বন্ধুবর বোহেমিয়ানের কাছেই প্রথম শুনলাম খবরটা। হ্যারি পটার সিরিজের লেখিকা, হাফ-ব্লাড প্রিন্সের স্রষ্টা জে কে রোওলিং নিজেই নাকি শেষমেশ এই খেতাব জুটিয়েছেন কপালে।
গেল এপ্রিলে রবার্ট গলব্রেইথ ছদ্মনামে মিলিটারির এক প্রাক্তন তদন্তকারী পুলিশের প্রথম বই প্রকাশ পায় অপরাধ-বিষয়ক উপন্যাস ‘The Cuckoo’s Calling‘এর মোড়কে। লেখক নাকি তার নিজের ও সহকর্মীদের পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন বইটি লিখতে। এক সুপারমডেলের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কাহিনীর নিপুণতা পাঠক-সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়, বিশেষত বইটি যেহেতু এসেছে একজন আনকোরা নতুন লেখকের হাত থেকে।
আড়াই মাসে গোটা ব্রিটেনে মাত্র ১৫০০ কপি বিক্রি হওয়া বইটির চাহিদা আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে এ সপ্তাহে ছদ্মনামের পেছনের মানুষটির পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে। লেখক আর কেউ নন, নন্দিতা জে কে রোওলিং!
আরো কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার ইচ্ছা থাকলেও ‘দ্য সানডে টাইম্স’ পত্রিকার হাতে ধরা পড়ে গেছেন রোওলিং। টুইটারে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির ইঙ্গিত পেয়ে পত্রিকাটি ভাষাতাত্ত্বিকদের একটি দলের সাহায্য নিয়ে রোওলিং-এর আগের বইগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখে গবেষণাটি সফলভাবে শেষ করে। মুখোশের আড়ালে বসে নিজেকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা খুব উপভোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন রোওলিং, সেই সাথে পটারদত্ত আকাশচুম্বী আশা-আকাঙ্ক্ষা সামাল দিতে হয় নি বলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেনও। যদিও তার এই সুখের দিন তিন মাসও টিকলো না! লেখিকা হিসেবে নিজের লেখনীর আলাদা একটা ধাঁচ তৈরি করার বিপত্তি হয়তো এখানেই। তার ওপর নব্য লেখকেরও বিশ্বখ্যাত লেখিকার মত একই প্রকাশকের দ্বারস্থ হওয়াটা দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোকে আরো সহজ করে দিয়েছে।
রোওলিং ২০০১ সালের কোন এক সময়ে ছদ্মনামে লেখালেখির প্রতি তার বিশেষ আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন একবার। আবার ২০০৭এ ইয়ান র্যাঙ্কিন মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলেন যে তার স্ত্রী রোওলিং-কে এডিনবার্গে একটা অপরাধ-বিষয়ক উপন্যাস নিয়ে কাজ করতে দেখেছেন এক ক্যাফেতে, যদিও পরে রোওলিং-এর টীমের সবাই এ ‘অভিযোগ’কে সরাসরি নাকচ করে দেওয়ার পর র্যাঙ্কিনও একে কৌতুক বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
হ্যারি পটার সিরিজের পর রোওলিং-এর লেখা দ্বিতীয় বই এটি, আর সেই সাথে তার লেখা দ্বিতীয় সিরিজও। ‘মাগ্ল’দের নিয়ে লেখা প্রথম বই ‘দ্য ক্যাজুয়াল ভ্যাকেন্সি’ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আর হ্যারি পটারের সাথে এর অবিরাম তুলনাই কি তাকে ছদ্মনামে লিখতে আরো আগ্রহী করে তুলেছে? অ্যামাজনে একজন মন্তব্য করেছেন, বইটি যে রোওলিং-এর লেখা সেটা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই বইটির রেটিং কমতে শুরু করেছে।
১৯৮০ সালে স্টিফেন কিং-এর রিচার্ড ব্যাচম্যান সাজার পর থেকে আর কেউ এমন চমৎকারভাবে সাহিত্যজগতে ধোঁকাবাজির স্বাক্ষর রাখতে পারেন নি – এমনটাই বলা হচ্ছে এখন।
‘The Cuckoo’s Calling’এর কাহিনীসংক্ষেপ:
আফগানিস্তানে এক ল্যান্ডমাইনে পা হারিয়ে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কোনমতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এখন প্রাক্তন সৈনিক করমোরান স্ট্রাইক। মক্কেল আপাতত মাত্র একজন, দেনা জমেছে পাহাড়সমান। বান্ধবীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর নিজের অফিসেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
এমন সময় জন ব্রিস্টো নামে এক মক্কেল আশ্চর্য এক কেস নিয়ে আসলো তার কাছে। জনের বোন, বিখ্যাত সুপারমডেল লুলা ল্যান্ড্রি (বন্ধুমহলে যে পরিচিত ছিল Cuckoo নামে) মারা গেছে মাসকয়েক আগে। পুলিশ একে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলেও জন তা মেনে নিতে নারাজ। ঘটনা তলিয়ে দেখতে গিয়ে কোটিপতি সুন্দরী, রকস্টার বয়ফ্রেন্ড আর মরিয়া ডিজাইনারদের নতুন এক দুনিয়ায় পা দিলেন স্ট্রাইক। সেই সাথে পরিচিত হলেন মানুষের পক্ষে আনন্দ, ভোগ আর মোহের যত উপকরণ যোগানো সম্ভব, তার সাথেও।
***
বইয়ের অংশবিশেষ পড়তে পারবেন এখানে
লেখিকার চমৎকার এক বক্তৃতার অ-চমৎকার অনুবাদ করেছিনু একবার এখানে
[বিবাহোপলক্ষ্যে ব্লগ থেকে প্রায় আড়াই মাসের ছুটি কাটিয়ে মরচে-পড়া হাত নিয়ে এই পোস্টে আমার কামব্যাক! হ্যাপি টু গেট ব্যাক অন ট্র্যাক – :penguindance: ]
ওয়েলকাম ব্যাক !! 😀
বইটা পড়তে চাইইই…রোলিং তাও আবার থ্রিলার !
আমার তেমন আগ্রহ নাই। রোওলিং-এর আগের বইটা এখনো শেষ করতে পারি নাই, রিভিউও ভালো শুনি নাই। এইটা নিয়েও আশা একটু কম। 🙁 রোওলিং মানেই আসলে হ্যারি পটার, হ্যারি মানেই রোওলিং! 🙂
ভালো হইসে লেখা!… :babymonkey:
ধন্যবাদ আপু! :babymonkey:
মাগলদের সাথে আসলে রোওলিং-এর ঠিক যায় না! ফিরে আসুক, হগওয়ার্টসের গল্প নিয়ে। আমার যা মনে হয়, হ্যারি পটার না হোক, জেমস-সিরিয়াস-লুপিনদের সময়টা নিয়ে লেখা গল্পগুলোও বেশ মজাদার হবে!
লেখায় :dhisya:
সেটাই। তবে এটা নাকি ভালোই হয়েছে শুনলাম। ধন্যবাদ!
বইটা পড়ে শেষ করেছি! B)
জোশিলা বই। আগাথা প্যাটার্ন। পুরাই জোশ
পড়তে হবে তো তাত্তাড়ি!
ওহহো ! ঘটনা তাহলে এই! প্রথমে তো ভেবেছি অন্যটা।
জ্বী ঘটনা এই!