ইনসোমনিয়া? প্রিয় ইনসোমনিয়া?

ভাবতেই পারো, ক্লান্ত কোন দুপুরে…

ধুলো মেখে মেখে, বেজে ওঠা নূপুরে…

ভাবতে পারো, কেন পথের সীমানায় মেশা সমুদ্রের পায়ে পা মিশিয়ে হেঁটে যেতে ভালো লাগে দূর…বহুদূর। একা একা?

কেন রিনিঝিনি রুনরুন পাতায় পাতায় বৃষ্টির নূপুর নিক্কণের শব্দ একলা কানেই বেশি মধু ঢালে?

কেন…

কেন নিরাশ মন অবিশ্রান্ত সুনীল আকাশের পেঁজা তুলো মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে অনেক অনেক পথ পাড়ি দিতে ভালোবাসে, একলা পায়ে?

কেন রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট আর সুদূরে কোনদিনও মিশতে না চাওয়া কিন্তু খুব খুব মিশতে দেখার ইচ্ছে জাগানো গাছের সারি একলা কানেই গান শোনায়? দিনে আর রাতে।

কেন সাঁতরে সাঁতরে সেই সাগর পাড় পেরিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন কেবল একার ঘুমেই হানা দেয়?

সুর মেলে ডানা আকাশেরও ওপরে…

যাও যদি সুদূর পানে, চেনা কোন অন্যখানে…

কেন নীল আকাশ যেমন, তারাভরা আকাশও তেমন? একলা মনকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

কেন এই লাল-নীল-সাদা-কালো শহরের পথে বেরিয়ে একদিন খুব করে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে একা একা? কেন বন্ধন এত প্রিয় আর অপ্রিয়?

কেন একলা ছায়াই মায়া জাগায় আর ফুটপাথে সুন্দরতম আলো-আঁধারির খেলা কেবল একলা পায়ের নকশা-কাঁটা বিকেল-সন্ধ্যা-রাত?

কেন নিশ্চুপ রাত বন্ধু এনে দেয় সরু গাছের ডালে হুতোম পেঁচার রূপ ধরিয়ে? সে যে আর এলো না…পেঁচা তুই কই?

কেন বৃষ্টি শেষের পাহাড়-ধোয়া চোখ-ধাঁধানো সবুজ এসে একলা চোখে ধাক্কা দিয়ে যায়? সেই চোখে কেন ছোট্ট কোন মায়াবী মুখ স্নেহভর্তি চাদর বিছায়?

কেন নীরবে…বড় নীরবে ক্ষয়ে যাওয়া জীবন একটা শান্ত দীর্ঘ নদী? কেন জীবন মানে টাট্টু ঘোড়া? পদ্ম পাতায় শিশিরবিন্দু হলো কবে থেকে জীবন? কবে থেকে মরুভূমিতে জীবন নামের বিষাদসিন্ধু বয়ে চলে…বয়ে চলে…অনন্তর?

সে সব কি মিথ্যে, খুব বেশি মিথ্যে কথা?

ভালোবাসার মেঘে ঘেরা, আসবে যে আমার মনে…

আজ তোমার মেঘে মেঘে রঙধনু…

কারণ বিশাল পৃথিবী একাকীপনাকেই ভালোবাসে। সঙ্গ মানেই তুচ্ছতা, তুচ্ছ সঙ্গ পাল্লায় হেরে যায় বার বার করেই।

কারণ এই ছোট ছোট ভুলে ভরা জীবনটাকে বাড়িয়ে-ফাঁপিয়ে, ভুলগুলোকে সবাই কল্পনার ফানুসে ভরে ফুলিয়েই তোলে, ফুঁ দিয়েই চলে…তখন ভারাক্রান্ত মন আস্তে চোখ নামিয়ে ফিরে আসে পিঠ দেখানো রাস্তা ধরে…তুচ্ছতর সঙ্গ আমাদের…

