মধ্যরাত। বারান্দার জানালা দিয়ে পাশের কবরস্থানের দিকে।জীবনের কোন চিহ্ন সেখানে নেই। বেজি গুলাকেও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। তবুও কেন যেন হঠাৎ করে মনে হল, এখানে যারা শুয়ে আছেন, তাদের প্রত্যেকেরই আছে সম্পুর্ণ আলাদা গল্প, ভালবাসার গল্প, আবেগের গল্প, মমতার গল্প। কত রাগ, ক্ষোভ ,ঘৃণা, জমাট বাধা অভিমান হয়ত এই মাটির নিচে জমে আছে। হয়তবা এখানে শুয়ে আছেন কোন বৃদ্ধা মা, যিনি পৃথিবীতে থাকাকালীন ছেলের মুখ থেকে একবার মা ডাক শুনার জন্য আকুল ছিলেন। অথ্চ তখন ব্যাস্ত ছেলের সময় হত না। কিন্তু সেই ছেলেটা এখন ঠিক মায়ের কাছে আসে বারবার। অনুতাপ তাকে পুড়িয়ে ছারখার করে। মা কি শুনতে পায় তার ডাক? জানি না, এর উত্তর তো স্রষ্টাই ভাল জানেন। পাশেই দেখি ছোট একটা কবর। হয়ত কোন তরুনী মায়ের বুকের শিশু এখানে শায়িত। আজ হয়ত কালের ফেরে সেই তরুণী মা এখন নিঃসঙ্গ মধ্যবয়স্কা নারী। সেই মা হয়ত ঠিকই তার কল্পনায় বছরের পর বছর শিশুটিকে লালন করেছেন। তার কল্পনায় হয়ত শিশুটি এখন টগবগে যুবক।এমন মানুষ হয়ত এখানে আছেন, যিনি অর্ধ শতাব্দী বিশ্বস্ততার সাথে সংসার করেছেন, কিন্তু তার হৃদয়ের কোন এক কোণে লুকিয়ে ছিল তারুণ্যের প্রথম প্রেমের কোমল মুখ। হয়ত সেই নারীকে কখনো মুখ ফুটে বলেনই নি “ভালবাসি”…হয়তবা কালের অতল গহবরে সেই মুখ হারিয়ে গেছে, কিন্তু নিজের অজান্তেই হৃদয়ের ক্ষুদ্র একটা অংশের চিরস্থায়ী মালিক করে রেখেছেন সেই তরুণীটিকে। হয়ত এখানে প্রতিদিন আসেন বিপত্নীক স্বামী; ছেলেমেয়েরা তাকে ঠিকই আদরযত্ন করে, তবুও জীবনের সুর-তাল কোথায় যেন কেটে গিয়েছে। একাকীত্ব গ্রাস করে নিয়েছে জীবনটাকে, তাই প্রতি সকালেই আসেন স্ত্রীর সাথে একান্তে কিছু সময় কাটানোর জন্য।কিশোরী বোনটা আজো এখানে আসে ভাইয়ের প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে। স্কুলে সে দেখে সবাই ভাইদের সাথে কত কথা বলে! ভাইরা সহ কত জায়গায় ঘুরতে যায়! ভাইদের সাথে কত কত ঝগড়া করে! আর তার ভাই কিনা এখানে এভাবে শুয়ে আছে!! সেই কমবয়সী মিস্টি মেয়েটা কিন্তু প্রতিদিন শিউলী ফুল হাতে নিয়ে এখানে আসে।শ্বেত-শুভ্র শাড়িতে কি যে পবিত্র সেই মুখটা! বাসটা কি তার স্বপ্ন গুলোকে শেষ করে দিতেই সেদিন বের হয়েছিল? তার হাতের মেহেদীর রঙ ফিকে করতেই কি চালকের এত অবহেলা!ছিনতাইকারীর হাতে মারা যাওয়া সেই অফিসফেরত লোকটাও তো এখানে শুয়ে আছে।সে কি এখনো মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা ভেবে শিউরে উঠে?
মনে হয় এখানে শুয়ে থাকে লোকগুলো আমাদের বড্ড বোকাই ভাবে! হয়ত তারা অবাক হয়ে দেখে আমাদের নিরন্তর ছুটে চলা, প্রতিযোগীতা করা। জীবনের জীবন্ত মূহুর্তগুলো কত মূল্যবান! তাও আমরা হেলায় নষ্ট করে ফেলি বছরের পর বছর। বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলি; প্রতিশোধ, হিংসা, লোভ, লালসায় নিজেকে পুড়ে ছারখার করি। ফাইনাল ডেস্টিনেশনের কথা কিভাবে যেন ভুলেই থাকি। আকাশ ছোওয়ার চেষ্টা করতে করতেই পাতালের এই ঠিকানাকে ভুলে যাই।
হঠাৎ করেই জীবনটা বড় বেশি অর্থহীন লাগে!
– অপ্সরী
বেশ মর্মস্পর্শি একটা লেখা।
শেষের কথাগুলো একেকটা জ্বলজ্বলে সত্য।
‘হঠাৎ’ ব্যাপারটাতো আরো অদ্ভুত। হঠাৎ করেই দেখা যাবে খুবই অর্থপূর্ন মনে হবে জীবনটাকে।
প্রথমত অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটা পড়ার জন্য 🙂
আরো ধন্যবাদ আমার অগোছালো কথাবার্তাকেমর্মস্পর্শি বলার জন্য! 🙂
খুব বেশি ধাক্কা দিয়ে যাওয়ার মত একটা লেখা, আসলেই আমরা কি ভাবি ?
মাধবীলতা আপু, অনেক অনেক ধন্যবাদ 🙂
অসাধারন লেখা, বাস্তব ও প্যাথেটিক 🙁
আমরা আসলেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ভুলে যাই অবশ্যম্ভাবী ফাইনাল ডোস্টনেশন গুলোর কথা ।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। 🙂