিতেই হয়  🙂 এই ল্যাপটপ টা আমরা গত কিছু দিনে তিন বার হারায়ে ফেলছি। ২ বার আমি, একবার আমার বউ।

ঘটনা ১:

সেদিন রাতে ক্লাস শেষ করে আমি আর আমার তাঞ্জানিয়ার ফ্রেন্ড গাড়ি নিয়ে বউয়ের জন্য ওয়েট করতেছি। সে হাসি মুখে এসে গল্প জুড়ে দিলো। ৫ মিনিট পরেই দেখলাম তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে…বলল ক্লাস রুমে ল্যাপটপ রেখে চলে আসছে। ক্লাস শেষ হইছে ১৫ মিনিট আগে। সবাই চলে গেছে। গিয়ে দেখি ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। তারপর টেকনিশিয়ান ডেকে ক্লাস খুলে দেখলাম ল্যাপটপ আছে বহাল তবিয়তে। উল্লেখ্য যে, ৩ দিন আগেই ও ক্লাসে টাকার ব্যাগ ফেলে আসে কিন্তু পরদিন গিয়ে দেখে টেবিলের উপরেই টাকা সহ ব্যাগটা এখনো আছে!

ঘটনা ২:

দুপুরবেলা ক্যাম্পাসে অনেক student থাকে। বাসায় ফিরে আসবো, বাসের জন্য ওয়েট করতেছি। হটাত দেখি ল্যাপটপের ব্যাগটা নাই! মনে করার ট্রাই করলাম কই ফেলে আসছি, পারলাম না। প্রায় ১ ঘন্টা আগে ফটোকপি করতে গেছিলাম মনে পরলো, ওই দোকানটা ক্যাম্পাসের সবচে বড়। ভিড় লেগেই থাকে। ব্যাগটা ওইখানেই ফেলে আসছি। ভাবলাম, কাজ হইছে, ল্যাপটপ মামারে আর পাওয়া যাবে না। তারপরেও গেলাম, অবাক হয়ে দেখলাম দোকানের একদম সামনেই, যেখানে আমি ফেলে গেছিলাম, সেখানেই ব্যাগটা এখনো আছে!

ঘটনা ৩:

সর্বশেষ কাহিনী আজকের। লাইব্রেরী থেকে নতুন নতুন বই তুলে আনা আমার অভ্যাস। কাভার দেখে আর preface পড়ে টেবিলে যত্ন করে রেখে দেই 😛 যাইহোক, বাসস্টপে বসে সদ্য লাইইব্রেরী থেকে Rober J Barro এর Macroeconomics বইটার preface  পড়ছিলাম, এর মধ্যেই বাস চলে আসায় ভুলে ব্যাগ রেখেই বাসে উঠে পড়ি। বাসার সামনে গাড়ি থেকে নামার সময় টের পেলাম ল্যাপটপের ব্যাগটা আমার সাথে নাই! মনে মনে ভাবলাম আজ আর রক্ষা নাই। ল্যাপটপ আর পাওয়া যাবে না। তারপরেও খুব কাছের এক বন্ধুকে কল দিয়ে বললাম বাস স্টপে এসে যেনো একটু চেক করে দেখে। কিছুক্ষন পরেই ওর কল পেলাম…ল্যাপটপের ব্যাগটা পাওয়া গেছে! 😀

সারমর্মঃ

আমাদের দেশের বিভিন্ন রং আর মতের রাজনৈতিক আর অরাজনৈতিক দল এবং গোষ্ঠীর নানান ধরনের চেতনাবোধ লালন করেন। এদের চেতনার আস্ফালন প্রতিনিয়ত টিভির পর্দায়, পত্রিকার পাতায়, অনলাইনে আর বক্তৃতার মঞ্চে দেখি আমরা। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কোনো পক্ষের চেতোনাধারীরাই আমাদের জাতিকে সততা শেখাতে পারেন নি। অন্যায়কে অন্যায় বলে প্রতিবাদ করা শেখাতে পারেন নি। উল্টো এদের অধিকাংশের ব্যাক্তি আর সামষ্টিক জীবনের খবর নিলে দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়।

সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে morally bankrupt টাইম আমরা পার করছি। তাই বলি, আপনি যেই চেতনার লোকই হন না কেনো, যদি প্রমাণ করতে পারেন আপনারা সৎ, মিথ্যার আশ্রয় নেন না, দুর্নীতি (চুরি) করেন না এবং অন্যায় নিজে করেন না আর কখনোই প্রশ্রয় দেন না…I promise that আমি আমার জীবনের বাকি অংশ টুকু আপনাদের চেতনার বিজয়ের জন্য কাজ করে যাবো।

 

আহমেদ সাবিত সম্পর্কে

অর্থনীতির ছাত্র। স্বপ্নের সাথে কথা বলি...হেঁটে বেড়াই... স্বপ্নের খোঁজে...
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, হাবিজাবি-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to আজাইরা প্যাঁচাল

  1. তুসিন বলেছেনঃ

    আপনি যেই চেতনার লোকই হন না কেনো, যদি প্রমাণ করতে পারেন আপনারা সৎ, মিথ্যার আশ্রয় নেন না, দুর্নীতি (চুরি) করেন না এবং অন্যায় নিজে করেন না আর কখনোই প্রশ্রয় দেন না

    কই পাব এমন?? কেউ নাই।সব ভন্ড।কেউ আমাদের র্ধমীয় আবেগ নিয়ে খেলা করে।কেউ করে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ চেতনা নিয়ে।আর আমরা জনগন হলে গিনিপিক।:(

  2. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    ল্যাপটপের কাহিনী বেশ মজা পেলাম। তবে বারবার এইরকম উদ্ধার নাও পেতে পারেন। এরপর থেকে সাবধান থাকা উচিত।

    আর চেতনার কথা আর কী বলব…পরিবর্তন কবে আসবে জানি না। তবু নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।

  3. ফেরারী পথিক বলেছেনঃ

    ধন্যবাদ!
    একমত আপনার সাথে…নিজ নিজ জায়গা থেকেই আমাদের কাজ শুরু করতে হবে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।