মাহে রমজান শুরু হল।রহমতের মাস।প্রতিবার রমজানের মাসে ঠিকভাবে সব কিছু আদায় করতে পারি না।তরাবির নামাজটা বিশেষ করে মিস হয়।এবার ঠিক করেছি এক দিনও তারাবির নামাজ মিস করব না।আজ তৃতীয় রোজার তারাবি নামাজ পড়ে আসলাম।আর বাকি ২৭ টি।আশা করি আল্লাহ রহমতে তা পারব।আমাকে পারতেই হবে।
তারাবি নামাজ অনেকে অলসতার কারনে পড়ে না।যেই কাজটা আমি বিগত বছর গুলোতে করতাম :(।
মনে করতাম বিশ রাকাত নামাজ দাড়িয়ে পড়তে অনেক কষ্ট হবে।পারব না এত কষ্ট করতে।পা ব্যাথা করবে,হাত ব্যাথা করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
চিন্তা ধারাটা এবার একটু পরিবর্তন করলাম এবার।একটা গল্প মনে পড়ে গেল।সেই গল্পটার মত করে নিজে চিন্তাধারাটা পরিবর্তন করে নিলাম।অলস্যকে জয় করতে হবে।
গল্পটি এরকম
”
এক লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। রাস্তার পাশেই একটা হাতি দড়ি দিয়ে বাঁধা । হাতিটাকে এই অবস্থায় দেখে লোকটা খুব অবাক হলো। কোন শিকল নেই, কোন খাঁচাও নেই। হাতিটার এক পা শুধু একটা পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা । চাইলেই হাতিটা যে কোন মুহূর্তে দড়ি ছিঁড়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু হাতিটা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। দড়ি ছিঁড়ে চলে যাচ্ছেনা বা ছেঁড়ার কোন চেষ্টাই করছেনা।
অনেকক্ষন আনমনে ভাবলো লোকটা। ঘোর কাটছেনা কিছুতেই। সুযোগ থাকার পরও হাতিটা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেনা কেন? কি এমন কারণ থাকতে পারে এর পেছনে? ঘটনাটা বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে লোকটাকে।
কিছুদূর যাওয়ার পর একজন ট্রেইনারের সাথে দেখা হলো তার । “সুযোগ থাকার পরও হাতিটা স্থির দাঁড়িয়ে আছে কেন? কেন সে দড়ি ছিঁড়ে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেনা? ” অনেক আগ্রহ নিয়ে ট্রেইনারকে জিজ্ঞাসা করলো লোকটা।
লোকটার প্রশ্ন শুনে হেঁসে উঠলো ট্রেইনার। বললো “হাতিটা যখন অনেক ছোট ছিল, তখন এরকমই একটা পাতলা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হতো তাকে। তখন বাচ্চা হাতিটাকে বেঁধে রাখার জন্য এই ছোট দড়িটাই যথেষ্ট ছিল। তাই চেষ্টা করার পরও দড়ি ছিঁড়ে সে মুক্ত হতে পারেনি। এরপর সে বিশ্বাস করা আরম্ভ করলো তার পক্ষে এই দড়ি ছিঁড়ে মুক্ত হওয়া সম্ভব না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাতিটা অনেক পরিনত হয়েছে, কিন্তু তার সেই বিশ্বাস এখনও আছে। সে এখনও ভাবে তার পক্ষে এই দড়ি ছিঁড়ে মুক্ত হওয়া সম্ভব না। তাই সে দড়ি ছিঁড়ে মুক্ত হওয়ার কোন চেষ্টাই করেনি আর” ।
লোকটা অভিভূত হয়ে গেল! নিজেকে মুক্ত করার সুযোগ থাকার পরও হাতিটা যেখানে ছিল সেখানেই স্থির হয়ে আছে কারণ সে ভাবে তার পক্ষে মুক্ত হওয়া সম্ভব না! এমনকি সে আর চেষ্টাই করে দেখেনি!”
