মাঠের শেষের কাঁঠালগাছটা ঘিরে আছে শালিকগুলো । এ গাছ ওগাছ করে শেষ পর্যন্ত এই গাছটাতেই থিতু হল ওরা । সবাই যার যার সংসার গুছাতে ব্যস্ত । এর মধ্যে স শালিক গাছের চুড়োয় গিয়ে দেখে ফেলেছে আশেপাশের সবুজ জগতটাকে । তার যেন তর সইছে না । স শালিকটার চঞ্চলতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সবকিছু । শালিকটার ইচ্ছে করছে একা একা গাছে গাছে চড়ে বেড়াতে ।
– বাবা, আমি একটু বের হই ?
– কোথায় যাবে আবার এই দুপুরে ?? যেতে হবে না…
– যাই না বাবা একটু, বেশি দূর যাবো না, এইতো কাছে…
– বললাম তো, যাওয়া লাগবে না।
মন খারাপ করে স শালিকটা মার কাছে যায় ।
– মা, একটু পাশের গাছটাতে ঘুরে আসি??
– এতো ঘুরাঘুরি কিসের তোমার ? চুপ করে বসে থাক…কোথা থেকে কোন খাটাশ আসবে কে জানে, জেনেশুনে বিপদ আনবার দরকার নেই বাপু।
– ন তো প্রায়ই বের হয়, কই ওকে তো খাটাস ধরে না ??
– তর্ক শিখেছ খুব, না? ভালো না লাগলে কাজ করো, নিচ থেকে ডাল এনে বাবাকে দাও।
“নাহ, মাকে আর বুঝানো যাবে না। সবসময় খালি খাটাশের ভয় , আর বুঝি কেউ বের হয় না। আমাকে একটু ভালো করে উড়তেও দেয় না । ছোট বলে নাকি আমি কিছু বুঝি না , পারি না । বাসাটাও বানাতে দেয় না আমাকে।
সবকিছুতে খালি না না। করা যাবে না, বলা যাবে না, ধরা যাবে না। স্কুলের পাশের পেয়ারা গাছটায় বসে কি সুন্দর পড়া শোনা যায় , একা তো আমাকে যেতে দেয়ই না, তাই ন কে নিয়ে গিয়েছিলাম, তারপরও মার সেকি বকা!!
ধুর আজ কারো কোথা শুনবো না। ওই বুড়ো শালিকটা যেবার এসেছিলো খুব ভালো লেগেছিল । কত কথা বলে গেলো, সবাই তো ওকে খুব জ্ঞানী বলে । ওই তো বলেছিল , ধানের আইল ধরে হেঁটে গেলে কত পোকামাকড় পাওয়া যায়, ধানের শিষগুলো যখন ভারে বুড়ো মানুষের মতো নুইয়ে থাকে তখন খেতে কত সহজ হয়ে যায় , শুকিয়ে যাওয়া নালাটায় কত বিচিত্র রকমের মাছ থাকে, দেখা হয়ে যায় ফিঙ্গে মামা আর বুলবুলির সাথেও ।
আজ যাবোই যাবো । শাপলা ঝিলের পাশ দিয়ে শিউলি ঝরা উঠোন পেরিয়ে দোতলার ওই চিলেকোঠায় আমি উঠবোই । আকাশের রংটা আরো কত নীল হতে পারে আমি আজ দেখেই ছাড়বো। শুকনো পাতার উপর দিয়ে মরমরিয়ে হেঁটে যাবো আজ। ”
চরম এক উত্তেজনায় উড়াল দিল স শালিকটা। জয় করবার এক তীব্র বাসনায় মন প্রাণ ভরে আছে তার।
“যখন এসে বলব ওই চিলেকোঠায় কি কি আছে অবাক বনে যাবে সবাই । আর কিছুতেই ‘না না’ করতে পারবে না বাবা মা।”
উড়ে উড়ে চিলেকোঠায় গিয়ে বসলো স শালিকটা। হেঁটে হেঁটে বারান্দার কাছে এসে রেলিঙটার কাছে বসলো । একটা ছোট্ট মেয়ে মেঝেতে উবু হয়ে কি যেন করছে।
হঠাৎ মাথা তুলে শালিকটাকে দেখেই আর্তনাদ করে উঠলো, “উফফ!! এক শালিক আবার !! আজকের দিনটাই খারাপ যাবে, নাহ আজকে আর পুতুলের বিয়ে দেব না । যাহ্ বদমাইশ শালিক যাহ্…”
ভয় পেয়ে শালিকটা ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয় আকাশে , সেই আকাশে যেই আকাশের ঠিকানায় সবাই চিঠি লিখে!!!
আরে! সুন্দর তো খুব। 😀 ভালো লাগলো পড়তে। :love:
:penguindance: :penguindance:
খুশিতে আর কিছু কইতে পারলাম না… 😀
ভালো লাগলো, একলা শালিকের কষ্টটা আগে কোথাও এভাবে লেখা হয়নি।
গল্পটা লেখার পর এখন চোখের সামনে শুধুই এক শালিক পড়ে, কিন্তু এখন আর বেচারাকে দোষ দেই না… 😀
বেচারাকে বোঝান, “এভাবে একলা থাকলে তো একসময় এন্ডেনজার্ড স্পেসিস হয়ে যাবা মিয়া” :thinking:
:happy:
লেখার হাত তো মারাত্মক হচ্ছে পিচ্চি।
মাশাআল্লাহ্
অরওয়েল এর এনিমেল ফার্ম পড়ছ? না পড়লে পড়ে নিও।
জোশিলা
:happy:
মন্তব্যের জন্য ধইন্নাপাতা…
না ভাইয়া, পড়ি নাই , পড়ে নিবো ইনশাল্লাহ । 🙂
খুব্বি কিউট একটা লেখা !! নাহ শালিককে আর দোষ দেয়া যাবে না :nono:
পাশাপাশি একলা থাকতে চাওয়া মানুষগুলোকেও না । 🙂
লিখতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছিলো ঠিক যেই ইনফোটা দিতে চাচ্ছি, তা প্রকাশ পাচ্ছে তো?? 🙁
ধইন্নাপাতা কিউট মন্তব্যের জন্য…
ওহ আচ্ছা ! এই ইনফো যে দিতে চাইছ এটা বুঝি নাই 🙁
এইতো শুরু করলাম, পড়া হয়ে গেল! মায়ামাখা একটা লেখা! শালিকটা ওই যে আকাশে উড়লো না?? ঐ আকাশেই আরো একটা একলা শালিককে খুঁজে পাবে… :love:
সেই কামনাই রইলো… যোজন যোজন ভালোবাসায় বিশ্বটাকে দেখুক ওরা … :love: