আমাদের সবার দেখা করার কথা সকাল নয়টায়। প্ল্যানটা হুট করেই করা। গতকাল আমার মনটা মারাত্মক খারাপ ছিল। কিভাবে আশিক বুঝে ফেলল জানি না।
দুজন অনেকক্ষণ ধরে টঙ্গে বসে চা সিগারেট খাচ্ছিলাম। তবে ব্যাপারটা ঠিক আমিও বুঝিনি। অমির সাথে আমার দেখা হয়েছে ছুটিতে আসার আগে। অনেকক্ষণ কথা বলেছি। তবে ঢাকায় ফেরার পর কেন জানি বেশী মনে পড়ছে। একবার দেখা করতে পারলে অনেক ভাল লাগত। ওর একটা ছবি চেয়ে আনলে ভাল হোত। তবে সাহস করে বলা হয়নি। ঈদের পর ভার্সিটিতে ফিরে দেখা করতে অনেক দেরী। এসব ভাবতেই আরো হতাশ হচ্ছি।
আমার বন্ধুগুলো না বললেও বুঝে ফেলে। আশিক বললো, দোস্ত তোর দেখতে খুব ইচ্ছে করছে ?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম।
– আশিক বলল, দোস্ত চল দেখা করে আসি” বাইকে ওঠ..
– তোর মাথা ঠিক আছে তো ? আমি ওর বাসার ঠিকানাও জানি না !
– জানিস না জেনে নে। ফালতু কথা না বলে সিগারেট শেষ কর। আমি সবুজকে ফোন দিচ্ছি।
– দোস্ত একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, এবার না। আর এখন রাত দশটা বাজে।
একটু পরে সবুজ এসেছে। বরাবরের মত সে সিরিয়াস। আসলে কিচ্ছু না।
– কিরে ব্যাপার কি এত জরুরী তলব।
– আশিক বলছে, “দোস্ত আমাদের কাল সকালে ময়মনসিংহ রওনা হতে হবে। সেই কেস আরকি। তোর কাজ আছে নাকি ?”
– বাসায় একটা কিছু বলে বের হব। আরে কোন কাজ নাই। সকাল নয়টায় যাচ্ছি মামা।
আমিও না করতে চাইলাম না। ওকে আসলেই একবার দেখা খুব দরকার…
সকালে সবুজ যে একটা গেঞ্জাম করবে আমি নিশ্চিত ছিলাম। এই ছেলেটা দরকারি সব ঘটনায় ফোন করলে রিসিভ করবে না। ঘুম থেকে উঠছে কিনা কে জানে ?
আমি আর আশিক বাইক নিয়ে মাঠের কোনায় অপেক্ষা করছি। অবশেষে সবুজের দাঁত দেখা গেল। মেজাজ গরম থাকলেও আমরা নয়টা বিশে রওনা হলাম অজানার উদ্দেশ্যে।
রাস্তায় অকারণে দাঁড়িয়ে থেকে চা সিগারেট খাওয়া আমাদের পুরানো অভ্যাস। তবে আজকে সব অকাজ বাদ দিলাম আমরা। পুরা রাস্তাটা হাসাহাসিতে কেটেছে। কয়েকবার জ্যামে পড়াও লাগলো। সবুজের মারাত্মক খিদে লাগায় আমরা বাইক থামালাম। তিনজনের মত বাইকেরও বিশ্রামের প্রয়োজন। তেল নেয়ার বাহানা করে আমরা খুব কাছাকাছিই বসলাম।
আমাদের গন্তব্য যে কোথায় আমরা জানি না। আমি চাচ্ছিলাম অমিকে সারপ্রাইজ দেব। ওর বাসার ঠিকানা জানে একমাত্র দীপা। ওকে কিছুটা হালকা ইঙ্গিত দিলাম যে ঠিকানাটা জানা বেশ জরুরী।
এক মামার হোটেলে আমরা কবজি ডুবিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম। এত তাড়া ছিল তারপরও আমাদের খাওয়ার তৃপ্তিতে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। সবুজ তার পুরানো অভ্যাসের মত দোকানদারদের অহেতুক হয়রানি আর প্রশ্ন শুরু করেছিল। তাকে মুটামুটি টেনে আনা হোল। আজকের দিনা আর যাই হোক আমাদের স্বাভাবিক আড্ডাবাজীর দিনের মত না।
একবার মনে হচ্ছিল বাসার ঠিকানাটা ভুল। পরে সেই ঠিকানা খুঁজে পেতে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে পড়ে আমার এক বন্ধুকে ডাক দিলাম। বাবাজি বলল, সে জায়গাটা ভালভাবেই চেনে। এই কথা শুনে ভাবলাম আর যাই হোক ওর খুব কাছাকাছি তো যেতে পারব, দেখা হোক বা না হোক।
আশিক ছেলেটার জন্য মায়া হচ্ছে, সে ঘেমে একেবারে শেষ। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তবুও আমাদের মিশনে ওকে গুরুত্বপূর্ণ রোল করতে হচ্ছে। এতকিছু জেনে আসার পরও আবাসিক এলাকাটা গোলমেলে লাগছে। বাসার নাম্বারগুলো বেশ অগোছালো।
আমি ভাবলাম এইবার অমিকে ফোন দেয়া যায়। আমি ভয়াবহ নার্ভাস। যাই হোক শেষ পর্যন্ত ফোন দিয়ে বসলাম।
– হ্যালো ! অমি… মানে আমি না তোমার বাসার কাছে অপেক্ষা করছি। আসলে তোমাকে আগেই বলা দরকার ছিল, ঈদে সারপ্রাইজ ছিল এটা তোমার
– তুমি কি সত্যি আমাদের বাসার কাছে
– মানে.. হ্যাঁ, এই যে মোড়ের কাছে একটা দোকান আছে ওইখানে আছি।
– আচ্ছা..
এরপর কোন কথা হয়নি, ভাবলাম রাগ করেছে কিনা। আসলে ওর বাসায় আজকে কি অবস্থা সেটা না ভেবে আসাটা একেবারেই ভাল হয়নি।
যাই হোক আমি তালগাছের মত দাঁড়িয়ে আছি, বসতে টেনশন হচ্ছে। এই এক ঘণ্টায় এক প্যাকেট সিগারেট বোধহয় শেষ। মেয়েটা একটা ম্যাসেজ লিখলেও পারত। আধ ঘন্টা পর বাসার দিকে রওনা দিতে হবে। সামনে ঈদ, আমাদের সবারই বাসায় ফেরা দরকার।
দেখলাম আশিক বাইক নিয়ে এসেছে..
– কিরে দোস্ত দেখা হয়নি?
– না
– তোর মনটা কি বেশি খারাপ ?
– না
– আচ্ছা চল কাছে একটা নদী আছে সেখানে আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।
– আচ্ছা চল
বন্ধুদের সাথে বসে মনটা একটু হালকা হয়েছে, তবে এখন আমার নিজেরই খারাপ লাগছে। এদিকে আশিক আর সবুজকে থ্যাংকস দিলে তাদের ছোট করা হয়। আজকে নদীর পাড়টা অসাধারণ লাগছে। শেষ বিকালের আলো মিশে যাচ্ছে। এদিকে বিষণ্ণ যুবক পানিতে মাঝে মাঝে ঢিল ছুঁড়ছে।
দোস্ত চল, যাই ঢাকার দিকে। আমরা সবাই অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করি। কিন্তু রিয়েল লাইফে অনেক কিছুই দাগ কেটে যায়।
আমরা বেশ অনেক পথ চলে এসেছি। মানুষের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বলে একটা জিনিস আছে। সেটা আরো একবার সত্য হল। অমি ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। সেখানে লেখা, আমি একটু পরে বাসা থেকে নামব। তুমি কাছাকাছিই থেক প্লিজ।
আমি আশিককে বললাম….. আমাদের বাইকটা অনেক জোরে ছুটছে তবে রাস্তার বিপরীত দিকে। আমাদের সবার মাঝে একটা উত্তেজনা কাজ করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক কল্পনা করতে পারছি না, আমার হদয়ের স্পন্দন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এই অনুভূতির সাথে আমি বাতাসে ভাসতে শুরু করেছি, আকাশের অনেক উপরে !
শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ…
এই ঘটনা কি কোন এক বন্ধু দিবসে?
ঈদের আগের ঘটনা। তবে আমাদের বন্ধু সারকেলে এরকম বেশ কিছু নজির আছে। আমি তখন ইস্তানবুল। বাস্তবতা আরো বেশী সুন্দর ছিলো। আমাদের জন্য সেই দিনটাই তাই বন্ধু দিবস। :love:
😀