মাঝে এই গল্পগুলো অনেক উৎসাহ দেয়।প্রথমদিন তারাবি নামাজ শেষ করে আল্লাহ কাছে দোয়া করলাম আল্লাহ এবার যেন রোজাসবগুলো রাখতে পারি সঠিক ভাবে এবং তারিবা নামাজ যেন একদিনও মিস না হয়।বাকিটুকু নিয়ে ত্রিশদিন পর আবার লিখব।আসলে কি পারলাম আমি নাকি পারলাম না।
যারা এখনো অলসতার করে তারাবির কিংবা নামাজ মিস করছে তাদের জন্য বলছি সত্যি একটা সময় এসে আপনার খুব আসফোস হবে।ইস কেমন নামাজ না পড়ে আড্ডা দিয়ে বাহিরে কাটিয়েছিলাম? 🙁
অনেকে দেখা যায় বাসায় তারাবির নাম করে এসে বাহিরে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়।এই সময়গুলো নষ্ট করার ফল একদিন দিতে হবে।হিসাবের দিন।তখন আর বাঁচার পথ থাকবে না।চলুন না সামান্য আড্ডাটা না করে নামাজটা পড়ে ফেলি।দেখবের ভাল অনুভূতি হবে ।নিজের মনে তৃপ্তি পাবে।যা আড্ডায় পাবেন না।ব্যাপারগুলো আমার পরীক্ষিত।এই তো আগের বছরও আমি তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বের হতাম।অর্ধেক নামাজ পড়ে বাকি সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম।এখন বুঝতে পারছি হারে হারে।সেই সময়গুলো নষ্ট করার জন্য অনুশোচনা হচ্ছে।ভুল থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় আমিও নিলাম।আপনিও শুরু করুন দেখবেন আপনিও পাবেন।
এবার এলাকায় আমার পরিচিত সমবয়সী আছে তাদের তারাবি নামাজ পড়ার জন্য আহব্বান করেছি।একজন বড় ভাই আছে।নাম বলছি না।যিনি দীর্ঘদিন নামাজ পড়ে নি। প্রায় দুই বছরের মত।উনাকে তারাবি নামাজ পড়ার কথা বললাম।ভেবেছিলাম আসবে না।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আসলো নামাজ পড়তে।:) ওনাকে প্রথম তারাবি থেকে মসজিদে দেখতে পেয়ে খুব ভাল লাগল।প্রতিদিন তারাবির নামাজ পড়ার আগে আমাকে ফোন করে যে আমি যাব কিনা,কয় তলায় নামাজ পড়ব।আপাতত আমার তিনজন একসাথে নামাজ পড়ি।আমি,মেহেদী এবং সেই বড় ভাইটি।আরও কয়েকজনকে বলছি কিন্তু আসে নি:(
আমার লেখাটা যারা পড়ছেন তাদের বলল একদিন ধৈর্য সহকারে তারাবির নামাজ পড়ে দেখুন।দেখবের কোন ব্যাপার না।বিশ রাকাতের ভয় দূরে করে পড়তে শুরু করুন দেখবেন অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাবে।তখন আর সমস্যা হবে না।
সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকন ।শুভ মাহে রমজানের শুভেচ্ছা:)
মাশাআল্লাহ ভাইয়া, কী সুন্দর তুমি নামায পড়ছ। আমারও অনেক চেনাজানা লোকজন আছে যারা এই ব্যাপারে ভয়ানক আলসেমি করে। প্রার্থনা করি তুমি বাকি দিনগুলোও যেন পড়ে শেষ করতে পারো, আল্লাহ সবাইকে সচেতন হওয়ার তাওফীক দিন।
ধন্যবাদ।
এগারো তারাবি গেল মিস হয় নাই একটাও :)আশা করি পারব।আল্লাহ ভরসা।
হুম। আমি অনেক কেই দেখছি মসজিদে শুক্রুবার ছাড়া যায়নি কিন্তু তারাবি পড়তে যাচ্ছে।
তা হয়। কিন্তু সেই মানুষগুলো প্রথম চার পাঁচদিন যায় তারাবি পড়তে কিন্তু পরে আর যায় না।আমার ২৭ রমজানের পর মসজিদের তাদের মুখ দেখা যায় 🙁
তুসিন আমার মনে হয় কি,মানুষ তারাবি পড়তে আগ্রহী হয় না নানা কারণে।
প্রথম কারণ বিশ রাকাত দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট ঘাড়ে নিতে চায় না।ঐ যে লিখলেন মানসিক কারণ,সেটাও একটা কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয় কারণ,আমরা কোরআনের অর্থ জানিনা।যার কারণে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে নেই ভেবে তারাবিই পড়ি না বা সূরা তারাবি পড়ি।
আপনার তারাবি পূর্ণ একাগ্রতার সাথে আদায় করতে পারবেন সেই কামনাই করি
ধন্যবাদ… (y)