অনেকদিন আগের কথা, তখনও আমি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। দেশের বাইরে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই যা হয় তা হল বাংলাদেশের প্রতি অজানা কারণে একটা গভীর ভালবাসার তৈরি হওয়া আর কেউ নাম না মনে রাখলেও তখন আমার দেশের নাম ধরেই সবাই ডাকত। আর প্রথমবার এসেই আমার প্রায় ৩ বছর থাকাতে… সেটা অন্য এক পর্যায় লাভ করেছিল।
অনেকেরই আমাদের এই দেশ নিয়ে নানা রকম আগ্রহ কাজ করে আর সেই প্রশ্নের ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। অনেকে আমাকে জিজ্ঞাস করতো, তোমারা কি ইংলিশ অনেক বেশী ইউস করো ?
একটা লিটারেচার কোর্সে আমি ৪০ মিনিটের লেকচার দিয়েছিলাম, “বাংলা সাহিত্য” নিয়ে, সেখানেও আমাকে বলা হল তোমাদের মিডিয়াম অফ ইন্সট্রাকশন কি ?
আমি বুঝালাম.. কিন্তু সেখানে সবাই আমার বিপক্ষে কেন আমাদের বেশীর ভাগ ইউনিভার্সিটি ইংরেজি পড়ায় একারণে !!
সবশেষে.. আমি যখন টুকটাক গবেষণার কাজ শুরু করলাম তখন অনেক কিছু দেখতে বা পড়তে হয়েছে। আমি ভেবে দেখলাম, শুধু তুরস্কের মাতৃভাষা ইউস না করলে এই দেশের টেকনোলজি কোনদিনও এত মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্যই হোত না। অনলাইনে অনেক কাজ করাও সম্ভব হোত না।
আর তাই এদেশের এক দল আছে যাদের প্রথম কাজ যে কোন মূল্যেই অনুবাদ করা সেটা ফোন বা ট্যাবলেট অ্যাপ হোক,কিংবা ব্যাংক, মুভি বা বই অথবা বাসের কনট্রোল অ্যাপ্লিকেশন।
এদিকে আমাদের বাংলা লেখার সহজ একটা সফটওয়্যার আসতে কত বছর লাগলো, অভ্র না থাকলে এখনও বেশীভাগ লোক ইংরেজি লেটারে লিখত। সবচেয়ে অবাক লাগে এই কাজটাও করেছেন যিনি… তিনি পড়াশুনা করেছেন মেডিক্যাল কলেজে !!
আমাদের অনাগ্রহের শেষ নেই কারণ একসময় আমাদের বুঝানো হয়েছে যে ইংলিশই আমাদের ভবিষ্যৎ। আসলে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই একই অবস্থা। এখনও সমস্ত অ্যাপ প্রতিযোগীতা শেষ হয় বাংলা অ্যাপ ভার্সন ছাড়াই; আমরা বেমালুম ভুলে যাই ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে সবাই ইংরেজিতে দক্ষ না।
বেশ কিছুদিন আগে আমি একটা সফটওয়্যার লিখেছি যার সব ল্যাঙ্গুয়েজে সাপোর্টের ব্যবস্থা করা আমার টার্গেট ছিল। কিন্তু আমার দুঃখ এক জায়গায় সব প্রয়োজনীয় সাপোর্ট আমি পেয়েছি শুধু বাংলায় পাইনি। এই ভার্সনটা ২০০৮ সালের ব্যসিসে করা। এখন আমাকে হয় বাংলা পুরাই বাদ দেয়া লাগবে না হয় নিজেকে শুরু থেকে একটা কিছু লিখে সাপোর্ট বানাতে হবে..
আমাদের এই অনাগ্রহের কারণ জানা নেই… তবে আমাদের দেশের মানুষরাই একসময় ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে আর রক্ত ঝরিয়েছে। আমি শুধু ভাবী আর অবাক হই !
আপনাকেই শুরু করতে হবে ভাইয়া। আর কেউ আসছে না। আপনিই শুরু করুন। 🙂
শুরু করেছি, দোয়া কর ভালভাবে যেন কাজগুলো শেষ হয়।
ইউরোপে আসলেই মাতৃভাষার কদর দেখলে বড়ই দুঃখ হয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মালিক এই আমাদের দৈন্যতার কথা মনে হয়। আসলেই ভাবি আর অবাক হই… 🙁
ফেসবুক, গুগল,গুগল ক্রোম, এরকম অনেক সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট এখন বাংলায় পড়া যায়। খুব কম মানুষকেই ব্যাবহার করতে দেখেছি।
তবে, ট্রান্সলেটরের ত্রুটিপূর্ণ অনুবাদ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করার লোকের অভাব নাই।