আজকের দিনটা আমার জন্যে ভীষণ অন্যরকম একটা দিন। আজ এখানে রোদের প্রখরতা নেই, বৃষ্টিস্নাত কোমল মায়াবতী একটা স্পর্শ প্রকৃতিকে ঘিরে রেখেছে আজ। তারচেয়েও কোমল মায়াবতী একটা ছোঁয়ায় ভিজে আছে আমার মন। আমি- একটি ফিনিক্স পাখি, রূপকথা আর বাস্তব জীবনের অন্তহীন আকাশে শরীর জুড়ে সরব স্বপ্ন মেখে উড়তে থাকা ক্লান্তিহীন ফিনিক্স পাখি। আজ আমার সরব স্বপ্নগুলোর জন্মদিন, আজ আমার ডানায় মুছে যাওয়া মিষ্টি রোদের জন্মদিন, আমার গায়ে লেগে থাকা ভালোবাসার গন্ধটুকুর জন্মদিন। আজ থেকে মাত্র বছর দুয়েক আগে আমার স্বপ্নের, রোদের, ভালোবাসার জন্ম হয়। তখন কতটুকুনই বা ছিল ওরা? ছোট ছোট হাত-পা-ছোট্ট মুখ-আঙুল-নাক-চোখ-চোখের পাতা; তারপর দু-দু’টো বছর পেরিয়ে গেছে। ওরা আরেকটু বড় হয়েছে, আরেকটু বেড়ে উঠেছে আগের চেয়ে। তবু বদলে গেছে কি এতটুকুও?
ফেইসবুকে আজকাল অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপু আপনার নাম ফিনিক্স কেন?
প্রশ্নটা বরাবরই আমার ভেতর আলতো করে দোলা দিয়ে যায়। ফিনিক্স- রূপকথার পাখি, বেঁচে থাকে চিরকাল, মৃত্যু হলেও নিজের পোড়া ছাই থেকেই পুনরায় জন্ম নেয় সে। দুই বছর আগে কেন নিয়েছি ফিনিক্স নামটা? কেন তখন বাস্তবের মানুষ থেকে হয়েছি রূপকথার পাখি?
আমার সরব স্বপ্ন, ডানায় মুছে যাওয়া মিষ্টি রোদ, গায়ে লেগে থাকা ভালোবাসার ‘মানুষ মানুষ’ গন্ধেরা কখনো শেষ হয়ে যাবে না। আমার বাস্তবের মানুষ চিন্তা-মানুষ স্বপ্ন-মানুষ বোধ-মানুষ বিবেক-মানুষ ইতিবাচকতা চিরকাল বেঁচে থাকবে রূপকথার ফিনিক্সের মাঝ দিয়ে। ওরা হয়তো জীবনের কঠিন রাস্তায় ভীষণ হোঁচট খাবে, হয়তো কষ্টের ভেতরে লীন হতে হতে আগুনের ভেতরে আত্মাহুতি দিতে চাইবে, তবুও আমি জানি, ওরা আবার উঠে দাঁড়াবে পোড়া ছাইয়ের মাঝ দিয়ে, আগুনের টকটকে লালচে-সোনালি রঙ পালকে মেখে নতুন ফিনিক্স হয়ে উড়বে মুক্ত আকাশে।
মানুষের জীবনের হিসেব-নিকেশের খাতায় ‘দেনা-পাওনা’ শব্দটার জনপ্রিয়তা অনেক। দিনের শেষে এসে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই শব্দটার কাছেই বেশিরভাগ মানুষ হার মানে। আমি যেহেতু পুরোপুরি মানুষ নই, তাই হারজিতের প্রশ্নটা দেনা-পাওনার ফ্রেম এসে আমার কাছে বাঁধতে পারে না। আমি স্পষ্ট জানি, আমি কতটা পেয়েছি, কেবল দেয়ার খাতাটা অনেকটাই মলিন, বিবর্ণ, তবু সেটুকু স্পষ্ট, লক্ষ্যহীন তো নয়ই।
আমি কতটা পেয়েছি?
আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন টের পাই আজকাল। জীবনে ইতিবাচকতা আর সমানুভূতি বা এম্প্যাথির সাথে পরিচিত হয়েছিলাম এই সরব ফিনিক্স হয়ে আসার পর থেকেই। ফ্রেমের বাইরে থেকে দেখার চেষ্টাটাও শুরু হয়েছিল এখানে এসেই। ভালোকে ভালো, না-কে না বলার এক অদ্ভুত জোর পেয়েছিলাম এই সরব থেকেই।
জীবনের হতাশায় যখন ডুবতে শুরু করেছিলাম, মহাসাগর হাতড়ে কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না, ঠিক তখন সরব ফিনিক্স, এই মানুষ আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। ফেইসবুকে হঠাৎ করেই আমি এমন কিছু মানুষের ইনবক্স পাই, এমন কিছু মানুষ ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে, যাদেরকে হয়তো আমি কোনদিন দেখিই নি, অথবা, কেউ কেউ চেনা মুখ হিসেবে আমার মাত্র একদিনের পরিচিত!
ফিনিক্স নামটা শুনে কে যেন কোন একদিন বলেছিল, পাখিদের কখনো মন খারাপ করতে নেই, ফিনিক্সের তো নয়ই! সেই থেকে ফিনিক্স নামটা কেবল কাগজে-কলমেই নয়, ধারণ করেছি আমার জীবনের প্রতি পরতে, চলার পথের প্রতিটা বাঁকে।
আমার এখনকার চাকরির সূত্রটাও কিন্তু এই সরব ফিনিক্সের জন্যেই পাওয়া। তাও কেবল একটা নয়, আরো তিন-তিনটে চাকরির সুযোগ আমার দরজায় কড়া নাড়ছে, যাদের প্রতিটির সূচনা সরব স্বপ্ন থেকে, সরব ফিনিক্স থেকে।
আমি কতটা পেয়েছি?
গতকালের ঘটনাটাই যদি ধরি, তবুও ফিনিক্স হিসেবে পাওয়ার দাড়িপাল্লাটা একদিনেই অনেকখানি ভারি হয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। হুট করেই দিন পাঁচেক আগে আমার সাথে যোগাযোগ করলেন ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাইয়া। তারপর পুরো বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েট প্রাণরসায়নবিদদের অর্গানাইজেশনের কার্যকরী পরিষদে কীভাবে যেন ঢুকে গেলাম! জাহাঙ্গীরনগরের ভিসি শ্রদ্ধেয় আনোয়ার হোসেন স্যার যখন আমাকে স্টেজে ডেকে নিলেন তখন আমি পুরো হতবাক!
অনুষ্ঠান শেষে আমায় ডেকে বললেন, ‘আমাদের পরিষদে তোমার নাম দেখে আমি তো খুবই খুশি হয়েছি!’
অবাক হয়ে আমি জানতে চাইলাম, ‘স্যার, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’
স্যার উত্তর দিলেন, ‘তুমি লেখালেখি ছেড়ে দাও নি তো? এখনো লেখালেখি করছ তো?’
ফিনিক্স হিসেবে আমি কতটা পেয়েছি তার হিসেবের পাতাটা সত্যিই এতটা বেশি লম্বা যে বলে শেষ করার নয়। কী দিতে পেরেছি এই প্রশ্নটা বরং আমায় ভাবায়। আমি এই দাবী কখনোই করব না যে একটা মানুষকে আমূল বদলে দিটে পেরেছি। তবুও জানি, কিছু কিছু মানুষ ফিনিক্সের ডানায় ভর করে তাদের স্বপ্নগুলোতে প্রাণ দিয়েছে, তাদের ভাবনাগুলোয় নতুন করে রঙ চড়িয়েছে, তাদের কাজের ধারায় ইতিবাচক কিছু ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরেছে। আমি যখন শুনতে পাই, একটা ব্যবহৃত বস্তু যেখানে সেখানে না ফেলে মানুষ তা দিয়ে নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করছে, ভালোবেসে আঘাত পাওয়া মানুষটা নতুন করে বাঁচতে চাইছে, বদমেজাজী-অভিমানী কেউ চাহিদার হিসেব ছেড়ে ভালোবাসতে শুরু করেছে নিজেকে-নিজের পরিবারকে, আত্মকেন্দ্রিক কোন এক মানুষ কাজ শুরু করেছে রাস্তায় বেড়ে ওঠা কোন ভবঘুরের জন্যে, তখন যে আমার ভেতরে কী অদ্ভুত একটা আনন্দ হয়, তা আর বলার মত না। আমার মনে হয়, আমি কি সত্যিই এতটুকুও পেরেছি? এই সরব স্বপ্নটুকু কি ফিনিক্সের ডানার সেই মুছে যাওয়া রোদের মানুষ মানুষ ভালোবাসারই প্রেরণা? নাকি নিছকই আমার কল্পনা?
