(বিয়ে পরবর্তী এবং মোরাল) হ্যাযার্ড

কোন কাজ করার সময় আমরা কতটা সাবধানতা অবলম্বন করি তা ওই কাজে আমাদের ব্যর্থতার জন্য কতটুকু মূল্য দিতে হয় তার উপর নির্ভর করে। যে কাজের জন্য আমার যত বেশি মূল্য দিতে হবে সেই কাজ করতে গিয়ে আমি ততটা সাবধান থাকব। আমাদের ছাত্রজীবনে এরকম কেইস বহু দেখা যায়। যে পরীক্ষার গুরুত্ব যত বেশি সেই পরীক্ষার জন্য আমরা তত বেশি সিরিয়াসলি পড়াশুনা করি। বিজনেস ওয়ার্ল্ডে এ ধরনের মানসিকতার একটা বিশেষ নাম আছে, মোরাল হ্যাযার্ড।

আমরা একটা সিচুয়েশন বিবেচনা করি। একটি কোম্পানী সাইকেলের জন্য ইন্সুর‌্যান্স অফার করছে। আমার কাছে একটা সাইকেল আছে। সাইকেলটা যদি চুরি যায় তাহলে কোম্পানী সাইকেলের পুরো খরচটাই কভার করে দেবে। অর্থাৎ সাইকেল হারানোর জন্য আমাকে কোন মূল্যই বহন করতে হবে না। এরকম অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সাইকেলটা যাতে চুরি না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য আমি কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন বোধ করব না। চুরি গেলে যাক না,  ক্ষতিপূরণ তো কোম্পানীই দেবে। অথচ যদি কোম্পানী ক্ষতিপূরণটা না দিত, তাহলে আমি যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতাম। কারণ তখন যে আমারই আবার নতুন একটা সাইকেলের খরচ দিতে হত। দায়বদ্ধতা কমে যাওয়ায় সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তার অভাবের এই যে নৈতিক আলস্য, এটাই মোরাল হ্যাযার্ড।

এখন আমি আমার লেখার মূল উদ্দেশ্যের দিকে আসি। আমার এক পরিচিতজন আমাকে বলেছিল, ছেলেরা নাকি মেয়েদেরকে প্রথমদিকে নানাভাবে পটাতে চেষ্টা করে, মন জয় করার জন্য নানা কাজ করে, কেয়ারিং থাকে। পরে মেয়েদের মন গলে গেলে তারা নাকি আর আগের মত ভাল আচরণ করে না, কেয়ার নেয় না। এটা আমিও খেয়াল করেছি যে বিয়ের আগের দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্কটা বিয়ের পরে আর থাকে না, ঝগড়াবিবাদের মধ্যে ঐ ভাল সম্পর্কের মাত্রা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। ‘এই তুমি তো বিয়ের আগে এমন ছিলে না, এখন অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছ’, এ ধরণের কথার সাথেও আমরা খুব একটা অপরিচিত নই। কিন্তু মোরাল হ্যাযার্ডের দিক থেকে যদি আমরা চিন্তা করে দেখি, এ ধরণের আচরণ কিন্তু ইকনমিক শাস্ত্রমতে র‌্যাশনাল!! কীভাবে?? একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

বিয়ে একটা সম্পর্ককে স্থায়িত্ব দেয়। মানুষ সাধারণত জীবনে একবারই বিয়ে করে, বারবার নয়। বিয়ে সেইদিক থেকে একটা সম্পর্কের নিরাপত্তাদাতা, একটা ইন্সুর‌্যান্সের মত। বিয়ের আগে এই নিরাপত্তাটা থাকে না বলেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য এতটা সাবধানতা ও কেয়ার। কারণ অসাবধান থাকলে সম্পর্কটা সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে। বিয়ের পর যদিও ডিভোর্সের অপশন থাকে তবু খুবই বাধ্য না হলে কেউ সে অপশনটা নিতে চায় না। এই সিকিউরিটির কারণেই যুক্তিযুক্তভাবেই একজন আগের চেয়ে লেনিয়েন্ট হয়ে যেতে পারে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে। ‘বিয়ে তো করেই ফেললাম, এখন আর চিন্তা কিসের!!’ মোরাল হ্যাযার্ড ছাড়া আর কী!!!

এই লেখা অলস মস্তিষ্কের শয়তানি চিন্তাভাবনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি এখানে কোন মোরালিটি বিষয়ক কনক্লুশন ড্র করার চেষ্টা করি নি। তাই লেখাটাকে কেউ সিরিয়াসলি নেবেন না- এই অনুরোধ রইল।

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে বিবিধ-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to (বিয়ে পরবর্তী এবং মোরাল) হ্যাযার্ড

  1. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    নতুন টার্ম শিখলাম ”মোরাল হ্যাজার্ড” 😀
    কনক্লুশনের অপেক্ষায় থাকলাম।

  2. স্রোতস্বিনী বলেছেনঃ

    বাহ!! “বিবাহ” বিষয়ক আমারও কিছুদিন ধরে লেখালেখি করতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই বিধায় ধরতে পারছি না। 🙁
    ভালো লাগলো আপনার লেখাটা। 😀

  3. মাধবীলতা বলেছেনঃ

    ওওওওয়াআআও ! ইকনমিক শাস্ত্রমতে তো দেখি সবই হালাল ! ইকনমিক্স রকস ! 😛

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    ইন্টারেস্টিং তো! এই টার্মটা জানা ছিল না।

    তবে বিয়েও যেহেতু এখন একটা ভঙ্গুর সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দিনকে দিন, তাই একে ইন্স্যুরেন্স মনে করার দিন বোধ হয় আর নাই। তাছাড়া, সাইকেলের মত বিয়ের কি কোন ক্ষতিপূরণ আছে আদৌ? সম্পর্ক একবার পানসে হয়ে গেলে সেখানে প্রাণ ফিরিয়ে আনার মত কঠিন কাজ তো কমই আছে মনে হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।