কারণ গলার কাছে গোত্তা খেয়ে পাকিয়ে ওঠা আছড়ে পড়া ভঙ্গুর স্বপ্নগুলো বাঁধ মানে না…যুক্তি মানে না…বুদ্ধি জানে না…কেবল বোকার মতন তুচ্ছতর সঙ্গ চায়। ফুঁপিয়ে উঠে কাঁদতে চায়।

কারণ তুচ্ছ এসব সঙ্গদোষে আনন্দ নেই, গল্প আছে, জ্বালা জুড়ানোর বিষ আছে…

কারণ সঙ্গ পাওয়ার অন্ধ আর নষ্ট বাসনা একলা রাতের খোলা চোখে তীর বিঁধিয়ে শেল বিঁধিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। কারণ সঙ্গ মানে বিশ্রী বাজে।

কারণ সঙ্গ মানে ঘাড় ফিরিয়ে পেছন দিকটা তাকিয়ে দেখা। বাঁধ ভেঙে সব তুচ্ছ করে হারিয়ে যাওয়ার গানের লিরিক এলোমেলো আর এলোমেলো…

কারণ সঙ্গ কেমন গল্পগুলো কবিতা করে দেয়…

না-ঘুমানো চোখজোড়া যেন পাঁড় মাতাল হয়ে মাতলামি করে বেড়াতে চায়…

কেমন খেই-হারানো না-একলা এই তুচ্ছতর জীবন, হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তবু যায় না।

আজ তোমার মেঘে মেঘে রঙ…

আজ তুমি মেঘে মেঘে যেমন ইচ্ছে তেমন…

ভালোবাসা…নিয়ে আসি আজ আমি মেঘে মেঘে সারাখন…

ভাবতেই পারো আলোর শেষে সন্ধ্যা কেন মুচকি হেসে

সুদূরে যায় নিয়ে চলে আমার কথা তোমায় বলে…

ভাবতেই পারো আমরা দূরে…যেমন আছি বহুকাল ধরে…

তবুও আজ মেঘের দেশে…শুধুই আমায় মনে পড়ে… ((ভাবতেই পারো – প্রেয়ার হল))

আজ তোমার মেঘে মেঘে রঙধনু।

বড্ড বেশি খেই হারাই।

সামিরা সম্পর্কে

পীচ-গলা তরলে আটকে পা, দুঃস্বপ্ন অন্ধ দুই চোখে/ অসতর্ক হৃদয় পোষ মানে মিথ্যে বলার আফসোসে.../// প্রকাশিত লেখার কপিরাইট সংশ্লিষ্ট লেখক সংরক্ষণ করেন এবং লেখকের অনুমতি ছাড়া লেখা আংশিক বা পূর্ণভাবে কোন মিডিয়ায় পুন:প্রকাশ করা যাবে না।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে হাবিজাবি-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

15 Responses to ইনসোমনিয়া? প্রিয় ইনসোমনিয়া?

  1. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    প্রেয়ার হলের গানটা আমার খুব প্রিয়।
    হঠাৎ এক দুই দিন ইনসমনিয়া ভালোই লাগে। কিন্তুু চলতেই থাকলে বড় পেইনফুল।

  2. শামসীর বলেছেনঃ

    উইকএন্ড গুলো ইনসমনিক হলে মন্দ না 🙂

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    কেমন যেন ঘোর লেগে গেল…টিপিক্যাল সামিরা থেকে ভিন্ন ধাঁচের লেখা… 🙂

  4. সরল বলেছেনঃ

    একলা থাকতে চাইনা, তবু মাঝে মাঝে নিজেকে নিজের সঙ্গী করতে ভাল লাগে খুব 🙂
    অসাধারণ 🙂

  5. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    তোমার এই জাতীয় পোস্টগুলো আমার অনেক বেশি বেশি প্রিয়!

  6. ওয়াহিদ সুজন বলেছেনঃ

    আহা! গত দুইমাস ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।

    এক সময়ের প্রিয় ইনসোমনিয়া এখন কষ্টের কারণ।

  7. হাসান বলেছেনঃ

    পড়তে পড়তে কয়েকবার খেই হারালাম
    হারাতে হারাতে ইনসোমনিয়ায় ভুগলাম
    🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।