জীবনের সব হিসেব পেরিয়েও আজকের দিনটা আমার জন্যে ভীষণ অন্যরকম একটা দিন। আজ আমার প্রিয় সরবের জন্মদিন, হৃদস্পন্দনে অবারিত এক ভোরের জন্মদিন, আজ আমার আমির আড়ালে থাকা ফিনিক্স নামের সেই সরব পাখিটার জন্মদিন! সরব তো অনেক দিয়েছে পাখিকে, কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ী যত স্বপ্ন সেই পাখিটা একে একে পৌঁছে দিতে পারবে তো তার প্রাণের সরবের কাছে?
অনেক ভেবেও কমেন্টের বাক্সে লিখবার মত নতুন কিছুই খুঁজে পেলাম না… যাই লিখতে চাই, শব্দ খুঁজে পাই না!
:happybirthday: সরব!
:happybirthday:, প্রিয় ফিনিক্স পাখি… জীবন নামের সাদা-কালো মেঘে ঢাকা অন্তহীন আকাশটাতে সরব স্বপ্ন নিয়ে উড়ে চল অবিরত… 🙂
**:happybirthday: , প্রিয় ফিনিক্স পাখি… জীবন নামের সাদা-কালো মেঘে ঢাকা অন্তহীন আকাশটাতে সরব স্বপ্ন নিয়ে উড়ে চল অবিরত… 🙂
ধুরো! ইমোটিকন দিতে পারি না ঠিকমত!!
** :happybirthday:
উইশ করার জন্যে থ্যাংকু মেংকু! :happy: :happy:
ওয়াল্কুশ মোয়াল্কুশ 😀
ইমোটিকন কোড টাইপ করে মুখস্থ দিস নাকি? 😛
হুম। এইজন্যেই তো… 🙁
প্রিয় ফিনিক্স পাখি… জীবন নামের সাদা-কালো মেঘে ঢাকা অন্তহীন আকাশটাতে সরব স্বপ্ন নিয়ে উড়ে চল অবিরত… >> অবিরত উড়ে চলবার আশায় বাঁচি। :beshikhushi:
বুঝলাম, সরবের সাথে আপনার সম্পর্ক অনেক বেশি আপন। একটা ওয়েবসাইট কে নিয়ে তার ইউজারদের উচ্ছাস থাকতেই পারে।
কিন্তু, আপনার ব্যাপারটা সত্যি অনেক প্রেরনাদায়ক।
নিশ্চয়ই সরব টিম স্বার্থক।
হাহহা, সরব টিম সার্থক কিনা জানি না, কিন্তু আমি সরবকে পেয়ে সার্থক। :love:
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এতো সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্যে। 😀
:happybirthday:
:happy: :happy:
শুভকামনা
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :happy:
সরব এর সূত্রে আমরা এই সব ছাড়াও কত বন্ধু… একদম পরিবারই পেয়ে গেছি!
ঠিক! পরিবারটা অনেক আপন! :yahooo: :beshikhushi:
পৃথিবীতে ফিনিক্স নামক পাখির কতটা প্রয়োজন জানিনা,
তবে আমার দেশের তরুগুলোর জন্য ‘ফিনিক্স’ নামর এই ব্লগারটির সত্যি দরকার ছিল।
এই ব্লগার পাখিটি কতটুকু কী দিয়েছে তা নিয়ে কিছু বলব না; শুধু বলব সে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, তার অনেক দায়ীত্ব বাকী আছে, আরো কিছু এমন ফিনিক্স তৈরী করাও দায়ীত্বগুলোর একটি।
সরবের হাত ধরেই চলুক সেই পথে এগিয়ে যাওয়া… :love:
শুধু বলব সে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, তার অনেক দায়ীত্ব বাকী আছে, আরো কিছু এমন ফিনিক্স তৈরী করাও দায়ীত্বগুলোর একটি।>> বিশাল দায়িত্ব কাঁধে চেপে গেলো! কতটুকু পূরণ করতে পারবো জানি না তবে আপ্রাণ চেষ্টা করবো সাধ্যমত প্রত্যাশা পূরণের। :beshikhushi:
দোয়াপ্রার্থী! 😐